মাসব্যাপী ‘সিজন অব বাংলা ড্রামা’র উদ্বোধন: মঞ্চায়িত নাটকগুলো বাঙালি অভিবাসীদের জীবনসংগ্রামের ভাষ্য
|| হামিদ মোহাম্মদ ||
লন্ডন, ৪ নভেম্বর: লন্ডনে বাঙালি অধ্যুষিত টাওয়ার হ্যামলেটসের উদ্যোগে গত ১ নভেম্বর থেকে শুরু হয়েছে ‘সিজন অব বাংলা ড্রামা’। এবারের ‘সিজন অব বাংলা ড্রামা’র থিমস হলো ‘হোপ’বা ‘আশা’। উদ্বোধন হয়েছে পূর্ব লন্ডনের ব্রাডি আর্টস সেন্টারের থিয়েটার হলে। উদ্বোধনী দিনে সন্ধ্যা ৭টায় ছিল ‘মঞ্চশৈলী’ নাট্য সংগঠনের প্রযোজিত নাটক ‘দি থিভস অব হোয়াইটচ্যাপেল’।
নাটক শুরুর আগে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন রেস্টলেস বিয়িংয়ের রহিমা বেগম, হেড অব আর্টসের ক্যাথারিন বইড, ড্রামা ডিপার্টমেন্টের মজিসলা এডিবইও, লীড মেম্বার অব কালচারাল এন্ড রিক্রিয়েশন—এর কাউন্সিলার কামরুল হোসেইন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন টাওয়ার হ্যামলেটসের নাট্যবিভাগের কর্মকতার্ কাজী রোকশানা বেগম। শো শুরু হওয়ার আগে লেবাননী তরুণী আবু লায়লা প্যালেস্টাইনের মুক্তি সংগ্রাম ভিত্তিক স্বরচিত কবিতা পাঠ করেন।
বাংলা সংস্কৃতি ও কৃষ্টিকে বিলাতের মাটিতে তুলে ধরার ‘সিজন অব বাংলা ড্রামা’র উদ্বোধনী পর্বের পর মঞ্চস্থ হয় নাটক ‘দি থিভস অব হোয়াইটচ্যাপেল’। নাটকটি লিখেছেন কথাসাহিত্যক ও নাট্যকার সাঈম চৌধুরী। পরিচালনা করেন রাজীব দাশ, সহপরিচালক ছিলেন রুহুল আমিন। এছাড়া ২ নভেম্বর শনিবারে সন্ধ্যায় মঞ্চস্থ হয় ‘বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের মঞ্চায়নে শিশুশিল্পীদের অভিনীত ‘হোপ, হ্যাপিল্যান্ড’। নাটকটি লিখেছেন নাট্যকার বুলবুল হাসান। সহযোগী ক্ষুদে লেখক ছিলেন সিরিনা, ইয়াসনা, রামিরা, আধ্যিয়াত, অনিন্দিতা, সারথি, ইয়ামীর ও সায়মা। পরিচালনা করেন সৈয়দা সায়েমা আহমেদ। এবং ৩ নভেম্বর রোববার সন্ধ্যায় মঞ্চস্থ হয় লীডসের ‘মুক্তমঞ্চ’ নাট্য সংগঠনের ‘আশার ধ্বনি শুনি’। নাটকটি লিখেছেন রাশিদ গায়েন, পরিচালনা করেন আশরাফ চৌধুরী মিঠু।
‘দি থিভস অব হোয়াইটচ্যাপেল’ এর একটি দৃশ্য।
প্রতিদিনের প্রতিটি শো’তে ছিল থিয়েটার হল দর্শকে পরিপূর্ণ, কোনো সিট খালি ছিল না। দর্শনীর বিনিময়ে নাটকগুলো উপভোগ করতে—আসা দর্শকদের মধ্যে ছিল বিপুল উতসাহ উদ্দীপনা। নাটক যে বিনোদনের একটি শক্তিশালি মাধ্যম তা দর্শকদের উপস্থিতি দেখেই বুঝা যায়। তাই, বাঙালি নাট্যমোদী দর্শক প্রতি বছর নভেম্বর মাসের জন্য অধীর অপেক্ষায় থাকেন। বছরের শুরুতে থেকেই নাট্যকমীর্রাও নিয়মিত নাটকের মহড়া শুরু করেন ও নাট্যচর্চায় ব্যস্ত হয়ে পড়েন। অভিবাসী বাঙালি সম্প্রদায়ের কর্মব্যস্ত জীবনে একটু স্বস্থিদান ও বিনোদন প্রদানে টাওয়ার হ্যামলেটসের ‘সিজন অব বাংলা ড্রামা’র বয়স এবারে গড়ালো ২১ বছর। ২০০৩ সালে শুরু হয় এর উদ্দীপ্ত পথচলা।
উদ্বোধনী সন্ধ্যায় নাটক ‘দি থিভস অব হোয়াইটচ্যাপেল’ উপভোগের পর টাওয়ার হ্যামলেটসের ব্যবস্থাপনায় অনুষ্ঠিত হয় অতিথি ও দর্শক—শ্রোতাদের সম্মানে নৈশভোজ। ভোজসভায় অংশ নেন উপস্থিত দর্শক শ্রোতাবৃন্দ। লক্ষণীয় ছিলÑখাবার টেবিলেও একে অন্যের সাথে নাটকের বিভিন্ন চরিত্র, দৃশ্য ও থিম নিয়ে মেতে ওঠেন দর্শকরা। চোখেমুখে ছিল তৃপ্তিপূর্ণ দীপ্তির ঝলকানি।
বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের মঞ্চায়নে শিশুশিল্পীদের অভিনীত ‘হোপ, হ্যাপিল্যান্ড’ এর একটি দৃশ্য।
এছাড়া ৩ নভেম্বর রোববারের আরেকটি বিশেষ আয়োজনের মধ্যে ছিল ‘শাড়ী’ প্রদর্শনী ও বিক্রয়। দুপুর ১টা থেকে ব্রাডি আর্টস সেন্টারের মূল হলে আয়োজিত এ শাড়ী মেলায় অংশ নেয় বাঙালি নারীদের ব্যবস্থাপনায় ৮টি স্টল। সঙ্গে ছিল কয়েকটি বাঙালি খাবার দোকানও। মনোমুগ্ধকর এ প্রর্দশনী ও মেলায় খাদ্য রসিকরা যেমন বাঙালি মজাদার খাবার খান, তেমনি শাড়ী ক্রয়—বিক্রয়েও ছিল উল্লেখ্যযোগ্য নারী সমাগম। মন খুলে কেনা—বেচায় নারীদের অংশগ্রহণ ছিল চাঞ্চল্যেপূর্ণ। ব্যতিক্রমী এ আয়োজনটি বেলা বাড়ার সাথে সাথে রূপ নেয় অনন্য মিলনমেলায়।
উল্লেখ্য, সিজন অব ড্রামা’র প্রথম দিন থেকে শুরু হয়েছে চিত্র প্রদর্শনী। বাংলাদেশী চিত্রশিল্পীদের আঁকা চিত্র ব্রাডি আর্টস সেন্টারের ভেতরের হলরুমের দেয়াল বর্ণিল চিত্রে রাঙিয়ে উঠেছে। দর্শকরা ঘুরে ঘুরে দেখছেন ও উপভোগ করছেন। প্রতিটি চিত্রে রয়েছে বাংলার প্রকৃতি ও জীবনবৈচিত্রের নানা রূপ।