img

‘গুমের সঙ্গে জড়িত কেউ রাজনীতিতে ফিরতে পারবে না’

প্রকাশিত :  ১৭:৪৯, ২২ নভেম্বর ২০২৪
সর্বশেষ আপডেট: ১৭:৫৯, ২২ নভেম্বর ২০২৪

‘গুমের সঙ্গে জড়িত কেউ রাজনীতিতে ফিরতে পারবে না’

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছেন, গুমের সঙ্গে জড়িত কেউ রাজনীতিতে ফিরতে পারবে না । আজ শুক্রবার (২২ নভেম্বর) রাজধানীর শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের প্রধান মিলনায়তনে আয়োজিত ‘গুমের জবানবন্দি ও স্মৃতির প্রতিরোধ’ শীর্ষক আলোচনাসভায় তিনি এ কথা বলেন।

শফিকুল আলম বলেন, বিশ্বের কোথাও গুমের সঙ্গে জড়িতরা পার পায়নি, বাংলাদেশেও পাবে না। দেশের মাটিতে সবার বিচার নিশ্চিত করব। দেশের দেয়ালে দেয়ালে তাদের কথা লেখা থাকবে। যারা গুমের বিরুদ্ধে লড়াই করছেন, তারা লড়াই থামাবেন না।

প্রেস সচিব আরও বলেন, শেখ হাসিনাকে সামনে রেখে যে যার মতো গুম-খুন করেছে। তার শাসনব্যবস্থা পুরোটা ছিল খুনের এন্টারপ্রাইজ। এর বিরুদ্ধে প্রথম লড়াইটা করে মায়ের ডাক। এই সাহসী কাজের জন্য তাদের স্বাধীনতা পুরস্কার দেওয়া উচিত।

তিনি বলেন, আমরা সবার বিচার করব, সে জন্য কমিশন গঠন করেছি। সেই কমিশন ধারণা করছে, গুমের সংখ্যা তিন-সাড়ে তিন হাজার। গুমের মূল উদ্দেশ্য ছিল শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে যেন কথা না বলতে পারে, ভয়ের সংস্কৃতি সৃষ্টি। তার সহযোগীরা দেখল গুম করা যাচ্ছে, তখন তারা ব্যক্তি স্বার্থেও গুম করেছে। শুধু গুম করেনি, অনেককে ওপারেও পার করে দিয়েছে। দুজনকে ভারত থেকে উদ্ধার করা হয়।

তিনি আরও বলেন, গুমের বিচার ও গুম বিলুপ্ত করা আমাদের টপ প্রায়োরিটি। শুধু বিশেষ ব্যক্তিদের জন্য না, সবার জন্য আমাদের মানবাধিকার যেন সমান হয়। আমি যাকে ঘৃণা করি, তার মানবাধিকার নিয়েও যেন আমরা কথা বলি। আপনারা সবার মানবাধিকার নিয়ে কথা বলবেন।

নির্বাচন সংস্কার কমিশনের সদস্য ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক ডা. জাহেদ উর রহমান বলেন, গুমের শিকার পরিবারগুলো অনেক বড় মূল্য দিয়েছে। তাদের ঘটনাগুলো শেখ হাসিনার পতনের সঙ্গে জড়িত। শেখ হাসিনা সবচেয়ে বেশি ঘৃণা অর্জন করেছেন গুমের মধ্য দিয়ে।

অনুষ্ঠানের শুরুতে গুম হওয়া ব্যক্তিদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। এ সময় অসলো বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ড. মোবাশ্বার হাসান গুমের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দাবি করেন। সভায় আরও ছিলেন মায়ের ডাকের সংগঠক সানজিদা ইসলাম তুলি। অনলাইনে যুক্ত ছিলেন অস্ট্রেলিয়ার ক্যানবেরায় অবস্থানরত চিকিৎসক ডা. শামারুহ মির্জা।


অর্থনীতি এর আরও খবর

img

গরীব ঋণ নিল, ঋণও রইল—রিকশাও গেল! বড়লোক চিল করে রেডিসনে—এটাই কি নিয়ম?

