img

সচিবদের ২৫ নির্দেশনা প্রধান উপদেষ্টার সচিবদের ২৫ নির্দেশনা প্রধান উপদেষ্টার

প্রকাশিত :  ২০:১৯, ০৭ অক্টোবর ২০২৪
সর্বশেষ আপডেট: ২০:৩২, ০৭ অক্টোবর ২০২৪

 সচিবদের ২৫ নির্দেশনা প্রধান উপদেষ্টার সচিবদের ২৫ নির্দেশনা প্রধান উপদেষ্টার

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস নতুন বাংলাদেশ গড়তে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিবদের ২৫টি নির্দেশনা দিয়েছেন। প্রধান উপদেষ্টার এ সব‌ নির্দেশনা সম্প্রতি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে সচিব ও সিনিয়র সচিবদের কাছে পাঠানো হয়েছে।

প্রধান উপদেষ্টার সভাপতিত্বে গত ৪ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত সচিব সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় তিনি সিনিয়র সচিব/সচিবদের উদ্দেশে এ গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন দিক-নির্দেশনা দিয়েছেন সেগুলো নির্দেশনার চিঠিতে জানানো হয়েছে।


নির্দেশনাগুলো হলো

১. ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সৃষ্ট নতুন বাংলাদেশকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য সরকারের সব পর্যায়ে সংস্কার কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়নে প্রধান উপদেষ্টার দেওয়া ‌‘মার্চিং অর্ডার’ অনুসরণ করতে হবে।

২. সৃষ্টিশীল, নাগরিকবান্ধব মানসিকতা নিয়ে প্রতিটি মন্ত্রণালয়/বিভাগকে জরুরি-ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় সংস্কার পরিকল্পনা এবং একই সঙ্গে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি সংস্কার কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য সময়াবদ্ধ কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে হবে।

৩. সংস্কার কর্মসূচি প্রণয়নে প্রয়োজন অনুযায়ী সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা ও তাদের মতামত নিতে হবে।

৪. বিবেক ও ন্যায়বোধে উজ্জীবিতহয়ে সবাইকে স্ব স্ব ক্ষেত্রে সততা, নিষ্ঠা, জবাবদিহিতা নিশ্চিত করে নতুন বাংলাদেশ গড়তে হবে।

৫. নতুন বাংলাদেশ গড়ার জন্য গৎবাঁধা চিন্তাভাবনা থেকে বেরিয়ে এসে, চিন্তার সংস্কার করে, সৃজনশীল উপায়ে জনস্বার্থকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে সরকারি কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে।

৬. দুর্নীতির মূলোৎপাটন করে, সেবা সহজীকরণের মাধ্যমে জনগণের সর্বোচ্চ সন্তুষ্টি অর্জন করতে হবে।

৭. বাজেটের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা এবং সরকারি অর্থের সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।

৮. সরকারি ক্রয়ে যথার্থ প্রতিযোগিতা নিশ্চিত করতে হবে এবং স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা নিশ্চিতে বিদ্যমান প্রতিবন্ধকতা দূর করতে হবে।

৯. বর্তমানে বাংলাদেশকে নিয়ে বিশ্বব্যাপী যে আগ্রহ, ইতিবাচক ধারণা তৈরি হয়েছে, দেশের স্বার্থে তা সর্বোত্তম উপায়ে কাজে লাগাতে হবে।

১০. নিজ কর্তব্যকর্মে দায়িত্ববোধ ও সংবেদনশীলতা বজায় রাখতে হবে।

১১. সেবা-প্রার্থীদের কেউ যেন কোনরূপ ভোগান্তি, হয়রানি কিংবা কোনো কারণে দীর্ঘসূত্রিতার শিকার না হয় তা নিশ্চিত করতে হবে।

১২. আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নতির ব্যবস্থা করতে হবে।

১৩. প্রতিটি মন্ত্রণালয়/বিভাগকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কার্যক্রম নিতে হবে।

১৪. জরুরি সরবরাহ নিশ্চিত করে তা অব্যাহত রাখতে হবে।

১৫. কৃষি উৎপাদন যাতে ব্যাহত না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

