img

অদৃশ্য সত্তার অনুসন্ধান!

প্রকাশিত :  ১৮:৩৩, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪
সর্বশেষ আপডেট: ১৮:৪৯, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪

অদৃশ্য সত্তার অনুসন্ধান!

রেজুয়ান আহম্মেদ

অরুণাভ দাশগুপ্ত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের অধ্যাপক। তিনি ছিলেন একজন বিদগ্ধ এবং জ্ঞানপিপাসু মানুষ, যার জীবনের মূল প্রশ্ন ছিল: "সৃষ্টিকর্তা আছেন কি?" এই প্রশ্ন তাঁর শৈশব থেকেই শুরু হয়েছিল। একদিন ছোটবেলায় গ্রামের মন্দিরে পূজা দেখতে গিয়ে তিনি প্রশ্ন করেছিলেন তাঁর ঠাকুরদাদাকে, "ঠাকুরদা, যদি ভগবান সত্যিই থাকেন, তবে আমরা তাঁকে কেন দেখতে পাই না?"

ঠাকুরদা তখন বলেছিলেন, "অরুণ, ঈশ্বরকে দেখার জন্য শুধু চোখ নয়, বিশ্বাস এবং অনুভূতির প্রয়োজন হয়।" এই কথা অরুণাভকে মুগ্ধ করেছিল, তবে তা তাঁকে সন্তুষ্ট করতে পারেনি।

বিশ্ববিদ্যালয়ে দর্শনশাস্ত্রে পড়াশোনা করে তিনি আরও বেশি প্রশ্ন করতে শুরু করেন। ধর্মগ্রন্থ, দার্শনিক তত্ত্ব এবং বৈজ্ঞানিক গবেষণা—সবই তাঁর নিত্যসঙ্গী হয়ে উঠেছিল।

একদিন অধ্যাপক অরুণাভ একটি প্রাচীন পাণ্ডুলিপি পান। এটি ছিল সংস্কৃত ভাষায় লেখা এবং দাবি করা হয়েছিল যে এতে সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব নিয়ে অমূল্য ব্যাখ্যা দেওয়া রয়েছে। পাণ্ডুলিপিতে লেখা ছিল:

"যা অদৃশ্য, তাই সত্য। যা দৃশ্যমান, তা কেবলমাত্র রূপ।"

পাণ্ডুলিপির লেখাগুলো পড়তে গিয়ে তিনি লক্ষ্য করেন, এতে মানব জীবনের জটিলতা, সৌন্দর্য এবং মহাবিশ্বের সূক্ষ্ম পরিকল্পনার কথা বলা হয়েছে। সেখানে লেখা ছিল, "এই জগৎ যদি একক সুসজ্জিত নিয়মে চলে, তবে সেই নিয়মের সৃষ্টিকর্তা অবশ্যই আছেন।"

অরুণাভ এই তত্ত্ব নিয়ে গবেষণারত ছিলেন। তবে তাঁর মন তৃষ্ণার্ত ছিল কোনো বাস্তব অভিজ্ঞতার জন্য।

একদিন, অরুণাভ একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনে যোগ দিতে দুবাই যান। সম্মেলনের শেষে তিনি সাহারা মরুভূমিতে বিশ্রাম নিতে যান। সেখানে তাঁর পরিচয় হয় মিরাজ নামে এক বেদুইন তরুণের সাথে। মিরাজ ছিল এক অবিশ্বাস্য বুদ্ধিমান যুবক, যার বিশ্বাস ছিল যে ঈশ্বরকে অনুভব করা যায়, তবে দেখা যায় না।

মিরাজ বলল, "অধ্যাপক, আপনি কি জানেন, মরুভূমিতে যে প্রতিটি নকশা বাতাস তৈরি করে, সেটি প্রকৃতির এক অলৌকিক খেলা। আপনি কি কখনো এই সৌন্দর্যে ঈশ্বরের অস্তিত্ব অনুভব করেছেন?"

অরুণাভ উত্তর দিলেন, "এটি তো প্রকৃতির স্বাভাবিক কাজ। এতে ঈশ্বরের কী প্রমাণ আছে?"

মিরাজ এক মুঠো বালু হাতে তুলে বলল, "যে বালুর প্রতিটি কণা একেকটি ইতিহাস বহন করে, সেই ইতিহাসের স্রষ্টা কি কেবল প্রকৃতি হতে পারে?"

