img

কোরআন: বিজ্ঞান ও বিশ্বাসের এক অনন্য সমন্বয়

প্রকাশিত :  ০৬:৪৯, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪
সর্বশেষ আপডেট: ০৭:৫৮, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪

কোরআন: বিজ্ঞান ও বিশ্বাসের এক অনন্য সমন্বয়

রেজুয়ান আহম্মেদ

বিশ্বাস এবং বিজ্ঞান—এই দুটি শব্দ অনেক সময়ই একে অপরের বিপরীত বলে মনে হয়। ধর্ম যেখানে আস্থা ও আধ্যাত্মিকতায় জোর দেয়, বিজ্ঞান সেখানে প্রশ্ন তোলে, অনুসন্ধান চালায় এবং প্রমাণ খোঁজে। কিন্তু মানবজাতির ইতিহাসে এমন একটি গ্রন্থ রয়েছে যা এই দুই জগতকে একত্র করেছে। সেই গ্রন্থটির নাম কোরআন। এটি শুধু একটি ধর্মগ্রন্থ নয়, বরং বিজ্ঞানসম্মত এক অসাধারণ দলিল।

রাতের আকাশে তারাগুলি ঝিকমিক করছে। শহরের ব্যস্ততা কিছুটা থমকে গেছে। রাকিব, একজন তরুণ পদার্থবিজ্ঞানী, এবং তার ছোট ভাই জামিল ছুটি কাটাতে একটি গ্রামে এসেছে। মসজিদের সামনে বসে তারা গল্প করছে। জামিল প্রশ্ন করল,

“ভাইয়া, কোরআন কি সত্যিই বিজ্ঞানসম্মত?”

রাকিব হেসে বলল, “কোরআনকে শুধু ধর্মগ্রন্থ ভাবলে ভুল হবে। এর মধ্যে এমন অনেক বৈজ্ঞানিক তথ্য রয়েছে যা চৌদ্দশ বছর আগে বলা হয়েছিল এবং আধুনিক বিজ্ঞান এখন সেগুলো আবিষ্কার করেছে। শোনার জন্য প্রস্তুত?”

জামিল বলল, “অবশ্যই!”

রাকিব বলল, “বিজ্ঞান বলে, মহাবিশ্বের সৃষ্টি হয়েছে একটি বিশাল বিস্ফোরণের মাধ্যমে, যাকে আমরা বিগ ব্যাং নামে জানি। এবার শোনো, কোরআনে কী বলা হয়েছে:

‘তারা কি লক্ষ্য করে না যে আমি নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডলকে একত্রিত অবস্থায় সৃষ্টি করেছি, তারপর আমি তা পৃথক করে দিয়েছি।’

(সূরা আম্বিয়া, ২১:৩০)

“এখন বলো, এত বছর আগে এই ধারণাটি কোথা থেকে এল? এটি কি কেবলই কাকতালীয়?”

জামিল বিস্মিত হয়ে বলল, “এটা তো সত্যিই অবিশ্বাস্য!”

রাকিব বলল, “আরেকটি উদাহরণ দিচ্ছি। কোরআনে বলা হয়েছে:

‘আমি মানুষকে সৃষ্টি করেছি নিষিক্ত ড্রপ থেকে। তারপর তাকে জমাট রক্তে পরিণত করেছি। তারপর সেই জমাট রক্তকে মাংসপিণ্ডে রূপান্তর করেছি।’

(সূরা মুমিনুন, ২৩:১৩-১৪)

“তুমি জানো, আধুনিক বিজ্ঞানীরা যখন আল্ট্রাসাউন্ড প্রযুক্তি আবিষ্কার করলেন, তখন তারা বুঝতে পারলেন যে ভ্রূণের বিকাশ ঠিক এই ধাপগুলোতেই ঘটে।”

জামিল এবার নিজেই বলল, “ভাইয়া, সমুদ্র সম্পর্কে কিছু বলো।”

রাকিব উত্তর দিল, “সমুদ্র এবং নদীর পানির মিশ্রণ নিয়েও কোরআনে বলা হয়েছে:

“তিনি দুই সমুদ্র প্রবাহিত করেছেন, যাদের একটি মিষ্টি ও সুপেয়, আরেকটি লবণাক্ত ও তেতো। তাদের মধ্যে একটি অন্তরায় রয়েছে, যা তারা অতিক্রম করতে পারে না।”

(সূরা আর রহমান, ৫৫:১৯-২০)

বিজ্ঞান বলে, সমুদ্রের মিষ্টি ও লবণাক্ত পানি একটি নির্দিষ্ট সীমারেখা অতিক্রম করে না। এই তথ্য চৌদ্দশ বছর আগেই কোরআনে দেওয়া হয়েছে। এটা কি বিজ্ঞানসম্মত নয়?

জামিল বলল, “তাহলে কি ভূতত্ত্ব নিয়েও কিছু বলা আছে?”

রাকিব বলল, “অবশ্যই। কোরআনে পাহাড় সম্পর্কে বলা হয়েছে:

‘আমি পৃথিবীতে পাহাড় স্থাপন করেছি, যেন তা তোমাদের নিয়ে কাঁপতে না পারে।’

(সূরা লুকমান, ৩১:১০)

“বিজ্ঞান বলে, পাহাড় টেকটোনিক প্লেটের স্থিতিশীলতা রক্ষা করে। এটি পৃথিবীর ভারসাম্য বজায় রাখে। আধুনিক ভূতত্ত্ব এই সত্যটি আবিষ্কার করতে হাজার বছর সময় নিয়েছে।”

রাকিব বলল, “সূর্য ও চাঁদের আলো সম্পর্কেও কোরআনে অসাধারণ কথা বলা হয়েছে:

‘তিনি সূর্যকে প্রজ্জ্বলিত করেছেন এবং চাঁদকে আলোকিত করেছেন।’

(সূরা ইউনুস, ১০:৫)

“এখানে সূর্যকে ‘প্রজ্জ্বলিত’ এবং চাঁদকে ‘আলোকিত’ বলা হয়েছে। বিজ্ঞান এখন প্রমাণ করেছে, সূর্য নিজে আলো তৈরি করে এবং চাঁদ সেই আলো প্রতিফলিত করে। এই ধারণা কি কোরআনের বিজ্ঞানসম্মত দিক প্রকাশ করে না?”

রাকিব আরও বলল, “জামিল, কোরআন শুধু একটি ধর্মগ্রন্থ নয়। এটি মানবজাতির জন্য এক বিজ্ঞানসম্মত নির্দেশিকা। যারা এটি গভীরভাবে পড়ে এবং চিন্তা করে, তারা আধ্যাত্মিক শান্তি ও বৈজ্ঞানিক জ্ঞানের আলো পায়।”

জামিল বলল, “তাহলে কোরআন আসলে একটি জ্ঞানভাণ্ডার। আমি আগে কখনো এভাবে ভাবিনি।”

রাকিব হাসল। “তোমার মতো অনেকেই কোরআনকে শুধু ধর্মগ্রন্থ হিসেবে দেখে। কিন্তু এটি আধ্যাত্মিক ও বৈজ্ঞানিক সত্যের এক মেলবন্ধন।”

কোরআনের প্রতিটি আয়াতের মধ্যে লুকিয়ে আছে জ্ঞানের ঝর্ণাধারা। এটি শুধুমাত্র ধর্মীয় নির্দেশনার জন্য নয়; এটি মানুষের দৈনন্দিন জীবন, বিজ্ঞান ও জগতের সত্য অনুধাবনের এক অমূল্য সম্পদ।

যারা কোরআন পড়ে এবং চিন্তা করে, তারা বুঝতে পারে যে এটি এক চিরন্তন আলোর উৎস।





রেজুয়ান আহম্মেদ: কলামিস্ট, বিশ্লেষক; সম্পাদক অর্থনীতি ডটকম
img

ইহুদি ধর্মশাস্ত্র অনুযায়ী ইসরায়েলের আয়ু আর দুবছর

প্রকাশিত :  ১১:৪৯, ১৩ এপ্রিল ২০২৫

ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর নির্বিচার গণহত্যার প্রতিবাদে রাস্তায় নেমেছেন সারা বিশ্বের লাখ লাখ মানুষ। ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা এবং গাজায় হামলা বন্ধের দাবিতে প্রতিদিন বিক্ষোভ করছেন তারা। এমনকি এসব বিক্ষোভ থেকে অনেকে ইসরায়েলের ধ্বংস চাইছেন। এরই মাঝে ইহুদিদের ধর্মীয় ন্যায়শাস্ত্রের একটি ভবিষ্যদ্বাণী নিয়ে ইসরায়েলিদের মধ্যে তৈরি হয়েছে আতঙ্ক।

ইহুদিদের ধর্মীয় ন্যায়শাস্ত্র তালমুদ-এ এই ভবিষ্যদ্বাণীটি ‘লা’নাতুল আকদিস সামিন’ বা ‘অষ্টম দশকের অভিশাপ’ হিসেবে পরিচিত। ওই ভবিষ্যদ্বাণীতে বলা হয়েছে, কোনো ইহুদি রাষ্ট্র আট দশকের বেশি টিকবে না। ভেঙে যাবে। আর সে ভাঙন হবে নিজেদের মধ্যকার জাতি-উপজাতির কোন্দলে। ভবিষ্যদ্বাণী অনুযায়ী ইসরায়েলের আয়ু আর দুবছর অবশিষ্ট আছে।

গাজায় ইসরায়েলের চলমান নৃশংসতার মধ্যে সম্প্রতি ইহুদিদের ধর্মীয় ন্যায়শাস্ত্রের ভবিষ্যদ্বাণীটি ব্যাপকভাবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। ভবিষ্যদ্বাণীটি নিয়ে ইসরায়েলের ইহুদিদের মধ্যেও তৈরি হয়েছে আতঙ্ক। অনেকে বলছেন, আগামী দুই-তিন বছরের মধ্যে ইসরায়েল রাষ্ট্রের অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যেতে পারে এই আতঙ্ক ভর করেছে নেতানিয়াহুকেও। এজন্য তিনি ইসরায়েলের জন্য হুমকি হতে পারে এমন সব কিছু ধ্বংস করে টিকে থাকতে মরিয়া।

গেল দুই হাজার বছরে বিভিন্ন স্থানে ছোট-বড় সার্বভৌম অনেক ইহুদি রাজ্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এর মধ্যে কিং ডেভিডের অর্থাৎ ইসলাম ধর্মের দাউদ নবীর রাজত্ব এবং হাসমোনিয়ান রাজত্ব ছাড়া আজ পর্যন্ত কোনো ‘ইহুদি রাজ্য’ ৮০ বছরের বেশি টেকেনি। তবে কিং ডেভিডের রাজত্ব ও হাসমোনিয়ান রাজত্ব ৮০ বছরের বেশি টিকে থাকলেও এই দুই রাজত্বের ভাঙন ধরেছিল ৮০ বছরের মাথায়। এরপর দুটো রাজত্বই টুকরো টুকরো হয়ে গিয়েছিল।

আজকের আধুনিক ইসরায়েলের জন্ম হয়েছিল ১৯৪৮ সালের ১৪ মে। ২০২৮ সালে ৮০ বছর পূরণ হবে তাদের। অর্থাৎ হাতে সময় আছে মাত্র ২ বছর। তালমুদের ভবিষ্যদ্বাণী সত্য হলে আর দুই-তিন বছরের মধ্যেই ইসরায়েল রাষ্ট্রটি ভেঙে পড়বে।

যেহেতু ইসরায়েলের ইহুদি সম্প্রদায়ের লোকজন তাদের ধর্মগ্রন্থ তাওরাতে বিশ্বাসী ও তালমুদের আদেশ-নিষেধ সংক্রান্ত প্রত্যাদেশের অনুসারী, সেহেতু ইসরায়েলের বাসিন্দাদের একটি বিরাট অংশ ‘অষ্টম দশকের অভিশাপ’ নিয়ে নিজেদের মধ্যে সিরিয়াস আলাপ-আলোচনা করে থাকেন। অনেক ইহুদি ইসরায়েলের ওপর কোনো দুর্যোগ নেমে এলে কীভাবে সেখান থেকে সরে যাবেন, তা নিয়ে আলাপ-আলোচনা করছেন।

তারা এই ন্যাচারাল ফেনোমেনন বা প্রাকৃতিক প্রপঞ্চ অমোঘ নিয়মে নেমে আসতে পারে বলে বিশ্বাস করেন। এজন্য ইসরায়েল তাদের জন্য হুমকি এমন সব কিছু ধ্বংস করে টিকে থাকতে মরিয়া। বিশ্লেষকদের ধারণা- ইসরায়েল গাজা, লেবানন, সিরিয়া, জর্ডান, ইয়েমেনসহ সব জায়গায় অনেকটা আতঙ্কিত হয়ে হামলা চালাচ্ছে, যেন তারা ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচতে পারে। তবে তারা ন্যাচারাল ফেনোমেনন বা আল্লাহর পক্ষ থেকে নেমে আসা কোনো বিপদ থেকে নিজেদের রক্ষা করতে পারবে কি না তা নিয়ে শঙ্কিত।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ‘লা’নাতুল আকদিস সামিন’ অর্থাৎ ইহুদি রাষ্ট্র ভেঙে যাওয়ার সেই ভবিষ্যদ্বাণীটি অনেক বেশি আলোচিত হচ্ছে। এমনকি বছর দুই আগে ইসরায়েলের সাবেক প্রধানমন্ত্রী এহুদ বারাকও ইসরায়েল রাষ্ট্রের অস্তিত্ব বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন।