img

সিরিয়ার নির্যাতিত মানুষের মুক্তি ও আমাদের শিক্ষা

প্রকাশিত :  ১৬:১৬, ১৯ ডিসেম্বর ২০২৪

সিরিয়ার নির্যাতিত মানুষের মুক্তি ও আমাদের শিক্ষা

|| শায়খ আব্দুল কাইয়ুম ||

সিরিয়ার প্রাচীন নাম হচ্ছে \'শাম\' । আল্লাহ তায়ালা এই শামকে \'আরদুল-মাহশার\' বলে ঘোষণা করেছেন। অর্থাৎ হাশরের ভূমি । হাদীস অনুযায়ী এখানেই হাশরের ময়দান হবে। তবে বর্তমান সিরিয়া নামক দেশটিই শুধু \'শাম\' ছিলো না। শাম ছিলো একটি বৃহত্তর অঞ্চল। ফিলিস্তিন, লেবানন, জর্দান, সিরিয়া সবগুলো দেশই শাম অঞ্চলের অন্তর্গত ছিলো।

রাসুল (সাঃ) বলেছেন, শাম দেশের মানুষ যদি নষ্ট হয়ে যায়, মুসলমানগণ যদি ইসলাম থেকে দুরে সরে যায়, তাহলে উম্মতের মধ্যে কোনো খায়ের বাকি থাকবে না। তিনি বলেছেন, এই শামের লোকদের মধ্যে যত দুর্বলতা থাকুক, তারা ইসলামকে ধরে রাখবে। তারা নিযার্তিত হলেও ইসলাম ছেড়ে দেবেনা। তাদেরকে আল্লাহ তায়ালা বিজয় দেবেন। সারা বিশ্বের মানুষ তাদেরকে বর্জন করলেও আল্লাহ তায়ালা পরীক্ষা নিরীক্ষার পর তাদের মুক্তি দেবেন।

রাসুল (সাঃ) হাদীসে বলেছেন, তোমরা পারলে শাম দেশে যাও। সেখানে বসবাস করো। আল্লাহ তায়ালা আমাকে গ্যারান্টি দিয়েছেন। যখন ফেতনা শুরু হয়ে যাবে। তখন ঈমান শাম দেশেই সীমাবদ্ধ থাকবে। কেয়ামত পর্যন্ত একদল মানুষ সেখানে দ্বীন ইসলামকে ধরে রাখার জন্য প্রাণপণ লড়াই করে যাবে । বাতিলের কাছে কখনো আত্মসমর্পন করবে না। আল্লাহ তায়ালা অবশেষে ভয়াবহ রক্তপাতের পর সিরিয়ার মানুষকে মুক্তি দিয়েছেন।

ইস্ট লন্ডন মসজিদের গত ১৩ ডিসেম্বর শুক্রবারের জুমার খুতবায় উপরোক্ত কথাগুলো বলেন মসজিদের ইমাম ও খতীব শায়খ আব্দুল কাইয়ুম। তিনি মুলত সিরিয়ায় গত সপ্তাহে প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের ক্ষমতাচ্যুতির মাধ্যমে সিরিয়ার মানুষকে আল্লাহ যে মুক্তি দান করেছেন সে বিষয়েই কথা বলছিলেন।

তিনি বলেন, তাহলে প্রশ্ন আসতে পারে আল্লাহ তায়ালা যে অঞ্চলের মানুষকে এতো মর্যাদা দিলেন, তাদের ওপর এতো নজিরবিহীন নির্যাতন কেন?  এতো মোবারক একটি জায়গা, এতো সম্মানিত মানুষ । তাহলে তাদের ওপর এতো অত্যাচার, এতো রক্তপাত কেন ঘটলো।

তিনি বলেন, আল্লাহ তায়ালা তো মুমিনদের বলেছেন, তাদেরকে তিনি পরীক্ষা করেই ছাড়বেন। অনেক পরীক্ষার কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন, নিশ্চয় আমি মানুষকে কিছু ভয়, ক্ষুধা, সম্পদ ও প্রাণহানির মাধ্যমে পরীক্ষা করবো। পরীক্ষার মধ্যে যারা পাশ করবে তাদের জন্য সুসংবাদ দিয়েছেন।