১৬. সরকারকে জনবান্ধব সরকারে পরিণত করতে সমবেতভাবে কাজ করতে হবে।

১৭. মানবসম্পদ উন্নয়নে যথাযথ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে এবং প্রশিক্ষণ কার্যক্রম যাচাই করে প্রয়োজনে সংস্কার করতে হবে।

১৮. বিদ্যুৎ উৎপাদন, সরবরাহ ও সঞ্চালন যাতে ব্যাহত না হয় সে বিষয়ে তৎপর থাকতে হবে।

১৯. শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষাবান্ধব পরিবেশ বজায় রাখতে হবে।

২০. গ্যাসের দেশীয় উৎপাদন বাড়াতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে।

২১. খাদ্য সংগ্রহ, মজুত ও সরবরাহ সন্তোষজনক রাখতে হবে।

২২. আমদানি নির্ভরতা কমিয়ে দেশীয় উৎপাদন বাড়াতে হবে। আমদানির বিকল্প উৎস বের করতে হবে।

২৩. ভোগ্যপণ্যের বাজার নিয়মিত তদারকি করতে হবে।

২৪ . শিল্প উৎপাদন যাতে ব্যাহত না হয় তা নিশ্চিত করতে হবে।

২৫. আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে হবে।

চিঠিতে প্রধান উপদেষ্টার দেওয়া এসব নির্দেশনা ও সিদ্ধান্তগুলো অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বাস্তবায়নে সচিবদের একান্ত সহযোগিতা ও উদ্যোগ কামনা করা হয়। একই সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশনা অনুযায়ী প্রযোজ্য ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিয়ে সেই বিষয়ে অগ্রগতি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগকে জানানোর অনুরোধ জানানো হয়।


img

ভারত-শ্রীলঙ্কা স্থলসংযোগ: স্বপ্ন না বাস্তবতা?

প্রকাশিত :  ০৬:৫৪, ২২ এপ্রিল ২০২৫
সর্বশেষ আপডেট: ০৭:০৮, ২২ এপ্রিল ২০২৫

ভারতের পরিবেশ বিষয়ক থিংক ট্যাংঙ্ক Urbanacres অবলম্বনে

সাইফুল খান

দুই দশকের পুরনো এক স্বপ্ন আবারও উঠে এসেছে দক্ষিণ এশিয়ার কূটনৈতিক আলোচনায়। ভারত চায়, পক প্রণালী পেরিয়ে শ্রীলঙ্কার সঙ্গে একটি সড়ক ও রেলপথ নির্মাণ করতে। একটি স্থায়ী স্থলসেতু, যা দক্ষিণ এশিয়ার সংযোগকে এক নতুন মাত্রায় নিয়ে যাবে। তবে শ্রীলঙ্কা যেন এবার একটু ভিন্ন পথে হাঁটছে। স্বপ্ন নয়, বাস্তবতা দিয়েই তারা মূল্যায়ন করছে প্রস্তাবটি।

কলম্বোর সিদ্ধান্ত-নির্মাতারা এখন অনেক বেশি সতর্ক। সরকারের অবকাঠামো ও পরিবহন পরিকল্পনা বিভাগের বিশেষজ্ঞরা খোলাখুলিভাবে জানিয়েছেন, “এই মুহূর্তে প্রকল্পটি বাস্তবায়নযোগ্য নয়।” শুধু কারিগরি দিক নয়, তারা তুলেছেন প্রকল্পটির পরিবেশগত ক্ষতি, আর্থিক ভারসাম্য এবং ভূ-রাজনৈতিক জটিলতার প্রশ্ন।

বিশেষ করে গালফ অব মান্নার বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভ ও রাম সেতু এলাকা নিয়ে শ্রীলঙ্কার উদ্বেগ স্পষ্ট। ঐ অঞ্চলের প্রবাল প্রাচীর, মাছের প্রজননক্ষেত্র ও পরিযায়ী পাখির আবাসস্থল এই সেতুর কারণে বিপন্ন হতে পারে। আঞ্চলিক জীববৈচিত্র্য রক্ষার যাত্রায় এটি হবে এক বড় ধরনের ধাক্কা এবং এ নিয়ে জনসচেতনতা বাড়ছে, যা ভবিষ্যতে প্রবল জনমতেও রূপ নিতে পারে।

