ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে অবশেষে তিনদিন পর স্বাভাবিক হলো আলু ও পেঁয়াজের স্লট বুকিং। বৃহস্পতিবার আবারও ভারত থেকে বাংলাদেশের পথে যাওয়া শুরু করেছে ট্রাকবোঝাই পেঁয়াজ ও আলু। পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের স্লট বুকিং পোর্টাল ফের চালু হওয়ার স্বস্তি ফিরেছে সীমান্ত ব্যবসায়ীদের মধ্যে।
ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের কোনো রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা না থাকলেও গত সোমবার কোনো লিখিত নির্দেশনা ছাড়াই পশ্চিমবঙ্গ সীমান্ত হয়ে বাংলাদেশগামী আলু ও পেঁয়াজবোঝাই সব ট্রাকের স্লট বুকিং বন্ধ করে করে দেয় পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকার। সীমান্ত বাণিজ্য কেন্দ্রীয় সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন বিষয় হলেও সীমান্তে পণ্যবাহী ট্রাকের স্লট বুকিং সংক্রান্ত পোর্টাল নিয়ন্ত্রণ করে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকার।
পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের দাবি, রাজ্যের অভ্যন্তরীণ বাজারের দাম নিয়ন্ত্রণে আনতে টাস্ক ফোর্সের সুপারিশে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বাংলাদেশে আলু-পেঁয়াজের রপ্তানি।
রাজ্য সরকারের এমন পদক্ষেপে রাতারাতি বিপাকে পড়ে হাজার হাজার সীমান্ত ব্যবসায়ী। রাজ্যের এমন পদক্ষেপকে সরাসরি এখতিয়ার বহির্ভূত বলে মন্তব্য করেছেন তারা। তারা বলছেন, যেহেতু কেন্দ্রীয় সরকারের কোন নির্দেশিকা নেই তাই রাজ্য সরকারের তরফে এমন পদক্ষেপ সম্পূর্ণ বেআইনি ও অনৈতিক।
গোটা বিষয় নিয়ে সোমবার থেকেই ব্যবসায়ীদের তরফে দফায় দফায় বৈঠক করা হয় পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের প্রতিনিধিদের সঙ্গে। অবশেষে বৃহস্পতিবার থেকে ফের চালু করে দেওয়া হয় স্লট বুকিং। স্বাভাবিক হয় সীমান্ত বাণিজ্য।
সীমান্তের আমদানি রপ্তানি সংস্থার সম্পাদক সঞ্জীব মণ্ডল বলেন, সীমান্ত বাণিজ্যের স্বাভাবিক রয়েছে। মাঝখানের রাজ্যের সুবিধা পোর্টাল বন্ধ হওয়ায় সীমান্ত বাণিজ্যের প্রভাব পড়েছিল। বেশ কিছু ক্ষতি হয়েছে।
প্রকাশিত :
১৩:৫০, ১৬ মার্চ ২০২৫ সর্বশেষ আপডেট: ১৪:৪৩, ১৬ মার্চ ২০২৫
প্রতি বছর ঈদুল ফিতরের আগে স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় বেশি বেশি রেমিট্যান্স পাঠান প্রবাসী বাংলাদেশিরা। এবারও তার ব্যতিক্রম হচ্ছে না। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সবশেষ তথ্য বলছে, মার্চের ১৫ দিনে রেমিট্যান্স এসেছে ১৬৫ কোটি ৬১ লাখ মার্কিন ডলার, বাংলাদেশি মুদ্রায় যা ২০ হাজার ২০৪ কোটি টাকা (প্রতি ডলার ১২২ টাকা হিসাবে)। রোববার (১৬ মার্চ) এ তথ্য প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
তবে সব কিছু ঠিক থাকলে চলতি মাস মার্চে নতুন রেকর্ড হতে পারে রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয়ে। ভাঙতে পারে অতীতে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্সের রেকর্ড।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সবশেষ তথ্য বলছে, চলতি মাস মার্চে প্রথম ১৫ দিনে ১৬৫ কোটি ৬১ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন বিভিন্ন দেশে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিরা। বাংলাদেশি মুদ্রায় (প্রতি ডলার ১২২ টাকা হিসাবে) যার পরিমাণ ২০ হাজার ২০৪ কোটি টাকার বেশি। আর প্রতিদিন আসছে ১১ কোটি ডলারের (১৩৪৭ কোটি টাকা) বেশি। রেমিট্যান্স আসার এ ধারা অব্যাহত থাকলে মাসের পুরো সময়ে তিন বিলিয়ন ডলারে পৌঁছাতে পারে রেমিট্যান্স। যা দেশের ইতিহাসে নতুন রেকর্ড গড়তে পারে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিভাগের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, নতুন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই দেশ থেকে অর্থপাচার কমেছে। একই সঙ্গে কমেছে হুন্ডি কারবারির দৌরাত্ম্যও।
অন্যদিকে, খোলা বাজারের মতোই ব্যাংকে রেমিট্যান্সের ডলারের দাম পাওয়া যাচ্ছে। এসব কারণে প্রবাসীরা বৈধপথে রেমিট্যান্স পাঠাতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন। তাছাড়া আসন্ন ঈদুল ফিতরকে কেন্দ্র করে আরও বেশি বেড়েছে রেমিট্যান্স আসার গতি।
প্রাপ্ত তথ্য বলছে, আলোচিত সময়ে (মার্চে প্রথম ১৫ দিন) ১৬৫ কোটি ৬১ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন বিভিন্ন দেশে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিরা। এর মধ্যে রাষ্ট্র মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে রেমিট্যান্স এসেছে ৩৭ কোটি ১১ লাখ ডলারের বেশি, বিশেষায়িত দুই ব্যাংকের মধ্যে এক ব্যাংকের (কৃষি ব্যাংক) মাধ্যমে রেমিট্যান্স এসেছে ১৩ কোটি ডলার। আর বেসরকারি ব্যাংকের মাধ্যমে রেমিট্যান্স এসেছে ১১৫ কোটি ১৬ লাখ ২০ হাজার ডলার এবং বিদেশি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ৩১ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স।
এ সময়ে কোনো রেমিট্যান্স আসেনি এমন ব্যাংকের সংখ্যা ৭টি। এসব ব্যাংকের মধ্যে রয়েছে রাষ্ট্র মালিকানাধীন বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক বা বিডিবিএল, বিশেষায়িত রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক। বেসরকারি ব্যাংকের মধ্যে রয়েছে আইসিবি ইসলামী ব্যাংক ও পদ্মা ব্যাংক। এছাড়া বিদেশি ব্যাংকগুলোর মধ্যে রয়েছে হাবিব ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান, স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া এবং উরি ব্যাংক।
চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের ৮ মাসে রেমিট্যান্স এসেছে এক হাজার ৮৪৯ কোটি ডলার। যা গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে প্রথম ৮ মাসে ছিল এক হাজার ৪৯৪ কোটি ডলার। সে হিসেবে গত অর্থবছরের প্রথম ৮ মাসের চেয়ে চলতি অর্থবছরের প্রথম ৮ মাসে রেমিট্যান্স বেড়েছে ৩৫৫ কোটি ডলার।
এর আগে গত ডিসেম্বরে দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ ২ দশমিক ৬৪ বিলিয়ন ডলারের রেমিট্যান্স আসে। আর এ নিয়ে অর্থবছরের দ্বিতীয় মাস আগস্ট থেকে টানা ৭ মাস দুই বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করবে।
অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে ১৯১ কোটি ৩৭ লাখ ৭০ হাজার ডলার রেমিট্যান্স এসেছে, আগস্টে এসেছে ২২২ কোটি ১৩ লাখ ২০ হাজার মার্কিন ডলার, সেপ্টেম্বরে এসেছে ২৪০ কোটি ৪১ লাখ, অক্টোবরে এসেছে ২৩৯ কোটি ৫০ লাখ মার্কিন ডলার, নভেম্বর মাসে এসেছে ২২০ কোটি ডলার, ডিসেম্বরে এসেছে ২৬৪ কোটি ডলার, জানুয়ারিতে ২১৯ কোটি ডলার এবং ফেব্রুয়ারিতে ২৫৩ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা।
একক মাস হিসাবে আগে কখনোই এত পরিমাণ রেমিট্যান্স আসেনি। এর আগে করোনাকালীন ২০২০ সালের জুলাই ২ দশমিক ৫৯ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স এসেছিল। এবার সেই রেকর্ড ভাঙলো ২০২৪ সালের বিজয়ের মাস ডিসেম্বরে। ২০২৪ সালের শেষ মাস ডিসেম্বরের পুরো সময়ে রেমিট্যান্স এসেছে প্রায় ২৬৪ কোটি ডলার। যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৬৪ কোটি ৮০ লাখ ডলার বেশি। গত বছরের ডিসেম্বরে এসেছিল ১৯৯ কোটি ১০ লাখ ডলার। ২০২৪ সালের জুলাই মাস বাদে বাকি ১১ মাসই দুই বিলিয়ন ডলারের বেশি রেমিট্যান্স এসেছে।