সিরিয়াবাসী ধর্য্য ধরে কয়েক যুগ ধরে পরীক্ষা মোকাবেলা করেছে। তারা যে এতো নির্যাতিত হওয়ার পর বিজয় পেলেন সেখান থেকে শিক্ষিনীয় কিছু বিষয় আছে। তা হচ্ছে, আল্লাহ তায়ালা অত্যাচারিকে কিছু সময় দেন। জালিমকে তিনি একেবারে ছেড়ে দেন না।

আল্লাহ তায়ালা বলেন, আমি জালিমকে রশি ঢিলা করে দিই । অবকাশ দেই। সুযোগ দিই। সে কি জানে আমার পরিকল্পনা কত শক্ত। তার রশি যে আমার হাতে ধরা আছে । তারা কত ষড়যন্ত্র করে। আর তাদের ষড়যন্ত্রের মোকাবেলায় আমিও পরিকল্পনা করতে থাকি। রাসুল (সাঃ) বলেছেন, আল্লাহ তায়ালার পরিকল্পনা অনেক শক্তিশালী। তাদের যদি এতো ষড়যন্ত্র থাকে, এতো পরিকল্পনা থাকে যে তারা একটি পাহাড়কে সরিয়ে দেবে, আপন জায়গা থাকতে দেবেনা। এমন শক্তিও যদিও মানুষ কোনোদিন যোগাড় করে তার পরেও আল্লাহ তায়ালার কাছে এটা কিছুই নয়। তিনি তা অদৃশ্য করে দিতে পারেন।

পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, তিনি এভাবে বহু জাতিকে ধ্বংস করেছেন। যারা জুলম চালিয়ে মানুষকে নির্যাতিত করেছে, তদেরকে নিঃশেষ করে দিয়েছেন। আল্লাহ তায়ালা এভাবে জালিমকে শাস্তি দেওয়ার কথা বলেছেন। আর মজলুমকে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, দেরিতে হলেও তোমাকে একদিন সাহায্য করবো। পবিত্র কুরআনেই তিনি এই প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

মানুষ যখন সুযোগ পায়,  যখন সে শক্তিশালী হয়, তখন দুর্বল মানুষকে জুলম করতে থাকে। জুলুমের বড় বড় ঘটনা থেকে যদি আমরা ব্যক্তিগত জীবনে ফিরে আসি, তাহলে দেখবো পারিবারিক জীবনেও আমরা জুলম করি। স্বামী জুলুম করছে স্ত্রীর উপর। স্ত্রী জুলুম চালাচ্ছে স্বামীর উপর। মানুষ ইনসাফ করে চায়না। সুযোগ থাকলে জুলম করবেই।

আমরা সিরিয়া থেকে শিক্ষা নিই। জুলুমের পরিনতি ভয়াবহ। আমরা যেন সবধরের জুলম নির্যাতন থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখি। কারো ওপর জুলম নির্যাতন না করি।
আমরা তওবা করি। ব্যক্তিগতভাবে যদি কারো ওপর জুলুম করি তাহলে তার কাছে ক্ষমা চাই। আল্লাহর কাছে মাফ চাই। ব্যক্তির কাছে মাফ চাই। জুলম থেকে সরে আসি। সবসময় ইনসাফের ওপর চলি। কেউ কারো হক নষ্ট করিনা। কেউ কারো উপর অত্যাচার করিনা। কেউ কারো জায়গা জমি দখল করিনা।

আল্লাহ তায়ালা যেন আমাদের জুলুম থেকে নিরাপদ রাখেন। আমিন।

img

ঢাকা সহ বিভিন্ন স্থানে দোল পূর্ণিমা পালিত

প্রকাশিত :  ১৭:২৬, ১৫ মার্চ ২০২৫
সর্বশেষ আপডেট: ১৮:২৭, ১৫ মার্চ ২০২৫

সংগ্রাম দত্ত: সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব দোল পূর্ণিমা বা হোলি উৎসব পালিত হয়েছে। বাংলাদেশে এই উৎসবটি ‘দোলযাত্রা’, ‘দোল পূর্ণিমা’ নামেও পরিচিত। 
দোলযাত্রা ও গৌর পূর্ণিমা উপলক্ষে শুক্রবার (১৪ মার্চ) রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে বিভিন্ন মন্দিরে পূজা, হোম যজ্ঞ, প্রসাদ বিতরণসহ বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা।
সারা দেশে সকাল থেকে শুরু হয়ে বিকাল পর্যন্ত এ উৎসব চলে। হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা পরস্পরকে আবির মাখিয়ে এ উৎসব উদযাপন করে। 
মহানগর সর্বজনীন পূজা কমিটির উদ্যোগে ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে দোল উৎসব ও কীর্তনের আয়োজন করা হয়েছে। সকালে পূজা ও কীর্তন শুরু হয়।
বৈষ্ণব বিশ্বাস অনুযায়ী, এ দিন শ্রীকৃষ্ণ বৃন্দাবনে রাধিকা এবং তার সখীদের সঙ্গে আবির খেলেছিলেন। সেই ঘটনা থেকেই দোল খেলার উৎপত্তি। এ কারণে দোলযাত্রার দিন এ মতের বিশ্বাসীরা রাধা-কৃষ্ণের বিগ্রহ আবিরে রাঙিয়ে দোলায় চড়িয়ে নগর কীর্তনে বের হন। এ সময় তারা রঙ খেলার আনন্দে মেতে ওঠেন।
বিশ্বের অনেক স্থানে উৎসবটি শ্রীকৃষ্ণের দোলযাত্রা নামে অধিক পরিচিত হলেও ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, মাদ্রাজ, উড়িষ্যা প্রভৃতি স্থানে দোল উৎসব এবং উত্তর, পশ্চিম ও মধ্য ভারত ও নেপালে ‘হোলি’ নামে পরিচিত। কোনও কোনও স্থানে এটিকে বসন্ত উৎসবও বলা হয়। পুষ্পরেণু ছিটিয়ে রাধা-কৃষ্ণ দোল উৎসব করতেন। সময়ের বিবর্তনে পুষ্পরেণুর জায়গায় এসেছে ‘আবির’।
রাজধানী ঢাকায় বিশেষ করে পুরান ঢাকার শাঁখারি বাজারে হোলি খেলার প্রচলন রয়েছে। ‘হোলি’ বা ‘দোলযাত্রা’ উৎসব উপলক্ষে এদিন নগরবাসী একে অন্যকে বর্ণিল রঙে রাঙিয়ে মাতোয়ারা হন। আবির খেলার উচ্ছ্বাসে মাতেন তরুণ-তরুণী থেকে শুরু করে ছোট-বড় সবাই। হোলির রঙে রঙিন হয়ে এই আনন্দে শামিল হন সব ধর্ম-বর্ণের মানুষ। তবে এবার রোজার কারণে কিছুটা ভাটা পড়ে । এদিকে এই উৎসবকে কেন্দ্র করে পুরান ঢাকার শাঁখারি বাজারে অন্যরকম আমেজ বিরাজ করে।
দুই দিনব্যাপী এই উৎসবের তিথি নির্ধারিত হয়েছে পূর্ণিমার সময়ে। এই পূর্ণিমা ‘দোল পূর্ণিমা’ নামে পরিচিত। দোল পূর্ণিমার সন্ধ্যায় ‘হোলিকা’ নামক অপদেবীর দহনের মাধ্যমে বিদায়ী বছরের যা কিছু খারাপ সেসব বিসর্জন করা হয়। এদিন পূজা হয় এবং হালকাভাবে আবির খেলা হয়ে থাকে। 
হোলি উৎসবে বন্ধুবান্ধব সবাই একে অপরকে রঙ মাখিয়ে রঙের খেলা উপভোগ করে। ।
বসন্তের রঙ যখন প্রকৃতিকে সাজিয়ে তোলে আপন মাধুরীতে, তখন হৃদয়ে দোলা লাগে। এই দিনে অন্তর থেকে দুষ্ট আত্মাকে বিতাড়িত করে শত্রুকে বিজয় করে। এদিন শক্তিতে নয়, রঙের সাজে শত্রুকে জয় করে।