img

উচ্চস্বরে ওয়াজ, ধর্ম প্রচার নাকি সমাজে অশান্তি?

প্রকাশিত :  ০৫:৪১, ১৭ ডিসেম্বর ২০২৪
সর্বশেষ আপডেট: ০৬:৩৬, ১৭ ডিসেম্বর ২০২৪

উচ্চস্বরে ওয়াজ, ধর্ম প্রচার নাকি সমাজে অশান্তি?

রেজুয়ান আহম্মেদ

ইসলাম শান্তির ধর্ম। শান্তি ও সৌহার্দ্যের বার্তা নিয়ে পবিত্র কোরআন এবং রাসুল (সা.)-এর সুন্নাহ আমাদের সামনে আদর্শ জীবনব্যবস্থার দিকনির্দেশনা দেয়। ইসলামের মূলনীতি হলো মানবিক কল্যাণ নিশ্চিত করা এবং সমাজে সম্প্রীতি বজায় রাখা। কিন্তু বর্তমান সময়ে লক্ষ্য করা যায়, ওয়াজ মাহফিলের নামে অতিরিক্ত উচ্চস্বরে মাইক ব্যবহারের ফলে জনজীবনে এক প্রকার বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হচ্ছে। এটি যেমন ধর্মের মূল আদর্শের পরিপন্থী, তেমনি সামাজিক ও নৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে অগ্রহণযোগ্য।

পবিত্র কোরআনে সুস্পষ্টভাবে বলা হয়েছে:

“তুমি তোমার রবের পথে মানুষকে আহ্বান করো প্রজ্ঞার সাথে এবং উত্তম উপদেশের মাধ্যমে।” (সূরা নাহল: ১২৫)

এখানে "প্রজ্ঞা" এবং "উত্তম উপদেশ" শব্দ দুটির মাধ্যমে বোঝানো হয়েছে, ধর্ম প্রচার এমনভাবে করতে হবে যেন তা মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য হয় এবং কারো ওপর জোর বা অসুবিধা সৃষ্টি না হয়। ইসলাম শান্তির পথে আহ্বান করতে বলেছে, কিন্তু সেটি অন্যের কষ্টের কারণ হলে তা ইসলামি শিক্ষার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।

রাসুলুল্লাহ (সা.) কখনো ধর্ম প্রচারের ক্ষেত্রে জোর-জবরদস্তি বা কোলাহল সৃষ্টি করেননি। বরং তিনি তার আচরণ ও মৃদুভাষী উপদেশের মাধ্যমে মানুষের হৃদয়ে আল্লাহর বাণী পৌঁছে দিয়েছেন। সহীহ বুখারির একটি হাদিসে এসেছে:

“নিঃসন্দেহে আল্লাহ মৃদুভাষী এবং নম্র মানুষকে পছন্দ করেন, আর কঠোর, উগ্র এবং উচ্চস্বরে কথা বলা মানুষকে অপছন্দ করেন।”

এ থেকেই স্পষ্ট হয়, উচ্চস্বরে ওয়াজ বা বক্তৃতা দেওয়া রাসুল (সা.)-এর সুন্নাহর পরিপন্থী।

উচ্চ শব্দের নেতিবাচক প্রভাব:

বর্তমানে বিভিন্ন এলাকায় রাতভর উচ্চস্বরে মাইক বাজিয়ে ওয়াজ করা হয়, যা সমাজের অনেক শ্রেণির মানুষের জন্য কষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। বিশেষত তিনটি শ্রেণির মানুষের ওপর এটি মারাত্মক প্রভাব ফেলে:

১. শিশুদের মানসিক অবস্থা:

শিশুরা অত্যন্ত সংবেদনশীল। উচ্চ শব্দে তারা সহজেই আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়ে। এতে তাদের ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে, যা শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের ক্ষতির কারণ হতে পারে।

২. বয়স্ক ও অসুস্থ রোগী:

বয়স্ক ও অসুস্থ রোগীদের শরীর এমনিতেই দুর্বল। অতিরিক্ত শব্দ তাদের জন্য অস্বস্তিকর এবং রোগের তীব্রতা বাড়িয়ে দিতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে ঘুমের ব্যাঘাত তাদের শারীরিক অবস্থাকে আরও জটিল করে তোলে।

