img

শেয়ার বাজারে কালকের অস্থিরতা: বিনিয়োগকারীদের কেমন কৌশল অবলম্বন করা উচিত?

প্রকাশিত :  ১৬:৩৫, ০১ অক্টোবর ২০২৪

শেয়ার বাজারে কালকের অস্থিরতা: বিনিয়োগকারীদের কেমন কৌশল অবলম্বন করা উচিত?

রেজুয়ান আহম্মেদ



আগামীকাল বাংলাদেশ শেয়ার বাজারে অস্থিরতার একটি সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে, যেখানে বিনিয়োগকারীদের সামনে থাকবে নানা চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনার মিশ্রণ। সাম্প্রতিক দিনগুলোতে শেয়ার বাজারে বেশ কয়েকটি সেক্টর বিশেষভাবে নজর কেড়েছে, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ব্যাংকিং, ফার্মাসিউটিক্যালস, টেক্সটাইল এবং টেলিকম সেক্টর। এই সেক্টরগুলোতে বিনিয়োগকারীদের কৌশল কী হওয়া উচিত তা নিয়ে এখন থেকেই চিন্তাভাবনা শুরু হয়েছে।

ব্যাংকিং সেক্টর:

ব্যাংকিং খাত দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে একটি শক্তিশালী ভূমিকা পালন করে আসছে। সাম্প্রতিক সময়ে কিছুটা স্থিতিশীলতা লক্ষ করা গেলেও এই সেক্টরে আগামীকাল কিছুটা অস্থিরতা দেখা দিতে পারে। বাজার বিশ্লেষকদের মতে, ব্যাংকগুলোর শেয়ারের মূল্য কিছুটা হ্রাস পেতে পারে, কারণ সাম্প্রতিক লেনদেন এবং অর্থনৈতিক অবস্থার প্রভাব পড়ছে। তবে বিনিয়োগকারীদের জন্য ইতিবাচক দিক হলো, এই সেক্টরের বেশিরভাগ ব্যাংকই শক্তিশালী ফান্ডামেন্টালস এবং দীর্ঘমেয়াদি লভ্যাংশ প্রদানকারী। অতএব, যারা দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগে আগ্রহী তাদের জন্য এই সেক্টরে বিনিয়োগ করার এখনো সুযোগ রয়েছে। তবে নতুন বিনিয়োগকারীদের জন্য সাবধানতা অবলম্বন করাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে।

ফার্মাসিউটিক্যালস সেক্টর:

ফার্মাসিউটিক্যালস খাতটি দীর্ঘমেয়াদে নিরাপদ এবং লাভজনক হিসেবে পরিচিত। মহামারি পরবর্তী সময়ে বিশ্বব্যাপী ওষুধের চাহিদা বেড়েছে, যা স্থানীয় কোম্পানিগুলোর আয় বাড়াতে সাহায্য করেছে। পাশাপাশি, দেশে নতুন কিছু ওষুধের অনুমোদনও এই খাতকে আরো এগিয়ে নিয়ে গেছে। আগামীকাল এই সেক্টরে বড় কোনো অস্থিরতা আশা করা হচ্ছে না, বরং বিনিয়োগকারীরা এই খাতে বিনিয়োগে নিরাপত্তা এবং স্থিতিশীলতা খুঁজে পেতে পারেন। বিশেষজ্ঞদের মতে, এটি একটি দীর্ঘমেয়াদি লাভজনক খাত হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

টেক্সটাইল সেক্টর:

বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রধান চালিকাশক্তি হিসেবে টেক্সটাইল খাতের অবদান অস্বীকার করার উপায় নেই। রপ্তানি আয়ের একটি বড় অংশ এই খাত থেকেই আসে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে আন্তর্জাতিক বাজারে চাহিদা কিছুটা কমে আসার কারণে এই সেক্টরটি কিছুটা চাপে রয়েছে। বিশেষ করে ইউরোপ এবং আমেরিকার ক্রেতাদের অর্ডারের সংখ্যা হ্রাস পাওয়ায় দেশের রপ্তানি আয় কমেছে। কিন্তু এই খাতকে নিয়ে আশার আলো দেখা যাচ্ছে, কারণ সরকার সম্প্রতি কিছু নতুন প্রণোদনা ঘোষণা করেছে এবং চীনের বাজারে প্রবেশের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। আগামীকাল এই খাতে বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি মিশ্র পরিস্থিতি দেখা দিতে পারে। যারা টেক্সটাইল সেক্টরে বিনিয়োগ করতে চান, তাদের উচিত বর্তমান বাজার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে সতর্কতার সাথে বিনিয়োগ করা।

