img

আজ মহানবমী, ১০৮টি পদ্মে হবে দেবীদুর্গার পূজা

প্রকাশিত :  ০৮:১৬, ১২ অক্টোবর ২০২৪

আজ মহানবমী, ১০৮টি পদ্মে হবে দেবীদুর্গার পূজা

মহানবমী আজ। শারদীয় দুর্গোৎসবের চতুর্থ দিন। শনিবার (১২ অক্টোবর) সন্ধ্যা থেকেই মণ্ডপে-মণ্ডপে ছড়িয়ে পড়বে বিষাদের সুর। ভক্তদের জন্য দেবীকে প্রাণ ভরে দেখে নেওয়ার আজই শেষ দিন। 

পঞ্জিকানুযায়ী, আগামীকাল রোববার বিজয়া দশমির মধ্য দিয়ে শেষ হবে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের এই মহোৎসব। আজ মহানবমী পূজা। অনেকের বিশ্বাস, মহানবমীর দিন হচ্ছে দেবী দুর্গাকে প্রাণ ভরে দেখে নেওয়ার ক্ষণ। এদিন অগ্নিকে প্রতীক করে সব দেবদেবীকে আহুতি দেওয়া হয়।

এদিন সন্ধ্যায় দেবীদুর্গার ‘মহাআরতি’ করা হয়। মহানবমীতে বলিদান ও নবমী হোমের রীতি রয়েছে। মূলত ‘সন্ধিপূজা’ শেষ হলে শুরু হয় মহানবমী। ১০৮টি পদ্মফুলে দেবীদুর্গার পূজা শেষে করা হবে অঞ্জলি নিবেদন ও প্রসাদ বিতরণ। মণ্ডপে মণ্ডপে প্রাণের উৎসবে ভক্তদের মাঝে বইবে বিষাদের সুর। এদিনেই সবচেয়ে বেশি ভিড় হয়ে থাকে পূজামণ্ডপগুলোতে।

শ্রী শ্রী চন্ডী থেকে জানা যায়, এদিন দুর্গা রুদ্ররূপ (মা কালী) ধারণ করে মহিষাসুর এবং তার তিন যোদ্ধা চন্ড, মুন্ড এবং রক্তবিজকে হত্যা করেন। নবমী তিথি শুরুই হয় ‘সন্ধিপূজা’ দিয়ে। সন্ধিপূজা হয় অষ্টমী তিথির শেষ ২৪ মিনিট ও নবমীর সূচনার প্রথম ২৪ মিনিট জুড়ে। 

এসময় দেবী চামুন্ডার পূজা হয়। ১০৮টি মাটির প্রদীপ জ্বালিয়ে ১০৮টি পদ্মফুল নিবেদন করা হয় দেবীর চরণে। আর ঠিক এ কারণে পূজার মন্ত্রেও সেই বিশেষত্ব উল্লেখ করা হয়েছে। বুধবার মহাষষ্ঠীর মধ্য দিয়ে শুরু হওয়া শারদীয় এ দুর্গোৎসবের শেষ হবে আগামীকাল রোববার বিজয়া দশমীতে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে।

বিশুদ্ধ পঞ্জিকা অনুসারে, এবার মহানবমী ও দশমী পূজা একই দিন পড়েছে। মহানবমী পূজা শেষে দশমী তিথি আরম্ভ হয়ে যাওয়ায় আজই দশমী পূজা সম্পন্ন হবে। সকাল ৬টা ১২ মিনিটের মধ্যে দুর্গাদেবীর মহানবমী কল্পারম্ভ ও বিহিতপূজা অনুষ্ঠিত হবে। এরপর সকাল ৮টা ২৬ মিনিটের মধ্যে দেবীদুর্গার দশমী বিহিতপূজা ও পূজান্তে দর্পণ বিসর্জন করা হবে।

পূজা শেষে যথারীতি পুষ্পাঞ্জলি, প্রসাদ বিতরণ ও সন্ধ্যায় ভোগ আরতি থাকবে। এ উপলক্ষে ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির মেলাঙ্গনের পূজামন্ডপে সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত হবে আরতি প্রতিযোগিতা।

গতকাল শুক্রবার (১০ অক্টোবর) অঞ্জলি, প্রার্থনা, বন্দনায় পালিত হয়েছে মহাঅষ্টমী ও সন্ধি পূজা। এদিনের মূল আকর্ষণ ছিল কুমারী পূজা। হিন্দু শাস্ত্র মতে, মানববন্দনা, নারীর সম্মান ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠা এবং ঈশ্বরের আরাধনাই কুমারী পূজার শিক্ষা।

কুমারী পূজা উপলক্ষে শুক্রবার সকাল থেকেই ভক্তরা জড়ো হতে থাকেন রামকৃষ্ণ মিশনে। সকালে নবপত্রিকাস্নানসহ পূজার অন্যান্য রীতি পালনের পর বেলা সাড়ে ১০টায় যখন কুমারী পূজা শুরু হয়, তখন মন্ডপের প্যান্ডেলে তিল ধারণের জায়গা ছিল না।

img

রুহের জাগরণ!

