img

জলবায়ু সম্মেলনে বিশ্বনেতাদের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার সাক্ষাৎ

প্রকাশিত :  ১০:২৪, ১২ নভেম্বর ২০২৪
সর্বশেষ আপডেট: ১৩:৫৩, ১২ নভেম্বর ২০২৪

জলবায়ু সম্মেলনে বিশ্বনেতাদের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার সাক্ষাৎ

আজারবাইজানের রাজধানী বাকুতে কপ-২৯ জলবায়ু সম্মেলনের সাইডলাইনে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ানসহ বেশ কয়েকজন বিশ্বনেতা সাক্ষাৎ করেছেন।

এ সময় তারা জলবায়ু সংকট সমাধানের উপায় এবং পারস্পারিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন।

প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব অপূর্ব জাহাঙ্গীর বলেছেন, সম্মেলনের সাইডলাইনে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট ও আরব-আমিরাতের প্রেসিডেন্টসহ ২০ জন বিশ্বনেতা আজ প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন।

তিনি বলেন, নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ হওয়ায় তারা উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন এবং বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ায় তাকে অভিনন্দন জানান।

অপূর্ব জাহাঙ্গীর বলেন, সাক্ষাৎকালে প্রধান উপদেষ্টা বিশ্ব নেতৃবৃন্দের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন এবং পারস্পারিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন।

প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান অধ্যাপক ইউনূসকে তুরস্ক সফরের আমন্ত্রণ জানান এবং সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলতে এবং চলমান সংস্কার প্রক্রিয়া এগিয়ে নিতে সম্ভাব্য সব ধরনের সহযোগিতা প্রদানের প্রতিশ্রুতি দেন। অধ্যাপক ইউনূস তুরস্কের প্রেসিডেন্ট ও ফার্স্ট লেডিকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান।

ছাত্র আন্দোলনে সংহতি প্রকাশ করে প্রতিবাদ কর্মসূচিতে অংশগ্রহণের দায়ে সাজাপ্রাপ্ত ৫৭ প্রবাসী বাংলাদেশি শ্রমিককে মুক্তি দেওয়ায় প্রধান উপদেষ্টা আরব-আমিরাতের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ানকে ধন্যবাদ জানান।

ড. ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করা বিশ্বনেতাদের মধ্যে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফ, ঘানার রাষ্ট্রপতি নানা আকুফো-আড্ডো, মালদ্বীপের রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ মুইজ্জু, বসনিয়া ও হার্জেগোভিনার রাষ্ট্রপতি ডেনিস বেচিরোভিচ রয়েছেন।

এছাড়া তিনি বার্বাডোজের প্রধানমন্ত্রী মিয়া মটলি, আলবেনিয়ার প্রধানমন্ত্রী ইদি রামা, লিখটেনস্টাইনের প্রধানমন্ত্রী ড্যানিয়েল রিশ, ভুটানের প্রধানমন্ত্রী শেরিং তোবগে এবং ইরানের ভাইস প্রেসিডেন্ট শিনা আনসারির সাথেও সাইডলাইনে সাক্ষাৎ করেন।

প্রধান উপদেষ্টা জলবায়ু সম্মেলননে অংশগ্রহণের লক্ষ্যে বর্তমানে চার দিনের সরকারি সফরে বাকুতে অবস্থান করছেন। গতকাল সোমবার আজারবাইজানের স্থানীয় সময় বিকেল ৫টা ১৫ মিনিটে তিনি বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইটে বাকু পৌঁছেন।

তিনি কপ-২৯ সম্মেলনের বিভিন্ন অধিবেশনে অংশগ্রহণ করবেন এবং সাইডলাইনে আয়োজিত বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেবেন। গতকাল সম্মেলন শুরু হয়েছে, চলবে ২২ নভেম্বর পর্যন্ত।

