নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করবেন প্রধান উপদেষ্টা : প্রেস উইং
আগামী নির্বাচন কবে হবে, তা প্রধান উপদেষ্টার পক্ষ থেকে ঘোষণা দেওয়া হবে। এ নিয়ে বাকিরা যারা কথা বলছেন, সেগুলো তাদের ব্যক্তিগত মতামত। এ কথা বলেছে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং। আর ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার বিষয়ে উচ্চ আদালত ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নেবে বলে আশা প্রকাশ করা হয়।
রোববার (২৪ নভেম্বর) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলা হয়। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম, উপপ্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার, অপূর্ব জাহাঙ্গীর ও সহকারী প্রেস সচিব সুচিস্মিতা তিথি।
‘লন্ডনে একজন উপদেষ্টা বলেছেন, ২০২৬ সালের মাঝামাঝি সময়ে নির্বাচন হতে পারে’, উল্লিখিত নির্বাচনের সময়সীমা সম্পর্কে সরকারের অবস্থান জানতে চাইলে প্রধান উপদেষ্টার উপপ্রেস সচিব অপূর্ব জাহাঙ্গীর বলেন, এখনো পর্যন্ত প্রধান উপদেষ্টা বা তার দপ্তর থেকে নির্বাচনের সময় তারিখ হয়নি। নির্বাচনের প্রকৃত তারিখ প্রধান উপদেষ্টা ঘোষণা করবেন। ওনার পক্ষে থেকে দেওয়া হবে। বাকি যারা বলেছেন, তারা হয়তো নিজেদের মতামত দিয়েছেন, তবে সেটা কংক্রিট না।
ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে সরকারের আপিলের সিদ্ধান্তের বিষয়টি তুলে ধরে উপপ্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার বলেন, আমরা আশা করি এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের কাছে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত পাব।
ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা বন্ধ হওয়া ঘিরে চলা ঘটনাকে সমন্বয়হীনতা বলে মনে করেন কি না— এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, বিষয়টি এখন আদালতে আছে। সরকার আইনি প্রক্রিয়ায় সমাধান চায়।
এক প্রশ্নের জবাবে আজাদ মজুমদার বলেন, গুম কমিশন এখনো কোনো সুপারিশ সরকারকে দেয়নি। আগামী (ডিসেম্বর) মাসের মাঝামাঝি সরকারকে একটি প্রতিবেদন তারা দেবে। সেই প্রতিবেদনের মাধ্যমে কোনো সিদ্ধান্তের প্রয়োজন হলে সরকার নেবে।
এক প্রশ্নের জবাবে আজাদ মজুমদার বলেন, জনপ্রশাসনে বদলি-পদোন্নতি স্বাভাবিক বিষয়। যেহেতু দেশে একটা পটপরিবর্তন হয়েছে। এ কারণে জনপ্রশাসনের রদবদল জন-দাবি। সরকারও মনে করেছে, কাজে গতিশীলতা আনার জন্য প্রশাসনে কিছু অবশ্যম্ভাবী রদবদল করতে হবে। সেই অনুযায়ী সরকার কাজ করছে। শূন্যপদে উপযুক্ত কাউকে মনে করা হলে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। এগুলো স্বাভাবিক বিষয়। প্রশাসনে গতিশীলতা আনার জন্য নিয়মিত করে যাবে।
বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের হয়রানির অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে আজাদ মজুমদার বলেন, আপনারা দেখেছেন, এর আগের সরকার কীভাবে ভিন্নমত দমন করেছে। ভিন্নমতালম্বীদের নানাভাবে হয়রানি করেছে। বিদেশে আসা-যাওয়া থামাতে সাংবাদিক, রাজনৈতিক কর্মীসহ ভিন্নমতালম্বীদের বিশাল তালিকা ইমিগ্রেশনে দেওয়া হয়েছিল। সরকার চেষ্টা করছে তালিকাটা হালনাগাদ করতে। সেখানে কারও বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অপরাধের অভিযোগ বা প্রমাণ থাকলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে। অভিযোগ না থাকলে সবাই স্বাভাবিকভাবে যাতায়াত করতে পারবে। কেউ যাতে হয়রানির শিকার না হয় এ বিষয়ে সরকার সচেতন আছে। নিউএজ পত্রিকার সম্পাদকের বিষয়ে সরকার দ্রুত ব্যবস্থা নিয়েছে, অন্য কোনো বিষয়ে সরকারের নজরে আনা হলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি হবে না।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে সরকারের উদ্যোগের বিষয়ে জানতে চাইলে আজাদ মজুমদার বলেন, ডেঙ্গু প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার চেষ্টা করছে সরকার। যেসব পদক্ষেপ গ্রহণ করলে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত এবং মৃত্যু কমে আসবে সেসব পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।
সমাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আওয়ামী লীগের অপপ্রচারের অভিযোগের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে কোনো ধরনের গুজব ছড়ালে তা প্রতিরোধে সরকার সাধ্যমতো চেষ্টা করে যাচ্ছে। প্রেস উইং থেকে আলাদা পেজ খুলে মানুষকে সঠিক তথ্য দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। একইসঙ্গে গুজব প্রতিরোধে সরকারের পাশাপাশি সবার সম্মিলিত সহযোগিতা প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।
আজাদ মজুমদার বলেন, নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে যদি সহযোগিতা পাওয়া যায়— তাহলে গুজব ছড়িয়ে বা অহেতুক আতঙ্ক ছড়িয়ে সমাজে কোনো ধরনের অস্থিরতা সৃষ্টি করতে পারবে না বলে আমরা বিশ্বাস করি।
যানজটের বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে আজাদ মজুমদার বলেন, যানজট নিরসনে সরকারের পক্ষ থেকে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। সেটা চলমান আছে। এর বাইরেও কিছু কারণ আছে। প্রতিদিনই কোনো না কোনো কারণে, কোনো না কোনো গ্রুপ সড়কে অবস্থান নিয়েছে। সে কারণে যানজট সৃষ্টি হয়েছে। যানজট ঢাকা শহরের পুরোনো সমস্যা। সড়কে অবস্থানের কারণে যানজট আরও বাড়ছে। সরকার চেষ্টা করছে সবার দাবি-দাওয়া শোনার। কারও দাবি যৌক্তিক হলে সমাধানের চেষ্টা করবে। আমরা সবাইকে আহ্বান জানাব— যানজট হওয়ার মতো কর্মসূচি থেকে বিরত থাকবেন, সরকারের নির্দিষ্ট চ্যানেলে জানালে যানজটের বাড়তি ভোগান্তি থাকবে না।