নিত্যপণ্যে শুল্ক ছাড়েরও কোন প্রভাব নেই বাজারে!
দেশের বাজারে ভোজ্যতেল ও চিনির দাম কমাতে শুল্ক ছাড় দিয়েছে সরকার। কিন্তু তার পরও পণ্য দুটির দাম কমেনি, উল্টো বাড়ছে। এদিকে দুই সপ্তাহের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে কেজিতে ১০ থেকে ১৫ টাকা। তবে কিছুটা কমেছে ডিম, সবজি ও কাঁচামরিচের দাম।
চলতি মাসের মাঝামাঝি ভোজ্যতেল আমদানিতে শুল্ক ও স্থানীয় উৎপাদন পর্যায়ে মূসকে ছাড় দিয়েছে সরকার। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) মনে করে, এর ফলে বিশ্ববাজারে ভোজ্যতেলের দাম বাড়লেও দেশের বাজারে সহনীয় পর্যায়ে থাকবে। কিন্তু বাজারে সেই চিত্র দেখা যাচ্ছে না, বরং পণ্যটির দাম বাড়ছে। পাইকারি পর্যায়ে প্রতি ড্রাম (২০৪ লিটার) পাম অয়েলের দাম বেড়ে হয়েছে ২৯ হাজার ৯০০ টাকা। খুচরা ব্যবসায়ীরা প্রতি লিটার পাম অয়েল বিক্রি করছেন কমবেশি ১৫০ টাকা দরে। সপ্তাহ দুয়েক আগে প্রতি লিটার পাম অয়েলের দর ছিল ১৪০ টাকার আশপাশে। সে হিসাবে লিটারে পণ্যটির দাম বেড়েছে ১০ টাকা। ব্যবসায়ীরা জানান, খোলা সয়াবিনের দরও লিটারে ৫ টাকা বেড়েছে। প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন বিক্রি হচ্ছে ১৫৩-১৫৬ টাকা দরে।
চলতি মাসে পরিশোধিত ও অপরিশোধিত চিনির ওপর নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক ৩০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে। পাশাপাশি পরিশোধিত চিনি আমদানিতে শুল্ক টনপ্রতি ৬ হাজার টাকা থেকে কমিয়ে ৪ হাজার ৫০০ টাকা নির্ধারণ করেছে সরকার। এতে চিনির দাম কমার কথা। কিন্তু বাজারে পণ্যটির দাম কমেনি। পাইকারি পর্যায়ে প্রতি বস্তা (৫০ কেজি) চিনি বিক্রি হচ্ছে ৬ হাজার ২৫০ থেকে ৬ হাজার ৩০০ টাকা দরে। খুচরায় এক কেজি চিনি কিনতে ক্রেতাদের গুনতে হচ্ছে ১৩০ টাকা।
কয়েকজন খুচরা ব্যবসায়ী জানান, শুল্ক কমানোর খবরে পাইকাররা তেল ও চিনির দরে কিছুটা ছাড় দেন। কিন্তু পরে উল্টো চিত্র দেখা যায়, দাম ফের বাড়ছে। রাজধানীর তেজকুনিপাড়ার সুমা জেনারেল স্টোরের স্বত্বাধিকারী মো. শুভ বলেন, ‘তেল-চিনির দর কমেনি, বরং কয়েক দিন ধরে বাড়ছে।’ পাইকারি বাজারে না কমলে খুচরায় দাম কমবে না বলে মনে করেন তিনি।
গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকার তেজকুনিপাড়া, কারওয়ান বাজার ও আগারগাঁও বাজারে খুচরায় প্রতি কেজি ভালোমানের দেশি পেঁয়াজ ১৩০-১৩৫ টাকায় এবং দেশি হাইব্রিড পেঁয়াজ ১১৫-১২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হতে দেখা যায়। ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হয় ৯০-১১০ টাকা এবং তুরস্কের পেঁয়াজ ৮০-৯০ টাকা কেজি দরে। ব্যবসায়ীরা জানান, সপ্তাহ দুয়েক আগে দেশি ভালো জাতের পেঁয়াজের কেজি ছিল ১১৫-১২০ টাকা, হাইব্রিড পেঁয়াজ ১০০-১১০ এবং ভারতীয় পেঁয়াজের কেজি ছিল ৯৫-১০০ টাকা। সেই হিসাবে দেশি পেঁয়াজের দাম কেজিতে ১০-১৫ এবং ভারতীয় পেঁয়াজের দাম ১০ টাকা বেড়েছে।
