img

শেষ ভরসা!

প্রকাশিত :  ১৮:৩৫, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪

শেষ ভরসা!

রেজুয়ান আহম্মেদ

রোদঝলমলে এক দুপুর। রাস্তায় মানুষের ভিড়, কিন্তু কারো মুখেই সুখের ছাপ নেই। পেটের ক্ষুধা, দ্রব্যমূল্যের চাপ আর অজানা ভবিষ্যতের ভয় যেন সবাইকে চেপে ধরেছে। সেই ভিড়ের মধ্যেই দাঁড়িয়ে ছিল রাজু। কাজ নেই, পকেটে মাত্র দশ টাকা।

বাজারের গলিতে ঢুকে সে দেখল, আলুর দাম প্রতি কেজি আশি টাকা। আর ডালের দাম শুনে তো মাথা ঘুরে পড়ার উপক্রম—একশ চল্লিশ টাকা!

“ভাই, একটু দাম কমান। না হলে নিতে পারব না,” দোকানদারকে অনুরোধ করল সে।

দোকানদার কটমট করে তাকিয়ে বলল, “সবকিছুই তো বাড়তি। কমাব কীভাবে? না নিতে পারলে বাড়ি যান।”

হতাশ রাজু কাঁচাবাজার ছেড়ে বেরিয়ে এল। ছোট বোন মিতুর জন্য কিছু কিনতে হবে, কিন্তু কী করবে? তার মনে পড়ল বাবার মুখ। বাবা বলতেন, “রাজু, নেতা হতে হলে ক্ষমতাবান হওয়া লাগে না, লাগে হৃদয়বান হওয়া। আগে দেশকে ভালোবাসো, তারপর জনগণকে। তাহলেই তুমি সবার কাছে সম্মান পাবে।”

কিন্তু আজকের দিন? নেতারা সবাই নিজেদের ক্ষমতা ধরে রাখতে ব্যস্ত। মানুষ যে ক্ষুধার জ্বালায় পুড়ছে, তা দেখার সময় তাদের নেই। রাজুর মনে হলো, বাবার সেই কথা এখনো বাতাসে ভাসছে, কিন্তু বাস্তবে তার কোনো অস্তিত্ব নেই।

সন্ধ্যায় রাজু বাড়ি ফিরল। ঘরে ঢুকেই দেখল, ছোট বোন মিতু চুপচাপ বসে আছে। তার সামনে একটি প্লেটে ভাত আর পাশে লবণের কৌটা। রাজু বুঝতে পারল, আজও তাদের রান্নাঘরে কোনো তরকারি নেই।

“ভাইয়া, তুমি খেয়ে নাও। আমি খেয়ে নিয়েছি,” বলল মিতু।

রাজুর বুক ভেঙে গেল। চুপচাপ জানালার ধারে গিয়ে দাঁড়াল। চোখের সামনে অন্ধকার নেমে এল, কিন্তু মন তার অতীতে চলে গেল।

রাজুর বাবা ছিলেন গ্রামের একজন শিক্ষক। গ্রামের সবাই তাকে সম্মান করত। রাজুর শৈশব ছিল বাবার সততার জন্য গর্বে ভরা। কিন্তু বাবা মারা যাওয়ার পর যেন পরিবারটি সমাজের চোখ থেকে হারিয়ে গেল। রাজু বুঝতে পারল, সমাজে টিকে থাকতে হলে নিজের লড়াই নিজেকেই করতে হবে।

সেই রাতে রাজু ঘুমাতে পারল না। বারবার বাবার কথা আর মিতুর মুখ মনে পড়ছিল। হঠাৎ তার মনে একটি ভাবনা এল। যদি এমন একজন নেতা থাকত, যে শুধু ক্ষমতার জন্য নয়, বরং মানুষের জন্য কাজ করতে চায়? সেই ভাবনা থেকেই রাজু লিখতে শুরু করল। গল্পের নাম দিল “শেষ ভরসা”।

গল্পের কেন্দ্রবিন্দুতে একজন শিক্ষক। গ্রামের মানুষ যখন দ্রব্যমূল্যের চাপে দিশাহারা, তখন সেই শিক্ষক নিজেই উদ্যোগ নিলেন। এলাকার যুবকদের নিয়ে শুরু করলেন কৃষিকাজ। তিনি বললেন, “নিজেদের খাবার নিজেরাই উৎপাদন করব। কেউ আমাদের বাঁচাতে আসবে না। আমাদের নিজেদেরই বাঁচতে হবে।”

কিন্তু তখন এল বড় প্রশ্ন। এলাকার নেতারা এসে বলল, “সরকারের সাহায্য নিন। নিজেরা এত কষ্ট করছেন কেন?”

