img

বিশেষ ছাড়ে ৯১ হাজার কোটি টাকার খেলাপি ঋণ নবায়ন

প্রকাশিত :  ১৯:০১, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪
সর্বশেষ আপডেট: ২০:৫৯, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪

বিশেষ ছাড়ে ৯১ হাজার কোটি টাকার খেলাপি ঋণ নবায়ন

বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোয় বিশেষ ছাড়ের সুযোগ নিয়ে গত বছর রেকর্ড পরিমাণ খেলাপি ঋণ নবায়ন করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক খেলাপি ঋণ কমাতে নবায়নের ক্ষেত্রে বিশেষ ছাড় দিয়েছিল। এর মধ্যে খেলাপি ঋণ বা খেলাপি কিস্তির অর্থ এককালীন বা ডাউন পেমেন্ট কম হারে পরিশোধ করে দীর্ঘ সময়ের জন্য নবায়নের সুযোগ দেওয়া হয়। এ সুযোগ নিয়ে ২০২৩ সালে ৯১ হাজার ২২১ কোটি টাকার খেলাপি ঋণ নবায়ন করা হয়। নবায়ন করা ওইসব ঋণের মধ্যে একই বছরে আবার ৫৪ হাজার ৬০ কোটি টাকার ঋণ নতুন করে খেলাপি হয়ে পড়ে। ঋণ নবায়নের শর্ত অনুযায়ী কিস্তি পরিশোধ না করায় ওইসব ঋণ আবার খেলাপি হয়ে পড়ে। 

আজ রোববার রাতে প্রকাশিত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বার্ষিক আর্থিক স্থিতিশীলতা প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। প্রতিবেদনটি প্রতিবছর একবার প্রকাশ করা হয়। এতে দেশের সার্বিক অর্থনীতি ও আর্থিক খাতের সম্ভাবনা ও ঝুঁকির চিত্র তুলে ধরা হয়। এবারের প্রতিবেদনটিতে ওইসব খাতের সার্বিক অবস্থার পাশাপাশি ব্যাংক খাতের সব ধরনের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। আগে এ প্রতিবেদনে অনেক তথ্য গোপন করা হতো। এবার প্রায় সব তথ্যই তুলে ধরা হয়েছে। ফলে আর্থিক খাতের অনেক নেতিবাচক চিত্রও প্রতিবেদনে ফুটে উঠেছে। আইএমএফ-এর ঋণের শর্ত হিসাবে গত বছরের আগস্টে এ প্রতিবেদনটি তথ্যসমৃদ্ধ করে প্রথম প্রকাশিত হয়। ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর নতুন গভর্নর দায়িত্ব নিয়ে প্রতিবেদনটিকে আরও সমৃদ্ধ করে প্রকাশ করা হয়েছে। এবার অনেক বেশি মাত্রায় নতুন নতুন তথ্য দেওয়া হয়েছে, যা ব্যাংক খাতের দুর্বলতার চিত্র ওঠে এসেছে। 

প্রতিবেদনে বলা হয়, ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ নবায়ন করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে বেশকিছু ছাড় দেওয়া হয়েছে, যা ২০১৮ সাল থেকেই চলমান। এর মধ্যে করোনার সময় ও বৈশ্বিক মন্দার কারণেও ২০২০ থেকে ২০২২ সালেও বিশেষ সুযোগ দেওয়া হয়। এর মধ্যে ঋণের বা কিস্তির অর্থ কম হারে পরিশোধ করে দীর্ঘ সময়ের জন্য ঋণ নবায়ন করা হয়। কিছু ক্ষেত্রে ডাউন পেমেন্ট ছাড়াও খেলাপি ঋণ নবায়নের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। এসব সুযোগ নিয়ে খেলাপিরা গত বছর রেকর্ড পরিমাণ খেলাপি ঋণ নবায়ন করেছেন, যা আগে কখনো করা হয়নি। 

বিশেষ বিবেচনায় বা ছাড়ে ২০১৮ সাল থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক খেলাপি ঋণ নবায়নের সুযোগ দিয়ে আসছে। ওই সুযোগ নিয়ে ২০১৯ সালে ৫২ হাজার ৩৭০ কোটি টাকার খেলাপি ঋণ নবায়ন করা হয়। ২০২০ সালে নবায়নের পরিমাণ প্রায় তিনগুণ কমে ১৯ হাজার ৮১০ কোটি টাকায় দাঁড়ায়। ২০২১ সালে আবার বেড়ে ২৬ হাজার ৮১০ কোটি টাকার খেলাপি ঋণ নবায়ন হয় বিশেষ ছাড়ে। ২০২২ সালে তা আবার বেড়ে রেকর্ড পরিমাণ অর্থাৎ ৬৩ হাজার ৭২০ কোটি টাকার খেলাপি ঋণ নবায়ন করা হয়। ২০২৩ সালে অতীতের সব রেকর্ড ভঙ্গ করে ৯১ হাজার ২২১ কোটি টাকার খেলাপি নবায়ন করা হয়। বিশেষ বিবেচনায় নবায়ন করা খেলাপি ঋণের কিস্তি গ্রাহক নিয়মিত পরিশোধ না করায় আবার খেলাপি হয়ে পড়ছে। 