টেলিকম সেক্টর:

টেলিকম সেক্টরে সাম্প্রতিক সময়ে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে, বিশেষ করে ডিজিটালাইজেশন এবং নতুন প্রযুক্তি গ্রহণের ফলে। গ্রামীণফোন এবং রবি তাদের নতুন প্যাকেজ এবং প্রযুক্তি নিয়ে বাজারে ভালো সাড়া পাচ্ছে। তবে উচ্চ প্রতিযোগিতা এবং কিছু কোম্পানির লভ্যাংশ কমে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে, যা বিনিয়োগকারীদের জন্য কিছুটা চিন্তার কারণ হতে পারে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই সেক্টরে যারা দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ করতে চান, তাদের জন্য এটি লাভজনক হতে পারে, কিন্তু স্বল্পমেয়াদী বিনিয়োগকারীদের সতর্ক থাকা উচিত।

আগামীকালের বাজারের সম্ভাব্য চিত্র:

বাজার বিশ্লেষকদের মতে, আগামীকাল শেয়ার বাজারে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। দিনের শুরুতে কিছুটা ইতিবাচক প্রবণতা দেখা গেলেও দিন শেষে বাজারে অস্থিরতা আসতে পারে। বিশেষ করে যেসব সেক্টর ইতিবাচক পারফর্ম করেছে, সেগুলোতে কিছুটা মুনাফা নেওয়ার প্রবণতা দেখা যেতে পারে। সামগ্রিকভাবে, বাজারে কিছুটা চাপ অনুভূত হতে পারে, বিশেষ করে ব্যাংকিং এবং টেলিকম সেক্টরে। তবে ফার্মাসিউটিক্যালস এবং টেক্সটাইল সেক্টর কিছুটা স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে।

বিনিয়োগকারীদের করণীয়:

অস্থিরতার সময় বিনিয়োগকারীদের সবচেয়ে বড় কৌশল হলো সতর্কতা এবং দূরদর্শিতা। শেয়ার বাজারে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করা সবসময়ই বুদ্ধিমানের কাজ। \"ওয়ারেন বাফেট\" এর একটি উক্তি এখানে প্রাসঙ্গিক: \"বাজারের অস্থিরতা নিয়ে উদ্বিগ্ন হবেন না; আপনার দীর্ঘমেয়াদি কৌশল যদি সঠিক হয়, তাহলে আপনি সফল হবেন।\" বিনিয়োগকারীদের উচিত মৌলিকভাবে শক্তিশালী এবং লভ্যাংশ প্রদানকারী কোম্পানিগুলোতে ফোকাস করা, যেগুলো দীর্ঘমেয়াদে ভালো লাভের সম্ভাবনা রাখে।

কিছু পরামর্শ:

১. মৌলিকভাবে শক্তিশালী কোম্পানি নির্বাচন করুন: শেয়ারের মূল্য ওঠানামা করে, তবে যেসব কোম্পানির ফান্ডামেন্টাল ভালো, সেগুলো দীর্ঘমেয়াদি লাভ দিতে পারে।

২. লাভ তোলার কৌশল: কিছু শেয়ারের মূল্য বাড়লে সেখানে ছোটখাটো মুনাফা তুলে নেওয়া ভালো হতে পারে, বিশেষ করে যেসব সেক্টরে অস্থিরতা বেশি।

৩. বাজারের গতি মনোযোগ সহকারে পর্যবেক্ষণ করুন: অস্থির বাজারে দ্রুত সিদ্ধান্ত না নিয়ে কিছুটা সময় নিয়ে বাজারের প্রবণতা পর্যবেক্ষণ করে তারপর সিদ্ধান্ত নেওয়া ভালো।

সর্বোপরি, আগামীকালের শেয়ার বাজারে বিনিয়োগকারীদের উচিত সতর্কভাবে বাজারের পরিস্থিতি মূল্যায়ন করে বিনিয়োগ করা। অস্থিরতার মধ্যে সঠিক কৌশল গ্রহণ করলে বিনিয়োগকারীরা লাভবান হতে পারেন, তবে ভুল সিদ্ধান্ত বড় ক্ষতির কারণও হতে পারে।


রেজুয়ান আহম্মেদ: কলামিস্ট, বিশ্লেষক; সম্পাদক অর্থনীতি ডটকম
img

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের দুর্নীতির তথ্য চেয়ে গণবিজ্ঞপ্তি