শিক্ষক হেসে বললেন, “সরকার যদি দায়িত্ব নিতে পারত, তবে তো আমাদের এই দশা হতো না।”

রাজুর লেখা গল্পটি স্থানীয় পত্রিকায় ছাপা হলে গ্রামের সবাই তা পড়ল। মানুষের মনে নতুন আশা জাগল। গল্পের সেই শিক্ষকের মতো অনেকেই বাস্তবে কাজ শুরু করল।

কিন্তু সরকার চুপ করে বসে থাকেনি। তারা গল্পটিকে “বিদ্রোহী লেখা” বলে ঘোষণা করল। রাজুকে ধরতে পুলিশ পাঠানো হলো। কিন্তু ততদিনে রাজু গ্রামে গ্রামে ঘুরে এক নতুন আন্দোলনের সূচনা করে ফেলেছে।

“আমরা আর অপেক্ষা করব না। নিজেরাই নিজের দেশের দায়িত্ব নেব,” বলল রাজু। তার কথায় যুবক, বৃদ্ধ এমনকি নারীরাও এগিয়ে এল।

ধীরে ধীরে রাজুর এই আন্দোলন সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ল। মানুষ বুঝতে পারল, একটি দেশকে বদলাতে হলে সৎ নেতৃত্বের প্রয়োজন। শুধু ক্ষমতার জন্য নয়, দেশের জন্য নিবেদিত একজন নেতা চাই।

একদিন, এক বৃদ্ধ এসে রাজুর হাতে একটি চিঠি দিয়ে গেলেন। চিঠিতে লেখা ছিল:

“তোমার গল্প আমাদের জীবন বদলে দিয়েছে। তুমি শুধু গল্প লিখে থেমে থেকো না। আমাদের নেতা হয়ে যাও। আমরা তোমার সাথে আছি।”

রাজু প্রথমে দ্বিধায় পড়ল। সে কি সত্যিই এই দায়িত্ব নিতে পারবে? কিন্তু মিতুর মুখ মনে পড়তেই সে সিদ্ধান্ত নিল।

রাজু একটি নতুন দলের ঘোষণা দিল। দলের নাম রাখল “মানুষের জন্য মানুষ”। এই দলে কোনো রাজনৈতিক উচ্চাভিলাষ ছিল না। ছিল শুধু দেশের জন্য কাজ করার ইচ্ছা।

দেশের মানুষ রাজুকে গ্রহণ করল। ধীরে ধীরে পরিস্থিতি বদলাতে শুরু করল। দ্রব্যমূল্যের চাপ কমল। যুবকরা কর্মসংস্থানে যুক্ত হলো। আর রাজু তার বাবার কথা মেনে একজন সত্যিকারের হৃদয়বান নেতা হয়ে উঠল।

পাঁচ বছর পর, দেশের এক নামকরা সাংবাদিক একটি প্রতিবেদনে লিখলেন:

“আমাদের দেশে একসময় মানুষ হতাশায় ডুবে ছিল। কিন্তু একজন রাজু আমাদের দেখিয়েছে, প্রকৃত নেতা কীভাবে মানুষকে অনুপ্রাণিত করে। ক্ষমতাবান হওয়া বড় কথা নয়, মানুষের জন্য নিবেদিত হওয়াই আসল।”

রাজুর নেতৃত্বে দেশ ধীরে ধীরে উন্নতির দিকে এগিয়ে যেতে লাগল। তার জন্য দেশের মানুষ তাকে “শেষ ভরসা” বলে ডাকতে শুরু করল।

