মূলধন লাভে কর হ্রাস: ইতিবাচক পথে ফিরেছে শেয়ারবাজার
দেশের শেয়ারবাজারে গত সপ্তাহে সূচকের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা লক্ষ করা গেছে। যদিও শেষ দু’দিন পতনেই ছিল। বেশির ভাগ সেক্টরের রিটার্ন সপ্তাহ শেষে বৃদ্ধি পেয়েছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বা এনবিআর ৫০ লাখ টাকার ওপরে মূলধন লাভের ওপর ১৫ শতাংশ করের হার কমানোয় এবং বেশির ভাগ কোম্পানির পজিটিভ আর্নিং প্রকাশিত হওয়ায় বাজারে কিছুটা আশাবাদ বেড়েছে। যদিও অনেক বিনিয়োগকারী তাদের পোর্টফোলিওতে আরো ক্ষতি এড়াতে সতর্ক অবস্থান নিয়েছেন। গড় টার্নওভার ৪৫.৪০ শতাংশ বেড়েছে। ডিএসইর বাজারমূলধন ০.৯৭ শতাংশ বা প্রায় সাড়ে ছয় হাজার কোটি টাকা বেড়েছে। বেশির ভাগ কোম্পানি দর বৃদ্ধিতেই ছিল বলে ডিএসইর সাপ্তাহিক বাজার পর্যালোচনার তথ্য থেকে জানা গেছে।
সাপ্তাহিক তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, সপ্তাহজুড়ে ২৪৪টি শেয়ারের বাজারমূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে এবং ১১২টি শেয়ার এর বাজারমূল্য হ্রাস পেয়েছে। বাজারমূল্যের ভিত্তিতে ১৬টি সেক্টর এই সপ্তাহে বৃদ্ধি পেয়েছে। যার মধ্যে টপ গেইনার ছিল পেপার, সিরামিক্স ও ভ্রমণ খাত। দু’টি সেক্টর এই সপ্তাহে টপ লুজার। মূল্য ও লেনদেনের দিক থেকে সার্বিকভাবে ওরিয়ন ফার্মা সবচেয়ে জনপ্রিয় ছিল। সপ্তাহ শেষে ডিএসইর প্রধান সূচকে পয়েন্ট ফিরেছে ১১৬.৯৩ পয়েন্ট, ডিএসই-৩০ সূচকে ৩৯.৪৯ পয়েন্ট, শরিয়াহ সূচকে ৪৩.০১ পয়েন্ট এবং এসএমই সূচকে ৪২.৭১ পয়েন্ট। গড়ে টাকায় লেনদেন ৪৫.৪০ শতাংশ বেড়েছে। বাজারমূলধন ০.৯৭ শতাংশ বৃদ্ধির ফলে ডিএসইর মূলধনের আকার এখন ছয় লাখ ৭১ হাজার ৮০৯ কোটি টাকার বেশি। শেয়ার বেচাকেনা গড়ে ২৫.৭৬ শতাংশ বেড়েছে। মোট টাকায় লেনদেন বেড়েছে আগের সপ্তাহের তুলনায় ৯৪৫ কোটি ৮০ লাখ টাকা। আর শেয়ার বেচাকেনা মোট বেড়েছে আগের সপ্তাহের তুলনায় ২৩ কোটি ৫০ লাখ। ব্লক মার্কেটে পুরো সপ্তাহে মোট ৯১ কোটি ৭৫ লাখ ২০ হাজার টাকার লেনদেন হয়েছে। যেখানে এসএমই মার্কেটে ৫১ কোটি ৯৮ লাখ ৫০ হাজার টাকার বেচাকেনা হয়েছে। লেনদেনে অংশ নেয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে দর বেড়েছে ২৫৪টির, দর পতনের শিকার ১১১টি, দর অপরিবর্তিত ছিল ২৯টির এবং ১৯টি কোম্পানি লেনদেনে অংশ নেয়নি।
সাপ্তাহিক দর বৃদ্ধিতে শীর্ষ ১০
বিদায়ী সপ্তাহটিতে সবচেয়ে বেশি দর বেড়েছে গ্লোবাল হেভি কেমিক্যালস লিমিটেডের। সপ্তাহজুড়ে কোম্পানিটির শেয়ারদর বেড়েছে ৪২.৬২ শতাংশ। ডিএসইর সাপ্তাহিক বাজার পর্যালোচনায় এই তথ্য জানা গেছে। শীর্ষ তালিকায় উঠে আসা অন্যান্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে শাইনপুকুর সিরামিকসের ২৮.৮১ শতাংশ, আফতাব অটোমোবাইলসের ২৫.১৬ শতাংশ, মিডল্যান্ড ব্যাংকের ২৪.০১ শতাংশ, আরামিট সিমেন্টের ২২.৮১ শতাংশ, এনভয় টেক্সটাইলের ২১.৬৩ শতাংশ, লিগ্যাসি ফুটওয়্যারের ২০.৫০ শতাংশ, ওরিয়ন ফার্মার ২০.৩৭ শতাংশ, এস আলম কোল্ড রোল্ড স্টিলসের ২০.০০ শতাংশ এবং ফু-ওয়াং ফুড লিমিটেডের ২০.০০ শতাংশ শেয়ার দর বেড়েছে।
