
ধর্মের স্থান ধর্মেই থাকুক!

রেজুয়ান আহম্মেদ
ধর্ম মানুষের আত্মার শক্তি, অন্তরের শান্তি এবং নৈতিকতার পথপ্রদর্শক। এটি আমাদের জীবনে মানবিকতা ও মূল্যবোধের আলো জ্বালায়। কিন্তু যখন ধর্মকে তার পবিত্র আসন থেকে সরিয়ে রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করা হয়, তখন তা মানবতার জন্য আশীর্বাদ না হয়ে অভিশাপ হয়ে দাঁড়ায়।
ধর্ম আমাদের শিক্ষা দেয় ভালোবাসা, সহমর্মিতা এবং মানবিকতার প্রতি শ্রদ্ধা।
ইসলামে বলা হয়েছে, “মানুষের সেবা আল্লাহর সেবার সমান।”
হিন্দু ধর্মে বলা হয়েছে, “সবাইকে এক চোখে দেখো, কেউই পৃথক নয়।”
খ্রিস্টধর্ম শিক্ষা দেয়, “প্রেম করো, ঘৃণা নয়।” কিন্তু আমরা কি সেই শিক্ষাগুলো সত্যিই হৃদয় দিয়ে মানি? আজকের দিনে আমরা প্রায়ই দেখি, ধর্মের নামে বিভাজন তৈরি করা হয় এবং এর পেছনে থাকে রাজনৈতিক চক্রান্ত।
রাজনীতির ময়দানে ধর্মকে টেনে নিয়ে আসা মানে শুধু ধর্মের অপমানই নয়, বরং মানুষের অনুভূতিকে অসম্মান করা। এই প্রতারণা আমাদের সমাজে ঘৃণা, সহিংসতা এবং বিভেদের বীজ বপন করে। ধর্মকে পবিত্র রাখতে হলে তা মানুষের আত্মায় স্থির রাখতে হবে, রাজনীতির হাতে নয়।
কীভাবে ধর্মকে সুরক্ষিত রাখা যায়?
১. সচেতনতা বাড়ানো: ধর্মের প্রকৃত বার্তা এবং মানবিক শিক্ষাগুলো সমাজে প্রচার করতে হবে। মানুষকে বুঝতে হবে, ধর্ম কোনো বিভেদের হাতিয়ার নয়, বরং এটি একতার প্রতীক।
২. রাজনীতিতে ধর্মের অনুপ্রবেশ রোধ করা: রাজনীতিবিদদের উচিত ধর্মকে রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকা।
৩. মানবিক মূল্যবোধের চর্চা: সমাজে এমন পরিবেশ তৈরি করতে হবে, যেখানে ধর্মের মূল উদ্দেশ্য শান্তি ও কল্যাণ প্রতিষ্ঠিত হয়।
ধর্মকে যদি আমরা সত্যিকার অর্থে সম্মান করতে চাই, তবে তা মানুষের অন্তরে রাখতে হবে। ধর্মের আসল বার্তাগুলো আমাদের জীবনে বাস্তবায়ন করতে হবে। আমাদের উচিত নিজ নিজ ধর্মের সহিষ্ণুতা ও মানবিক মূল্যবোধের চর্চা করা।
আমরা কি এমন এক সমাজ চাই, যেখানে ধর্ম হবে বিভেদের কারণ? নাকি এমন একটি সমাজ চাই, যেখানে ধর্ম হবে একতার মূর্ত প্রতীক, শান্তি ও ভালোবাসার বার্তা নিয়ে আসবে?
আসুন, আমরা সবাই মিলে একটি প্রতিজ্ঞা করি—ধর্মকে তার স্বাভাবিক ও পবিত্র অবস্থানে রাখি। রাজনীতির কলুষিত হাত থেকে ধর্মকে রক্ষা করি। কারণ ধর্মের আসল কাজ হলো আলোর পথ দেখানো, অন্ধকারে ঠেলে দেওয়া নয়।
“ধর্মের আলো জ্বালুক শান্তির প্রদীপ, বিভেদের নয়।”