ভিডিও কলে এসে প্রেমিক-প্রেমিকার আত্মহত্যা
এক নববধূ বিয়ের ১২ দিন পর স্বামীর বাড়িতে আত্মহত্যা করেছেন । ভিডিও কলে এসে ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন প্রেমিকসহ ওই গৃহবধূ। এ সময় সদ্য বিবাহিত প্রেমিকা ছিলেন দেশে স্বামীর বাড়িতে। অন্যদিকে, প্রেমিক ছিলেন মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ওমানে।
রোববার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন লালমাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শাহ আলম। এর আগে কুমিল্লার লালমাই উপজেলার বেতুয়া এলাকায় শনিবার এই ঘটনাটি ঘটে।
পুলিশ স্বামীর বাড়ি থেকে নববধূর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে। এসময় লাশের পাশ থেকে একটি চিরকুটও জব্দ করে পুলিশ।
নিহত গৃহবধূ খাদিজা আক্তার উর্মি। তিনি কুমিল্লা সদর দক্ষিণ থানার মাটিয়ারা গ্রামের জামাল হোসেনের মেয়ে। চৌয়ারা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেণির ছাত্রী ছিলেন। গত ১৪ অক্টোবর লালমাইয়ের এক ব্যক্তির সঙ্গে জোর করে বিয়ে দেয় পরিবার।
অপরদিকে, ভিডিও কলে যুক্ত থাকা নিহত ওমান প্রবাসী প্রেমিক সাফায়েত হোসেন (২৩)। তিনি কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলার পূর্ব জোড়কানন ইউনিয়নের জয়নগর গ্রামের আবদুল খালেকের ছেলে।
জানা গেছে, গত ১৩ সেপ্টেম্বর লালমাই উপজেলার ভুলইন উত্তর ইউনিয়নের বেতুয়া (কৃষ্ণপুর) গ্রামের রং মিস্ত্রী আরিফুর রহমানের সাথে খাদিজার বিয়ে হয়। বাল্য বিয়ে হওয়ায় ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান আতঙ্কে ঘরোয়াভাবে গোপনে বিয়ের আয়োজন করা হয়।
ঊর্মির মরদেহের কাছ থেকে পাওয়া চিরকুটে লেখা ছিল, ‘চাইছিলাম দুজনে একসঙ্গে বেঁচে থাকতে। বাঁচতে দিল না। এটা সত্যি, ও আমার প্রথম সাথি। ওরে আমি বিয়ে করছি। কিন্তু ওর জায়গায় আমি অন্য কাউরে দিতে পারি নাই, পারবও না। তোমরা সুখে থেকো। আমি ওকে ছাড়া বাঁচতে পারব না। ও বেঁচে থাকলেও তোমরা ওকে খুন করতে এবং ওর ফ্যামিলিকে জেলের ভাত খাওয়াইতে। তাই নিজেও দুনিয়া ছাড়লাম। ওরে আমার সঙ্গে নিয়ে গেলাম। আপনাদের কাছে একটা শেষ ইচ্ছা থাকবে। বাবা-মা ও ভাই-বোনের কাছে একটা আবদার, দুনিয়াতে যেহেতু একসঙ্গে থাকতে দেও নাই, আমাদের দাফনটা যেন একসঙ্গে হয়। এক দিন আগে-পরে হলেও একই কবরস্থানে যেন দাফন করে। সে চাওয়াটা যেন পূরণ করেন আপনারা।’
অন্যদিকে প্রবাসী সাফায়াত মৃত্যুর আগে চিরকুটে লিখেছেন, ‘শেষ ইচ্ছে পূরণ করার দায়িত্ব আপনাদের। আমার মৃত্যুর কারণ একমাত্র ওর ফ্যামিলি। আমার মোবাইলে সব রেকর্ড করা আছে। সব কিছু ভিডিও করা আছে। আমার মৃত্যুর জন্য কে কে দায়ী সব কিছু আমার মোবাইলে রেকর্ড করা আছে আর ভিডিও করা আছে। আমার মোবাইল তার প্রমাণ। আমার মোবাইল চেক করলে সব পাবেন। রেকর্ড অপশনে আর গ্যালারিতে সব আছে। গ্যালারিতে আমার আটটা ভিডিও আছে। সবগুলো দেখবেন। লক খুলে রেকর্ড অপশনে ঢুকবেন, ইমোতে দুইটা আর বাকিগুলো গ্যালারিতে পাবেন। তার দেওয়া চিঠি আছে আরিফ নামের আইডিতে। আমাদের মৃত্যুর কারণ তারা। কোনো দিন ক্ষমা করব না।’
নিহত উর্মির মা নুরুন্নাহার বলেন, ‘গত ১৪ অক্টোবর আমাদের আত্মীয় বেতুয়ার আরিফুর রহমানের সাথে মেয়েকে বিয়ে দিই। বিয়ের পর মেয়ে স্বামীর বাড়িতে হাসি খুশিতেই ছিল। শনিবার রাতে হঠাৎ শুনি উর্মি ও তার প্রেমিক সাফায়েত ভিডিও কলে আত্মহত্যা করেছে।’
প্রবাসী সাফায়াতের বাবা আবদুল খালেক বলেন, ‘একবছর আগে ছেলেকে ওমান পাঠিয়েছিলাম। কিছুদিন আগে ছেলে হঠাৎ বিদেশে কর্মস্থলে অজ্ঞান হয়ে পড়ে। খবর নিয়ে শুনলাম ফেসবুক মেসেঞ্জারে আমার ছেলের সাথে উর্মি নামের এক মেয়ের পরিচয় হয়েছিল। হঠাৎ মেয়েটির বিয়ে হয়ে যাওয়ায় সে অসুস্থ হয়ে গেছে। শনিবার রাতে সেই মেয়ে আমার ছেলের সাথে ভিডিও কলে চিরকুট লিখে ফাঁসিতে ঝুলে আত্মহত্যা করেছে বলে শুনেছি। ছেলেটা আমার এভাবে চলে যাবে ভাবতেও পারিনি ‘
লালমাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শাহ আলম বলেন, ক’দিন আগেই মেয়েটির বিয়ে হয়েছে শুনেছি। শনিবার প্রবাসী প্রেমিককে ভিডিও কলে রেখে ঘরের সিলিং ফ্যানের সাথে ঝুলে আত্মহত্যা করেছেন। শুনেছি প্রবাসী প্রেমিকও একইভাবে আত্মহত্যা করেছেন। শনিবার রাত ১১টায় আমরা নববধূর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করি। লাশ ময়নাতদন্তের জন্য কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, মরদেহের পাশে হাতে লিখা একটি চিরকুট পাওয়া গেছে। ধারণা করা হচ্ছে, আত্মহত্যার আগে মেয়েটি তার মা-বাবার উদ্দেশ্যে এটি লিখেছিল। এই ঘটনায় নববধূর ভাই মেহেদী হাসান বাদী হয়ে থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা দায়ের করেছেন।