গল্পটি এখানেই শেষ নয়। কারণ প্রকৃত পরিবর্তন শুরু হয় তখনই, যখন মানুষ নিজেদের মধ্যে পরিবর্তনের আগুন জ্বালাতে পারে।

“ক্ষমতাবান নয়, দরকার একজন প্রকৃত হৃদয়বান নেতা। কারণ দেশটা ক্ষমতার নয়, মানুষের।”

img

নজরুল-চিন্তা ও আগামীর বাংলাদেশ

প্রকাশিত :  ১৯:০৪, ০৪ জুলাই ২০২৫

জয়দ্বীপ রায়

আমি মাঝে মাঝে ভাবি—আজ যদি কবি নজরুল ইসলাম জীবিত থাকতেন, তবে তিনি কী করতেন? যদিও এই প্রশ্নটি স্থান, কাল ও পাত্রের সূচকগুলোকে বিবেচনায় না নিয়েই করা হচ্ছে, তারপরও কিছু আকাঙ্ক্ষা মনের গভীর থেকে উঠে আসে, যা প্রকৃতি প্রদত্ত কিছু সত্য উপলব্ধির ফসল।

আমার মতে, এটি একটি যুক্তিপূর্ণ বৈজ্ঞানিক মতও বটে যে নজরুল ইসলাম, একজন ধর্মপরায়ণ পরিবারের সন্তান হয়েও ধর্মের মূল উদ্দেশ্য—মানবকল্যাণ—উপলব্ধি করেছেন জ্ঞান, যুক্তি ও ঈশ্বর-চেতনার মাধ্যমে। তাইতো তিনি লিখেছেন:

“খেলিছ এ বিশ্ব লয়ে বিরাট শিশু আনমনে,

প্রলয়-সৃষ্টি তব পুতুল খেলা নিরজনে, প্রভু নিরজনে...”

এই উপলব্ধি কোথা থেকে এসেছে? আমার ধারণা, ঈশ্বরের করুণা ব্যতিরেকে এমন চিন্তা সম্ভব নয়। তবে এটাও আমার বিশ্বাস—সারাক্ষণ ঈশ্বরচিন্তা করলেও তাঁর করুণা সবসময় নাও আসতে পারে। এখানে গ্রন্থগুলোতে ঈশ্বর যেখানে মানুষের মানবতাকে মূল্য দিয়েছেন, সেই ধর্মীয় উপলব্ধির গভীরতাই নজরুলকে অনন্য করে তোলে।

নজরুল এক অনন্য মাত্রায় ঈশ্বর ও মানবতার সম্পর্ক গড়ে তুলেছেন। তিনি সব ধর্মের প্রতি সম্মান রেখেছেন এবং অসাম্প্রদায়িক চেতনাকে নিজের জীবনে ধারণ করেছেন। তাঁর ধর্মনিরপেক্ষতা ধর্মহীনতা নয়, বরং অসীম ঈশ্বরের প্রতি তাঁর বিনীত নিবেদন ও আনুগত্য, যেখানে তিনি সকল ধর্মের ঈশ্বরের মধ্যেই খুঁজে পেয়েছেন। বাংলা সাহিত্যে ইসলামি ধর্মীয় সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে তিনি যেভাবে তুলে ধরেছেন, তা একজন অমুসলিম পাঠকের মনেও ইসলামের প্রতি শ্রদ্ধা ও সংবেদনশীলতা জাগিয়ে তুলতে সক্ষম—যেমনটি দুই বাংলাতেই আমাদের বাঙালি মননে অনেকের মধ্যেই ঘটেছে।