গত সপ্তাহে সবচেয়ে বেশি দর কমেছে প্রাইম ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের। সপ্তাহজুড়ে কোম্পানিটির শেয়ারদর ১০.৫৩ শতাংশ কমেছে। দর পতনের শীর্ষ তালিকায় স্থান পাওয়া অন্যান্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে ফার্মা এইডসের ৮.৫৮ শতাংশ, শামপুর সুগার মিলসের ৮.১৫ শতাংশ, পূরবী জেনারেল ইন্স্যুরেন্সের ৭.৮৮ শতাংশ, ফারইস্ট ফাইন্যান্সের ৭.৩২ শতাংশ, রেউইক যজ্ঞেস্বরের ৭.২৭ শতাংশ, কুইন সাউথ টেক্সটাইলের ৬.৯৮ শতাংশ, জিল বাংলা সুগার মিলসের ৬.৯৮ শতাংশ, ইসলামিক ফাইন্যান্সের ৬.৯৯ শতাংশ এবং ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেডের ৬.৮২ শতাংশ শেয়ারদর কমেছে।
ডিএসইর লেনদেনের নেতৃত্বে গত সপ্তাহে উঠে এসেছে ওরিয়ন ফার্মা লিমিটেড। সপ্তাহজুড়ে কোম্পানিটির প্রতিদিন গড়ে ১৭ কোটি ৬৬ লাখ ২০ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে, যা ছিল ডিএসইর মোট লেনদেনের ২.৯২ শতাংশ। লেনদেনের দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন। সপ্তাহজুড়ে ব্যাংকটির প্রতিদিন গড়ে ১৬ কোটি ৭০ লাখ ৮০ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে, যা ছিল ডিএসইর লেনদেনের ২.৭৬ শতাংশ। তৃতীয় স্থানে রয়েছে ইসলামী ব্যাংক। সপ্তাহজুড়ে ব্যাংকটির প্রতিদিন গড়ে ১৪ কোটি ২৬ লাখ ৪০ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে, যা ছিল ডিএসইর লেনদেনের ২.৩৫ শতাংশ।
এছাড়া, প্রতিদিন গড় লেনদেনে সাপ্তাহিক শীর্ষ তালিকায় থাকা অন্যান্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে ফারইস্ট নিটিংয়ের ১৩ কোটি ৫১ লাখ ২০ হাজার টাকা, মিডল্যান্ড ব্যাংকের ১২ কোটি ৫২ লাখ ৪০ হাজার টাকা, অগ্নি সিস্টেমসের ১২ কোটি ২৪ লাখ ৭০ হাজার টাকা, বেক্সিমকো ফার্মার ১১ কোটি ৫৫ লাখ ২০ হাজার টাকা, ওরিয়ন ইনফিউশনের ১১ কোটি ৪৬ লাখ ৬০ হাজার টাকা, ব্র্যাক ব্যাংকের ১১ কোটি তিন লাখ ৭০ হাজার টাকা এবং তাওফিকা ফুডস অ্যান্ড লাভেলো আইসক্রিম পিএলসির ১০ কোটি ৭৩ লাখ ৮০ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে।
সিএসইতেও ভালো ছিল সূচকগুলো
অন্যদিকে চট্টগ্রাম স্টকে সবগুলো সূচকই গত সপ্তাহে ভালো পরিমাণে পয়েন্ট ফিরে পেয়েছে বাজারটি আগের সপ্তাহের চেয়ে ইতিবাচক পথেই ছিল। সিএএসপিআই ২.৮৩ শতাংশ, সিএসই-৩০ সূচক ১.৮৬ শতাংশ, সিএসসিএক্স ২.৮৮ শতাংশ, সিএসআই ৩.৩৪ শতাংশ এবং এসএমই সূচক ১.৭৩ শতাংশ পয়েন্ট ফিরে পেয়েছে। ৩১৭টি কোম্পানি লেনদেনে অংশ নেয়। যার মধ্যে দর বেড়েছে ২৮৪টির, পতনে ছিল ৫৭টি এভং ১২টি কোম্পানির দর অপরিবর্তিত ছিল। এক কোটি ৩৬ লাখ ১৮ হাজার ৯৯৭টি শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড হাতবদল হয়েছে মোট ৩৪ কোটি ৮৯ লাখ ৫৯ হাজার ১২০ টাকা গত সপ্তাহের বাজারমূল্যে। এখানে বাজারমূলধনে এ শ্রেণীর কোম্পানির অংশীদারিত্ব ৭০.৯৮ শতাংশ, বি শ্রেণীর ১৯.৪৫ শতাংশ, এস শ্রেণীর ৭.২৯ শতাংশ এবং জেড শ্রেণীর কোম্পানির ২.৩২ শতাংশ। পর্যালোচনায় রয়্যাল ক্যাপিটাল বলছে, নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি শেয়ারবাজারে সাপোর্ট প্রদান ও তারল্য বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে নানাবিধ পদক্ষেপ গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তাই যেসব বিনিয়োগকারীরা বর্তমান বাজার পর্যবেক্ষণ করছেন, তারা এখন বাজারে অংশগ্রহণ করার ক্ষেত্রে আগ্রহী হতে পারেন। সার্বিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে বলা যায় যে, আগামী সপ্তাহে বাজারের সূচক কিছুটা নি¤œমুখী হওয়ার পাশাপাশি মাঝারি পরিমাণে লেনদেন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।