ধর্ম মানুষের আত্মার শক্তি, অন্তরের শান্তি এবং নৈতিকতার পথপ্রদর্শক। এটি আমাদের জীবনে মানবিকতা ও মূল্যবোধের আলো জ্বালায়। কিন্তু যখন ধর্মকে তার পবিত্র আসন থেকে সরিয়ে রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করা হয়, তখন তা মানবতার জন্য আশীর্বাদ না হয়ে অভিশাপ হয়ে দাঁড়ায়।
ধর্ম আমাদের শিক্ষা দেয় ভালোবাসা, সহমর্মিতা এবং মানবিকতার প্রতি শ্রদ্ধা।
ইসলামে বলা হয়েছে, “মানুষের সেবা আল্লাহর সেবার সমান।”
হিন্দু ধর্মে বলা হয়েছে, “সবাইকে এক চোখে দেখো, কেউই পৃথক নয়।”
খ্রিস্টধর্ম শিক্ষা দেয়, “প্রেম করো, ঘৃণা নয়।” কিন্তু আমরা কি সেই শিক্ষাগুলো সত্যিই হৃদয় দিয়ে মানি? আজকের দিনে আমরা প্রায়ই দেখি, ধর্মের নামে বিভাজন তৈরি করা হয় এবং এর পেছনে থাকে রাজনৈতিক চক্রান্ত।
রাজনীতির ময়দানে ধর্মকে টেনে নিয়ে আসা মানে শুধু ধর্মের অপমানই নয়, বরং মানুষের অনুভূতিকে অসম্মান করা। এই প্রতারণা আমাদের সমাজে ঘৃণা, সহিংসতা এবং বিভেদের বীজ বপন করে। ধর্মকে পবিত্র রাখতে হলে তা মানুষের আত্মায় স্থির রাখতে হবে, রাজনীতির হাতে নয়।
কীভাবে ধর্মকে সুরক্ষিত রাখা যায়?
১. সচেতনতা বাড়ানো: ধর্মের প্রকৃত বার্তা এবং মানবিক শিক্ষাগুলো সমাজে প্রচার করতে হবে। মানুষকে বুঝতে হবে, ধর্ম কোনো বিভেদের হাতিয়ার নয়, বরং এটি একতার প্রতীক।
২. রাজনীতিতে ধর্মের অনুপ্রবেশ রোধ করা: রাজনীতিবিদদের উচিত ধর্মকে রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকা।
৩. মানবিক মূল্যবোধের চর্চা: সমাজে এমন পরিবেশ তৈরি করতে হবে, যেখানে ধর্মের মূল উদ্দেশ্য শান্তি ও কল্যাণ প্রতিষ্ঠিত হয়।
ধর্মকে যদি আমরা সত্যিকার অর্থে সম্মান করতে চাই, তবে তা মানুষের অন্তরে রাখতে হবে। ধর্মের আসল বার্তাগুলো আমাদের জীবনে বাস্তবায়ন করতে হবে। আমাদের উচিত নিজ নিজ ধর্মের সহিষ্ণুতা ও মানবিক মূল্যবোধের চর্চা করা।
আমরা কি এমন এক সমাজ চাই, যেখানে ধর্ম হবে বিভেদের কারণ? নাকি এমন একটি সমাজ চাই, যেখানে ধর্ম হবে একতার মূর্ত প্রতীক, শান্তি ও ভালোবাসার বার্তা নিয়ে আসবে?
আসুন, আমরা সবাই মিলে একটি প্রতিজ্ঞা করি—ধর্মকে তার স্বাভাবিক ও পবিত্র অবস্থানে রাখি। রাজনীতির কলুষিত হাত থেকে ধর্মকে রক্ষা করি। কারণ ধর্মের আসল কাজ হলো আলোর পথ দেখানো, অন্ধকারে ঠেলে দেওয়া নয়।
“ধর্মের আলো জ্বালুক শান্তির প্রদীপ, বিভেদের নয়।”
রেজুয়ান আহম্মেদ: কলামিস্ট, বিশ্লেষক; সম্পাদক অর্থনীতি ডটকম
আকাশে গোধূলির রঙ খেলা করছে। পশ্চিমে সূর্যের বিদায়বেলার শেষ আলো সোনালী আভা ছড়াচ্ছে। এমন এক নিস্তব্ধ সন্ধ্যায় তাহসিন তার ল্যাবরেটরির জানালার পাশে দাঁড়িয়ে ছিল। সে একটি বিশেষ গবেষণায় ডুবে ছিল—“মানুষের রুহের প্রকৃতি এবং প্রযুক্তির মাধ্যমে তার জাগরণ সম্ভব কি না?”
