img

খোলা চিঠি: প্রধান উপদেষ্টার প্রতি করিম চাচার বার্তা

প্রকাশিত :  ০৬:২৫, ১১ নভেম্বর ২০২৪

খোলা চিঠি: প্রধান উপদেষ্টার প্রতি করিম চাচার বার্তা

প্রিয় প্রধান উপদেষ্টা মহোদয়,

আপনার প্রতি আমাদের গভীর শ্রদ্ধা ও প্রীতি জানিয়ে এই খোলা চিঠিটি লিখছি। আপনার হাতে দেশের গুরুদায়িত্ব, দেশের নেতৃত্বের ভার তুলে দেওয়া হয়েছে। আজ, আমাদের দেশের প্রতিটি মানুষ আপনার সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভরশীল। আমরা জানি, আপনার মত একজন অভিজ্ঞ নেতা জাতিকে একটি নতুন দিগন্তে পৌঁছাতে সক্ষম। তবে, একান্তভাবে ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে একটি কথা বলার তাগিদ অনুভব করছি।

“ছাগল দিয়ে যেমন হাল বাওয়া যায় না, তেমনি যোগ্য ও অভিজ্ঞ নেতার নেতৃত্ব ছাড়া দেশ পরিচালনা সম্ভব নয়।” এই প্রবাদটির মধ্যে যে গভীর জীবনবোধ লুকিয়ে আছে, তা আজ আমাদের জাতির সামনে অতি স্পষ্ট। দেশ পরিচালনার জন্য একদিকে যেমন দক্ষ, বিচক্ষণ, কৌশলী এবং দূরদর্শী নেতার প্রয়োজন, তেমনি সঠিক পথে পরিচালিত হওয়ার জন্য একজন যোগ্য উপদেষ্টার সহায়তাও অপরিহার্য। কারণ, একজন উপদেষ্টা শুধুমাত্র সরকারের পরামর্শদাতা নন; তিনি জাতির প্রকৃত পথপ্রদর্শক, যিনি সংকটময় মুহূর্তে সঠিক দিকনির্দেশনা দিতে সক্ষম।

এখানে একটি প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে—বর্তমান সময়ে যারা উপদেষ্টা পদে নিযুক্ত হচ্ছেন, তারা কি আদৌ এই গুরুদায়িত্ব পালনের জন্য যথেষ্ট দক্ষ ও যোগ্য? আমাদের দেশের সাধারণ জনগণ তাদের আশা-আকাঙ্ক্ষা, স্বপ্ন এবং ভবিষ্যত নিয়ে এগিয়ে চলেছে। তারা চায় এমন নেতৃত্ব, যে তাদের সংকটের মুহূর্তে সঠিক দিকনির্দেশনা দেবে। সঠিক নেতৃত্বে পরিচালিত হলে একটি জাতি এগিয়ে যেতে পারে, উজ্জ্বল ভবিষ্যতের দিকে। তবে দুর্বল নেতৃত্ব ও অভিজ্ঞতার অভাবে একটি জাতি পিছিয়ে পড়তে বাধ্য। তাই, নেতৃত্ব এবং উপদেষ্টাদের দক্ষতা, অভিজ্ঞতা এবং জনকল্যাণের প্রতি দায়বদ্ধতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

দেশের নীতি-নির্ধারণী সিদ্ধান্তগুলো সরাসরি জনগণের জীবন এবং ভবিষ্যতের ওপর প্রভাব ফেলে। একজন দক্ষ ও অভিজ্ঞ উপদেষ্টা, যিনি আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা এবং কৌশলগত জ্ঞান দ্বারা সমৃদ্ধ, তিনি মন্ত্রিপরিষদের কার্যক্রম পরিচালনায় সহায়ক হতে পারেন এবং দেশের অর্থনীতি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ও মানবিক উন্নয়নের প্রতিটি ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারেন। একজন উপদেষ্টা শুধুমাত্র একজন প্রশাসনিক ব্যক্তিত্ব নন, বরং তিনি হচ্ছেন উন্নয়নের মূল কারিগর। তার দূরদর্শী দিকনির্দেশনা দেশকে সংকটমুক্ত করতে এবং সম্ভাবনার শিখরে পৌঁছাতে সক্ষম করতে পারে।

