পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব তপন কুমার বিশ্বাস জানিয়েছেন, পলিথিন উৎপাদনকারীদের বিরুদ্ধে আগামী রোববার (৩ নভেম্বর) থেকে অভিযান, মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হবে ।
শুক্রবার (১ নভেম্বর) সকালে নিষিদ্ধ পলিথিন শপিং ব্যাগের ব্যবহার বন্ধে রাজধানীর মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটে অভিযানকালে এসব কথা বলেন তিনি।
এর আগে সকাল ১০টার পর তপন কুমার বিশ্বাসের নেতৃত্বে মন্ত্রণালয়ের মনিটরিং কমিটির ৭ থেকে ৮ সদস্য এই অভিযান পরিচালনা শুরু করেন।
এ সময় বাজার করতে আসা সাধারণ মানুষকে পলিথিন ব্যবহার না করে পাট ও কাপড়ের ব্যাগ ব্যবহারের অনুরোধ জানানো হয়। একই সঙ্গে দোকানিদের পলিথিনের ব্যাগ ব্যবহার বন্ধে নির্দেশনা দেওয়া হয়।
আজ শুক্রবার (০১ নভেম্বর) থেকে কাঁচাবাজারে পলিথিন ব্যাগের ব্যবহার নিষিদ্ধ হয়েছে। একই সঙ্গে পলিথিন ও পলিপ্রোপাইলিন উৎপাদনকারী কারখানাগুলোর বিরুদ্ধে অভিযান শুরু সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
গত ১ অক্টোবর থেকে সুপারশপে পলিথিন ও পলিপ্রোপাইলিনের তৈরি ব্যাগের ব্যবহার বন্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। যা অনেক ফলপ্রসূ হয়েছে বলে দেখা গেছে। বেশিরভাগ সুপারশপে এখন পলিথিনের পরিবর্তে পাট, কাগজ ও কাপড়ের ব্যাগ ব্যবহার করা হচ্ছে।
সন্ধ্যার আকাশ ধীরে ধীরে অন্ধকারে ঢেকে যাচ্ছে। গ্রামের প্রান্তের ছোট্ট একটি মাটির ঘরের বারান্দায় বসে রাকিব আর তার বন্ধুরা মহাবিশ্বের রহস্য নিয়ে আলোচনা করছে। রাকিব ছোটবেলা থেকেই বিজ্ঞানের প্রতি গভীর অনুরাগী। কিন্তু তার বাবা-মায়ের ধর্মীয় অনুশাসন তাকে ইসলাম সম্পর্কে জানতেও আগ্রহী করে তুলেছে। এই দুই ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি তার মনে এক অদ্ভুত সমন্বয় তৈরি করেছে।
আজকের আড্ডায় রাকিবের বন্ধুরা মহাবিশ্ব নিয়ে তার মতামত জানতে চাইছিল। রাকিব বলল, “বিজ্ঞান বলে, মহাবিশ্বের সৃষ্টি হয়েছে একটি বিশাল বিস্ফোরণের মাধ্যমে, যাকে আমরা বিগ ব্যাং নামে জানি। এটি প্রায় চৌদ্দ বিলিয়ন বছর আগে ঘটেছিল। সেই সময়, মহাবিশ্ব ছিল একটি অতি ঘন এবং গরম বিন্দুর মতো। এরপর এক বিশাল বিস্ফোরণের মাধ্যমে এটি প্রসারিত হতে শুরু করে। ধীরে ধীরে তা ঠান্ডা হয়েছে এবং গ্যালাক্সি, নক্ষত্র, গ্রহ ইত্যাদি সৃষ্টি হয়েছে। বিজ্ঞানীরা এটিকে ‘বিগ ব্যাং তত্ত্ব’ বলে অভিহিত করেন।\"
রাকিব একটু থেমে বন্ধুর দিকে তাকিয়ে বলল, “তোমরা কি জানো, কোরআনেও এ বিষয়ে উল্লেখ রয়েছে?”
তার বন্ধু রিয়াদ কৌতূহলী হয়ে বলল, “সত্যি? কোরআনে কীভাবে এসব কথা বলা হয়েছে?”
রাকিব তার পকেট থেকে একটি ছোট কোরআন বের করল। সূরা আম্বিয়ার ৩০ নম্বর আয়াতটি খুঁজে বের করে পড়তে শুরু করল:
“তারা কি লক্ষ্য করে না যে আমি নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডলকে একত্রিত অবস্থায় সৃষ্টি করেছি, তারপর আমি তা পৃথক করে দিয়েছি।”
রাকিব ব্যাখ্যা করল, “এখানে বলা হয়েছে, প্রথমে সবকিছু একসাথে ছিল। পরে আল্লাহ তা পৃথক করেছেন। বিজ্ঞান যা বলে, প্রথমে সবকিছু এক বিন্দুতে ছিল, তারপর একটি বিস্ফোরণে তা ছড়িয়ে পড়ল। এটি কি অবাক করার মতো নয় যে এই আয়াতটি চৌদ্দশ বছর আগের, যখন কোনো বিজ্ঞান ছিল না?”