তাহসিন, একজন তরুণ বিজ্ঞানী, সবসময়ই বিশ্বাস করত যে মানব শরীর একটি অত্যন্ত উন্নত হার্ডওয়্যার, কিন্তু রুহ হলো সেই অদৃশ্য সফটওয়্যার যা এই হার্ডওয়্যারকে প্রাণবন্ত করে। সে জীবনের রহস্যময়তাকে আরও গভীরভাবে বুঝতে চেয়েছিল। কিন্তু তার একাকী এই গবেষণা খুব সহজ ছিল না। একদিকে পরিবার আর বন্ধুদের অনাস্থা, অন্যদিকে সমাজের চাপ—সবকিছুই তাকে যেন অদৃশ্য শিকলে বেঁধে রেখেছিল।
তবে, তাহসিনের জীবন পাল্টে গেল যেদিন তার দেখা হলো নাফিসার সাথে। নাফিসা একজন মনোবিজ্ঞানী, যার গবেষণার মূল বিষয় ছিল মানুষের আধ্যাত্মিক ও মানসিক জগত। সে বিশ্বাস করত, প্রযুক্তি যতই উন্নত হোক, মানুষের প্রকৃত আত্মজাগরণ সম্ভব কেবল তার রুহের সাথে সংযোগ স্থাপন করেই।
নাফিসার সাথে পরিচয়ের পর তাহসিন প্রথমবার অনুভব করল, তার গবেষণার পরিপূর্ণতা আসতে পারে যদি তারা দু’জনে একসাথে কাজ করে। নাফিসা তাকে বলেছিল,
“তুমি মানুষের রুহকে মেশিন দিয়ে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করছ, কিন্তু রুহের শক্তি এমন কিছু যা মেশিন বা প্রযুক্তির দৃষ্টিতে ধরা যায় না। আমাদের আল্লাহর সৃষ্টি বোঝার জন্য মন ও আত্মাকে আরও গভীরভাবে বিশ্লেষণ করতে হবে।”
এই কথাগুলো তাহসিনের মনে গভীর দাগ কাটল। সে বুঝতে পারল, তাদের গবেষণার মূল বিষয় শুধু বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব নয়; বরং মানবিক মূল্যবোধ, আধ্যাত্মিকতা, এবং বিশ্বাসের মেলবন্ধন।
তাহসিন আর নাফিসা মিলে শুরু করল এক নতুন পরীক্ষা। তারা চেষ্টা করল মানুষের মন ও রুহের মধ্যে লুকিয়ে থাকা সেই অনন্ত শক্তিকে খুঁজে বের করতে, যা মানুষকে তার সৃষ্টির প্রকৃত উদ্দেশ্যের দিকে পরিচালিত করতে পারে।
তাদের গবেষণায় একটা প্রশ্ন বারবার উঠে আসছিল:
“মানুষ কি তার সৃষ্টিকর্তার উদ্দেশ্য বুঝতে পারছে? নাকি প্রযুক্তির প্রভাবে হারিয়ে যাচ্ছে তার আত্মা?”
