নাটক বা সিনেমার মতো বাস্তবে কি মন্ত্রণালয় পরিচালনা সম্ভব?
রেজুয়ান আহম্মেদ
নাটক বা সিনেমায় আমরা প্রায়ই দেখি, একটি চরিত্র গল্পের প্রয়োজনে এমপি, মন্ত্রী বা উপদেষ্টা হয়ে যায় এবং সেখানে সে দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে। এটি আমাদের বিনোদন দেয়, কারণ চরিত্রটি দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি নাটকীয়তা, মানবিকতা ও সাহসিকতা প্রদর্শন করে, যা দর্শকের হৃদয় ছুঁয়ে যায়। কিন্তু বাস্তব জীবনে কি এমনটা সম্ভব? একটি দেশের মন্ত্রণালয় পরিচালনা বা গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালনের জন্য যে জ্ঞান, দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা প্রয়োজন, তা কেবলমাত্র অভিনয়ের মাধ্যমে অর্জন করা যায় না। দেশের প্রকৃত প্রেক্ষাপট, তার সমাজ, অর্থনীতি, রাজনীতি এবং জনগণের স্বার্থ বোঝা এক্ষেত্রে আবশ্যক।
মোস্তফা সরওয়ার ফারুকী একজন কৃতী পরিচালক, যিনি আমাদের সমাজের নানা দিক চিত্রিত করতে অত্যন্ত সফল। তবে তার কাজের পরিধি মূলত শিল্পের মধ্যে সীমাবদ্ধ, যেখানে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বিশ্লেষণ থাকে, কিন্তু প্রশাসনিক দক্ষতার প্রয়োজনীয়তা ততটা থাকে না। তাই প্রশ্ন ওঠে, প্রশাসনিক কাজে তিনি কি যথার্থ যোগ্য?
যেকোনো প্রশাসনিক পদ, বিশেষত একটি মন্ত্রণালয় পরিচালনার দায়িত্ব, তাত্ত্বিক ও বাস্তবমুখী জ্ঞান, জনগণের প্রতি দায়িত্ববোধ এবং দেশের উন্নয়ন প্রক্রিয়া সম্পর্কে গভীর অনুধাবনের দাবি রাখে। এটি কোনো সিনেমার সেট নয়, যেখানে একটি সংলাপ বা দৃশ্য কেবলমাত্র দর্শকের মুগ্ধতার জন্য উপস্থাপন করা হয়। বরং এটি এমন একটি মঞ্চ, যেখানে প্রতিটি সিদ্ধান্ত একটি জাতির ভবিষ্যতের সঙ্গে জড়িত।
এই প্রেক্ষাপটে মাননীয় প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়ায়। জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটানো এবং তাদের মতামতকে গুরুত্ব দেওয়া গণতান্ত্রিক আদর্শের অন্যতম প্রধান স্তম্ভ। তাই উপদেষ্টা হিসেবে যোগ্যতার মাপকাঠিতে কাউকে স্থাপন করা জনগণের আস্থা অর্জনের জন্য অপরিহার্য।
একটি সঠিক সিদ্ধান্ত ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল পদক্ষেপ জাতির প্রতি প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্বশীলতার প্রমাণ রাখে। মোস্তফা সরওয়ার ফারুকী বা যেকোনো সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বের উপদেষ্টা নিয়োগের বিষয়ে গণমানুষের ভাবনা ও প্রতিক্রিয়াকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা দরকার। সঠিক ও সময়োপযোগী সিদ্ধান্তই আমাদের ভবিষ্যতের পথে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে, যেখানে একদিকে থাকবে জাতির প্রতি দায়িত্ববোধ এবং অন্যদিকে জনগণের আস্থার প্রতিফলন।