প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, ২০১৯ সালে খেলাপি থেকে নবায়ন করা ঋণের স্থিতি ছিল ১ লাখ ৩৬ হাজার ২৩০ কোটি টাকা। এর মধ্যে ওই বছরে আবার খেলাপি হয়েছিল ২৯ হাজার ৮৮০ কোটি টাকা, যা মোট নবায়ন করা ঋণের ২১ দশমিক ৯ শতাংশ। 

২০২০ সালে খেলাপি থেকে নবায়ন করা ঋণের স্থিতি ছিল ১ লাখ ৫৫ হাজার ৬৩০ কোটি টাকা। এর মধ্যে ওই বছর আবার ২৯ হাজার ৯৩০ কোটি টাকার ঋণ নতুন করে খেলাপি হয়ে পড়ে, যা মোট নবায়ন করা ঋণের ১৯ দশমিক ২ শতাংশ। 

২০২১ সালে নবায়ন করা ঋণের স্থিতি ছিল ১ লাখ ৬৮ হাজার ৩৯০ কোটি টাকা। এর মধ্যে ওই বছর ৩২ হাজার ৯৬০ কোটি টাকার ঋণ নতুন করে খেলাপি হয়ে পড়ে, যা মোট নবায়ন করা ঋণের ১৯ দশমিক ৬ শতাংশ। 

২০২২ সালে খেলাপি থেকে নবায়ন করা ঋণের স্থিতি ছিল ২ লাখ ১২ হাজার ৭৮০ কোটি টাকা। এর মধ্যে একই বছর নতুন করে খেলাপি হয়েছে ৪০ হাজার ৮৬০ কোটি টাকা, যা ছিল মোট নবায়ন করা ঋণের ১৯ দশমিক ২ শতাংশ। 

২০২৩ সালে খেলাপি থেকে নবায়ন করা হয়েছে এমন ঋণের স্থিতি ছিল ২ লাখ ৮৮ হাজার ৫৪০ কোটি টাকা। এর মধ্যে ওই বছর নতুন করে খেলাপি হয়েছে ৫৪ হাজার ৬০ কোটি টাকা, যা মোট নবায়ন করা ঋণের ১৮ দশমিক ৭ শতাংশ। 

প্রতিবেদনে বলা হয়, খেলাপি ঋণ নবায়নের মধ্যে বেশির ভাগ ঋণই নিয়মিত থেকে যাচ্ছে। অর্থাৎ ওইসব ঋণের গ্রাহকরা নিয়মিত ঋণের কিস্তি পরিশোধ করছেন। কিন্তু গড়ে ১৯ থেকে ২২ শতাংশ গ্রাহক ঋণের শর্ত অনুযায়ী কিস্তি পরিশোধ করছেন না। ফলে ওইসব ঋণ আবার খেলাপি হয়ে পড়ছে। 

প্রতিবেদনে বলা হয়, ব্যাংক খাতে গত বছর স্বল্পমেয়াদি তারল্যের ঘাটতি ছিল। যে কারণে স্বল্প সময়ের মধ্যে ব্যাংকগুলোয় তারল্যের ঘাটতি মোকাবিলা করতে হয়। কিছুদিনের মধ্যেই আমানত বাড়তে শুরু করেছে। 

খেলাপি ঋণের মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় এবং ঋণ পরিশোধে বিশেষ ছাড় দেওয়ায় ঋণ আদায় কম হয়েছে। যে কারণে ব্যাংকগুলোর সম্পদ বা ঋণ থেকে আয় কম হয়েছে। তবে সার্বিকভাবে ব্যাংকগুলোর নিট আয় বেড়েছে। অন্যান্য খাত থেকে আয় বাড়ায় ব্যাংকগুলোর আয়ে ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে। ওই বছরে সবচেয়ে বেশি খেলাপি ঋণ বাণিজ্যি ও আমদানি খাতে অর্থাৎ ৩১ হাজার কোটি টাকা এবং শিল্প খাতে ছিল ১২ হাজার কোটি টাকা। 

প্রতিবেদনে বলা হয়, খেলাপি ঋণের মধ্যে সিংহভাগই ছিল শীর্ষ ৫ ব্যাংকের হাতে। মোট খেলাপির ৪৭ দশমিক ৬০ শতাংশ ছিল ৫ ব্যাংকের কাছে। বাকি ৫২ দশমিক ৪০ শতাংশ ছিল অন্য ব্যাংকগুলোর কাছে।