প্রকাশিত :  ১১:৫০, ০৩ অক্টোবর ২০২৪
সর্বশেষ আপডেট: ১৩:৩২, ০৩ অক্টোবর ২০২৪

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে পলায়নকারী শেখ হাসিনা সরকারের সময়ে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি আইনের অধীনে করা চুক্তিগুলো পর্যালোচনায় গঠিত জাতীয় কমিটি জনগণের কাছে দুর্নীতির তথ্য চেয়ে গণবিজ্ঞপ্তি দিয়েছে।

আজ বৃহস্পতিবার (৩ সেপ্টেম্বর) বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয় থেকে জারি করা হয়।

ওই গণবিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, যে কোনো ব্যক্তি ওই আইনের অধীনে চুক্তিবদ্ধ দেশের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের সংস্থাগুলোর দুর্নীতি সংক্রান্ত যে কোনো তথ্য-উপাত্ত ও প্রমাণাদি কমিটিতে পাঠাতে পারবেন। আগামীকাল (শুক্রবার) থেকে আগামী ৩১ অক্টোবরের মধ্যে nationalreviewcommittee@gmail.com ই-মেইল করে জাতীয় রিভিউ কমিটিতে অভিযোগ দাখিল করা যাবে। তবে কমিটি প্রয়োজন মনে করলে পরে অভিযোগ দাখিলকারী এবং অভিযুক্ত ব্যক্তি বা তার প্রতিষ্ঠান বা সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করবে।

এছাড়া ওই চুক্তির অধীনে বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান ও সংস্থাগুলোর সঙ্গে আলাদাভাবে যোগাযোগ করে জাতীয় কমিটি প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করবে। আওয়ামী লীগ সরকার ২০১০ সালে দুই বছরের জন্য ‘বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইন’ করে। পরে তিন দফায় ওই আইনের মেয়াদ বাড়ানো হয় ১৪ বছর। ওই আইনে বলা হয়েছে, বিদ্যুতের জন্য জ্বালানি আমদানি অথবা বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন অথবা বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে অন্য কোনো কার্যক্রম, গৃহীত কোনো ব্যবস্থা, আদেশ বা নির্দেশের বৈধতা নিয়ে কোনো আদালতে প্রশ্ন তোলা যাবে না। সে কারণে এ আইনকে বিদ্যুৎ খাতের ‘দায়মুক্তি আইন’ বলেন সমালোচকরা।

এই আইনের সুযোগ নিয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বিপুল অনিয়ম ও দুর্নীতি হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারের বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খানের ভাষায়, বিগত সরকারের সময় জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতে ‘অনিয়মের মহোৎসব’ হয়েছে। বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি আইনের অধীনে করা চুক্তিগুলো পর্যালোচনা করতে গত ৫ সেপ্টেম্বর পাঁচ সদস্যের জাতীয় কমিটি গঠন করে বিদ্যুৎ বিভাগ।

এ কমিটির আহ্বায়ক হিসেবে আছেন হাইকোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মঈনুল ইসলাম চৌধুরী। আর সদস্য হিসেবে আছেন বুয়েটের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক প্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক আবদুল হাসিব চৌধুরী, কেপিএমজি বাংলাদেশ এর সাবেক সিওও ফেলো চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্ট (এফসিএ) আলী আশফাক, বিশ্ব ব্যাংকের সাবেক লিড ইকোনোমিস্ট জাহিদ হোসেন এবং ইউনিভার্সিটি অব লন্ডনের ফ্যাকাল্টি অব ল অ্যান্ড সোশাল সায়েন্সের অধ্যাপক (অর্থনীতি) মোশতাক হোসেন খান।

এই কমিটি তাদের কাজের জন্য যে কোনো সূত্র থেকে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ ও প্রয়োজনীয় যে কোনো নথি নিরীক্ষা করতে পারবে, সংশ্লিষ্ট যে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে শুনানিতে আহ্বান করতে পারবে। কমিটি 'বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইন, ২০১০' এর আওতায় ইতোমধ্যে সম্পাদিত চুক্তিগুলোতে সরকারের স্বার্থ সংরক্ষিত হয়েছে কিনা তা নিরীক্ষা করবে। নিরীক্ষার ভিত্তিতে পরবর্তী কার্যক্রম বিষয়ে সুপারিশ প্রণয়ন করবে এবং বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় কমিটিকে সাচিবিক ও আনুষঙ্গিক সহায়তা দিবে বলেও প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়েছে।