আরেকটি বড় প্রশ্ন উঠেছে অর্থনীতি নিয়ে। এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা সরাসরি বলেছেন, “দেশ এখনো অর্থনৈতিক সংকট থেকে পুরোপুরি ঘুরে দাঁড়ায়নি। এই মুহূর্তে বড় পরিসরের বিদেশনির্ভর প্রকল্প গ্রহণ মানে ভবিষ্যতের ঝুঁকি বয়ে আনা।”

অন্যদিকে, নয়াদিল্লির স্বপ্ন কিন্তু আঞ্চলিক সংযোগের এক বড় ক্যানভাসে আঁকা। BIMSTEC-এর আওতায় ভারত এমন একটি যোগাযোগব্যবস্থা চায়, যা সড়ক ও রেলপথ দিয়ে শ্রীলঙ্কাকে যুক্ত করবে মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে। এতে নাকি বাণিজ্য, পর্যটন ও কার্বনমুক্ত পরিবহন নতুন গতি পাবে। কিন্তু প্রশ্ন থেকে যায় সমুদ্রের উপর দিয়ে কংক্রিট আর স্টিলের সেতু তৈরি করে পরিবেশবান্ধব লক্ষ্য কীভাবে অর্জিত হবে?

ইতিহাস বলছে, এটাই প্রথম নয়। ২০০০-এর দশকে একবার এমন প্রস্তাব উঠে এসেছিল। তখনও রাজনৈতিক ঐকমত্যের অভাবে তা আলোর মুখ দেখেনি। ২০২৩ সালে শ্রীলঙ্কার রাষ্ট্রপ্রধান নয়াদিল্লি সফরে গেলে যৌথ বিবৃতিতে সংযোগ সহযোগিতার কথা উঠেছিল, কিন্তু বাস্তব অগ্রগতি হয়নি।

তবে এবার প্রেক্ষাপট আরও জটিল। ভারত মহাসাগরে চীনের প্রভাব দিন দিন বাড়ছে। বন্দর নির্মাণ, নৌ অবকাঠামোতে বিনিয়োগ আর কৌশলগত অবস্থান নিয়ে চীন এখন এক গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়। শ্রীলঙ্কা তাদের কৌশলগত স্বায়ত্তশাসন ধরে রাখতে চায়। ফলে, ভারতের সঙ্গে স্থলসংযোগ মানে শুধু প্রযুক্তিগত নয়, রাজনৈতিক ভারসাম্য রক্ষার বিষয়ও।

তবে এই স্থগিত সিদ্ধান্তকে ‘প্রত্যাখ্যান’ হিসেবে দেখা ভুল হবে। বরং শ্রীলঙ্কার এই অবস্থান একটি পরিণত কূটনৈতিক অবস্থান।যেখানে স্বল্পমেয়াদী সুবিধার চেয়ে দীর্ঘমেয়াদী পরিবেশগত ভারসাম্য ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

ভারতও বুঝে গেছে, শুধু সেতু নয়, প্রয়োজন ‘আস্থা’র সেতু। তাই তারা এখন বিকল্প পথ খুঁজছে।যেমন- নতুন ফেরি সার্ভিস, সবুজ নৌ পরিবহন করিডোর বা পরিবেশবান্ধব বিমান চলাচল।

অবশেষে একটাই কথা বলা যায়।সংযোগ মানেই কংক্রিট আর স্টিলের সেতু নয়। সংযোগ মানে প্রেক্ষাপট, পরিকল্পনা ও পারস্পরিক সম্মান। আর এখন, ভারত-শ্রীলঙ্কার মধ্যে সেই ‘ভবিষ্যতের সেতু’ গড়ার অপেক্ষা রয়ে গেল।যেদিন পরিবেশ, অর্থনীতি ও ভূ-রাজনীতি একসাথে সবুজ সংকেত দেবে।

সর্বোপরি শ্রীলঙ্কা ভারতের সাথে সম্পর্কের ক্ষেত্রে খুবই সচেতনভাবে পদক্ষেপ নিতে চাচ্ছে। যা ভারতের কৌশলগত রাজনীতিকে প্রভাবিত করবে।


সাইফুল খান: ইতিহাস, রাজনীতি ও আন্তর্জাতিক বিষয়ক বিশ্লেষক।