img

নতুন প্রজন্মকে মানবিক মূল্যবোধের দিকে পরিচালিত করতে হবে

প্রকাশিত :  ১৮:৩৬, ২০ নভেম্বর ২০২৪
সর্বশেষ আপডেট: ২০:৩৭, ২০ নভেম্বর ২০২৪

নতুন প্রজন্মকে মানবিক মূল্যবোধের দিকে পরিচালিত করতে হবে

রেজুয়ান আহম্মেদ

মানব সভ্যতা যখন জ্ঞানের আলোকবর্তিকা হাতে অগ্রসর হচ্ছে, তখন এক অশনি সংকেতের মতো অন্ধকার যেন আমাদের দিকে এগিয়ে আসছে। সভ্যতার এই মহাসমুদ্রে, যেখানে প্রযুক্তি, বিজ্ঞানে উদ্ভাবন এবং মানবিক উন্নতির পতাকা উড়ছে, ঠিক সেখানে যেন এক বিষণ্ণ বাস্তবতা মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। এক ধরনের অজ্ঞতার, অসচেতনার অন্ধকার, যা আমাদের সভ্যতার সফলতার প্রতিচ্ছবির সঙ্গে বিরোধিতা করছে। অতীতে যে মানবিকতা আমাদের অগ্রগতির প্রধান শক্তি ছিল, আজ সে নিজেই যেন ক্রমশ দূরে সরে যাচ্ছে। এমন একটি সময় আসছে, যখন সভ্যতার অগ্রগতি নিজেই যেন মানবিকতার গতি হারিয়ে ফেলছে।

আজকের সমাজে, মানবিকতার যে গৌরবময় ইতিহাস একসময় আমাদের আলোড়িত করেছিল, তা আজ এক নতুন আকারে পরিবর্তিত হয়েছে। যে মানবিক মূল্যবোধ একদিন পৃথিবীকে সুন্দর, শান্তিপূর্ণ ও সৃজনশীল করে তুলেছিল, তা যেন আজ কিছুটা সঙ্কুচিত হয়ে পড়ছে। মানবিকতার আগুন একসময় যেখানে পৃথিবীকে উজ্জ্বল করত, আজ সেই আগুন যেন নিভে যাওয়ার উপক্রম। যতই সভ্যতা উন্নতির শিখরে পৌঁছাচ্ছে, ততই মানুষের মধ্যে মানবিক সহানুভূতি, ভালোবাসা, ও শ্রদ্ধা হারিয়ে যাচ্ছে।

আজ আমরা যে পৃথিবীতে বাস করছি, সেখানে মানুষের মধ্যে মনুষ্যত্বের যে নিঃশব্দ সঙ্কোচ শুরু হয়েছে, তা এক অস্বস্তিকর সংকেত। একসময় মানুষ অপরের কষ্টে সহানুভূতিশীল ছিল, কিন্তু আজ সে সহানুভূতি ক্রমেই কমে যাচ্ছে। যে সমাজ একসময় সম্পর্কের বন্ধনে শক্ত ছিল, আজ সেই সম্পর্কগুলো যেন কোনো এক অজানা কারণে ভেঙে পড়ছে। বিবাহ বিচ্ছেদের হার যেন বেড়ে চলেছে, বন্ধুত্বের স্থায়ীত্ব কমছে, আর একে অপরের প্রতি বিশ্বাস ও শ্রদ্ধা যেন কোনো এক অজ্ঞাত কারণে দূরে সরে যাচ্ছে।

যখন আমরা দেখি সমাজে একটি বড় ধরনের পরিবর্তন ঘটছে, তখন প্রশ্ন আসে: এই পরিবর্তন কি শুধুমাত্র বাহ্যিক, নাকি এর পেছনে একটি গভীর তাত্পর্য রয়েছে? আমরা কি হারিয়ে ফেলেছি আমাদের সেই মানবিক গুণাবলী, যা একসময় আমাদের সম্পর্কগুলোকে শক্তিশালী করে তুলেছিল? সভ্যতার গতি বেড়েছে, কিন্তু কি আমরা মনুষ্যত্বের গতি হারিয়েছি? যখন সামাজিক সংহতি, পরস্পরের প্রতি ভালোবাসা, সমঝোতা, ও বিশ্বাসের ভিত্তি সঙ্কুচিত হচ্ছে, তখন কী আমাদের মধ্যে কেবল বাহ্যিক উন্নতি থেকেই যাবে, নাকি অন্তর্দৃষ্টি ও মানবিক সম্পর্কের সুস্থতা আমরা পুনরুদ্ধার করতে পারব?

