img

কে এই সাংবাদিক মুশফিকুল ফজল আনসারী?

প্রকাশিত :  ০৯:৩১, ২৩ অক্টোবর ২০২৪
সর্বশেষ আপডেট: ০৯:৩২, ২৩ অক্টোবর ২০২৪

কে এই সাংবাদিক মুশফিকুল ফজল আনসারী?

বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘন, নির্বাচন জালিয়াতি এবং কর্তৃত্ববাদী শাসনব্যবস্থা নিয়ে প্রায়ই জাতিসংঘ ও হোয়াইট হাউসের প্রেস কনফারেন্সে প্রশ্ন করতেন সাংবাদিক মুশফিকুল ফজল আনসারী। বিশেষ করে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলের শেষ কয়েক বছরে দেশের বিভিন্ন পরিস্থিতি ধারাবাহিকভাবে তুলে ধরেছেন তিনি। তবে তার এ পর্যায়ে যাওয়াটা মোটেও সহজ ছিল না। সাহসী সাংবাদিকতা করতে গিয়ে তৎকালীন সরকারের রোষানলে পড়ে দেশ ছাড়তে হয়েছিল তাকে।

মুশফিকুল ফজল আনসারী যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কে অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাস্ট নিউজ বিডি ডটকমের সম্পাদনার পাশাপাশি স্থায়ী প্রতিনিধি হিসেবে জাতিসংঘের সদরদপ্তর ও হোয়াইট হাউজে দায়িত্ব পালন করেন। জাতিসংঘ ও যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টের প্রেস ব্রিফিংয়ে বাংলাদেশ প্রসঙ্গ তুলে ধরে নানা প্রশ্ন করতেন। এর আগে সাংবাদিকতায় সাহসী ভূমিকার কারণে আওয়ামী লীগ সরকারের রোষানলে পড়ে ২০১৫ সালে দেশ ছাড়তে বাধ্য হন।

২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার সহকারী প্রেস সচিব ছিলেন মুশফিকুল ফজল আনসারী। এ ছাড়া দৈনিক ইত্তেফাকের কূটনীতিক প্রতিবেদক ছিলেন তিনি। বার্তা সংস্থা ইউএনবিসহ আরও কয়েকটি মিডিয়ায় উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছেন তিনি। বিশ্বব্যাংকের কনসালট্যান্টও ছিলেন। ব্রিটেনের দ্য টাইমস ও সানডে টাইমস পত্রিকায় ওয়ার্কএক্সিপিরিয়েন্স রিপোর্টার হিসেবে কাজ করেছেন। 

রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন বিটিভিতে একটি অনুষ্ঠান অ্যাঙ্কর করেছেন মুশফিকুল ফজল আনসারী। এনটিভিতে জনপ্রিয় টিভি অনুষ্ঠান ‘হ্যালো এক্সেলেন্সি’ হোস্ট করেছেন। এতে রাষ্ট্রদূত এবং বিদেশী বিশিষ্ট ব্যক্তিরা থাকতেন। তিনি মানবাধিকার সংস্থা রাইট টু ফ্রিডমের নির্বাহী পরিচালক। অ্যাম্বাসেডর উইলিয়াম বি মাইলাম সম্পাদিত বৈদেশিক নীতি ম্যাগাজিন সাউথ এশিয়া পারসপেক্টিভসেরও নির্বাহী সম্পাদক। 

ঢাকার আসার আগে মুশফিকুল ফজল আনসারী এক বার্তায় বলেন, ‘এতদিন পর দেশে ফিরবো ভেবে আমি রোমাঞ্চিত। দেশে প্রিয়জন, বন্ধুবান্ধব, ছাত্র-শিক্ষক এবং সাংবাদিকদের সাথে আবার মিলিত হওয়ার অপেক্ষায় আছি। ছাত্র-জনতার সর্বোচ্চ আত্মত্যাগের মাধ্যমে দেশকে স্বৈরাচারী মুক্ত করা হয়েছে। গণতন্ত্র, মত প্রকাশের স্বাধীনতা এবং অন্যান্য মৌলিক অধিকার পুনরুদ্ধারের পথ আজ প্রশস্ত হয়েছে। একজন নোবেল জয়ী অধ্যাপক দেশের ক্রান্তিকালীন অভিভাবকত্ব গ্রহণ করেছেন, জাতি হিসাবে এটা আমাদের গর্বের।’

কাজের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সরকারের মানবাধিকার লঙ্ঘন, নির্বাচনী জালিয়াতি এবং কর্তৃত্ববাদী শাসনব্যবস্থাকে ধারাবাহিকভাবে তুলে ধরেছেন মুশফিক ফজল আনসারী। প্রায় এক দশক পর বৃহস্পতিবার দেশে ফিরে সিজদায় লুটিয়ে পড়েন। তার ফেরা উপলক্ষে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন এবং ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সহযোগিতায় শুক্রবার (১৩ সেপ্টেম্বর) বিকালে জাতীয় প্রেসক্লাব এক সংবর্ধনা ও মতবিনিময় সমাবেশের আয়োজন করছে বলে জানা গেছে।

img

যৌনতা এবং শারীরিক চাহিদা থেকে জীবনের পরিধি আরও অনেক বড় – এ আর রহমানের আত্মোপলব্ধি

প্রকাশিত :  ০৭:৩২, ৩০ নভেম্বর ২০২৪
সর্বশেষ আপডেট: ০৮:১১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪

রেজুয়ান আহম্মেদ

অস্কারজয়ী সঙ্গীতশিল্পী এ আর রহমান, যিনি পৃথিবীকে সুরের মাধ্যমে নতুনভাবে চিনিয়েছেন, সম্প্রতি নিজের জীবনের এক অদেখা অধ্যায় প্রকাশ্যে এনেছেন। সায়রা বানুর সঙ্গে বিবাহ-বিচ্ছেদের পর, এক দীর্ঘ নীরবতার শেষে রহমান তাঁর ব্যক্তিগত যাত্রা সম্পর্কে খোলামেলা কথা বলেছেন। তিনি স্বীকার করেছেন যে জীবনের উদ্দেশ্য এবং মানবিক সম্পর্কের মধ্যে শুধুমাত্র শারীরিক চাহিদার সীমা থাকে না; জীবনের পরিধি আরও অনেক বড় এবং গভীর।

তিনি তাঁর একটি বক্তব্যে বলেন, ‘‘যৌনতার মতো শারীরিক চাহিদা মেটানোই জীবনের সব নয়, কখনও…’’ তাঁর এই উক্তি শুধু একটি সঙ্গীতশিল্পীর দৃষ্টিকোণ নয়, বরং একটি জীবনদৃষ্টি, যেখানে আত্মিক পরিপূর্ণতা এবং মানসিক শান্তি কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠতে পারে। রহমানের মতে, আমাদের জীবনে একটি গভীর শূন্যতা রয়েছে, যা শুধুমাত্র শারীরিক সুখ দ্বারা পূর্ণ হতে পারে না। আমাদের আধ্যাত্মিক বা মানসিক উন্নতির দিকে মনোযোগ দেওয়া উচিত, যা জীবনকে অর্থবহ এবং পূর্ণতা দেয়।

প্রায়ই সমাজে যৌনতা এবং শারীরিক সম্পর্ককে জীবনের একমাত্র উদ্দেশ্য হিসেবে তুলে ধরা হয়। কিন্তু রহমানের অভ্যন্তরীণ জগতের এই খোলামেলা উক্তি আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, আমাদের জীবনের অঙ্গনের অনেক বৃহৎ ক্ষেত্র রয়েছে, যেখানে আনন্দ, শান্তি এবং পূর্ণতা আসতে পারে। ‘‘শুধুমাত্র শারীরিক চাহিদা মেটানোই জীবনের সব নয়’’—এই কথায় তিনি একদিকে যেমন জীবনের উদ্দেশ্য অনুসন্ধান করছেন, তেমনি মানসিক স্বাস্থ্যের গুরুত্বও তুলে ধরছেন।

এ আর রহমানের মতে, একজন মানুষের মানসিক স্বাস্থ্য তখনই ভালো থাকতে পারে, যখন সে জীবনের গভীরে প্রবাহিত হতে পারে। তিনি বলছেন, ‘‘অবসাদ ঘিরে ধরে, কারণ আমার মনে হয়, আমাদের সবার মধ্যেই একটা শূন্যতা রয়েছে।’’ এরই মধ্যে গল্পকাররা, দর্শন, বিনোদন, এমনকি কখনও কখনও ওষুধের মাধ্যমে এই শূন্যতা পূর্ণ করা যায়। কিন্তু জীবনের উদ্দেশ্য সেই সব জিনিসে সীমাবদ্ধ নয়।

এখানে উল্লেখযোগ্য হলো, রহমানের ব্যক্তিগত জীবনের অধ্যায়গুলো। তাঁর স্ত্রী সায়রা বানুর সঙ্গে বিবাহ-বিচ্ছেদ এবং তার পরবর্তী ঘটনাবলীর প্রতি তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি একটি অন্তর্দৃষ্টি দেয়, যে যেখানে তিনি তাঁর শূন্যতা, দুঃখ এবং সঙ্কটের মধ্যে থেকেও জীবনের একটি বৃহত্তর দৃষ্টিকোণ খুঁজে পেয়েছেন। ‘‘এমনকি ভগ্ন হৃদয়ের ভারে ঈশ্বরের সিংহাসনও কেঁপে উঠতে পারে’’—রহমান তাঁর নিজের দুঃখ এবং সংগ্রামকে পৃথিবীর বৃহত্তর দুঃখের সঙ্গে তুলনা করছেন, যেখানে ক্ষতি এবং হতাশা একে অপরকে অনুসরণ করে। তবুও, তিনি এই ভঙ্গুরতার মধ্যে জীবনের অন্য অংশগুলির জন্য ধন্যবাদ জানিয়েছেন।

এ আর রহমানের এই বক্তব্যে প্রতিটি মানুষের জীবনের বিভিন্ন দিকের প্রশংসা করা হয়েছে—মানসিক শান্তি, আত্মিক উন্নতি, এবং অন্যের জন্য বাঁচার আকাঙ্ক্ষা। তিনি বলেছেন, ‘‘যখন তুমি অন্যের জন্য বাঁচবে, তখন তোমার মধ্যে এই চিন্তাগুলি আসবে না।’’ এর মাধ্যমে তিনি আমাদেরকে জীবনকে শুধুমাত্র নিজের সুখের জন্য না, বরং একটি বৃহত্তর উদ্দেশ্য সাধনের জন্য বাঁচার পরামর্শ দিয়েছেন। জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে এমন একটি নৈতিক ভিত্তি খুঁজে পাওয়া উচিত, যা শুধুমাত্র আমাদের শারীরিক চাহিদা পূরণে সীমাবদ্ধ নয়। আমাদের আধ্যাত্মিক এবং মানসিক উন্নতি, আমাদের জীবনের বাস্তব মূল্যমানের পরিচয় দেয়।





রেজুয়ান আহম্মেদ: কলামিস্ট, বিশ্লেষক; সম্পাদক অর্থনীতি ডটকম

মতামত এর আরও খবর