কাউন্সিলের নতুন বাড়ি কেনার সুযোগ বন্ধ হচ্ছে?
মোহাম্মদ গোলাম কিবরিয়া, লন্ডন: বিটেনের উপ-প্রধানমন্ত্রী অ্যাঞ্জেলা রেনার বলেছেন, তিনি ইংল্যান্ডে নতুন কাউন্সিল বাড়িগুলি রাইট টু বাই স্কিমের আওতায় বিক্রি হওয়া বন্ধ করতে চাচ্ছেন।
অ্যাঞ্জেলা রেনার গত কাল বুধবার বিবিসিকে বলেন, সরকার ইংল্যান্ডে নতুন সোশ্যাল হাউজিংয়ে বিধিনিষেধ আরোপ করতে যাচ্ছে।
কয়েক দশক ধরে, ইংল্যান্ডে রাইট টু বাই স্কিম এর মাধ্যমে সোশ্যাল হাউজিংয়ের ভাড়াটেগণ বড় অংকের ডিসকাউন্টে তাদের বাড়ি কেনার সুযোগ ভোগ করছিলেন।
উপপ্রধানমন্ত্রী রেনার বলেন, বর্তমানে ইংল্যান্ড দেশটি গৃহহীনতার বিপুল সংকট এর মুখোমুখি হয়েছে। কারণ, তিনি শীতের মধ্যে রাস্তায় কিংবা যেখানে সেখানে রাত্রিযাপন করা মানুষের সাহায্য করার জন্য দশ মিলয়ন পাউন্ড সহায়তার ঘোষণা করেছিলেন।
প্রসঙ্গত, ১৯৮০ সালে সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী মার্গারেট থ্যাচারের রক্ষণশীল সরকারের সময় রাইট টু বাই স্কিম চালু করা হয়েছিল৷ তখন থেকে দুই মিলিয়নেরও বেশি বাড়ি বিক্রি হয়েছে৷
রাইট টু বাই স্কিম নীতিটি প্রাথমিকভাবে বাড়ির মালিকানার হার বৃদ্ধির জন্য করা হয়ে থাকলেও সম্প্রতি গৃহহীনদের পরিমান বৃদ্ধিতে এই পদ্ধতিকে দায়ী করা হয়েছে।
লেবার দল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক সোশ্যাল হাউজিং এবং কাউন্সিল হোম নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। তবে, উপপ্রধানমন্ত্রী বিবিসিকে বলেছেন, তিনি নিয়মবহির্ভূত ভাবে এই নতুন নির্মিত সম্পত্তিগুলি হারাতে চান না।
তিনি বলেন, "আমরা তাঁদের ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করব যাতে আমদের সেই বাড়িগুলি হারাতে না হয়। ব্রিটেনের মন্ত্রীপরিষদ এই বছরের শেষের দিকে এই বিষয়ে একটি আলোচনা শুরু করবে বলে জানা যায়।
২০১২ সালে কনজারভেটিভ নেতৃত্বাধীন জোট সরকার দ্বারা রাইট টু বাই স্কিম পুনরায় চালু করা হয়েছিল। এ সময় ভাড়াটিয়া তাদের বাড়ি কেনার সময় যে আরও অধিক পরিমানে ছাড় গ্রহণের সুযোগ পেয়েছিলেন। বর্তমানে এটি লন্ডন ব্যতীত সমগ্র ইংল্যান্ডে প্রায় ১ লক্ষ ২ হাজার পাউন্ড। লন্ডনে এই ছাড়ের পরিমান দাঁড়িয়েছে প্রায় ১ লক্ষ ৩৬ হাজার পাউন্ড।
উল্লেখ্য, বর্তমান উপপ্রধানমন্ত্রী অ্যাঞ্জেলা রেনার ২০০৭ সালে রাইট টু বাই স্কিমের মাধ্যমেই নিজের সম্পত্তি কিনেছিলেন।
২০১৬ সালে স্কটল্যান্ডে রাইট টু বাই স্কিমের আওতায় বাড়ি ক্রয়ের সুযোগ বন্ধ করা হয়েছিল এবং ২০১৯ সালে ওয়েলশ সরকার এ নীতিটি বন্ধ করে।
এনজেলা রেনার বলেছেন, গৃহহীনতার ক্ষেত্রে ইংল্যান্ড একটি বিপর্যয়কর জরুরি পরিস্থিতি মোকাবেলা করছে।
দক্ষিণ লন্ডনে রাস্তায় ঘুমানো মানুষের জন্য একটি হোস্টেল পরিদর্শন করে তিনি এমন কয়েকজনের সাথে দেখা করেছিলেন, যাদের সম্প্রতি ফুটপাতে না ঘুমানোর জন্য সাহায্য করা হয়েছে। সর্বশেষ তথ্যে দেখা যায়, এই বছরের জুন থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে তিন মাসে ৪,৭৮০ জন মানুষকে শহরে রাস্তায় বা এখানে সেখানে ঘুমাতে দেখা গেছে, যা রেকর্ড সর্বোচ্চ।
অস্থায়ী আবাসে বসবাসকারী পরিবারের সংখ্যাও রেকর্ড পর্যায়ে রয়েছে। এর মধ্যে ১ লক্ষ ৫০ হাজার এরও বেশি শিশু রয়েছে। এ সমস্যাটি রাতারাতি ঠিক করা হবে না স্বীকার করে, মিসেস রেনার বলেন, গৃহহীনতা মোকাবেলায় বিভিন্ন সরকারী বিভাগকে সমন্বিত ভাবে কাজ করতে হবে।
তিনি গৃহহীন হয়ে পড়া মানুষের সংখ্যা কমিয়ে আনার ওপর জোর দেয়ার দাবি জানান।
গৃহহীন দাতব্য সংস্থা সেন্ট মুঙ্গোর প্রধান নির্বাহী এমা হাদ্দাদ বলেছেন, ভাড়ার অধিকার বিলের মাধ্যমে এগিয়ে যাওয়ার জন্য সরকারের সংকল্পে তিনি উৎসাহিত হয়েছেন।
বিলটি ইংল্যান্ডে ধারা ২১ এর উচ্ছেদের অবসান ঘটাবে, যেখানে বাড়িওয়ালারা ভাড়াটেদেরকে কারণ না জানিয়েই চলে যেতে বলতে পারেন।
তিনি বলেন, “আমরা জানি যে বেশিরভাগ মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়ছে এবং বেসরকারি খাত থেকে বেরিয়ে আসছে। তিনি বলেন, ধারা ২১ একটি বড় চতুর প্রক্রিয়া, যার মাধ্যমে বাড়ির মালিকরা সহজেই ভাড়াটিয়াদের বাড়ি ছাড়তে বাধ্য করতে পারেন।