প্রকাশিত :
১৭:৫৮, ২৮ অক্টোবর ২০২৪ সর্বশেষ আপডেট: ১৮:০২, ২৮ অক্টোবর ২০২৪
রমজান মুসলিম সম্প্রদায়ের সবচেয়ে পবিত্র মাস। এ মাসের অপেক্ষায় থাকেন ধর্মপ্রাণ মুসলিমরা। হিজরি ক্যালেন্ডার অনুয়ায়ী, শাবানের পরই আসে রমজান মাস। সে হিসাবে আর চার মাস বাকি আছে রমজানের। এর মধ্যেই ২০২৫ সালের রমজান শুরুর সম্ভাব্য তারিখ ঘোষণা করেছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই)। খবর : গালফ নিউজের।
দ্য ইমেরিটাস অ্যাস্ট্রোনমি সোসাইটি সোমবার (২৮ অক্টোবর) জানায়, ২০২৫ সালের ১ মার্চ দেশটিতে রোজা শুরু হতে পারে। এর আগে আকাশে হিজরি রমজান মাসের চাঁদ দেখা যাবে।
মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যমটি জানায়, রমজান মাসের ক্ষণগণনা শুরু হয়ে গেছে, আর মাত্র চার মাস বাকি আছে। এসময় দ্য ইমেরিটাস অ্যাস্ট্রোনমি সোসাইটি রমজান শুরুর সময় নিয়ে পূর্বাভাস দিয়েছে।
সোসাইটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, হিজরি জমাদিউল আউয়াল মাসের চাঁদ দেখার ওপর নির্ভর করছে রোজার শুরুর তারিখ। এ মাসের চাঁদ আগামী ৩ নভেম্বর দেখা যেতে পারে।
এখন চাঁদ দেখার পরেই নিশ্চিত করা যাবে, রোজা কবে শুরু হবে। দ্য ইমেরিটাস অ্যাস্ট্রোনমি সোসাইটির চেয়ারম্যান ইব্রাহিম আল জারওয়ান গালফ নিউজকে জানান, সম্ভবত আগামী বছরের ১ মার্চ আমিরাতে রমজান শুরু হবে, তবে সবকিছু চাঁদ দেখার ওপর নির্ভর করছে।
উল্লেখ্য, সাধারণত সংযুক্ত আরব আমিরাত ও সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যে রোজা শুরুর একদিন পর বাংলাদেশে পবিত্র রমজান মাস শুরু হয়। সেই হিসাবে বাংলাদেশে ২ মার্চ রোজা শুরু হতে পারে।
প্রকাশিত :
১৮:৩৩, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪ সর্বশেষ আপডেট: ১৮:৪৯, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪
রেজুয়ান আহম্মেদ
অরুণাভ দাশগুপ্ত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের অধ্যাপক। তিনি ছিলেন একজন বিদগ্ধ এবং জ্ঞানপিপাসু মানুষ, যার জীবনের মূল প্রশ্ন ছিল: "সৃষ্টিকর্তা আছেন কি?" এই প্রশ্ন তাঁর শৈশব থেকেই শুরু হয়েছিল। একদিন ছোটবেলায় গ্রামের মন্দিরে পূজা দেখতে গিয়ে তিনি প্রশ্ন করেছিলেন তাঁর ঠাকুরদাদাকে, "ঠাকুরদা, যদি ভগবান সত্যিই থাকেন, তবে আমরা তাঁকে কেন দেখতে পাই না?"
ঠাকুরদা তখন বলেছিলেন, "অরুণ, ঈশ্বরকে দেখার জন্য শুধু চোখ নয়, বিশ্বাস এবং অনুভূতির প্রয়োজন হয়।" এই কথা অরুণাভকে মুগ্ধ করেছিল, তবে তা তাঁকে সন্তুষ্ট করতে পারেনি।
বিশ্ববিদ্যালয়ে দর্শনশাস্ত্রে পড়াশোনা করে তিনি আরও বেশি প্রশ্ন করতে শুরু করেন। ধর্মগ্রন্থ, দার্শনিক তত্ত্ব এবং বৈজ্ঞানিক গবেষণা—সবই তাঁর নিত্যসঙ্গী হয়ে উঠেছিল।
একদিন অধ্যাপক অরুণাভ একটি প্রাচীন পাণ্ডুলিপি পান। এটি ছিল সংস্কৃত ভাষায় লেখা এবং দাবি করা হয়েছিল যে এতে সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব নিয়ে অমূল্য ব্যাখ্যা দেওয়া রয়েছে। পাণ্ডুলিপিতে লেখা ছিল:
"যা অদৃশ্য, তাই সত্য। যা দৃশ্যমান, তা কেবলমাত্র রূপ।"
পাণ্ডুলিপির লেখাগুলো পড়তে গিয়ে তিনি লক্ষ্য করেন, এতে মানব জীবনের জটিলতা, সৌন্দর্য এবং মহাবিশ্বের সূক্ষ্ম পরিকল্পনার কথা বলা হয়েছে। সেখানে লেখা ছিল, "এই জগৎ যদি একক সুসজ্জিত নিয়মে চলে, তবে সেই নিয়মের সৃষ্টিকর্তা অবশ্যই আছেন।"
অরুণাভ এই তত্ত্ব নিয়ে গবেষণারত ছিলেন। তবে তাঁর মন তৃষ্ণার্ত ছিল কোনো বাস্তব অভিজ্ঞতার জন্য।
একদিন, অরুণাভ একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনে যোগ দিতে দুবাই যান। সম্মেলনের শেষে তিনি সাহারা মরুভূমিতে বিশ্রাম নিতে যান। সেখানে তাঁর পরিচয় হয় মিরাজ নামে এক বেদুইন তরুণের সাথে। মিরাজ ছিল এক অবিশ্বাস্য বুদ্ধিমান যুবক, যার বিশ্বাস ছিল যে ঈশ্বরকে অনুভব করা যায়, তবে দেখা যায় না।
মিরাজ বলল, "অধ্যাপক, আপনি কি জানেন, মরুভূমিতে যে প্রতিটি নকশা বাতাস তৈরি করে, সেটি প্রকৃতির এক অলৌকিক খেলা। আপনি কি কখনো এই সৌন্দর্যে ঈশ্বরের অস্তিত্ব অনুভব করেছেন?"