বৈশ্বিক জলবায়ু সংকট সমাধানের লক্ষ্যে এবারের সম্মেলনে প্রায় ২০০ দেশের শীর্ষস্থানীয় নেতারা একত্রিত হয়েছেন। এবারের সম্মেলনের মূল লক্ষ্য জলবায়ু সংকটের ভুক্তভোগী দরিদ্র দেশগুলোকে আরও অর্থসহায়তা দেওয়ার পথ খুঁজে বের করা।


img

ভারতের জনগণকে উদ্দেশ্য করে বাংলাদেশের ১৪৫ নাগরিকের বিবৃতি

প্রকাশিত :  ১৭:০২, ০৬ ডিসেম্বর ২০২৪

ভারতের জনগণকে উদ্দেশ্য করে বাংলাদেশের ১৪৫ জন নাগরিক এক বিবৃতিতে  বলেছেন, ‘সাধারণ জনগণের জীবনের সংকট বিচার করলে দুই দেশের মধ্যে মূলত কোনো পার্থক্য নেই। আমাদের দেশে সাম্প্রদায়িক প্রবণতা আর শক্তির বিরুদ্ধে আমরা লড়ব, আপনারাও আপনাদের দেশে সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবেন।’

‘ভারতের জনগণের কাছে আমাদের আবেদন’ শিরোনামে আজ (শুক্রবার) এক বিবৃতিতে দেশের ১৪৫ জন নাগরিক এসব কথা বলেন। 

বিবৃতিটি গণমাধ্যমে পাঠিয়েছেন সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের (মার্ক্সবাদী) কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক রাফিকুজ্জামান ফরিদ ৷

ভারতের জনগণের উদ্দেশে বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আমরা এমন এক সংকটপূর্ণ সময়ে অবস্থান করছি, যখন ভারত ও বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক শোচনীয় অবস্থায় এবং কিছু ভারতীয় উগ্র সাম্প্রদায়িক শক্তির ক্রমাগত উসকানি এ অঞ্চলের জনগণের মধ্যকার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কে চিড় ধরাতে চাইছে। ভারতের জনগণ ও ভারত সরকারকে আমরা কখনোই এক করে দেখি না। আমরা জানি, ভারতের জনগণও হিন্দুত্ববাদী শক্তি ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে লড়ছে। ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের শাসনের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন লড়াই করে তার পতন ঘটিয়েছি। জুলাই-আগস্টের রক্তক্ষয়ী লড়াইয়ের সময় আপনারা আমাদের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে কর্মসূচি পালন করেছেন। আমাদের গণতান্ত্রিক আন্দোলনে আপনাদের আর আপনাদের আন্দোলনে আমাদের সংহতি প্রকাশের ধারাবাহিকতা অনেক দিনের।’

সাম্প্রদায়িকতাকে ভারতীয় উপমহাদেশের বড় সমস্যা উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়, সাম্প্রদায়িকতা মানুষে মানুষে বিভাজন ঘটায়, ধর্মের ভিত্তিতে তৈরি করে বিভেদ। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কাজের অধিকার, নিত্যপণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি, নারীর প্রতি সহিংসতা এবং জনজীবনের আরও অনেক জলজ্যান্ত সমস্যা আড়াল করার জন্য উপমহাদেশের প্রত্যেক শাসকগোষ্ঠীই সাম্প্রদায়িকতার হাতিয়ার কাজে লাগিয়েছে। তারা এই কৌশল খাটিয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠ ও সংখ্যালঘু উভয় জনগোষ্ঠীর ভোট পাওয়াটা নিশ্চিত করতে চায়। বিশেষত রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের সময় সংখ্যালঘু জনগণের ওপর হামলার ঘটনা বারবার ঘটতে দেখা যায়।

বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সারা বাংলাদেশে হিন্দুদের বাড়িঘরে হামলা, জমি দখল, মন্দির ভাঙচুর ও হতাহতের ঘটনা ঘটেছে এবং ৫ আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানের পর সারা দেশে হিন্দু জনগোষ্ঠীর ঘরবাড়ি, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও মন্দিরে মন্দিরে হামলার ঘটনা ঘটেছে বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়। 

এতে বলা হয়, গণ-অভ্যুত্থানের প্রেরণায় অনেক রাজনৈতিক দল হিন্দু ঘরবাড়ি ও মন্দিরা পাহারায় এগিয়ে আসে এবং সম্প্রীতির নতুন নতুন নজির স্থাপন করে। এ ছাড়া ভারতের জাতীয় পতাকা মাড়ানোর ঘটনায়ও এ দেশের গণতন্ত্রমনা মানুষ প্রতিবাদ জানিয়েছেন। কিন্তু ভারতের অনেকগুলো সংবাদমাধ্যম বাংলাদেশ সম্পর্কে আসল তথ্য প্রচার করেনি, এখনও করছে না। ভারতের এক সংবাদমাধ্যম ঢাকা-আগরতলা-ঢাকা রুটে একটি দুর্ঘটনাকে পরিকল্পিত হামলা বলে প্রচার করে। সেই প্রচারের কয়েক ঘণ্টার মধ্যে আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে আক্রমণ হয়, বাংলাদেশের পতাকা নামিয়ে ছিঁড়ে ফেলা হয়।