আমরা যখন সমাজের দিকে তাকাই, দেখি আধুনিক প্রযুক্তি, ডিজিটাল যোগাযোগের মাধ্যম, এবং সামাজিক নেটওয়ার্কিং সাইটগুলির প্রভাবে আমাদের জীবন হয়ে উঠছে আরও সংকীর্ণ। একসময় যেখানে মানুষ মুখোমুখি কথা বলত, এখন সেখানে স্ক্রিনের মাধ্যমে সম্পর্ক তৈরি হচ্ছে। সম্পর্কের সঙ্গতি এবং মানবিক স্পর্শের অনুভূতি যেন হারিয়ে যাচ্ছে। মানুষ নিজেদের মনের গভীরতা আর শেয়ার করতে পারছে না, এবং সেগুলো যেন শুধু বাহ্যিক প্রয়োজনে পরিণত হচ্ছে।

তবে, এই পরিবর্তন কি চিরকাল থাকবে? আমাদের কি মানবিকতার এই অন্ধকারের মধ্যে ডুবে থাকতে হবে? না, এই সময়েই আমাদের নিজেদের দিকে তাকাতে হবে। আমাদের মনে রাখতে হবে যে, একটি সমাজের উন্নতির পেছনে যে মানবিক গুণাবলী রয়েছে, তা কখনোই বাহ্যিক উন্নতির থেকে বড় হতে পারে না। আমাদের সম্পর্কের মধ্যে যে বিশ্বাস, ভালোবাসা, সহানুভূতি এবং সম্মান ছিল, তা ফিরে আনতে হবে। মানবিক সংহতি ও সম্পর্কের ভিত্তি নতুন করে শক্তিশালী করতে হবে।

এটা শুধুমাত্র সামাজিক পরিবর্তন নয়, এটি আমাদের মন ও মনোভাবের পরিবর্তনও। মানবিক সম্পর্কের সেই গভীরতা আর মানসিকতা পুনরুদ্ধারের জন্য আমাদের সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। তখনই আমরা পৃথিবীকে পুনরায় মানবিকতার আলোকবর্তিকা দিয়ে পূর্ণ করতে পারব, যা একদিন আমাদের অন্ধকারের কষ্টকে দূর করতে পারে।

সমাজের আড়ালে থাকা একেবারে ক্ষুদ্র, অনুভূতির নিঃশব্দ সংকট আজ বাস্তবতা হয়ে উঠেছে, এবং আমাদের জন্য এটি একটি সময়ের দাবী। আমাদের এই সংকটকে অতিক্রম করতে হবে, মানবিক সম্পর্কের পুনর্গঠন করতে হবে, এবং নতুন প্রজন্মকে আবার সেই মানবিক মূল্যের দিকে পরিচালিত করতে হবে। তবেই আমাদের সভ্যতা, আমাদের জীবন, আর সম্পর্কগুলো নতুন এক আলোয় পূর্ণ হবে, যা একদিন পুরো পৃথিবীকে আলোকিত করবে।

রেজুয়ান আহম্মেদ: কলামিস্ট, বিশ্লেষক; সম্পাদক অর্থনীতি ডটকম
img

রাতে ১ মিনিট ‘ব্ল্যাকআউট’ থাকবে দেশ

প্রকাশিত :  ০৬:২২, ২৫ মার্চ ২০২৫

২৫ মার্চ গণহত্যা দিবসের স্মরণে এক মিনিট অন্ধকারে (ব্ল্যাক আউট) থাকবে সারা দেশ। আজ মঙ্গলবার রাত ১০টা ৩০ মিনিট থেকে ১০টা ৩১ মিনিট ‘ব্ল্যাক আউট’ পালন করা হবে। তবে গুরুত্বপূর্ণ এবং জরুরি স্থাপনাসমূহ এ কর্মসূচির আওতামুক্ত থাকবে।

সম্প্রতি মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের রাতটি ছিল ভয়াবহতম একটি রাত। মানব ইতিহাসের জঘন্যতম গণহত্যায় সেই কালরাতে বর্বর পাকিস্তানি বাহিনী মেতেছিল উল্লাসে। ঢাকা শহর হয়েছিল ধ্বংসস্তূপ। এত বছর পেরিয়ে গেলেও এমন আতঙ্কের রাত আর আসেনি ২৫ মার্চে।

অপারেশন সার্চলাইট’ নামে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী পরিচালিত পরিকল্পিত গণহত্যার মাধ্যমে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চে বাঙালির জাতীয়তাবাদী, স্বাধিকার আন্দোলনকে সশস্ত্র হামলার মাধ্যমে দমন করতে চেয়েছিল তারা।

এ গণহত্যা ছিল পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকদের আদেশে পরিচালিত, যা ১৯৭০-এর নভেম্বরে সংঘটিত ‘অপারেশন ব্লিটজ’-এর পরবর্তী সামরিক আক্রমণ।

২৫ মার্চে পাকিস্তানি সামরিক অপারেশনের আসল উদ্দেশ্য ছিল স্বাধীনতাকামী বাংলাদেশ তথা তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের সব বড় বড় শহর দখল করে নেওয়া। এ ছাড়া রাজনৈতিক ও সামরিক বিরোধীদের এক মাসের ভেতর নিশ্চিহ্ন করে দেওয়া।

দিবসটি উপলক্ষে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ ঢাকাসহ সারা দেশে বিশ্বের বর্বরতম হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। আমি দুঃখভারাক্রান্ত হৃদয়ে স্মরণ করি সেই কালরাতের সব শহীদকে। নারকীয় এই হত্যাযজ্ঞে জাতি আজও শোকাহত।