অর্থনীতি এর আরও খবর

img

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের দুর্নীতির তথ্য চেয়ে গণবিজ্ঞপ্তি

প্রকাশিত :  ১১:৫০, ০৩ অক্টোবর ২০২৪
সর্বশেষ আপডেট: ১৩:৩২, ০৩ অক্টোবর ২০২৪

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে পলায়নকারী শেখ হাসিনা সরকারের সময়ে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি আইনের অধীনে করা চুক্তিগুলো পর্যালোচনায় গঠিত জাতীয় কমিটি জনগণের কাছে দুর্নীতির তথ্য চেয়ে গণবিজ্ঞপ্তি দিয়েছে।

আজ বৃহস্পতিবার (৩ সেপ্টেম্বর) বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয় থেকে জারি করা হয়।

ওই গণবিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, যে কোনো ব্যক্তি ওই আইনের অধীনে চুক্তিবদ্ধ দেশের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের সংস্থাগুলোর দুর্নীতি সংক্রান্ত যে কোনো তথ্য-উপাত্ত ও প্রমাণাদি কমিটিতে পাঠাতে পারবেন। আগামীকাল (শুক্রবার) থেকে আগামী ৩১ অক্টোবরের মধ্যে nationalreviewcommittee@gmail.com ই-মেইল করে জাতীয় রিভিউ কমিটিতে অভিযোগ দাখিল করা যাবে। তবে কমিটি প্রয়োজন মনে করলে পরে অভিযোগ দাখিলকারী এবং অভিযুক্ত ব্যক্তি বা তার প্রতিষ্ঠান বা সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করবে।

এছাড়া ওই চুক্তির অধীনে বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান ও সংস্থাগুলোর সঙ্গে আলাদাভাবে যোগাযোগ করে জাতীয় কমিটি প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করবে। আওয়ামী লীগ সরকার ২০১০ সালে দুই বছরের জন্য ‘বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইন’ করে। পরে তিন দফায় ওই আইনের মেয়াদ বাড়ানো হয় ১৪ বছর। ওই আইনে বলা হয়েছে, বিদ্যুতের জন্য জ্বালানি আমদানি অথবা বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন অথবা বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে অন্য কোনো কার্যক্রম, গৃহীত কোনো ব্যবস্থা, আদেশ বা নির্দেশের বৈধতা নিয়ে কোনো আদালতে প্রশ্ন তোলা যাবে না। সে কারণে এ আইনকে বিদ্যুৎ খাতের ‘দায়মুক্তি আইন’ বলেন সমালোচকরা।

এই আইনের সুযোগ নিয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বিপুল অনিয়ম ও দুর্নীতি হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারের বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খানের ভাষায়, বিগত সরকারের সময় জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতে ‘অনিয়মের মহোৎসব’ হয়েছে। বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি আইনের অধীনে করা চুক্তিগুলো পর্যালোচনা করতে গত ৫ সেপ্টেম্বর পাঁচ সদস্যের জাতীয় কমিটি গঠন করে বিদ্যুৎ বিভাগ।

এ কমিটির আহ্বায়ক হিসেবে আছেন হাইকোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মঈনুল ইসলাম চৌধুরী। আর সদস্য হিসেবে আছেন বুয়েটের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক প্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক আবদুল হাসিব চৌধুরী, কেপিএমজি বাংলাদেশ এর সাবেক সিওও ফেলো চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্ট (এফসিএ) আলী আশফাক, বিশ্ব ব্যাংকের সাবেক লিড ইকোনোমিস্ট জাহিদ হোসেন এবং ইউনিভার্সিটি অব লন্ডনের ফ্যাকাল্টি অব ল অ্যান্ড সোশাল সায়েন্সের অধ্যাপক (অর্থনীতি) মোশতাক হোসেন খান।

এই কমিটি তাদের কাজের জন্য যে কোনো সূত্র থেকে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ ও প্রয়োজনীয় যে কোনো নথি নিরীক্ষা করতে পারবে, সংশ্লিষ্ট যে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে শুনানিতে আহ্বান করতে পারবে। কমিটি 'বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইন, ২০১০' এর আওতায় ইতোমধ্যে সম্পাদিত চুক্তিগুলোতে সরকারের স্বার্থ সংরক্ষিত হয়েছে কিনা তা নিরীক্ষা করবে। নিরীক্ষার ভিত্তিতে পরবর্তী কার্যক্রম বিষয়ে সুপারিশ প্রণয়ন করবে এবং বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় কমিটিকে সাচিবিক ও আনুষঙ্গিক সহায়তা দিবে বলেও প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়েছে।