৩. গর্ভবতী মা ও নবজাতক:

গর্ভবতী মা এবং নবজাতকদের জন্য উচ্চ শব্দ মানসিক চাপ ও স্বাস্থ্যের ঝুঁকি তৈরি করে, যা দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতির কারণ হতে পারে।

ধর্ম প্রচারের প্রকৃত উদ্দেশ্য:

ইসলামে ধর্ম প্রচারের উদ্দেশ্য হলো আল্লাহর বার্তা মানুষের হৃদয়ে পৌঁছে দেওয়া। এটি হওয়া উচিত শান্তিপূর্ণ, বিনয়ী ও মানবিক পদ্ধতিতে। কিন্তু বর্তমান সময়ে দেখা যায়, অনেক বক্তা শুধুমাত্র নিজেকে জনপ্রিয় করার জন্য উচ্চস্বরে ওয়াজ করেন। কেউ কেউ এটিকে ব্যবসায় পরিণত করেছেন।

রাসুল (সা.) বলেছেন:

“যে ব্যক্তি দুনিয়ার অর্থ বা সম্মান অর্জনের জন্য ধর্ম প্রচার করে, তার জন্য জাহান্নামের শাস্তি অপেক্ষা করছে।” (সহীহ মুসলিম)

এ ধরনের প্রবণতা ইসলামি শিক্ষার পরিপন্থী এবং সমাজে অশান্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।


সমাধানের জন্য প্রস্তাবনা:

১. মৃদু ও বিনয়ী ভাষা:

ধর্ম প্রচার এমন ভাষায় করতে হবে, যা মানুষের হৃদয়ে প্রভাব ফেলবে এবং কাউকে কষ্ট না দেয়।

২. নীরব প্রচার:

কোরআনে বলা হয়েছে:

“নিশ্চয়ই আল্লাহ তাদের পছন্দ করেন যারা নীরবে ইবাদত করে এবং প্রচার করে।” (সূরা বাকারা)

৩. প্রযুক্তির সীমিত ব্যবহার:

মাইকের ব্যবহার পুরোপুরি নিষিদ্ধ না হলেও এর শব্দ নিয়ন্ত্রণ করা উচিত। আবাসিক এলাকায় ও রাতে উচ্চ শব্দে মাইক বাজানো বন্ধ করতে হবে।

৪. মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি:

ধর্ম প্রচারের সময় বক্তাদের বোঝা উচিত, তাদের শব্দ অন্যের অসুবিধার কারণ হতে পারে।

ইসলাম আমাদের শান্তি, সম্প্রীতি এবং মানবিকতায় উদ্বুদ্ধ করে। উচ্চস্বরে ওয়াজ মাহফিল করা কোনোভাবেই ইসলামি শিক্ষা ও রাসুল (সা.)-এর আদর্শের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। বরং এটি সমাজের দুর্বল, অসুস্থ ও শিশুদের কষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

ধর্ম প্রচার করতে হবে এমনভাবে, যেন মানুষ তা সহজে গ্রহণ করতে পারে। সেলিব্রেটি হওয়ার লোভ বা অর্থ উপার্জনের উদ্দেশ্যে নয়, বরং আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য শান্তিপূর্ণভাবে তার বার্তা পৌঁছে দেওয়াই একজন সত্যিকারের আলেমের দায়িত্ব।

আল্লাহ আমাদের সকলকে সঠিক পথে পরিচালিত করুন এবং ধর্ম প্রচারের নামে যেন কোনো বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি না হয়, সেই তাওফিক দান করুন। আমিন।




