কয়েল ও অ্যারোসল ব্যবহারের প্রচলন মশা তাড়ানোর জন্য ব্যাপক হলেও এটি স্বাস্থ্যসম্মত নয়। এতে সৃষ্ট স্বাস্থ্য-ঝুঁকি সম্পর্কে অনেকেই সচেতন নন।
গবেষণায় দেখা গেছে, কয়েলের ধোঁয়া সিগারেটের ধোঁয়ার মতোই ক্ষতিকর। কয়েল থেকে যে ধোঁয়া নির্গত হয়, তাতে কার্বন মনোক্সাইড, নাইট্রোজেন ডাই-অক্সাইড, সালফার ডাই-অক্সাইড ও অন্যান্য ক্ষতিকর গ্যাস থাকে। অনেক অ্যারোসল পণ্যে থাকা ডাইমিথাইল ফাথলেট এবং পাইরেথ্রিনস জাতীয় রাসায়নিকগুলো দীর্ঘমেয়াদে স্নায়ুতন্ত্রে প্রভাব ফেলে। তাছাড়া ঘরের ভেতরে এ ধরনের স্প্রে ব্যবহারে দীর্ঘক্ষণ ধরে বাতাসে বিষাক্ত কণা ভাসতে থাকে। এটি শিশু, বয়স্ক ও শ্বাসজনিত সমস্যায় ভোগা ব্যক্তিদের জন্য আরও বেশি বিপজ্জনক।
শ্বাসতন্ত্রের সমস্যা
কয়েলের ধোঁয়া ও অ্যারোসলের রাসায়নিক পদার্থ শ্বাসনালীর প্রদাহ, হাঁপানি, এবং অন্যান্য শ্বাসজনিত সমস্যার কারণ হতে পারে।
ত্বক ও চোখের জ্বালা
অ্যারোসল স্প্রে চোখ ও ত্বকে জ্বালা সৃষ্টি করতে পারে, যা অ্যালার্জির মতো প্রতিক্রিয়া ঘটায়।
ক্যান্সারের ঝুঁকি
কয়েল পোড়ানোর ধোঁয়ায় থাকা রাসায়নিক পদার্থ দীর্ঘমেয়াদে ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
স্নায়ুতন্ত্রের সমস্যা
অ্যারোসলের বিষাক্ত কণা স্নায়ুতন্ত্রকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে, যা স্নায়বিক ব্যাধি সৃষ্টি করতে পারে।
নিরাপদ বিকল্প
মশা তাড়ানোর জন্য মশারি, প্রাকৃতিক তেল বা বৈদ্যুতিক মশা তাড়ানোর যন্ত্র ব্যবহার করে এই স্বাস্থ্য-ঝুঁকি এড়ানো সম্ভব।
প্রকাশিত :
১৭:১৩, ০৪ অক্টোবর ২০২৪ সর্বশেষ আপডেট: ১৮:২৫, ০৪ অক্টোবর ২০২৪
রেজুয়ান আহম্মেদ
হিমালয়ের পাদদেশে অবস্থিত হানজা ভ্যালি, তার অমরত্বের কাহিনি নিয়ে আজও রহস্যে ঘেরা। এই ছোট্ট ভ্যালির মানুষেরা যে শুধু সুস্থই থাকে না, বরং শত বছর পেরিয়ে গেলেও তাদের মনে এবং দেহে কোনো ক্লান্তির ছাপ নেই। এটা যেন প্রকৃতির এক বিস্ময়। বাইরের বিশ্ব যেখানে আধুনিকতার আলোয় ধাবিত, হানজা ভ্যালির মানুষরা প্রাকৃতিক জীবনধারা বজায় রেখে ১২০ থেকে ১৬০ বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকে। তাদের দীর্ঘ জীবন, সুস্বাস্থ্য, এবং মানসিক প্রশান্তির পেছনে যে রহস্য লুকিয়ে রয়েছে, তা জানার আগ্রহ সবার।
এখানকার প্রতিদিনের জীবন শুরু হয় সূর্যোদয়ের সঙ্গে। পরিশ্রমে ভরা প্রতিটা দিন যেন এক নতুন সূচনা। এখানকার বাসিন্দারা পাহাড়ি চাষাবাদে নিপুণ, যা তাদের খাদ্য এবং জীবিকার প্রধান উৎস। শীতল হিমবাহের পানি, যেটি আকাশের বরফ থেকে গলে পড়ে, তাদের শরীরে এমন এক শক্তি প্রদান করে, যা তাদের দীর্ঘায়ু অর্জনে সহায়তা করে। এই পানির মধ্যে থাকা খনিজ পদার্থ শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় সব ধরনের পুষ্টি সরবরাহ করে, যা কোনো আধুনিক ওষুধের চেয়ে কার্যকর।
তবে শুধু পানি নয়, হানজার মানুষের খাবারের তালিকায় রয়েছে এমন কিছু খাদ্য, যা প্রকৃতি নিজেই তাদের জন্য অমূল্য উপহার হিসেবে দিয়ে রেখেছে। এপ্রিকট বা খরমা ফল এখানকার মানুষের খাদ্যের প্রধান অংশ। এই ফল থেকে উৎপাদিত তেল, যা রান্নার কাজে ব্যবহৃত হয়, শরীরের জন্য এক প্রাকৃতিক ওষুধ। হানজা ভ্যালির নারীরা তাদের সুন্দর ত্বক এবং দীপ্তিময় চেহারার জন্য এপ্রিকট তেলের প্রতি বিশেষ কৃতজ্ঞ। তারা বলে, "এই তেল আমাদের শুধু সুস্থ রাখে না, বরং আমাদের যৌবনকেও ধরে রাখে।"