নজরুলের এই সাহিত্য-শক্তির কারণেই তাঁর ধর্ম, নানান সংস্কৃতি ও বিশ্বময় বৈচিত্র্যের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ সৃষ্টি করে। তিনি এতটাই বৈচিত্র্যে আকৃষ্ট সাহিত্যিক ছিলেন, যিনি সারা পৃথিবীর বৈচিত্র্যকে তাঁর সৃষ্টিতে ও জীবনবোধে এক বৈশ্বিক রূপ দিয়েছেন। যেখানে ছিল না কোনো গণ্ডি ও সংকীর্ণতা। একজন কবি এত দারিদ্র্য ও সীমাবদ্ধতার মাঝেও কোনো অভিযোগ ছাড়াই কী রকম মুক্তমন নিয়ে নিজেকে বিকশিত করেছিলেন, আর বাঙালি মননকে অসাম্প্রদায়িক চেতনায় শুদ্ধ করেছিলেন।

বাংলা সাহিত্যে নজরুলের মতো করে শ্যামাসঙ্গীত, ভজন বা সনাতন ধর্মীয় গানে মৌলিক অবদান আর কেউ রাখেননি। এই বৈচিত্র্যই তাঁকে তুলনার ঊর্ধ্বে স্থাপন করে। সাহিত্যের প্রতিটি শাখা স্বতন্ত্র—এখানে কারও সাথে কারও তুলনা হয় না, কারণ এই ক্ষেত্রটি বিশাল, যার কোনো কোলকিনারা নেই। এখানে নানান সাহিত্য উপাদান বা কনটেন্ট উপস্থাপনাই গুরুত্বপূর্ণ। শিল্প ও সাহিত্যের বিজ্ঞানের নিয়মের বিচারে একেক জনের সৃষ্টি একেক জনকে অনন্য সাধারণ হিসেবে স্থান করে দিয়েছে।

উপনিবেশিক রাজনীতির সংকীর্ণ প্রয়োজনে যখন হিন্দু-মুসলমান বিভাজন সমাজে প্রকট হয়ে উঠল—যা মুঘল আমলেও কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া প্রায় ছিলই না—তখন নজরুল হয়ে উঠলেন জাতির বিবেক। তিনি শুধু কবিই ছিলেন না, ছিলেন সাম্যবাদী চিন্তাবিদ, রাজনৈতিক ও সমাজকর্মী। বিপ্লবী রাজনীতিবিদদের সাংস্কৃতিক মানের প্রশ্নে তিনি তাদেরকে তাঁর সাহিত্যরস দিয়ে পরিচালিত করেছেন, শক্তি জুগিয়েছেন।

সম্প্রতি নজরুলের জন্মবার্ষিকীতে বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের কিছু সমসাময়িক রাজনৈতিক নেতা তাঁকে স্মরণ করে বাণী দিয়েছেন। এটি প্রশংসনীয়। কিন্তু অবাক হয়ে লক্ষ্য করলাম—সাম্য, বিদ্রোহ, শোষণবিরোধিতা ইত্যাদি—সব শব্দই ব্যবহৃত হয়েছে, শুধু “অসাম্প্রদায়িকতা” শব্দটি নেই। কেন? এই শব্দ ব্যবহার করলে কি বেশিরভাগ সাম্প্রদায়িকতায় আচ্ছন্ন মানুষগুলোর বিশ্বাসে আঘাত আসতে পারে? এই বিশ্বাস কি তার ধর্মীয় চেতনার সাথে সাংঘর্ষিক? না তার অজ্ঞানতা বা না বোঝার ফলে বেশিরভাগ মানুষের মধ্যে আজ সংক্রামিত হয়েছে? আমার মতে, এইসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে কবি নজরুলকে বোঝা খুবই গুরুত্ব বহন করবে।

অসাম্প্রদায়িকতা কি সাম্যের অংশ নয়? অন্য ধর্ম ও জাতিগোষ্ঠীর প্রতি সম্মান, নারীর সমমর্যাদা, ধর্মভিত্তিক বৈষম্য রোধ—এগুলো কি সাম্যের পরিপূরক নয়? তাহলে নজরুলের সাম্যের দর্শনে এই বিষয়গুলো কি অনুপস্থিত থাকবে, যারা এই শব্দগুলো ব্যবহার করছেন?

