img

ভারতের কাছ থেকে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করতে হবে : রেজুয়ান আহম্মেদ

প্রকাশিত :  ১৯:০৩, ২৯ নভেম্বর ২০২৪

ভারতের কাছ থেকে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করতে হবে : রেজুয়ান আহম্মেদ

বাংলাদেশ, একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র, যেটি তার স্বাধীনতা অর্জন করেছে রক্তের বিনিময়ে, তার সার্বভৌমত্ব রক্ষা করার দায়িত্ব প্রতিটি নাগরিকের। কিন্তু স্বাধীনতার এই পথ কখনোই সহজ নয়। একদিকে রয়েছে ভারতের সুদীর্ঘ রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক প্রভাব, অন্যদিকে আন্তর্জাতিক রাজনীতির চাপ; এসব কারণে বাংলাদেশ আজ একটি ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে।

ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক ঐতিহাসিকভাবে জটিল। মুক্তিযুদ্ধে ভারতের সহায়তা আমাদের অস্বীকার করার উপায় নেই। কিন্তু সেই সাহায্যের মাধ্যমে একপাক্ষিক রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক আধিপত্য স্থাপনের চেষ্টা বারবার প্রশ্নবিদ্ধ করেছে বাংলাদেশের স্বাধীন অস্তিত্ব। বর্তমানে ভারতের কাছ থেকে সার্বভৌমত্ব রক্ষার প্রশ্নটি শুধুমাত্র ভৌগোলিক সীমারেখায় সীমাবদ্ধ নয়; এটি একটি বহুমাত্রিক চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

সার্বভৌমত্বের চ্যালেঞ্জ: অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক আধিপত্য

বাংলাদেশের অর্থনীতি এখন বহুলাংশে ভারতের ওপর নির্ভরশীল। আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে ভারতের একচেটিয়া আধিপত্য, সীমান্ত অঞ্চলে চোরাচালান এবং সীমান্তে হত্যাকাণ্ডের মতো সমস্যাগুলো বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বকে নীরবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। ভারতীয় কোম্পানিগুলোর বিনিয়োগ, ভারতীয় শ্রমিকদের অবৈধ প্রবেশ, এবং সাংস্কৃতিক আগ্রাসন বাংলাদেশকে একটি নব্য উপনিবেশে পরিণত করার আশঙ্কা সৃষ্টি করছে।

রাজনৈতিক দিক থেকেও ভারতের প্রভাব স্পষ্ট। বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর নীতিনির্ধারণ থেকে শুরু করে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলো পর্যন্ত ভারতের চাপ প্রায়শই দৃশ্যমান। পানিবণ্টন চুক্তি, সীমান্ত হত্যা এবং তিস্তার পানি বণ্টন নিয়ে ভারতের অবহেলা—এই সব ঘটনাগুলো আমাদের রাজনৈতিক অবস্থানকে দুর্বল করেছে।

একটি জাতি তখনই শক্তিশালী হয়, যখন তার জনগণ নিজেদের অধিকার ও দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন থাকে। সাহিত্যিক দৃষ্টিকোণ থেকে বললে, আমাদের জাতীয় চেতনায় একটি নতুন জাগরণের প্রয়োজন। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, এবং দেশপ্রেমের আলোকে আমাদের একটি ঐক্যবদ্ধ জাতি হিসেবে গড়ে উঠতে হবে।

\"যে মাটিতে রক্ত ঝরেছে, সে মাটি বিক্রি হতে পারে না।\"

এই লাইনটি শুধু একটি কথা নয়, এটি একটি চেতনা। প্রতিটি বাংলাদেশির মনে এই চেতনা স্থাপন করতে হবে। ভারত কিংবা যে কোনো শক্তির দ্বারা প্রভাবিত হওয়া থেকে মুক্ত থাকার জন্য আমাদের জাতীয় সাহিত্য, সংস্কৃতি ও ইতিহাসকে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে ছড়িয়ে দিতে হবে।