এদিকে, ডিম আমদানিতে শুল্ক ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ নির্ধারণ করার পাশাপাশি গত বুধবার আরও চার কোটি ডিম আমদানির অনুমতি দিয়েছে সরকার। কয়েকটি করপোরেট প্রতিষ্ঠান সরাসরি ঢাকার দুটি বড় পাইকারি বাজারে দৈনিক ২০ লাখ করে ডিম সরবরাহ করছে। এর প্রভাবে কিছুটা কমেছে ডিমের দাম। প্রতি ডজন ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৪৫-১৫০ টাকা দরে, যা সপ্তাহ দুয়েক আগে ছিল ১৮০ টাকার বেশি।
ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৯০-২০০ টাকা এবং সোনালি মুরগি ২৯০-৩১০ টাকা কেজি দরে। গরুর মাংসের দর অনেকটা স্থিতিশীল; বিক্রি হচ্ছে কোথাও ৬২০ টাকা, কোথাও ৭৫০ টাকা কেজি দরে।
রাজধানীর বাজারে সবজির দাম কিছুটা কমেছে। এক সপ্তাহে বেশ কয়েকটি সবজির দর কেজিতে কমেছে ২০ থেকে ৪০ টাকা। গতকাল প্রতি কেজি কাঁকরোল ৭০-৮০ টাকা, পেঁপে ৩০-৪০, মুলা ও পটোল ৫০-৬০, ঢ্যাঁড়শ ৬০-৭০, বরবটি ৮০-৯০, গোল বেগুন ১২০-১৪০, লম্বা বেগুন ৮০-৯০, টমেটো ১৬০-১৭০, করলা (উচ্ছে) ৮০-৯০, কচুরমুখি ৫০-৬০ এবং ধুন্দল ও ঝিঙে ৬০-৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হতে দেখা যায়। গত সপ্তাহে বেশির ভাগ সবজির কেজি ছিল ১০০ টাকার ওপরে। তবে শীতের আগাম সবজি শিমের দাম কিছুটা বেশি, প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১২০-১৪০ টাকা। ফুলকপি প্রতি পিস বিক্রি হচ্ছে ৫০-৭০ টাকা দরে।
শাকের দাম এখনও চড়া। গতকাল লালশাকের আঁটি ২৫-৩০ টাকা এবং লাউশাক ও পুঁইশাক ৪০-৪৫ টাকা দরে বিক্রি হয়। লেবুর দাম অনেকটা নাগালের মধ্যে, মাঝারি আকারের প্রতি ডজন লেবু বিক্রি হচ্ছে ৫০-৬০ টাকায়।
কমতির দিকে কাঁচামরিচের বাজার। গতকাল প্রতি কেজি কাঁচামরিচ বিক্রি হয় ১৮০-২০০ টাকা দরে। ব্যবসায়ীরা জানান, এক সপ্তাহ আগে পণ্যটির দাম আরও বেশি ছিল। গত বছর এই সময়ে আলুর বাজারে অস্থিরতা ছিল। এবার তেমন পরিস্থিতি না হলেও আলুর বাজার চড়া, প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫৫-৬০ টাকা দরে।
গতকাল আগারগাঁও কাঁচাবাজারে কথা হয় বেসরকারি চাকরিজীবী সাইদুর রহমানের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘সব কিছুইর দাম চড়া। বাজারে সিন্ডিকেট কাজ করছে।’