বন্ধুরা চুপ হয়ে গেল। তাদের মনে যেন এক অদ্ভুত আলোড়ন সৃষ্টি হলো। রিয়াদ বলল, “কিন্তু, রাকিব, কীভাবে সম্ভব? এতদিন আমরা মনে করতাম বিজ্ঞান আর ধর্ম একে অপরের বিরোধী।”
রাকিব হেসে বলল, “আমিও একসময় তাই ভাবতাম। কিন্তু যখন আমি গভীরভাবে পড়াশোনা শুরু করলাম, দেখলাম ধর্ম আর বিজ্ঞান আসলে একে অপরের পরিপূরক। ইসলাম বারবার মানুষকে চিন্তা করতে, প্রকৃতি পর্যবেক্ষণ করতে এবং জ্ঞান অর্জনের জন্য উৎসাহিত করে। এর মানে ধর্ম কখনোই বিজ্ঞানের শত্রু নয়; বরং এটি বিজ্ঞানকে বোঝার একটি মাধ্যম।”
রিয়াদ বলল, “তাহলে তুমি বলছ কোরআনে আরও বৈজ্ঞানিক তথ্য রয়েছে?”
রাকিব বলল, “অবশ্যই। যেমন ধরো, কোরআনে বলা হয়েছে সূর্য আর চাঁদ নির্দিষ্ট পথে চলাচল করে। বিজ্ঞান এটি অনেক পরে প্রমাণ করেছে। আবার, পানির মধ্যেও জীবনের অস্তিত্ব সম্পর্কে কোরআনে উল্লেখ রয়েছে। আরও একটি উদাহরণ দিই—সূরা আয-যারিয়াতে বলা হয়েছে: ‘আমি বায়ুকে প্রেরণ করি, যা বীজবাহক।’ আজ বিজ্ঞান বলছে, বায়ু কেবল তাপমাত্রার পরিবর্তন ঘটায় না, এটি প্রকৃতির বীজবাহক হিসেবেও কাজ করে। চিন্তা করো, এগুলো কত আশ্চর্যজনক!”
বন্ধুরা যেন নতুন এক জগতের সঙ্গে পরিচিত হলো। তাদের মনে প্রশ্নের ঝড় উঠল। রাত বাড়তে থাকল, কিন্তু তাদের আলোচনা থামল না।
কিছুদিন পরে রিয়াদ নিজেও কোরআন এবং বিজ্ঞানের সম্পর্ক নিয়ে পড়াশোনা শুরু করল। সে বুঝতে পারল কোরআন শুধু ধর্মীয় নির্দেশনা দেয় না, এটি মানুষকে জ্ঞান অন্বেষণেও উৎসাহিত করে।
রিয়াদ একদিন রাকিবকে বলল, “তুমি জানো, আমি আগে এসব তেমন গুরুত্ব দিতাম না। কিন্তু এখন বুঝতে পারছি, ধর্ম মানে শুধু উপাসনা নয়। এটি জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে পথ দেখায়।”
রাকিব খুশি হয়ে বলল, “তুমি ঠিক বলেছ। আমরা যদি কোরআন থেকে শিক্ষা নিয়ে বিজ্ঞানের পথে হাঁটি, তাহলে আমাদের জীবন আরও আলোকিত হবে। ইসলাম চায় মানুষ চিন্তা করুক, জ্ঞান অর্জন করুক।”
এরপর রাকিব আর রিয়াদ মিলে একটি দল গঠন করল, যেখানে তারা কোরআন এবং বিজ্ঞানের সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা করত। তারা স্কুল-কলেজে সেমিনার করত এবং তরুণদের উৎসাহিত করত ধর্ম ও বিজ্ঞানের সমন্বয় নিয়ে ভাবতে। তাদের লক্ষ্য ছিল মানুষকে চিন্তার জগতে নিয়ে যাওয়া।
তাদের এই প্রচেষ্টা কেবল জ্ঞানের দ্বার খুলে দিচ্ছিল না, বরং ধর্ম ও বিজ্ঞানের বিভেদ কমাচ্ছিল। মানুষ বুঝতে শুরু করল, ধর্ম কোনো বাধা নয়; বরং এটি এক অনন্ত প্রেরণা, যা মানুষকে মহাবিশ্বের গভীর রহস্য উন্মোচনে সাহায্য করে।
এইভাবেই রাকিব আর রিয়াদ তাদের জীবনের এক নতুন অধ্যায় শুরু করল—একটি অধ্যায়, যেখানে ধর্ম আর বিজ্ঞান হাত ধরে মানুষকে নতুন দিশা দেখায়।
রেজুয়ান আহম্মেদ: কলামিস্ট, বিশ্লেষক; সম্পাদক অর্থনীতি ডটকম