সহকারী হাইকমিশনে হামলার ঘটনায় ভারত সরকার দুঃখ প্রকাশ করলেও মিথ্যা প্রচারণা বন্ধের কোনো কার্যকর উদ্যোগ নেয়নি উল্লেখ করে বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘আমরা চাই, বাংলাদেশের প্রকৃত ঘটনা যথাযথভাবে দেখানো হোক। এ ধরনের প্রচারণা থেকে যেকোনো দেশেই লাভবান হয় সাম্প্রদায়িক শক্তি, লাভবান হয় শাসকগোষ্ঠী।’

সম্প্রতি চিন্ময় কৃষ্ণ দাস গ্রেপ্তার হওয়ার পর ভারত সরকার যে ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে, তাতে অবাক হয়েছেন বলে নাগরিকদের বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়। বলা হয়, ‘চিন্ময় কৃষ্ণের বিচার পাওয়ার অধিকারকে আমরা সমর্থন করি, সেটা সবারই আছে। কিন্তু ভারত সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যেভাবে তড়িঘড়ি তার পক্ষে বিবৃতি দিল, তা বিস্ময়কর। তাকে আদালতে উপস্থিত করার দিন ব্যাপক বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় এবং আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফকে হত্যা করা হয়। এ দেশের জনমানুষের সম্মিলিত চেষ্টায় এই ঘটনার অজুহাতে বড় কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।’

বিবৃতিতে বলা হয়, বাংলাদেশের হিন্দু জনগোষ্ঠী বরাবরই অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পক্ষে। এ দেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে এবং সব ধরনের গণতান্ত্রিক আন্দোলনে হিন্দু জনগোষ্ঠীর ভূমিকা উজ্জ্বল। জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানেও হিন্দু জনসাধারণের অনেকেই লড়াইয়ে শামিল হয়েছেন, প্রাণ দিয়েছেন৷

শেষে ভারতের জনগণের উদ্দেশে বাংলাদেশের ১৪৫ নাগরিক বলেছেন, ‘আমাদের দেশে সাম্প্রদায়িক প্রবণতা ও শক্তির বিরুদ্ধে আমরা লড়ব, আপনারাও আপনাদের দেশে সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবেন। আপনাদের দেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনে যারা জীবন দিয়েছেন, তাদের আকাঙ্ক্ষার মর্যাদা অক্ষুণ্ন রেখে আপনারা এই চক্রান্ত প্রতিহত করবেন। এ লড়াই ভারতের বৃহৎ পুঁজির শোষণ-লুণ্ঠন আর নিপীড়ন-নির্যাতন-আধিপত্যের বিরুদ্ধে উভয় দেশের জনগণের নিরন্তর লড়াই; বিভেদ, বিদ্বেষ ও ধর্মকেন্দ্রিক স্বার্থান্বেষী চক্রান্তের বিরুদ্ধে আমাদের ঐক্যবদ্ধ লড়াই। এই লড়াইয়ে আমরা শেষ পর্যন্ত জয়ী হব।’

বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন- আনু মুহাম্মদ, সলিমুল্লাহ খান, সাঈদ ফেরদৌস, হারুন-অর-রশীদ, স্বাধীন সেন, গীতি আরা নাসরীন, ফাহমিদুল হক, কামরুল হাসান মামুন, তুহিন ওয়াদুদ, সামিনা লুৎফা, মোশরেফা মিশু, সীমা দত্ত, আলতাফ পারভেজ, কল্লোল মোস্তফা, আশরাফ কায়সার, মাহা মীর্জা, জ্যোতির্ময় বড়ুয়া, মানজুর-আল-মতিন, সায়ান, অমিতাভ রেজা চৌধুরী, কামার আহমাদ সাইমন, প্রীতম দাশ, সারোয়ার তুষার, সালমান সিদ্দিকী, মেঘমল্লার বসু প্রমুখ।