এটি বলার সময়, আমি মনে করি, দেশ পরিচালনায় পরীক্ষামূলক সিদ্ধান্ত গ্রহণ কখনোই কাম্য নয়। বিশেষত এমন একটি দেশে, যেখানে জনসংখ্যার একটি বড় অংশ এখনও দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করছে। আমাদের প্রায় ১৮ কোটি মানুষের ভাগ্য যদি এমন ব্যক্তিদের হাতে তুলে দেওয়া হয়, যাদের অভিজ্ঞতা এবং দক্ষতা নিয়ে সংশয় রয়েছে, তবে তা দেশের জন্য আরও বিপদ ডেকে আনতে পারে। আমাদের জন্য সবচেয়ে জরুরি হলো, একজন উপদেষ্টা যিনি গভীর জনকল্যাণবোধে পূর্ণ এবং যিনি রাজনৈতিক চাপের ঊর্ধ্বে থেকে জাতির কল্যাণে কাজ করতে পারবেন।

সুতরাং, উপদেষ্টার পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে তার যোগ্যতা, অভিজ্ঞতা, এবং জনকল্যাণের প্রতি দায়বদ্ধতা গভীরভাবে বিবেচনা করা উচিত। একজন উপযুক্ত উপদেষ্টা হলেন সেই ব্যক্তি, যিনি জনগণের সমর্থন ও আস্থার ভিত্তিতে ভবিষ্যতের নীতি ও পদক্ষেপ নির্ধারণ করতে পারেন। তার নেতৃত্বে দেশের উন্নয়ন কেবল আর্থিক অগ্রগতির ওপরই নির্ভর করে না, বরং মানবিক মূল্যবোধের উন্নয়নের সঙ্গেও সম্পর্কিত।

একটি সত্যিই মহৎ নেতৃত্বের অধিকারী হলেই, সেই নেতা জনগণের বিশ্বাস ও ভালবাসার পাত্র হন। এ যেন এক অসীম শক্তি, যা দেশের ভিতর থেকে বার্তা দেয় এবং জাতির অগ্রগতির জন্য পথ তৈরি করে। একজন দূরদর্শী ও আদর্শ নেতৃত্বই আমাদের জাতিকে উজ্জ্বল ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে নিতে পারে, এটাই আমাদের আশা।

আপনার প্রতি আমাদের প্রত্যাশা, আপনি যেহেতু এ দেশের প্রিয় মুখ, আপনার নেতৃত্বে আমাদের জাতি এক নতুন সূর্যোদয়ে পৌঁছবে। আপনি যদি যোগ্য এবং অভিজ্ঞ উপদেষ্টাদের নিয়োগ করেন, যারা দেশের জনগণের জন্য আদর্শ ও কল্যাণমুখী সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম, তবে আমরা বিশ্বাস করি—আমাদের ভবিষ্যত উজ্জ্বল হবে।

দেশের উন্নয়নের পথে আপনি যে নেতৃত্ব প্রদান করবেন, তাতে আমরা সবসময় পাশে আছি।

শ্রদ্ধাসহ,

করিম চাচা

img

যৌনতা এবং শারীরিক চাহিদা থেকে জীবনের পরিধি আরও অনেক বড় – এ আর রহমানের আত্মোপলব্ধি

প্রকাশিত :  ০৭:৩২, ৩০ নভেম্বর ২০২৪
সর্বশেষ আপডেট: ০৮:১১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪

রেজুয়ান আহম্মেদ

অস্কারজয়ী সঙ্গীতশিল্পী এ আর রহমান, যিনি পৃথিবীকে সুরের মাধ্যমে নতুনভাবে চিনিয়েছেন, সম্প্রতি নিজের জীবনের এক অদেখা অধ্যায় প্রকাশ্যে এনেছেন। সায়রা বানুর সঙ্গে বিবাহ-বিচ্ছেদের পর, এক দীর্ঘ নীরবতার শেষে রহমান তাঁর ব্যক্তিগত যাত্রা সম্পর্কে খোলামেলা কথা বলেছেন। তিনি স্বীকার করেছেন যে জীবনের উদ্দেশ্য এবং মানবিক সম্পর্কের মধ্যে শুধুমাত্র শারীরিক চাহিদার সীমা থাকে না; জীবনের পরিধি আরও অনেক বড় এবং গভীর।

তিনি তাঁর একটি বক্তব্যে বলেন, ‘‘যৌনতার মতো শারীরিক চাহিদা মেটানোই জীবনের সব নয়, কখনও…’’ তাঁর এই উক্তি শুধু একটি সঙ্গীতশিল্পীর দৃষ্টিকোণ নয়, বরং একটি জীবনদৃষ্টি, যেখানে আত্মিক পরিপূর্ণতা এবং মানসিক শান্তি কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠতে পারে। রহমানের মতে, আমাদের জীবনে একটি গভীর শূন্যতা রয়েছে, যা শুধুমাত্র শারীরিক সুখ দ্বারা পূর্ণ হতে পারে না। আমাদের আধ্যাত্মিক বা মানসিক উন্নতির দিকে মনোযোগ দেওয়া উচিত, যা জীবনকে অর্থবহ এবং পূর্ণতা দেয়।