অরুণাভ কিছুক্ষণ চুপ করে থাকেন। এই প্রশ্ন তাঁর মনের গভীরে গিয়ে আঘাত করে।

ফিরে এসে অরুণাভ বিভিন্ন ধর্মীয় স্থাপনা ঘুরে দেখতে শুরু করলেন। কালীঘাটের মন্দিরে ভক্তদের প্রার্থনার আবেগ, সেন্ট পল ক্যাথেড্রালে গির্জার স্তবগান, এবং বাইতুল মোকাররম মসজিদে মুসল্লিদের একাগ্রতা—সবই তাঁকে মুগ্ধ করেছিল।

একবার এক যোগগুরু তাঁকে বললেন, "অধ্যাপক, ঈশ্বরকে দেখার জন্য মনকে স্থির করতে হয়। আপনি নিজে ধ্যান করে দেখুন। আপনার প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবেন।"

অরুণাভ ধ্যান শুরু করলেন। ধীরে ধীরে তিনি অনুভব করলেন এক অদ্ভুত শান্তি। তাঁর মনে হতে লাগল, হয়তো কোনো এক অদৃশ্য শক্তি সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করছে।

তাঁর এক ঘনিষ্ঠ বন্ধু, অধ্যাপক জাহিদ হোসেন, ছিলেন পদার্থবিদ। জাহিদের সাথে এই প্রসঙ্গে কথা বলতেই তিনি বললেন, "অরুণ, মহাবিশ্বের সূক্ষ্ম নির্ধারণ (fine-tuning) বিষয়টি কি তোমার কাছে প্রমাণ নয়? অভিকর্ষ বল যদি এক শতাংশও বেশি হতো, তাহলে জীবন থাকত না। এই সূক্ষ্মতা কি কেবল কাকতালীয়?"

অরুণাভ প্রশ্ন করলেন, "তাহলে কি তুমি সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্বে বিশ্বাস কর?"

জাহিদ হেসে বললেন, "আমি বলছি না যে সৃষ্টিকর্তা আছেন। তবে কিছু তো অবশ্যই আছে যা এই সূক্ষ্মতা তৈরি করেছে।"

একদিন, অরুণাভ এক বৃদ্ধা রোগীকে দেখতে যান। তিনি ক্যান্সারে আক্রান্ত ছিলেন এবং জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে ছিলেন। বৃদ্ধা তাঁকে বললেন, "অধ্যাপক, আমি জানি ঈশ্বর আছেন। আমি যখনই প্রার্থনা করি, আমি তাঁর উপস্থিতি অনুভব করি।"

অরুণাভ জিজ্ঞেস করলেন, "আপনি কিভাবে এতটা নিশ্চিত?"

বৃদ্ধা মুচকি হেসে বললেন, "বিশ্বাস থেকেই এই নিশ্চয়তা আসে। এটা অনুভব করতে হয়, অধ্যাপক। যুক্তি দিয়ে সবকিছু পাওয়া যায় না।"

অরুণাভ ধীরে ধীরে উপলব্ধি করলেন যে সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব একটি ব্যক্তিগত অনুভূতির বিষয়। এটা যুক্তি দিয়ে প্রমাণ করা যায় না। তিনি পাণ্ডুলিপির শেষ লাইনটি বারবার পড়লেন:

"ঈশ্বরকে প্রমাণের চেয়ে ঈশ্বরকে খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা বেশি গুরুত্বপূর্ণ।"

অবশেষে, এক গভীর রাতে তিনি আকাশের দিকে তাকিয়ে ফিসফিস করে বললেন, "তুমি যদি থাকো, তবে আমাকে জানার ক্ষমতা দাও।"

তাঁর মনে এক অদ্ভুত প্রশান্তি নেমে এলো। হয়তো এটি ঈশ্বরের উত্তর, অথবা কেবল তাঁর নিজের আত্মার অনুভূতি। কিন্তু এই উত্তরই তাঁর কাছে যথেষ্ট ছিল।




রেজুয়ান আহম্মেদ: কলামিস্ট, বিশ্লেষক; সম্পাদক অর্থনীতি ডটকম
img

ইহুদি ধর্মশাস্ত্র অনুযায়ী ইসরায়েলের আয়ু আর দুবছর

প্রকাশিত :  ১১:৪৯, ১৩ এপ্রিল ২০২৫

ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর নির্বিচার গণহত্যার প্রতিবাদে রাস্তায় নেমেছেন সারা বিশ্বের লাখ লাখ মানুষ। ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা এবং গাজায় হামলা বন্ধের দাবিতে প্রতিদিন বিক্ষোভ করছেন তারা। এমনকি এসব বিক্ষোভ থেকে অনেকে ইসরায়েলের ধ্বংস চাইছেন। এরই মাঝে ইহুদিদের ধর্মীয় ন্যায়শাস্ত্রের একটি ভবিষ্যদ্বাণী নিয়ে ইসরায়েলিদের মধ্যে তৈরি হয়েছে আতঙ্ক।

