
কোরআন: বিজ্ঞান ও বিশ্বাসের এক অনন্য সমন্বয়

রেজুয়ান আহম্মেদ
বিশ্বাস এবং বিজ্ঞান—এই দুটি শব্দ অনেক সময়ই একে অপরের বিপরীত বলে মনে হয়। ধর্ম যেখানে আস্থা ও আধ্যাত্মিকতায় জোর দেয়, বিজ্ঞান সেখানে প্রশ্ন তোলে, অনুসন্ধান চালায় এবং প্রমাণ খোঁজে। কিন্তু মানবজাতির ইতিহাসে এমন একটি গ্রন্থ রয়েছে যা এই দুই জগতকে একত্র করেছে। সেই গ্রন্থটির নাম কোরআন। এটি শুধু একটি ধর্মগ্রন্থ নয়, বরং বিজ্ঞানসম্মত এক অসাধারণ দলিল।
রাতের আকাশে তারাগুলি ঝিকমিক করছে। শহরের ব্যস্ততা কিছুটা থমকে গেছে। রাকিব, একজন তরুণ পদার্থবিজ্ঞানী, এবং তার ছোট ভাই জামিল ছুটি কাটাতে একটি গ্রামে এসেছে। মসজিদের সামনে বসে তারা গল্প করছে। জামিল প্রশ্ন করল,
“ভাইয়া, কোরআন কি সত্যিই বিজ্ঞানসম্মত?”
রাকিব হেসে বলল, “কোরআনকে শুধু ধর্মগ্রন্থ ভাবলে ভুল হবে। এর মধ্যে এমন অনেক বৈজ্ঞানিক তথ্য রয়েছে যা চৌদ্দশ বছর আগে বলা হয়েছিল এবং আধুনিক বিজ্ঞান এখন সেগুলো আবিষ্কার করেছে। শোনার জন্য প্রস্তুত?”
জামিল বলল, “অবশ্যই!”
রাকিব বলল, “বিজ্ঞান বলে, মহাবিশ্বের সৃষ্টি হয়েছে একটি বিশাল বিস্ফোরণের মাধ্যমে, যাকে আমরা বিগ ব্যাং নামে জানি। এবার শোনো, কোরআনে কী বলা হয়েছে:
‘তারা কি লক্ষ্য করে না যে আমি নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডলকে একত্রিত অবস্থায় সৃষ্টি করেছি, তারপর আমি তা পৃথক করে দিয়েছি।’
(সূরা আম্বিয়া, ২১:৩০)
“এখন বলো, এত বছর আগে এই ধারণাটি কোথা থেকে এল? এটি কি কেবলই কাকতালীয়?”
জামিল বিস্মিত হয়ে বলল, “এটা তো সত্যিই অবিশ্বাস্য!”
রাকিব বলল, “আরেকটি উদাহরণ দিচ্ছি। কোরআনে বলা হয়েছে:
‘আমি মানুষকে সৃষ্টি করেছি নিষিক্ত ড্রপ থেকে। তারপর তাকে জমাট রক্তে পরিণত করেছি। তারপর সেই জমাট রক্তকে মাংসপিণ্ডে রূপান্তর করেছি।’
(সূরা মুমিনুন, ২৩:১৩-১৪)
“তুমি জানো, আধুনিক বিজ্ঞানীরা যখন আল্ট্রাসাউন্ড প্রযুক্তি আবিষ্কার করলেন, তখন তারা বুঝতে পারলেন যে ভ্রূণের বিকাশ ঠিক এই ধাপগুলোতেই ঘটে।”
জামিল এবার নিজেই বলল, “ভাইয়া, সমুদ্র সম্পর্কে কিছু বলো।”
রাকিব উত্তর দিল, “সমুদ্র এবং নদীর পানির মিশ্রণ নিয়েও কোরআনে বলা হয়েছে:
“তিনি দুই সমুদ্র প্রবাহিত করেছেন, যাদের একটি মিষ্টি ও সুপেয়, আরেকটি লবণাক্ত ও তেতো। তাদের মধ্যে একটি অন্তরায় রয়েছে, যা তারা অতিক্রম করতে পারে না।”
(সূরা আর রহমান, ৫৫:১৯-২০)
বিজ্ঞান বলে, সমুদ্রের মিষ্টি ও লবণাক্ত পানি একটি নির্দিষ্ট সীমারেখা অতিক্রম করে না। এই তথ্য চৌদ্দশ বছর আগেই কোরআনে দেওয়া হয়েছে। এটা কি বিজ্ঞানসম্মত নয়?
জামিল বলল, “তাহলে কি ভূতত্ত্ব নিয়েও কিছু বলা আছে?”
রাকিব বলল, “অবশ্যই। কোরআনে পাহাড় সম্পর্কে বলা হয়েছে:
‘আমি পৃথিবীতে পাহাড় স্থাপন করেছি, যেন তা তোমাদের নিয়ে কাঁপতে না পারে।’
(সূরা লুকমান, ৩১:১০)
“বিজ্ঞান বলে, পাহাড় টেকটোনিক প্লেটের স্থিতিশীলতা রক্ষা করে। এটি পৃথিবীর ভারসাম্য বজায় রাখে। আধুনিক ভূতত্ত্ব এই সত্যটি আবিষ্কার করতে হাজার বছর সময় নিয়েছে।”
রাকিব বলল, “সূর্য ও চাঁদের আলো সম্পর্কেও কোরআনে অসাধারণ কথা বলা হয়েছে:
‘তিনি সূর্যকে প্রজ্জ্বলিত করেছেন এবং চাঁদকে আলোকিত করেছেন।’
(সূরা ইউনুস, ১০:৫)
“এখানে সূর্যকে ‘প্রজ্জ্বলিত’ এবং চাঁদকে ‘আলোকিত’ বলা হয়েছে। বিজ্ঞান এখন প্রমাণ করেছে, সূর্য নিজে আলো তৈরি করে এবং চাঁদ সেই আলো প্রতিফলিত করে। এই ধারণা কি কোরআনের বিজ্ঞানসম্মত দিক প্রকাশ করে না?”
রাকিব আরও বলল, “জামিল, কোরআন শুধু একটি ধর্মগ্রন্থ নয়। এটি মানবজাতির জন্য এক বিজ্ঞানসম্মত নির্দেশিকা। যারা এটি গভীরভাবে পড়ে এবং চিন্তা করে, তারা আধ্যাত্মিক শান্তি ও বৈজ্ঞানিক জ্ঞানের আলো পায়।”
জামিল বলল, “তাহলে কোরআন আসলে একটি জ্ঞানভাণ্ডার। আমি আগে কখনো এভাবে ভাবিনি।”
রাকিব হাসল। “তোমার মতো অনেকেই কোরআনকে শুধু ধর্মগ্রন্থ হিসেবে দেখে। কিন্তু এটি আধ্যাত্মিক ও বৈজ্ঞানিক সত্যের এক মেলবন্ধন।”
কোরআনের প্রতিটি আয়াতের মধ্যে লুকিয়ে আছে জ্ঞানের ঝর্ণাধারা। এটি শুধুমাত্র ধর্মীয় নির্দেশনার জন্য নয়; এটি মানুষের দৈনন্দিন জীবন, বিজ্ঞান ও জগতের সত্য অনুধাবনের এক অমূল্য সম্পদ।
যারা কোরআন পড়ে এবং চিন্তা করে, তারা বুঝতে পারে যে এটি এক চিরন্তন আলোর উৎস।