তাহসিন একটি বিশেষ ডিভাইস তৈরি করেছিল, যার মাধ্যমে মানুষের মস্তিষ্কের তরঙ্গ আর হৃদয়ের অনুভূতিগুলো পরিমাপ করা যেত। কিন্তু নাফিসা বারবার তাকে বলছিল,
“এই যন্ত্র দিয়ে রুহের প্রকৃত অবস্থা বোঝা যাবে না। রুহকে জাগাতে হলে আমাদের অনুভূতির গভীরে যেতে হবে।”
তারা দেখতে পেল, আধুনিক প্রযুক্তি মানুষের জীবনকে সহজ করে তুললেও মানুষের মন ও আত্মার উপর একটি নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। মানুষ ধীরে ধীরে ভুলে যাচ্ছে নিজের উদ্দেশ্য। রুহ যেন এক অন্ধকার কক্ষে আটকে আছে, আর প্রযুক্তি তার দরজা বন্ধ করে দিচ্ছে।
তাদের গবেষণার সাফল্যের পথে সবচেয়ে বড় বাধা ছিল সমাজ। সবাই বলত,
“তোমাদের এই গবেষণা ভিত্তিহীন। রুহ বলতে কিছু নেই। বিজ্ঞানই সবকিছু।”
তাহসিন অনেকসময় নিজেই সন্দেহ করত, তার গবেষণা কি আদৌ সঠিক পথে এগোচ্ছে?
নাফিসা তাকে বলত,
“তোমার বিশ্বাস তোমার শক্তি। বিজ্ঞান আর আধ্যাত্মিকতা একসাথে কাজ করতে পারে—এটাই আমাদের প্রমাণ করতে হবে।”
তাহসিন আবার কাজে মন দিল। সে বুঝতে পারল, মানুষের শরীর আর রুহের সম্পর্ককে বুঝতে হলে তাদের সৃষ্টিকর্তার প্রতি কৃতজ্ঞতা আর বিশ্বাস থাকতে হবে। কিন্তু, সেই বিশ্বাস হারিয়ে ফেলেছে আজকের প্রজন্ম। তারা প্রযুক্তিকে আল্লাহর চেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে।
একদিন, তাদের গবেষণায় এক বিস্ময়কর মুহূর্ত এলো। তারা আবিষ্কার করল যে মানুষের মস্তিষ্কের নির্দিষ্ট একটি অংশ, যা দেহ ও আত্মার সংযোগস্থল, সেখান থেকে একটি অদ্ভুত শক্তি নির্গত হয়। এই শক্তি তখনই সক্রিয় হয় যখন মানুষ তার সৃষ্টিকর্তার সাথে সংযোগ স্থাপন করে।
তাহসিন ও নাফিসা একসাথে বলল,
“এটাই তো রুহের জাগরণের শুরু!”
তাদের আবিষ্কার এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করল। তারা বুঝতে পারল, মানুষের রুহকে জাগ্রত করতে হলে তাকে প্রযুক্তি ও আধ্যাত্মিকতার মেলবন্ধনে ফিরিয়ে আনতে হবে।
তাদের গবেষণার প্রভাব সমাজে ছড়িয়ে পড়ল। মানুষ ধীরে ধীরে বুঝতে শুরু করল যে, প্রযুক্তি জীবনের অংশ হতে পারে, কিন্তু এর মাধ্যমে জীবনের উদ্দেশ্য পূর্ণ হয় না। মানুষ যখন আল্লাহর সৃষ্টি হিসেবে নিজের আত্মা আর দেহকে সম্মান করতে শিখল, তখনই রুহের জাগরণ সম্ভব হলো।
তাহসিন আর নাফিসা তাদের গবেষণার মাধ্যমে প্রমাণ করল যে, মানুষের প্রকৃত শক্তি তার বিশ্বাস, মানবতা, আর আধ্যাত্মিকতায়।
তাহসিন ও নাফিসার গবেষণা শুধু একটি বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার ছিল না; এটি ছিল মানুষের আত্মার জাগরণের এক মহৎ যাত্রা। তারা প্রমাণ করেছিল, মানুষের রুহ কখনো হারিয়ে যায় না। এটি সবসময়ই তার সৃষ্টিকর্তার সাথে সংযুক্ত, এবং এই সংযোগই তাকে সত্যিকারের মানুষ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে।
শেষ দৃশ্যে তাহসিন আকাশের দিকে তাকিয়ে বলল,
“আমরা শুধু আল্লাহর সৃষ্টির রহস্যের একটি দিক খুঁজে পেয়েছি। রুহের জাগরণ এক অনন্ত যাত্রা।”