ইহুদিদের ধর্মীয় ন্যায়শাস্ত্র তালমুদ-এ এই ভবিষ্যদ্বাণীটি ‘লা’নাতুল আকদিস সামিন’ বা ‘অষ্টম দশকের অভিশাপ’ হিসেবে পরিচিত। ওই ভবিষ্যদ্বাণীতে বলা হয়েছে, কোনো ইহুদি রাষ্ট্র আট দশকের বেশি টিকবে না। ভেঙে যাবে। আর সে ভাঙন হবে নিজেদের মধ্যকার জাতি-উপজাতির কোন্দলে। ভবিষ্যদ্বাণী অনুযায়ী ইসরায়েলের আয়ু আর দুবছর অবশিষ্ট আছে।

গাজায় ইসরায়েলের চলমান নৃশংসতার মধ্যে সম্প্রতি ইহুদিদের ধর্মীয় ন্যায়শাস্ত্রের ভবিষ্যদ্বাণীটি ব্যাপকভাবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। ভবিষ্যদ্বাণীটি নিয়ে ইসরায়েলের ইহুদিদের মধ্যেও তৈরি হয়েছে আতঙ্ক। অনেকে বলছেন, আগামী দুই-তিন বছরের মধ্যে ইসরায়েল রাষ্ট্রের অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যেতে পারে এই আতঙ্ক ভর করেছে নেতানিয়াহুকেও। এজন্য তিনি ইসরায়েলের জন্য হুমকি হতে পারে এমন সব কিছু ধ্বংস করে টিকে থাকতে মরিয়া।

গেল দুই হাজার বছরে বিভিন্ন স্থানে ছোট-বড় সার্বভৌম অনেক ইহুদি রাজ্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এর মধ্যে কিং ডেভিডের অর্থাৎ ইসলাম ধর্মের দাউদ নবীর রাজত্ব এবং হাসমোনিয়ান রাজত্ব ছাড়া আজ পর্যন্ত কোনো ‘ইহুদি রাজ্য’ ৮০ বছরের বেশি টেকেনি। তবে কিং ডেভিডের রাজত্ব ও হাসমোনিয়ান রাজত্ব ৮০ বছরের বেশি টিকে থাকলেও এই দুই রাজত্বের ভাঙন ধরেছিল ৮০ বছরের মাথায়। এরপর দুটো রাজত্বই টুকরো টুকরো হয়ে গিয়েছিল।

আজকের আধুনিক ইসরায়েলের জন্ম হয়েছিল ১৯৪৮ সালের ১৪ মে। ২০২৮ সালে ৮০ বছর পূরণ হবে তাদের। অর্থাৎ হাতে সময় আছে মাত্র ২ বছর। তালমুদের ভবিষ্যদ্বাণী সত্য হলে আর দুই-তিন বছরের মধ্যেই ইসরায়েল রাষ্ট্রটি ভেঙে পড়বে।

যেহেতু ইসরায়েলের ইহুদি সম্প্রদায়ের লোকজন তাদের ধর্মগ্রন্থ তাওরাতে বিশ্বাসী ও তালমুদের আদেশ-নিষেধ সংক্রান্ত প্রত্যাদেশের অনুসারী, সেহেতু ইসরায়েলের বাসিন্দাদের একটি বিরাট অংশ ‘অষ্টম দশকের অভিশাপ’ নিয়ে নিজেদের মধ্যে সিরিয়াস আলাপ-আলোচনা করে থাকেন। অনেক ইহুদি ইসরায়েলের ওপর কোনো দুর্যোগ নেমে এলে কীভাবে সেখান থেকে সরে যাবেন, তা নিয়ে আলাপ-আলোচনা করছেন।

তারা এই ন্যাচারাল ফেনোমেনন বা প্রাকৃতিক প্রপঞ্চ অমোঘ নিয়মে নেমে আসতে পারে বলে বিশ্বাস করেন। এজন্য ইসরায়েল তাদের জন্য হুমকি এমন সব কিছু ধ্বংস করে টিকে থাকতে মরিয়া। বিশ্লেষকদের ধারণা- ইসরায়েল গাজা, লেবানন, সিরিয়া, জর্ডান, ইয়েমেনসহ সব জায়গায় অনেকটা আতঙ্কিত হয়ে হামলা চালাচ্ছে, যেন তারা ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচতে পারে। তবে তারা ন্যাচারাল ফেনোমেনন বা আল্লাহর পক্ষ থেকে নেমে আসা কোনো বিপদ থেকে নিজেদের রক্ষা করতে পারবে কি না তা নিয়ে শঙ্কিত।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ‘লা’নাতুল আকদিস সামিন’ অর্থাৎ ইহুদি রাষ্ট্র ভেঙে যাওয়ার সেই ভবিষ্যদ্বাণীটি অনেক বেশি আলোচিত হচ্ছে। এমনকি বছর দুই আগে ইসরায়েলের সাবেক প্রধানমন্ত্রী এহুদ বারাকও ইসরায়েল রাষ্ট্রের অস্তিত্ব বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন।