প্রকাশিত :
১৮:১১, ০১ অক্টোবর ২০২৪ সর্বশেষ আপডেট: ১৯:০৩, ০১ অক্টোবর ২০২৪
হামাসের সাবেক প্রধান ইসমাইল হানিয়া, হিজবুল্লাহ প্রধান হাসান নাসরুল্লাহ ও ইসলামিক বিপ্লবী গার্ডের কমান্ডারদের হত্যার প্রতিশোধ নেওয়ার হুমকির মধ্যে ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে মিসাইল হামলা চালিয়েছে ইরান।
ইরান ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ার পর দখলদার ইসরায়েলের বাণিজ্যিক রাজধানী তেলআবিবে সতর্কতামূলক সাইরেন বেজে ওঠে। এছাড়া সাইরেন শোনা যায় জেরুজালেমেও। ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী মাইক্রো ব্লগিং সাইট এক্সে দেয়া এক পোস্টে জানিয়েছে, সব ইসরায়েলি বোমা আশ্রয় কেন্দ্রে অবস্থান নিয়েছেন।
রয়টার্সের সাংবাদিকরা ইসরায়েলের পার্শ্ববর্তী জর্ডানের আকাশ থেকে এসব ক্ষেপণাস্ত্র আটকানোর দৃশ্য দেখেছেন। ইসরায়েলি মিডিয়ার খবরে বলা হয়েছে অন্তত শতাধিক ১০০ ক্ষেপণান্ত্র চালিয়েছি ইরান।
দক্ষিণ লেবাননে স্থল অভিযান চালানোর প্রেক্ষিতে ইসরায়েলে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালাবে ইরান কয়েক ঘণ্টা আগেই সতর্কবার্তা জারি করে যুক্তরাষ্ট্র। এরপরই হামলার ঘটনা ঘটল।
মঙ্গলবার (১ অক্টোবর) বাংলাদেশ সময় রাত ১০টা ৩০ মিনিটের পর ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে দ্বিতীয়বারের মতো সরাসরি হামলা চালিয়েছে তেহরান।
ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যমে দাবি করা হয়েছে, আজকের হামলায় ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে একসঙ্গে একশরও বেশি মিসাইল ছুড়েছে ইরান। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা জানিয়েছে, জর্ডানের রাজধানী আম্মানের আকাশ দিয়ে মিসাইল উড়ে যেতে দেখা গেছে। মিসাইলের কারণে জর্ডানেও সাইরেন বেজে ওঠে। ওই সময় অনেক মানুষ বাইরে বের হয়ে আসেন।
ইরানের মিসাইল হামলার মধ্যেই একটি বিবৃতি দিয়েছে দখলদার ইসরায়েলের সেনাবাহিনী। এতে তারা বলেছে, ইরান এখনো মিসাইল ছুড়ছে এবং সেগুলো আটকানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। সেনাবাহিনী পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সাধারণ ইসরায়েলিদের আশ্রয়কেন্দ্রে থাকার আহ্বান জানিয়েছে। সেনাবাহিনী আরও বলেছে, যেসব বিকট শব্দ শোনা যাচ্ছে; সেগুলো হয় মিসাইল আটকানোর কারণে হচ্ছে অথবা আঘাত হানার কারণে হচ্ছে।
মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী দাতো সেরি আনোয়ার ইব্রাহিম অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে একান্ত বৈঠকের পর বন্ধুপ্রতিম দুই দেশের সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে একমত হয়েছেন ।
এরই অংশ হিসেবে টিকিট জটিলতায় মালয়েশিয়া যেতে না পারা ১৮ হাজার শ্রমিককে সব ধরনের সহায়তা দেওয়া হবে বলে জানান মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী।
আজ শুক্রবার (৪ অক্টোবর) প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে একান্ত বৈঠকের পর বিকেলে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে এক সংবাদ সম্মেলনে এ সুখবর দেন আনোয়ার ইব্রাহিম।
সংবাদ সম্মেলনে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী বলেন, মালোয়েশিয়ার শ্রমবাজারে প্রথম পর্যায়ে ১৮ হাজার বাঙালি নেওয়া হবে। বাংলাদেশে যেসব মালয়েশিয়ান প্রতিষ্ঠান কাজ করছে তাদেরও সুবিধা দেওয়ার বিষয়ে আশ্বাস দিয়েছি।
আনোয়ার ইব্রাহিম আরও বলেন, আমাদের দেশে আরও জনশক্তি প্রয়োজন। তবে উভয় দেশের মধ্যে শ্রম অভিবাসন প্রক্রিয়ায় সচ্ছতা থাকতে হবে। এছাড়া সেমি কন্ডাক্টর, ডেটা সেন্টার, এআই, নিউ টেকনলোজির বিষয়ে যৌথভাবে কাজ করার বিষয়ে সম্মত হয়েছি।
এসময় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বের ওপর পূর্ণ আস্থা রয়েছে বলে জানান আনোয়ার ইব্রাহিম।
তিনি বলেন, আমি বিশ্বাস করি বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে এবং সর্বাত্মক সহযোগী হিসেবে আমরা পাশে থাকব। এছাড়াও এ অঞ্চল শান্তিপূর্ণ রাখতে মালয়েশিয়া আসিয়ানকে আরও কার্যকর করতে চায় বলেও জানান আনোয়ার ইব্রাহিম।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ থেকে জনশক্তি রপ্তানির তালিকায় চতুর্থ দেশ হিসেবে রয়েছে মালয়েশিয়া। কিন্তু এরপরও দেশটির শ্রমবাজার নিয়ে বাংলাদেশের কর্মীদের এক ধরনের অনিশ্চয়তা বরাবরই ছিল। এ নিয়ে দুদেশের মধ্যে বিভিন্ন সময় নানা টানাপোড়েনও সামনে এসেছে। গত দেড় দশকে বিভিন্ন সময় দফায় দফায় বন্ধ ছিল সেখানকার বাংলাদেশের শ্রমবাজার।
এ বিষয়ে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার প্রথম দফায় বন্ধ হয় ২০০৯ সালে। আর সবশেষ গত ১ জুন শেষ হয়ে যায় মালয়েশিয়ায় কর্মী ভিসায় যাওয়ার সময়। শ্রমবাজার বন্ধ হওয়ার ক্ষেত্রে প্রতিবারই শ্রমিক পাঠানোর ক্ষেত্রে চক্র বা সিন্ডিকেটের বিষয়গুলো আলোচনা এসেছে। এসব চক্রের বিরুদ্ধে উঠেছে অনিয়ম, দুর্নীতি ও ঘুসের অভিযোগ জানা গেছে, গত চার মাস ধরে বাংলাদেশের মালয়েশিয়ায় গমনেচ্ছু কর্মীদের জন্য দেশটির শ্রমবাজার বন্ধ রয়েছে।
সর্বশেষ ৩১ মে দেশটিতে বাংলাদেশিদের জন্য শ্রমবাজার বন্ধ করা হয়। এতে বিএমইটি কার্ড ও ভিসা থাকা সত্ত্বেও প্রায় ১৭ হাজার ৭৭৭ জন বাংলাদেশি কর্মী দেশটিতে যেতে পারেননি। ৩১ মের পর যেতে না পারা এসব কর্মী ফের যাওয়ার চেষ্টা ও টাকা ফেরত পাওয়ার জন্য এজেন্সিগুলোতে ধর্না দেন। টাকা খুইয়ে এসব কর্মীর অনেকে এখন মানবেতর জীবনযাপন করছেন। তারা মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার খোলার অপেক্ষায় রয়েছেন।
এরপর ২০২২ সালে মালয়েশিয়া সরকার আবার শ্রমবাজার খুলে দিলে নতুন করে চক্র গড়ে ওঠে। চলতি বছরের মার্চে মালয়েশিয়া সরকার জানায়, দেশটি আপাতত আর শ্রমিক নেবে না। যারা অনুমোদন ও ভিসা পেয়েছেন, তাদের ৩১ মের মধ্যে মালয়েশিয়ায় যেতে হবে। এভাবে দফায় দফায় শ্রমবাজার বন্ধ হওয়ায় প্রবাসী আয়ের ওপরও নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়।
এ অবস্থায় শ্রমবাজারে আনোয়ার ইব্রাহিমের এই ঘোষণা খুবই ইতিবাচক মনে করছেন বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, ১৮ হাজার একটা বড় সংখ্যা। এতগুলো লোক যেতে না পারা আমাদের জন্য একটা বিরাট সমস্যা ছিল। এই সিদ্ধান্তটি বাস্তবায়ন হলে এটি সহমর্মিতার একটা ভালো দৃষ্টান্ত হবে। এই সমস্যাটির আশু সমাধান হলে মালয়েশিয়ার সঙ্গে আমাদের সম্পর্কের জায়গাটা আরেকটু জোরদার হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কূটনৈতিক বিশ্লেষক ও সাবেক রাষ্ট্রদূত ড. এম হুমায়ুন কবির বলেন, মালয়েশিয়া একটা সময়সীমা বেধে দেওয়ার কারণে এই লোকগুলো আটকে ছিলো। এখন যদি তারা যেতে পারে অন্ততপক্ষে সাময়িকভাবে সমস্যাটির সমাধান হবে। এটি বাস্তবায়ন হতে হয়তো কিছুদিন সময় লাগবে। তবে যেহেতু দুইদেশের সর্বোচ্চ পর্যায়ে এটি আলোচনা হয়েছে, আশা করছি দ্রুতই ফলাফল পাওয়া যাবে।
তিনি বলেন, এই সরকার কয়েকদিন আগেই আরব আমিরাত থেকে ৫৭ জন বন্দিকে ফিরিয়ে এনেছে। আর মালয়েশিয়া যেতে ইচ্ছুক শ্রমিকদের এই সমস্যাটির সমাধান হলে এটি সরকারের জন্যও একটা ইতিবাচক জায়গা তৈরি করবে। মানুষের কাছে অন্তর্বর্তী সরকারের বিশেষ করে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের ভাবমূর্তি আরেকটু সজীব হবে, শক্তিশালী হবে। পাশাপাশি অনেকগুলো মানুষের জীবন একটা ইতিবাচক সমাধান পাবে।
এর আগে, শুক্রবার (৪ অক্টোবর) দুপুর ২টার দিকে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌঁছান আনোয়ার ইব্রাহিম। তাকে স্বাগত জানান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। পরে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীকে বিমানবন্দরে গার্ড অব অনার দেওয়া হয়।
আনোয়ার ইব্রাহিমের সঙ্গে তার মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, মন্ত্রী, সংসদ সদস্য এবং ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে ৫৮ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল রয়েছে।
তারও আগে, বাংলাদেশের পট পরিবর্তনের পর গত ১৪ আগস্ট মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম খুব দ্রুত বাংলাদেশ সফরের ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন। সে সময় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী ব্যক্তিগতভাবে অভিনন্দন জানাতে ফোন করে এ ইচ্ছা ব্যক্ত করেন।