সঠিক পদক্ষেপ: কৌশলগত প্রস্তাবনা

ভারতের কাছ থেকে সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলো বাস্তবায়ন করা যেতে পারে:

 ১. কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনঃমূল্যায়ন

ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক হতে হবে সমান ভিত্তির ওপর। যে কোনো চুক্তি স্বাক্ষরের আগে তা হতে হবে দেশের স্বার্থের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। বিশেষ করে পানিবণ্টন চুক্তি ও সীমান্ত সমস্যাগুলোতে ভারতের একচেটিয়া অবস্থান মেনে নেওয়া চলবে না।

 ২. অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতা অর্জন

বাংলাদেশের অর্থনীতিকে ভারতের উপর নির্ভরশীলতা থেকে মুক্ত করতে স্থানীয় শিল্প ও কৃষিখাতকে আরও শক্তিশালী করতে হবে। ভারতীয় পণ্যের বিকল্প হিসেবে স্থানীয় পণ্য উৎপাদন বাড়াতে হবে এবং চোরাচালান বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।

 ৩. সীমান্ত নিরাপত্তা জোরদার

সীমান্ত হত্যা, চোরাচালান এবং অবৈধ অনুপ্রবেশ বন্ধে সীমান্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও উন্নত করতে হবে। বিজিবি ও অন্যান্য সীমান্ত রক্ষী বাহিনীকে আধুনিক প্রযুক্তি ও সরঞ্জাম দিয়ে সজ্জিত করতে হবে।

 ৪. সাংস্কৃতিক আগ্রাসন প্রতিরোধ

ভারতীয় টেলিভিশন সিরিয়াল, সিনেমা ও অন্যান্য সাংস্কৃতিক উপকরণের পরিবর্তে বাংলাদেশের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে তুলে ধরতে হবে। স্কুল-কলেজে জাতীয় ইতিহাস ও সংস্কৃতির উপর জোর দেওয়া উচিত।

 ৫. আন্তর্জাতিক মিত্রতা বৃদ্ধি

বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় চীন, যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক শক্তিগুলোর সঙ্গে কৌশলগত সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে। বহুমুখী আন্তর্জাতিক সম্পর্ক গড়ে তোলা গেলে ভারতের চাপ সহজেই সামলানো যাবে।

 ৬. রাজনৈতিক ঐক্য প্রতিষ্ঠা

দেশের ভেতরে রাজনৈতিক বিভাজন কমিয়ে জাতীয় স্বার্থে একত্রিত হওয়া অপরিহার্য। ভারতীয় প্রভাব থেকে মুক্ত থাকতে হলে দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে জাতীয় স্বার্থে একটি অভিন্ন অবস্থান তৈরি করতে হবে।

আজকের বাংলাদেশে মূল দায়িত্ব হলো মানুষের মধ্যে দেশপ্রেম, আত্মমর্যাদা, এবং স্বাধীনতার চেতনা জাগিয়ে তোলা। সুকান্ত, নজরুল, রবীন্দ্রনাথ—তাঁদের মতো সাহিত্যিকদের আদর্শ থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে আমাদের নতুন প্রজন্মকে একটি ঐক্যবদ্ধ, সাহসী এবং আত্মবিশ্বাসী জাতি হিসেবে গড়ে তুলতে হবে।

নজরুলের এই লাইনটি বারবার আমাদের মনে করিয়ে দেয়:

\"আমি হিন্দু, আমি মুসলিম।

আমি বৌদ্ধ, আমি খ্রিস্টান।\"

এই ঐক্যবদ্ধ চেতনার মাধ্যমেই আমরা ভারত কিংবা যে কোনো বহিঃশক্তির বিরুদ্ধে আমাদের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করতে পারব।