আমরা সবাই জানি, নজরুল ভারতের কবি হলেও বাংলাদেশ তাঁর শ্রেষ্ঠ উত্তরাধিকার পেয়েছে। এই পাওয়া আমাদের জন্য বাড়তি পাওয়া, কিন্তু ভারতের অসাম্প্রদায়িক বুদ্ধিবৃত্তিসম্পন্ন মানুষদের ক্ষোভ আছে এই বিষয়ে। এই অমূল্য রত্নকে যদি শুধু রাজনৈতিক প্রয়োজনে ব্যবহার করি—সার্বজনীন দৃষ্টিভঙ্গি বাদ দিয়ে কেবল দলীয় ব্যাখ্যায় ব্যাখ্যাত করি—তাহলে আমরা আসলে কী শিখছি? ভবিষ্যৎ নেতৃত্বকেও কি এমনটাই শেখাব?

এই প্রশ্নগুলোর সাথে ভবিষ্যতের গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক ও জাতিসত্তাভিত্তিক বাংলাদেশের ভাগ্য জড়িত। তথাকথিত \"বহুত্ববাদ\"ও এই প্রশ্নগুলোর সাথেই সম্পর্কিত।

বহুত্ববাদ মানে শুধু কারও ওপর ঘটে যাওয়া অন্যায় শুধরে দেওয়া নয়—বরং সকল মত, জাতি ও ধর্মের সহাবস্থান নিশ্চিত করা। নিজের বিশ্বাসকে অন্যের ওপর চাপিয়ে না দেওয়ার সহিষ্ণুতা। এই বহুত্ববাদই বাংলার হাজার বছরের ঐতিহ্য। এই ভূখণ্ডে হিন্দু, বৌদ্ধ, মুসলিম, খ্রিস্টান—সবাই যুগে যুগে ধর্ম প্রচার করেছেন, আবার সহঅবস্থানেরও দৃষ্টান্ত রেখেছেন।

সভ্যতা এগিয়ে যাওয়ার কথা বলে, পেছনে ফিরে যাওয়াকে কখনো উৎসাহ দেয় না। তাই বাঙালির প্রকৃত পরিচয়—বৈচিত্র্য-বিশ্বাসী ও পরমত সহিষ্ণু জাতি—যদি জোর করে চেপে ধরা হয়, তবে প্রকৃতি একদিন এর প্রতিক্রিয়া দেবে—যা আমাদের জন্য কল্যাণকর হবে না।

এটাই সামাজিক বাস্তবতা।

গণতন্ত্রে বিশ্বাস যদি সত্যিই কেউ করে, তাহলে তা কখনোই সংখ্যালঘু জাতিগোষ্ঠী বা ধর্মীয় সহিষ্ণুতাকে অবজ্ঞা করে প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়।

উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, সুইজারল্যান্ড মাত্র কয়েক হাজার ইতালিয়ান ভাষাভাষীর জন্য রোমানশ ভাষাকে জাতীয় ভাষার মর্যাদা দিয়েছে। আমরা ইউরোপে থাকি, কিন্তু ইউরোপ থেকে কী শিখছি? দেশে কী ফিরিয়ে নিচ্ছি? নজরুলের কথা বলছি, কিন্তু তাঁকে বুঝে? না না বুঝে?

যুক্তরাজ্য থেকে আইনে ডিগ্রি নিয়ে ব্যারিস্টার হয়ে অনেকেই দেশে রাজনীতি করছেন বা করবেন, কিন্তু দেশে গিয়ে বিদেশের সোনা লোহা হয়ে যায় কেন? এটা সামাজিক বাস্তবতার কাছে আত্মসমর্পণ করে অস্বীকার করা নয়, যুক্তির কষ্ঠিপাথরে থেকেও নিজের সাথে প্রতারণা করে অবিশ্বাস করা।

আগামী দিনে যারা রাজনীতি করবেন, তাদের নৈতিকতাবোধ কি বিবেচনায় আসবে না? যদি না আসে, তাহলে কি আমরা একই বৃত্তে ঘোরপাক খাবো? আগাবো না?

এই প্রশ্নগুলো আজকের বিশ্বায়িত রাজনীতি, অর্থনীতি ও সংস্কৃতির যুগে বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।


জয়দ্বীপ রায়: রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও সংস্কৃতি কর্মী, লন্ডন।