প্রকাশিত :  ১০:৫২, ১৪ মে ২০২৫

সকালবেলা শহর জেগে ওঠে; কিন্তু সেই জাগরণ সবার জন্য সমান নয়। কেউ উঠে এসির ঠাণ্ডায়, কেউ উঠে ভাঙা চালার নিচে। একজনের সকাল শুরু হয় কফি আর সংবাদপত্র হাতে, অন্যজনের শুরু হয় ভাঙা ছাতার তলায়—বুকভরা ঋণ আর মনের হাজারো দুশ্চিন্তা নিয়ে। এই বৈষম্যের শহরে সূর্য একই হলেও ভাগ্য একেবারে আলাদা।  

শহরের একপাশে বড়লোকদের চিন্তা চলে—\"কীভাবে ব্যাটারিচালিত রিকশার বাজারে মুনাফা বাড়ানো যায়!\" তারা বিদেশ থেকে রিকশা আমদানি করে, ফ্যাশনেবল ডিজাইন করে গরীবের কাছে বিক্রি করে। কাস্টমসে শুল্ক দেয়, মুনাফা গুণে নেয়, নাম দেয় \"ব্যবসা\"।  

অন্যপাশে একজন গরীব মানুষ, যে দিনের পর দিন পায়ে হেঁটে শেষ সম্বল জড়ো করে কিংবা এনজিওর উচ্চসুদের ঋণ নিয়ে ব্যাটারিচালিত রিকশা কিনেছে। সে স্বপ্ন দেখে—এই রিকশাই তাকে বাঁচাবে। ভাবে, \"মেয়েটাকে স্কুলে পাঠাব, বউকে একদিন চিকেন খাওয়াব, ভাঙা চালা বদলে দেব।\"  

কিন্তু বাস্তব নিষ্ঠুর। কয়েকদিন না যেতেই ট্রাফিক পুলিশ থানার সামনে হুঁশিয়ারি দেয়:  

\"এই রিকশা অবৈধ! লাইসেন্স নেই—ব্যাটারিচালিত রিকশা নিষিদ্ধ!\"  

রিকশা জব্দ করে নিয়ে যায়; থানায় জমা হয়, মামলা হয়।  

পেছনে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষটি চোখে পানি নিয়ে বলে,  

\"স্যার, ঋণ করে কিনেছি… এটা ছাড়া সংসার চলে না…\"  

কিন্তু কেউ মন গলায় না। কেউ বলে না, \"এই দিনমজুরের পাশে দাঁড়াও!\" রিকশা গেল, ঋণ রয়ে গেল।  

ওদিকে সেই বড়লোক, যে রিকশা আমদানি করে বিপুল মুনাফা করে সে এখন রেডিসনের সুইমিংপুলের পাশে মদের গ্লাসে চুমুক দিচ্ছে। ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিচ্ছে:  

\"In retro mood—rickshaw nostalgia!\"

পেছনে আরামকেদারা, সামনে সিগারেট—চিল! 

প্রশ্ন ওঠে:  

যে রিকশা বানাল, সে \'উদ্যোক্তা\'; আর যে চালাল, সে \'অবৈধ\'?  

যে টাকা গুণল, তার \'মুনাফা\'; আর যে ঘাম ঝরাল, সে \'ঝামেলা\'?  

রাষ্ট্র শুধু বড়লোকের ব্যবসা রক্ষার জন্য?  

আইন শুধু গরীব দমনের হাতিয়ার?  

নীতিনির্ধারকদের চোখে শুধু ধনীদের স্বার্থ?  

একজন গরীব সম্মান নিয়ে বাঁচতে চাইল—কেন তাকে লাঞ্ছিত হতে হয়?  

রিকশা গেল, আয় বন্ধ হল, কিন্তু ঋণ রয়ে গেল।  

শুধু টাকা নয়—  

তার স্বপ্ন ভাঙল, ভরসা হারাল, মানসিক শক্তি নিঃশেষ হল।  

কেউ কি জিজ্ঞাসা করে?

এই পরিবার এখন কী খাবে?  

শিশুটির স্কুলের খরচ জোগাবে কে?  

অন্ধকারে নতুন করে দাঁড়াবে কীভাবে?  

এই অন্যায় কতদিন? 

গরীবের ঘাম \'অবৈধ\' আর স্বপ্ন \'আবর্জনা\' হওয়ার দিন শেষ কবে?  

এটি শুধু আর্থিক বৈষম্য নয়—এটি শ্রেণীভিত্তিক অবিচার,  

মানবাধিকারের লঙ্ঘন,  

রাষ্ট্রের নীরব ষড়যন্ত্র।  

চূড়ান্ত প্রশ্ন:

এই দেশে গরীবের বেঁচে থাকার অধিকার আছে কি?  

নাকি তারা শুধু \'ব্যবহারযোগ্য\'—ভোটের সংখ্যা, শ্রমের যন্ত্র?  

সময় এসেছে প্রতিবাদের: 

গরীবের কান্নাকে গুরুত্ব দেওয়ার।  

চিলের বিরুদ্ধে কান্নার সংগ্রাম গড়ে তোলার।  

স্বপ্ন:

একটি সমাজ যেখানে রিকশাওয়ালার মুখে সম্মান,  

আর বড়লোকের চিলের মধ্যেও ন্যায়বোধ থাকবে।


লেখক : রেজুয়ান আহম্মেদ