img

আবারও গাড়ী চাপায় হাসনাত আব্দুল্লাহকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগ

প্রকাশিত :  ১১:২৫, ২৮ নভেম্বর ২০২৪

আবারও গাড়ী চাপায় হাসনাত আব্দুল্লাহকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগ

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহকে আরেকবার গাড়িচাপা দিয়ে হত্যাচেষ্টা করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। 

আজ (বৃহস্পতিবার) দুপুর ১২টার দিকে রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে এমন ঘটনা ঘটে। হাসনাত কুমিল্লা থেকে ঢাকায় ফিরছিলেন। তিনি সুস্থ আছেন বলে জানা গেছে। গতকালকের মতো এটিকেও হত্যাচেষ্টা বলে মনে করছেন সমন্বয়করা। 

হাসনাতের গাড়িটির ছবি এরইমধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে ফেসবুকে। ছবিতে দেখা যায়, একটি পিকআপ প্রাইভেট কারের পেছনে ধাক্কা দিয়েছে। ফলে প্রাইভেট কারের পেছনে অংশ সামান্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

এ ঘটনার পর সারজিস আলম তার ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, চট্টগ্রাম থেকে গতকাল রাতেই অন্য গাড়িতে করে ঢাকা ব্যাক করলাম ৷ পথে হাসনাতকে কুমিল্লার বাসায় নামিয়ে দিয়ে আসলাম। এখন শুনছি সকালে কুমিল্লা থেকে ঢাকা আসার পথে হাসনাতের গাড়িতে পিছন থেকে আবার অন্য গাড়ি দিয়ে চাপা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে!

তিনি আরও লেখেন, এসব ষড়যন্ত্র করে আর কত? কয়জন হাসনাত মারবেন? মনে নাই সেই অভ্যুত্থানের দিনগুলোর কথা? একজনকে যখন বুলেটের আঘাতে লাশ বানিয়েছেন তখন সেই জায়গায় অন্যজন দাঁড়িয়ে গিয়েছে! কিন্তু পিছু হটেনি ৷ 

ঠিক একইভাবে এক হাসনাতকে মারলে হাজারো হাসনাত এখন দাঁড়িয়ে যেতে প্রস্তুত ৷ এই নতুন বাংলাদেশের চলার পথকে অবরুদ্ধ করার দুঃসাহস দেখাবেন না ৷ এই তরুণ প্রজন্ম মাথা নোয়াবার নয় ৷

এর আগে গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় চট্টগ্রামে নিহত আইনজীবী সাইফুল ইসলামের গ্রামের বাড়ি চুনতি ফারাঙ্গা এলাকা থেকে ফেরার পথে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের লোহাগাড়া উপজেলার চুনতি হাজী রাস্তার মাথা এলাকায় হাসনাত ও সারজিসের গাড়িবহরে থাকা একটি গাড়িতে ধাক্কা দেয় একটি ট্রাক। এতে গাড়িটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তবে হতাহত হননি কেউ। 

img

অর্থনীতির অন্ধকারে বাংলাদেশ: নির্বাচনের আলো কি শেষ আশার প্রদীপ?

প্রকাশিত :  ০৬:০১, ১৬ মার্চ ২০২৫
সর্বশেষ আপডেট: ০৬:০৬, ১৬ মার্চ ২০২৫

রেজুয়ান আহম্মেদ

বাংলাদেশ এক কঠিন সময় পার করছে। দেশের প্রধান শিল্পাঞ্চলগুলোতে তালা ঝুলছে, হাজার হাজার শ্রমিক কাজ হারিয়ে দিশেহারা, বিনিয়োগকারীরা মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। অথচ রাজনৈতিক অস্থিরতার সুর ক্রমশ চড়া হচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই অচলাবস্থা থেকে মুক্তির একমাত্র পথ হতে পারে একটি নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন। কিন্তু সেই সুযোগ কি আদৌ আসবে?

গাজীপুরের টঙ্গী, কালিয়াকৈর কিংবা নারায়ণগঞ্জ—কয়েক বছর আগেও যেখানে শ্রমিকদের কর্মব্যস্ততায় মুখর ছিল, সেখানে আজ নীরবতা। গত এক বছরে শুধু গাজীপুরেই প্রায় ৩০০টি গার্মেন্টস ও শিল্পকারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। চাকরি হারিয়েছেন অন্তত ৫০,০০০ শ্রমিক।

অমিত (৩২), একজন সেলাই অপারেটর, কণ্ঠ ভারী করে বললেন, "কারখানা বন্ধ হওয়ার পর তিন বেলা খেতেও পারছি না। বাড়িঘর বিক্রি করেও ঋণ শোধ করতে পারিনি।"

শিল্প মালিকদের সংগঠন BGMEA জানিয়েছে, ক্রমাগত বিদ্যুৎ ও গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি, আমদানি জটিলতা ও রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার কারণে উদ্যোক্তারা নতুন বিনিয়োগ করতে ভয় পাচ্ছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক গার্মেন্টস মালিক বললেন, "ব্যাংকের ঋণের বোঝা বইতে পারছিলাম না, শেষমেশ কারখানা বিক্রি করতে বাধ্য হলাম।"

বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগ ২০২২ সালে ছিল ৩.৫ বিলিয়ন ডলার, যা ২০২৩ সালে কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ১.২ বিলিয়নে। জাপান, সিঙ্গাপুর, যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশগুলো তাদের প্রকল্প স্থগিত করেছে।

একজন আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধি বললেন, "বাংলাদেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ও অবকাঠামো সংকট বিনিয়োগের জন্য বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।"

অর্থনীতিবিদ ড. আহসান এই পরিস্থিতিকে "অর্থনৈতিক হার্ট অ্যাটাক" বলে বর্ণনা করে বলেন, "বিদেশি বিনিয়োগ ছাড়া শুধু রেমিট্যান্স ও গার্মেন্টস খাতের ওপর ভরসা রেখে অর্থনীতিকে সচল রাখা সম্ভব নয়।"

অর্থনৈতিক সংকটের পাশাপাশি সামাজিক অবক্ষয়ও বাড়ছে। গাজীপুরের বাসিন্দা রিনা আক্তার (৪০) বললেন, "আমার ছেলে স্কুলে যেতে ভয় পায়। মাসখানেক আগে ছিনতাইকারীরা ওর জুতো পর্যন্ত নিয়ে গেছে!"

পুলিশের পরিসংখ্যান বলছে, ২০২৩ সালের প্রথম ছয় মাসে দেশে ছিনতাই ও চাঁদাবাজির হার বেড়েছে ৬৫%।

মনোবিজ্ঞানী ড. ফারহানা মোবিন বলেন, "যখন মানুষের সামনে বেঁচে থাকার উপায় কমে আসে, তখন তারা সহজ পথ খোঁজে। অনেকেই বাধ্য হয় অপরাধে জড়াতে।"

বিরোধী দলগুলোর সঙ্গে সরকারের সংলাপ নেই, রাজনৈতিক মেরুকরণ চরমে পৌঁছেছে। আগামী জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে অনিশ্চয়তা আরও ঘনীভূত হয়েছে। রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ড. তাসনিম সিদ্দিকী সতর্ক করে বলেছেন, "যদি অবাধ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন না হয়, তাহলে সরকারের বৈধতা প্রশ্নবিদ্ধ হবে। আর অর্থনীতি আরও গভীর সংকটে পড়বে।"

আন্তর্জাতিক সংস্থা ডেমোক্রেসি ওয়াচ এক প্রতিবেদনে বলেছে, বাংলাদেশে রাজনৈতিক সহিংসতা ও নির্বাচনের স্বচ্ছতা নিয়ে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা উদ্বিগ্ন।

সম্ভাব্য সমাধান কী?

অর্থনীতিবিদদের মতে, সংকট কাটাতে এখনই তিনটি পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি:

 ১. নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা: সকল রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজন।

 ২. বিনিয়োগবান্ধব নীতি গ্রহণ: কর হ্রাস, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা দূরীকরণ এবং বিদ্যুৎ-গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিতকরণ।

 ৩. সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি সম্প্রসারণ: বেকারদের জন্য আর্থিক সহায়তা ও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।

গাজীপুরের বস্তিবাসী করিম মিয়া আক্ষেপ করে বললেন, "নেতারা যদি একদিন আমাদের মতো না খেয়ে থাকতেন, তাহলে বুঝতেন এই দুর্দশার অর্থ কী!"

বাংলাদেশের অর্থনীতি আজ গভীর সংকটে। রাজনৈতিক ঐক্য ও সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত ছাড়া এই অবস্থা থেকে উত্তরণের পথ খুঁজে পাওয়া কঠিন। নইলে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে আমরা ক্ষমার অযোগ্য হয়ে থাকব।

কবি রবীন্দ্রনাথের ভাষায়, "অন্ধকারে আলো জ্বালো, যাত্রা শুরু করো আগামীর পথে।" এখন সেই আলো জ্বালানোর সময় এসেছে।


রেজুয়ান আহম্মেদ: লেখক, বিশ্লেষক; সম্পাদক অর্থনীতি ডটকম