খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের বৃহত্তম ধর্মীয় অনুষ্ঠান বড়দিনে সকল প্রকার আতশবাজি, পটকা ফুটানো ও ফানুস ওড়ানো নিষিদ্ধ করা হয়েছে। মঙ্গলবার ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলীর স্বাক্ষরিত গণবিজ্ঞপ্তিতে এ নিষিদ্ধের কথা বলা হয়েছে।
গণবিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আগামী ২৫ ডিসেম্বর খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের বৃহত্তম ধর্মীয় অনুষ্ঠান শুভ বড়দিন উদযাপিত হবে। এই অনুষ্ঠান ভাবগম্ভীর ও উৎসবমুখর পরিবেশে উদযাপনের লক্ষ্যে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ অর্ডিন্যান্স অনুযায়ী ২৪ ডিসেম্বর রাত ১২টা থেকে ২৫ ডিসেম্বর রাত ১২টা পর্যন্ত ঢাকা মহানগর এলাকায় সকল প্রকার আতশবাজি, পটকা ফুটানো এবং ফানুস ওড়ানো নিষিদ্ধ করা হলো।
পবিত্র বড়দিন অনুষ্ঠান সুষ্ঠু ও নিরাপদে অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ সম্মানিত নগরবাসীর সার্বিক সহযোগিতা কামনা করছে।
প্রথম আলোর ভোরের মতোই নিঃশব্দে একদিন বাচ্চু মিয়া সোশ্যাল মিডিয়ায় আবির্ভূত হয়েছিল। একসময় সে ছিল অচেনা এক মুখ—মাঝারি মানের বক্তা, যার ভিডিওতে লাইক পড়ত সীমিত সংখ্যায়। কিন্তু হঠাৎই সে বদলে গেল। ফেসবুক-ইউটিউবের গণ্ডি পেরিয়ে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করল গ্লোবাল ‘হুজুর ইনফ্লুয়েন্সার’ হিসেবে। আজ সে শুধু বক্তা নয়, উদ্যোক্তা, উদ্ভাবক, আর কেউ কেউ বলে—‘ঈমানের ডিজিটাল বিপণনকারী’!
তার নতুন উদ্যোগের নাম—‘উম্মাহ ট্যুর’। প্রথমে শুনলে মনে হতে পারে এটি কোনো পর্যটন সংস্থা। কিন্তু না, এটি একধরনের আধ্যাত্মিক অভিজ্ঞতার সরবরাহকারী। তাদের দেওয়া ‘ওমরাহ প্যাকেজ’-এ পাসপোর্ট, ভিসা বা ফ্লাইট টিকিটের প্রয়োজন নেই। শুধু একটি স্মার্টফোন আর ‘খাঁটি নিয়ত’ থাকলেই চলবে! বাচ্চুর কথায়, ‘ভাই ও বোনেরা! জান্নাত এখন হাতের মুঠোয়, মোবাইলের স্ক্রিনে তাওয়াফ করলেই হজ আদায়!’
ইউটিউবে লাইভে বাচ্চুর প্রথম আবির্ভাব ছিল ব্যতিক্রমী আয়োজন। ঝকঝকে টুপি, কাবা শরিফের এইচডি ব্যাকগ্রাউন্ড, আর মিষ্টি কণ্ঠে আহ্বান: ‘আমার ভাই ও বোনেরা! যারা জীবনে হজ করতে পারেননি, তাদের জন্য জান্নাতি ডিসকাউন্টে ভার্চুয়াল ওমরাহ প্যাকেজ!’ দর্শকদের চোখ ছানাবড়া। কীভাবে সম্ভব? বাচ্চুর ব্যাখ্যা: মোবাইলে কাবার ৩৬০ ডিগ্রি ভিডিও চালু করুন, আঙুলে ঘোরান স্ক্রিন। নিয়ত খাঁটি হলে সাত চক্করে আমল সম্পন্ন!
কমেন্টবক্সে একের পর এক প্রশ্ন: ‘ভাই, ফোনের স্ক্রিন ছোট হলে তাওয়াফ ঠিক হবে?’ বাচ্চুর উত্তর: ‘নিয়ত বড় হলেই সব কবুল, স্ক্রিন ছোট হলে গুনাহ নেই!’ অন্য জিজ্ঞাসা: ‘তাওয়াফ করতে ফোন গরম হয়ে গেলে?’ বাচ্চুর মজাদার জবাব: ‘ফ্যানের নিচে বসুন। ফোন গরম, নিয়ত ঠাণ্ডা থাকলেই চলবে!’