প্রকাশিত :  ০৭:১৯, ০৯ ডিসেম্বর ২০২৪

আকাশে গোধূলির রঙ খেলা করছে। পশ্চিমে সূর্যের বিদায়বেলার শেষ আলো সোনালী আভা ছড়াচ্ছে। এমন এক নিস্তব্ধ সন্ধ্যায় তাহসিন তার ল্যাবরেটরির জানালার পাশে দাঁড়িয়ে ছিল। সে একটি বিশেষ গবেষণায় ডুবে ছিল—“মানুষের রুহের প্রকৃতি এবং প্রযুক্তির মাধ্যমে তার জাগরণ সম্ভব কি না?”

তাহসিন, একজন তরুণ বিজ্ঞানী, সবসময়ই বিশ্বাস করত যে মানব শরীর একটি অত্যন্ত উন্নত হার্ডওয়্যার, কিন্তু রুহ হলো সেই অদৃশ্য সফটওয়্যার যা এই হার্ডওয়্যারকে প্রাণবন্ত করে। সে জীবনের রহস্যময়তাকে আরও গভীরভাবে বুঝতে চেয়েছিল। কিন্তু তার একাকী এই গবেষণা খুব সহজ ছিল না। একদিকে পরিবার আর বন্ধুদের অনাস্থা, অন্যদিকে সমাজের চাপ—সবকিছুই তাকে যেন অদৃশ্য শিকলে বেঁধে রেখেছিল।

তবে, তাহসিনের জীবন পাল্টে গেল যেদিন তার দেখা হলো নাফিসার সাথে। নাফিসা একজন মনোবিজ্ঞানী, যার গবেষণার মূল বিষয় ছিল মানুষের আধ্যাত্মিক ও মানসিক জগত। সে বিশ্বাস করত, প্রযুক্তি যতই উন্নত হোক, মানুষের প্রকৃত আত্মজাগরণ সম্ভব কেবল তার রুহের সাথে সংযোগ স্থাপন করেই।

নাফিসার সাথে পরিচয়ের পর তাহসিন প্রথমবার অনুভব করল, তার গবেষণার পরিপূর্ণতা আসতে পারে যদি তারা দু’জনে একসাথে কাজ করে। নাফিসা তাকে বলেছিল,

“তুমি মানুষের রুহকে মেশিন দিয়ে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করছ, কিন্তু রুহের শক্তি এমন কিছু যা মেশিন বা প্রযুক্তির দৃষ্টিতে ধরা যায় না। আমাদের আল্লাহর সৃষ্টি বোঝার জন্য মন ও আত্মাকে আরও গভীরভাবে বিশ্লেষণ করতে হবে।”

এই কথাগুলো তাহসিনের মনে গভীর দাগ কাটল। সে বুঝতে পারল, তাদের গবেষণার মূল বিষয় শুধু বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব নয়; বরং মানবিক মূল্যবোধ, আধ্যাত্মিকতা, এবং বিশ্বাসের মেলবন্ধন।

তাহসিন আর নাফিসা মিলে শুরু করল এক নতুন পরীক্ষা। তারা চেষ্টা করল মানুষের মন ও রুহের মধ্যে লুকিয়ে থাকা সেই অনন্ত শক্তিকে খুঁজে বের করতে, যা মানুষকে তার সৃষ্টির প্রকৃত উদ্দেশ্যের দিকে পরিচালিত করতে পারে।

তাদের গবেষণায় একটা প্রশ্ন বারবার উঠে আসছিল:

“মানুষ কি তার সৃষ্টিকর্তার উদ্দেশ্য বুঝতে পারছে? নাকি প্রযুক্তির প্রভাবে হারিয়ে যাচ্ছে তার আত্মা?”

