
প্রিয় ডক্টর মুহাম্মদ ইউনুস স্যার,

প্রিয় ডক্টর মুহাম্মদ ইউনুস স্যার ,
আমি করিম চাচা, একজন সাধারণ শ্রমজীবী মানুষ। আজ আমি নিজের অসহায়ত্ব থেকে এই চিঠি লিখতে বসেছি। বয়স হয়েছে, হাড়ের জোরও কমে এসেছে, কিন্তু বাজারের দিকে তাকালে মনে হয়, এই বয়সে আবার নতুন যুদ্ধ করতে হবে—জীবনধারণের জন্য। হ্যাঁ, আমি বলছি সেই ভয়াবহ যুদ্ধের কথা, যে যুদ্ধ আমরা প্রতিদিন লড়ছি দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির সাথে।
আমরা নিম্নবিত্ত, মধ্যবিত্ত—সত্যি বলতে গেলে, জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে আমাদের ব্যয় মাপার ক্ষমতা সীমিত। কিন্তু আজ বাজারে গেলে মনে হয়, সেই সীমা কোথায় হারিয়ে গেল? এক কেজি চাল কিনতে গেলে বুক কেঁপে ওঠে, একটু সবজি কিনতে গেলে শঙ্কিত হই—পরের বেলায় খাবারটা হবে তো? পরিবারে যারা আছেন, তাদের মুখের দিকে তাকিয়ে অজান্তেই চোখে পানি এসে যায়। কীভাবে বলি যে, সব কিছুই হাতের বাইরে চলে গেছে?
স্যার, আপনি নিশ্চয়ই জানেন, শুধু আমাদের ঘরে অন্নের অভাব হচ্ছে না। আজ আমাদের পকেট ফাঁকা, মনের দুঃখ সীমাহীন। আমরা যারা প্রতিদিনের খাবার সংগ্রহ করতে কষ্ট করি, সেই আমরা আজ একবেলা খাবার কমিয়ে জীবন চালাতে বাধ্য হচ্ছি। যারা একসময় শাক-সবজি দিয়ে একটু পুষ্টি পেতো, তারাও আজ শুধু ভাত-লবণেই সন্তুষ্ট। কি এই জীবনের নাম?
আমি তো শ্রমজীবী মানুষ। দিনশেষে যা উপার্জন করি, তাতে সংসারের খরচ মেটাতে হিমশিম খাই। কিন্তু আজ যেটা কষ্টকর, সেটা হচ্ছে, আমার সন্তানদের পুষ্টিকর খাবার দেওয়ার সামর্থ্যও আর নেই। ওরা শীতকালে শীত নিবারণের উপায় খুঁজে পায় না, চিকিৎসার জন্য দোরগোড়ায় যেতেও সাহস পাই না।
অথচ বাজারে যখন যাই, দেখি কৃত্রিম সংকট তৈরি করে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী পণ্যের দাম আকাশে তুলছে। তারা নিজেদের মুনাফার জন্য আমাদের দুঃখ, কষ্ট, বেদনা সবকিছুকে হাস্যকর করে তুলছে। কোথায় আছে সরকার, কোথায় আছে প্রশাসন? তারা কেন এইসব অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে না?
দয়া করে আমাদের আরেকটু সময় দিন, আমাদের ওপর আরেকটু নজর দিন। আমরা আপনাদের কাছে দয়া চাই না, চাই শুধু সঠিক বিচার ও ন্যায়বিচার। বাজার মনিটরিং করুন, মধ্যস্বত্বভোগীদের দমন করুন, সরবরাহের চেইন ঠিক রাখুন। আমরা শুধু একটু সচ্ছল জীবন চাই—যে জীবনে দু\'বেলা খাবার থাকবে, সন্তানের জন্য পুষ্টি থাকবে, আর আমাদের মুখে একটু হাসি থাকবে।
আল্লাহ আমাদের দেখছেন, এই নীরব দুর্যোগের দিনে আমরা যে কীভাবে টিকে আছি, সেটাও তিনি জানেন। কিন্তু আমাদের আশা আপনাদের কাছেই, আপনি যদি আমাদের কথা না শোনেন, যদি আমাদের দুর্দশার সমাধান না করেন, তাহলে এই দেশের সামগ্রিক অর্থনীতি ধ্বংসের পথে ধাবিত হবে।
এই চিঠি দিয়ে আমি শুধু আপনাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই। আমাদের কথা শুনুন, আমাদের জীবন থেকে ব্যথা দূর করুন, আমাদের সচ্ছল জীবনের পথে ফিরিয়ে আনুন।
ইতি,
করিম চাচা
একজন অসহায় শ্রমজীবী