প্রায়ই সমাজে যৌনতা এবং শারীরিক সম্পর্ককে জীবনের একমাত্র উদ্দেশ্য হিসেবে তুলে ধরা হয়। কিন্তু রহমানের অভ্যন্তরীণ জগতের এই খোলামেলা উক্তি আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, আমাদের জীবনের অঙ্গনের অনেক বৃহৎ ক্ষেত্র রয়েছে, যেখানে আনন্দ, শান্তি এবং পূর্ণতা আসতে পারে। ‘‘শুধুমাত্র শারীরিক চাহিদা মেটানোই জীবনের সব নয়’’—এই কথায় তিনি একদিকে যেমন জীবনের উদ্দেশ্য অনুসন্ধান করছেন, তেমনি মানসিক স্বাস্থ্যের গুরুত্বও তুলে ধরছেন।

এ আর রহমানের মতে, একজন মানুষের মানসিক স্বাস্থ্য তখনই ভালো থাকতে পারে, যখন সে জীবনের গভীরে প্রবাহিত হতে পারে। তিনি বলছেন, ‘‘অবসাদ ঘিরে ধরে, কারণ আমার মনে হয়, আমাদের সবার মধ্যেই একটা শূন্যতা রয়েছে।’’ এরই মধ্যে গল্পকাররা, দর্শন, বিনোদন, এমনকি কখনও কখনও ওষুধের মাধ্যমে এই শূন্যতা পূর্ণ করা যায়। কিন্তু জীবনের উদ্দেশ্য সেই সব জিনিসে সীমাবদ্ধ নয়।

এখানে উল্লেখযোগ্য হলো, রহমানের ব্যক্তিগত জীবনের অধ্যায়গুলো। তাঁর স্ত্রী সায়রা বানুর সঙ্গে বিবাহ-বিচ্ছেদ এবং তার পরবর্তী ঘটনাবলীর প্রতি তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি একটি অন্তর্দৃষ্টি দেয়, যে যেখানে তিনি তাঁর শূন্যতা, দুঃখ এবং সঙ্কটের মধ্যে থেকেও জীবনের একটি বৃহত্তর দৃষ্টিকোণ খুঁজে পেয়েছেন। ‘‘এমনকি ভগ্ন হৃদয়ের ভারে ঈশ্বরের সিংহাসনও কেঁপে উঠতে পারে’’—রহমান তাঁর নিজের দুঃখ এবং সংগ্রামকে পৃথিবীর বৃহত্তর দুঃখের সঙ্গে তুলনা করছেন, যেখানে ক্ষতি এবং হতাশা একে অপরকে অনুসরণ করে। তবুও, তিনি এই ভঙ্গুরতার মধ্যে জীবনের অন্য অংশগুলির জন্য ধন্যবাদ জানিয়েছেন।

এ আর রহমানের এই বক্তব্যে প্রতিটি মানুষের জীবনের বিভিন্ন দিকের প্রশংসা করা হয়েছে—মানসিক শান্তি, আত্মিক উন্নতি, এবং অন্যের জন্য বাঁচার আকাঙ্ক্ষা। তিনি বলেছেন, ‘‘যখন তুমি অন্যের জন্য বাঁচবে, তখন তোমার মধ্যে এই চিন্তাগুলি আসবে না।’’ এর মাধ্যমে তিনি আমাদেরকে জীবনকে শুধুমাত্র নিজের সুখের জন্য না, বরং একটি বৃহত্তর উদ্দেশ্য সাধনের জন্য বাঁচার পরামর্শ দিয়েছেন। জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে এমন একটি নৈতিক ভিত্তি খুঁজে পাওয়া উচিত, যা শুধুমাত্র আমাদের শারীরিক চাহিদা পূরণে সীমাবদ্ধ নয়। আমাদের আধ্যাত্মিক এবং মানসিক উন্নতি, আমাদের জীবনের বাস্তব মূল্যমানের পরিচয় দেয়।





রেজুয়ান আহম্মেদ: কলামিস্ট, বিশ্লেষক; সম্পাদক অর্থনীতি ডটকম

মতামত এর আরও খবর