তাহসিন একটি বিশেষ ডিভাইস তৈরি করেছিল, যার মাধ্যমে মানুষের মস্তিষ্কের তরঙ্গ আর হৃদয়ের অনুভূতিগুলো পরিমাপ করা যেত। কিন্তু নাফিসা বারবার তাকে বলছিল,

“এই যন্ত্র দিয়ে রুহের প্রকৃত অবস্থা বোঝা যাবে না। রুহকে জাগাতে হলে আমাদের অনুভূতির গভীরে যেতে হবে।”

তারা দেখতে পেল, আধুনিক প্রযুক্তি মানুষের জীবনকে সহজ করে তুললেও মানুষের মন ও আত্মার উপর একটি নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। মানুষ ধীরে ধীরে ভুলে যাচ্ছে নিজের উদ্দেশ্য। রুহ যেন এক অন্ধকার কক্ষে আটকে আছে, আর প্রযুক্তি তার দরজা বন্ধ করে দিচ্ছে।

তাদের গবেষণার সাফল্যের পথে সবচেয়ে বড় বাধা ছিল সমাজ। সবাই বলত,

“তোমাদের এই গবেষণা ভিত্তিহীন। রুহ বলতে কিছু নেই। বিজ্ঞানই সবকিছু।”

তাহসিন অনেকসময় নিজেই সন্দেহ করত, তার গবেষণা কি আদৌ সঠিক পথে এগোচ্ছে?

নাফিসা তাকে বলত,

“তোমার বিশ্বাস তোমার শক্তি। বিজ্ঞান আর আধ্যাত্মিকতা একসাথে কাজ করতে পারে—এটাই আমাদের প্রমাণ করতে হবে।”

তাহসিন আবার কাজে মন দিল। সে বুঝতে পারল, মানুষের শরীর আর রুহের সম্পর্ককে বুঝতে হলে তাদের সৃষ্টিকর্তার প্রতি কৃতজ্ঞতা আর বিশ্বাস থাকতে হবে। কিন্তু, সেই বিশ্বাস হারিয়ে ফেলেছে আজকের প্রজন্ম। তারা প্রযুক্তিকে আল্লাহর চেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে।

একদিন, তাদের গবেষণায় এক বিস্ময়কর মুহূর্ত এলো। তারা আবিষ্কার করল যে মানুষের মস্তিষ্কের নির্দিষ্ট একটি অংশ, যা দেহ ও আত্মার সংযোগস্থল, সেখান থেকে একটি অদ্ভুত শক্তি নির্গত হয়। এই শক্তি তখনই সক্রিয় হয় যখন মানুষ তার সৃষ্টিকর্তার সাথে সংযোগ স্থাপন করে।

তাহসিন ও নাফিসা একসাথে বলল,

“এটাই তো রুহের জাগরণের শুরু!”

তাদের আবিষ্কার এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করল। তারা বুঝতে পারল, মানুষের রুহকে জাগ্রত করতে হলে তাকে প্রযুক্তি ও আধ্যাত্মিকতার মেলবন্ধনে ফিরিয়ে আনতে হবে।

তাদের গবেষণার প্রভাব সমাজে ছড়িয়ে পড়ল। মানুষ ধীরে ধীরে বুঝতে শুরু করল যে, প্রযুক্তি জীবনের অংশ হতে পারে, কিন্তু এর মাধ্যমে জীবনের উদ্দেশ্য পূর্ণ হয় না। মানুষ যখন আল্লাহর সৃষ্টি হিসেবে নিজের আত্মা আর দেহকে সম্মান করতে শিখল, তখনই রুহের জাগরণ সম্ভব হলো।

তাহসিন আর নাফিসা তাদের গবেষণার মাধ্যমে প্রমাণ করল যে, মানুষের প্রকৃত শক্তি তার বিশ্বাস, মানবতা, আর আধ্যাত্মিকতায়।

তাহসিন ও নাফিসার গবেষণা শুধু একটি বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার ছিল না; এটি ছিল মানুষের আত্মার জাগরণের এক মহৎ যাত্রা। তারা প্রমাণ করেছিল, মানুষের রুহ কখনো হারিয়ে যায় না। এটি সবসময়ই তার সৃষ্টিকর্তার সাথে সংযুক্ত, এবং এই সংযোগই তাকে সত্যিকারের মানুষ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে।

শেষ দৃশ্যে তাহসিন আকাশের দিকে তাকিয়ে বলল,

“আমরা শুধু আল্লাহর সৃষ্টির রহস্যের একটি দিক খুঁজে পেয়েছি। রুহের জাগরণ এক অনন্ত যাত্রা।”