অরুণাভ উত্তর দিলেন, "এটি তো প্রকৃতির স্বাভাবিক কাজ। এতে ঈশ্বরের কী প্রমাণ আছে?"
মিরাজ এক মুঠো বালু হাতে তুলে বলল, "যে বালুর প্রতিটি কণা একেকটি ইতিহাস বহন করে, সেই ইতিহাসের স্রষ্টা কি কেবল প্রকৃতি হতে পারে?"
অরুণাভ কিছুক্ষণ চুপ করে থাকেন। এই প্রশ্ন তাঁর মনের গভীরে গিয়ে আঘাত করে।
ফিরে এসে অরুণাভ বিভিন্ন ধর্মীয় স্থাপনা ঘুরে দেখতে শুরু করলেন। কালীঘাটের মন্দিরে ভক্তদের প্রার্থনার আবেগ, সেন্ট পল ক্যাথেড্রালে গির্জার স্তবগান, এবং বাইতুল মোকাররম মসজিদে মুসল্লিদের একাগ্রতা—সবই তাঁকে মুগ্ধ করেছিল।
একবার এক যোগগুরু তাঁকে বললেন, "অধ্যাপক, ঈশ্বরকে দেখার জন্য মনকে স্থির করতে হয়। আপনি নিজে ধ্যান করে দেখুন। আপনার প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবেন।"
অরুণাভ ধ্যান শুরু করলেন। ধীরে ধীরে তিনি অনুভব করলেন এক অদ্ভুত শান্তি। তাঁর মনে হতে লাগল, হয়তো কোনো এক অদৃশ্য শক্তি সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করছে।
তাঁর এক ঘনিষ্ঠ বন্ধু, অধ্যাপক জাহিদ হোসেন, ছিলেন পদার্থবিদ। জাহিদের সাথে এই প্রসঙ্গে কথা বলতেই তিনি বললেন, "অরুণ, মহাবিশ্বের সূক্ষ্ম নির্ধারণ (fine-tuning) বিষয়টি কি তোমার কাছে প্রমাণ নয়? অভিকর্ষ বল যদি এক শতাংশও বেশি হতো, তাহলে জীবন থাকত না। এই সূক্ষ্মতা কি কেবল কাকতালীয়?"
অরুণাভ প্রশ্ন করলেন, "তাহলে কি তুমি সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্বে বিশ্বাস কর?"
জাহিদ হেসে বললেন, "আমি বলছি না যে সৃষ্টিকর্তা আছেন। তবে কিছু তো অবশ্যই আছে যা এই সূক্ষ্মতা তৈরি করেছে।"
একদিন, অরুণাভ এক বৃদ্ধা রোগীকে দেখতে যান। তিনি ক্যান্সারে আক্রান্ত ছিলেন এবং জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে ছিলেন। বৃদ্ধা তাঁকে বললেন, "অধ্যাপক, আমি জানি ঈশ্বর আছেন। আমি যখনই প্রার্থনা করি, আমি তাঁর উপস্থিতি অনুভব করি।"
অরুণাভ জিজ্ঞেস করলেন, "আপনি কিভাবে এতটা নিশ্চিত?"
বৃদ্ধা মুচকি হেসে বললেন, "বিশ্বাস থেকেই এই নিশ্চয়তা আসে। এটা অনুভব করতে হয়, অধ্যাপক। যুক্তি দিয়ে সবকিছু পাওয়া যায় না।"
অরুণাভ ধীরে ধীরে উপলব্ধি করলেন যে সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব একটি ব্যক্তিগত অনুভূতির বিষয়। এটা যুক্তি দিয়ে প্রমাণ করা যায় না। তিনি পাণ্ডুলিপির শেষ লাইনটি বারবার পড়লেন:
"ঈশ্বরকে প্রমাণের চেয়ে ঈশ্বরকে খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা বেশি গুরুত্বপূর্ণ।"
অবশেষে, এক গভীর রাতে তিনি আকাশের দিকে তাকিয়ে ফিসফিস করে বললেন, "তুমি যদি থাকো, তবে আমাকে জানার ক্ষমতা দাও।"
তাঁর মনে এক অদ্ভুত প্রশান্তি নেমে এলো। হয়তো এটি ঈশ্বরের উত্তর, অথবা কেবল তাঁর নিজের আত্মার অনুভূতি। কিন্তু এই উত্তরই তাঁর কাছে যথেষ্ট ছিল।
রেজুয়ান আহম্মেদ: কলামিস্ট, বিশ্লেষক; সম্পাদক অর্থনীতি ডটকম