হানজা ভ্যালির জীবনধারা শুধুমাত্র শারীরিক সুস্থতার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। মানসিক প্রশান্তিও এখানকার মানুষের দীর্ঘায়ুর একটি বড় কারণ। পাহাড়ের নির্জনতা এবং নিস্তব্ধতা তাদের মনকে শান্ত করে। আধুনিক বিশ্বের দৌড়ঝাঁপ থেকে দূরে, তারা ছোটখাটো সুখেই খুশি। তারা বিশ্বাস করে, "প্রকৃত সুখ মানসিক শান্তিতেই নিহিত, যেখানে দুশ্চিন্তার কোনো স্থান নেই।"
প্রতিদিনের কাজের মধ্যে কঠোর পরিশ্রম হানজার মানুষের শরীরকে শক্তিশালী করে তোলে। চাষাবাদ, পাহাড়ি পথ দিয়ে হাঁটা, এবং অন্যান্য শারীরিক কার্যকলাপ তাদের রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে এবং হৃদযন্ত্রকে সবল রাখে। প্রযুক্তি থেকে অনেক দূরে থাকা এই মানুষগুলোর কাছে যান্ত্রিকতার কোনো গুরুত্ব নেই। তাদের জীবনযাত্রা এতটাই প্রাকৃতিক এবং নির্ভরযোগ্য যে, তারা নিজেদের প্রয়োজনীয় সবকিছু নিজেরাই উৎপাদন করে।
তবে শুধু প্রাকৃতিক খাদ্য এবং পরিশ্রমই হানজার মানুষের সুস্থতার মূল চাবিকাঠি নয়। তারা ধর্ম এবং আধ্যাত্মিকতার প্রতিও গভীরভাবে নিবেদিত। তাদের ধর্মীয় চর্চা এবং নিয়মিত ধ্যান তাদের মানসিক প্রশান্তি এবং স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সাহায্য করে। প্রতিদিনের প্রার্থনা তাদের মনে এক ধরণের শান্তির অনুভূতি নিয়ে আসে, যা তাদের দীর্ঘমেয়াদি রোগ থেকে দূরে রাখে। তারা বলে, "যতদিন মন শান্ত থাকবে, ততদিন শরীরও সুস্থ থাকবে।"
পারিবারিক সম্পর্ক এবং সামাজিক বন্ধনও হানজার জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তারা একে অপরের প্রতি অত্যন্ত সহযোগিতামূলক এবং সমর্থনশীল। তাদের সমাজে পারস্পরিক ভালোবাসা এবং সম্মান তাদেরকে মানসিকভাবে দৃঢ় করে তোলে। পারিবারিক বন্ধন এবং সামাজিক উৎসব তাদের জীবনে নতুন মাত্রা যোগ করে, যা তাদের মানসিক শান্তি ও সুখী জীবনের কারণ হিসেবে বিবেচিত হয়।
তবে, সবকিছুর পরেও হানজার পরিবেশের বিশুদ্ধতা এবং নির্মলতা তাদের দীর্ঘায়ুর অন্যতম প্রধান কারণ। এখানকার বাতাসে কোনো প্রকার দূষণের প্রভাব নেই, যা আধুনিক শহরের মানুষদের জন্য এক অজানা স্বপ্ন। নির্মল বাতাস তাদের ফুসফুসকে সুস্থ রাখে, এবং শরীরের প্রতিটি অঙ্গকে চিরতরে শক্তিশালী করে তোলে।
এই প্রাকৃতিক, স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা ও খাদ্যাভ্যাসই হানজা ভ্যালির মানুষদের দীর্ঘজীবন এবং সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করে। তাদের জীবনযাত্রা আজও প্রাকৃতিক এবং আধুনিকতার কুপ্রভাব থেকে মুক্ত। তাদের জীবনের প্রতিটি দিন যেন প্রকৃতির সঙ্গে মিশে থাকে এবং প্রকৃতির কাছ থেকেই তারা দীর্ঘায়ুর জন্য প্রয়োজনীয় উপাদানগুলো সংগ্রহ করে।
এই জীবনধারা থেকে আমরা শিখতে পারি, সুস্থ ও দীর্ঘজীবী হতে হলে আমাদেরও প্রকৃতির দিকে ফিরে যেতে হবে। হানজা ভ্যালির মানুষেরা প্রকৃতির সঙ্গে যেভাবে মিশে আছে, তা থেকে আমরা জীবনযাপনের নতুন পথ খুঁজে পেতে পারি।