সার্বভৌমত্ব রক্ষা কেবল একটি রাজনৈতিক বা সামরিক কাজ নয়, এটি একটি জাতীয় চেতনার প্রতিফলন। যখন প্রতিটি বাংলাদেশি তার নিজের অধিকার সম্পর্কে সচেতন হবে এবং ঐক্যবদ্ধভাবে দেশের স্বার্থ রক্ষায় এগিয়ে আসবে, তখনই আমরা প্রকৃত স্বাধীন হতে পারব।

বাংলাদেশ একটি সম্ভাবনাময় দেশ। আমাদের শক্তি আমাদের জনগণ, আমাদের সংস্কৃতি, এবং আমাদের ঐতিহ্য। ভারত কিংবা অন্য কোনো শক্তির দ্বারা প্রভাবিত হওয়া থেকে মুক্ত থাকতে হলে আমাদের এই শক্তিকে কাজে লাগাতে হবে।

একদিন বাংলাদেশ সেই স্বপ্নের দেশ হবে, যেখানে প্রতিটি মানুষ স্বাধীন, আত্মনির্ভরশীল, এবং গৌরবময় ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাবে। আজকের এই সংগ্রাম সেই আলোকিত আগামী দিনের জন্য।

রেজুয়ান আহম্মেদ: কলামিস্ট, বিশ্লেষক; সম্পাদক অর্থনীতি ডটকম

img

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে ইইউ’র ২৭ রাষ্ট্রদূতের বৈঠক চলছে

প্রকাশিত :  ০৮:৩৮, ০৯ ডিসেম্বর ২০২৪
সর্বশেষ আপডেট: ০৯:০৫, ০৯ ডিসেম্বর ২০২৪

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস সঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) ২৭টি দেশের রাষ্ট্রদূতের বৈঠক শুরু হয়েছে। এতে ২৭টি দেশের পক্ষে নেতৃত্ব দিচ্ছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের হেড অব ডেলিগেশন মাইকেল মিলার।

আজ সোমবার (৯ ডিসেম্বর) দুপুর ১২টার দিকে প্রধান উপদেষ্টার তেজগাঁও কার্যালয়ে এই বৈঠক শুরু হয়।

এর আগে, বৃহস্পতিবার (৫ ডিসেম্বর) জনকূটনীতি বিভাগের মহাপরিচালক রফিকুল ইসলাম এক ব্রিফিংয়ে বলেন, ৯ ডিসেম্বর ইউরোপীয় ইউনিয়নের ২৭ দেশ ছাড়াও আরও একটি দেশের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।

রফিকুল আলম বলেন, আলোচনায় জলবায়ু পরিবর্তন চ্যালেঞ্জ, রোহিঙ্গা ইস্যু প্রধান্য পাবে। এ ছাড়া বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্যের সম্পর্ক নিয়ে খোলামেলা আলোচনা হবে।

জনকূটনীতি বিভাগের মহাপরিচালক বলেন, ভারতের ভিসা না পাওয়ায় ইউরোপের কয়েকটি দেশ ফিনল্যান্ড, রোমানিয়ার মতো দেশে সশরীরে উপস্থিত না হয়ে বিকল্প পথে ভিসা দেওয়া যায় কি না, সে বিষয়ে অনুরোধ জানানো হয়েছিল, কিন্তু নিজস্ব নীতির কারণে ইউরোপের বিভিন্ন দেশ ভিসা পাওয়ার জন্য সশরীরে নয়াদিল্লি যাওয়ার বিকল্পে রাজি হয়নি।

রফিকুল আলম আরও বলেন, ৯ ডিসেম্বর বাংলাদেশ-ভারত পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠক হবে। দিল্লিতে অবস্থান করে শেখ হাসিনা যেন উসকানিমূলক বক্তব্য দেওয়া থেকে বিরত থাকে, ভারতে এ বিষয়টি নিশ্চিতে আহ্বান জানালেও এর কোনো উত্তর দেয়নি দেশটি।