এরপর আসে প্যাকেজের বিবরণ। প্রিমিয়াম ভার্সন ৯৯৯ টাকায় মিলবে লাইভ হুজুরের গাইডেন্স—‘এখন আপনি হাজরে আসওয়াদের সামনে...’ ইকোনমি ভার্সন ২৯৯ টাকায় ভিডিও ডাউনলোড করে অফলাইনে আমল। বাড়তি সুবিধা: নফল নামাজের অডিও গাইড, যাতে নামাজে ‘কষ্ট’ না হয়!
আরো আছে বোনাস! কমেন্টে ‘আমি জান্নাত চাই’ লিখলেই মিলবে বাচ্চুর বিশেষ ভিডিও মেসেজ—‘তুমি জান্নাতের যোগ্য, মাশাআল্লাহ!’ সাথে ফ্রি ‘জান্নাতি সুরা বুকমার্ক’—ইসলামি বইয়ে রাখলে ঈমানি অনুভূতি বাড়বে!
এই উদ্যোগে হতভম্ব ঢাকার হজ দালালরা। পুরান ঢাকার জাফর ভাই, দশ বছরের অভিজ্ঞ হজ এজেন্ট, কফিশপে বললেন: ‘এ কী হুজুর! মোবাইলে হজ করায়?’ পাশের বন্ধু ঠাট্টা করল: ‘আপনি প্রথাগত, বাচ্চু ডিজিটাল। আপনার হজ কষ্টসাধ্য, ওরটা ক্লিকসাধ্য!’
আন্তর্জাতিক সফরে প্লেনে উঠেই বাচ্চু লাইভ শুরু করে: ‘ভাই ও বোনেরা! প্লেন উঠছে, যেমন আমরা জান্নাতে উঠব। সবাই বলুন—সুবহানাল্লাহ!’ যাত্রীরা প্রথমে অবাক, পরে জিকিরে মগ্ন। এয়ার হোস্টেসের প্রশ্ন: ‘স্যার, জিকিরের জন্য অ্যাপ লাগবে?’ বাচ্চুর হাসি: ‘না বোন, নিয়তই যথেষ্ট!’
এরপর ‘হালাল হোটেল’ চালু—মেনুতে ‘ঈমান এক্সপ্রেসো’, ‘তাকওয়া টোস্ট’, আর ‘সুরা হালিম’! এক গ্রাহকের মন্তব্য: ‘হালিম খেয়ে মনে হলো জান্নাতের ট্রায়াল ভার্সন পেলাম!’ এমনকি বিয়ের প্যাকেজও: ‘হালাল বিয়ে, হাই রেজুলেশনে!’ কমেন্টে কেউ লিখল: ‘এই জুটি নিশ্চয় জান্নাতের টিকিট পাবে!’
বাচ্চু মিয়া—একজন বিপণনকারী, বক্তা, উদ্যোক্তা, প্রযুক্তিবিদ, আর ঈমানের ডিজিটাল দূত। কিন্তু প্রশ্ন রয়ে যায়: এটা ঈমানের নবজাগরণ নাকি কনটেন্ট-বেসড বাণিজ্যিক ছলনা?
যেখানে ধর্মের স্থান হওয়া উচিত ছিল আত্মিক অনুশীলনে, সেখানে তা পরিণত হচ্ছে বাণিজ্যের হাতিয়ারে। বাচ্চু মিয়াদের কর্মকাণ্ড যেন চোখে আঙুল দিয়ে দেখায়—ধর্ম এখন পণ্য! হয়তো এর মাধ্যমে কেউ ঈমানের পথ পাবে, কিন্তু যদি এটা শুধু প্রযুক্তি ও মুনাফার খেলায় পরিণত হয়, তবে ভাবনা জাগে: আমরা কি ঈমানের ‘মোবাইল ভার্সনে’ ঢুকে পড়েছি?
জান্নাত কী এখন অ্যাপে কেনার পণ্য? এই প্রশ্ন আজ সমাজ, চিন্তা আর আত্মার দরজায় জোরালো আঘাত করছে।