রেজুয়ান আহম্মেদ: কলামিস্ট, বিশ্লেষক; সম্পাদক অর্থনীতি ডটকম
img

ঢাকা সহ বিভিন্ন স্থানে দোল পূর্ণিমা পালিত

প্রকাশিত :  ১৭:২৬, ১৫ মার্চ ২০২৫
সর্বশেষ আপডেট: ১৮:২৭, ১৫ মার্চ ২০২৫

সংগ্রাম দত্ত: সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব দোল পূর্ণিমা বা হোলি উৎসব পালিত হয়েছে। বাংলাদেশে এই উৎসবটি ‘দোলযাত্রা’, ‘দোল পূর্ণিমা’ নামেও পরিচিত। 
দোলযাত্রা ও গৌর পূর্ণিমা উপলক্ষে শুক্রবার (১৪ মার্চ) রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে বিভিন্ন মন্দিরে পূজা, হোম যজ্ঞ, প্রসাদ বিতরণসহ বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা।
সারা দেশে সকাল থেকে শুরু হয়ে বিকাল পর্যন্ত এ উৎসব চলে। হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা পরস্পরকে আবির মাখিয়ে এ উৎসব উদযাপন করে। 
মহানগর সর্বজনীন পূজা কমিটির উদ্যোগে ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে দোল উৎসব ও কীর্তনের আয়োজন করা হয়েছে। সকালে পূজা ও কীর্তন শুরু হয়।
বৈষ্ণব বিশ্বাস অনুযায়ী, এ দিন শ্রীকৃষ্ণ বৃন্দাবনে রাধিকা এবং তার সখীদের সঙ্গে আবির খেলেছিলেন। সেই ঘটনা থেকেই দোল খেলার উৎপত্তি। এ কারণে দোলযাত্রার দিন এ মতের বিশ্বাসীরা রাধা-কৃষ্ণের বিগ্রহ আবিরে রাঙিয়ে দোলায় চড়িয়ে নগর কীর্তনে বের হন। এ সময় তারা রঙ খেলার আনন্দে মেতে ওঠেন।
বিশ্বের অনেক স্থানে উৎসবটি শ্রীকৃষ্ণের দোলযাত্রা নামে অধিক পরিচিত হলেও ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, মাদ্রাজ, উড়িষ্যা প্রভৃতি স্থানে দোল উৎসব এবং উত্তর, পশ্চিম ও মধ্য ভারত ও নেপালে ‘হোলি’ নামে পরিচিত। কোনও কোনও স্থানে এটিকে বসন্ত উৎসবও বলা হয়। পুষ্পরেণু ছিটিয়ে রাধা-কৃষ্ণ দোল উৎসব করতেন। সময়ের বিবর্তনে পুষ্পরেণুর জায়গায় এসেছে ‘আবির’।
রাজধানী ঢাকায় বিশেষ করে পুরান ঢাকার শাঁখারি বাজারে হোলি খেলার প্রচলন রয়েছে। ‘হোলি’ বা ‘দোলযাত্রা’ উৎসব উপলক্ষে এদিন নগরবাসী একে অন্যকে বর্ণিল রঙে রাঙিয়ে মাতোয়ারা হন। আবির খেলার উচ্ছ্বাসে মাতেন তরুণ-তরুণী থেকে শুরু করে ছোট-বড় সবাই। হোলির রঙে রঙিন হয়ে এই আনন্দে শামিল হন সব ধর্ম-বর্ণের মানুষ। তবে এবার রোজার কারণে কিছুটা ভাটা পড়ে । এদিকে এই উৎসবকে কেন্দ্র করে পুরান ঢাকার শাঁখারি বাজারে অন্যরকম আমেজ বিরাজ করে।
দুই দিনব্যাপী এই উৎসবের তিথি নির্ধারিত হয়েছে পূর্ণিমার সময়ে। এই পূর্ণিমা ‘দোল পূর্ণিমা’ নামে পরিচিত। দোল পূর্ণিমার সন্ধ্যায় ‘হোলিকা’ নামক অপদেবীর দহনের মাধ্যমে বিদায়ী বছরের যা কিছু খারাপ সেসব বিসর্জন করা হয়। এদিন পূজা হয় এবং হালকাভাবে আবির খেলা হয়ে থাকে। 
হোলি উৎসবে বন্ধুবান্ধব সবাই একে অপরকে রঙ মাখিয়ে রঙের খেলা উপভোগ করে। ।
বসন্তের রঙ যখন প্রকৃতিকে সাজিয়ে তোলে আপন মাধুরীতে, তখন হৃদয়ে দোলা লাগে। এই দিনে অন্তর থেকে দুষ্ট আত্মাকে বিতাড়িত করে শত্রুকে বিজয় করে। এদিন শক্তিতে নয়, রঙের সাজে শত্রুকে জয় করে।