img

শূন্য থেকে সাফল্যের চূড়ায়, মার্ক জুকারবার্গের গল্প!

প্রকাশিত :  ০৬:২৪, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪

শূন্য থেকে সাফল্যের চূড়ায়, মার্ক জুকারবার্গের গল্প!

রেজুয়ান আহম্মেদ

এটি একটি অদ্ভুত পাখির চোখে দেখার গল্প, যেখানে এক তরুণের স্বপ্ন, তার পরিশ্রম এবং অদম্য ইচ্ছাশক্তির সমন্বয়ে পৃথিবীকে এক নতুন রূপ দেওয়া প্ল্যাটফর্ম সৃষ্টি হয়েছিল, যা আজকের দিনে আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অপরিহার্য অংশ। ক্যালিফোর্নিয়ার পলো অল্টো শহরের ছোট্ট একটি ডরম রুমে বসে থাকা সেই তরুণ, যার চোখে ছিল অজানা এক পৃথিবী, তার নাম মার্ক জুকারবার্গ। হাভার্ডের ছাত্র হলেও, তার দৃষ্টি ছিল বইয়ের পাতার গণ্ডি ছাড়িয়ে, প্রযুক্তির বিপ্লবী সম্ভাবনায়।

মার্কের এই যাত্রা শুরু হয়েছিল খুব সাধারণভাবে। একটি সাধারণ প্রোগ্রামারের পরিবারে জন্ম নেওয়া এই তরুণের শৈশব কেটেছিল কোডিংয়ের সাথে, এবং সে কখনোই কল্পনাও করেনি যে তার হাত ধরেই প্রযুক্তির দুনিয়া একদিন বদলে যাবে। কিন্তু তার ছোটোখাটো অ্যাপ্লিকেশন বা গেম তৈরি করার অভ্যাস ছিল, যা তার কাছে ছিল এক রোমাঞ্চকর খেলা। তার চোখে তখনও ছিল শুধুমাত্র কোডের কাঠামো, তবে তার মনে ছিল এক বিশাল স্বপ্ন। একদিন তার মস্তিষ্কে এল একটি ভাবনা—কীভাবে পৃথিবীটিকে একসাথে জুড়ে রাখা যায়?

এভাবেই জন্ম নিল ফেসবুক। প্রথমে এটি ছিল শুধুমাত্র হাভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের জন্য, কিন্তু তাতেই বোধহয় তার ভবিষ্যতের পথ পরিষ্কার হয়ে গিয়েছিল। আইডিয়াটি এতটাই আকর্ষণীয় ছিল যে, তা দ্রুতই পুরো পৃথিবীকে গ্রাস করে ফেলল। আজকের দিনে, ফেসবুক আর শুধু একটি সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম নয়, এটি একটি বিপ্লব—একটি ধারণা যা কোটি কোটি মানুষের জীবনে প্রভাব ফেলেছে।

তবে, এই সফলতার পেছনে রয়েছে অনেক সংগ্রাম, অনেক রাতের নিঃসঙ্গতা, অনেক বাধা, অনেক ঝুঁকি। একদিন, যখন মার্ক ডরমের ছোট্ট রুমে বসে তার প্ল্যাটফর্মের বিকাশে ব্যস্ত ছিলেন, তখন কী তিনি কল্পনা করতে পেরেছিলেন যে একদিন তার তৈরি এই ফেসবুক পুরো পৃথিবীকে একসাথে জুড়ে ফেলবে? তিনি কেবল জানতেন, তার স্বপ্ন সত্যি হতে সময় লাগবে, কিন্তু সেই স্বপ্নের পরিণতি পৃথিবী বদলে দেওয়া এক বিপ্লবী প্ল্যাটফর্মে পরিণত হবে।

এই গল্পের নানান দিক আমাদের শেখায়—ছোট থেকে শুরু করা, বড় স্বপ্ন দেখা, ঝুঁকি নেওয়া এবং ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নেওয়া। ফেসবুকের পথচলা সহজ ছিল না, এমনকি একসময় সেটি অনেক সমালোচনার মুখোমুখি হয়েছিল। কিন্তু মার্ক সব কিছুকে পাশ কাটিয়ে, সেই সমস্ত ঝুঁকি ও বাধাকে অতিক্রম করে এগিয়ে গিয়েছিলেন। তিনি জানতেন, সবকিছুই একটি প্রক্রিয়া, যেখানে ব্যর্থতা একটি বাধা নয়, বরং শিখন।

মার্কের গল্পে রয়েছে যে সকল উদ্যোক্তা বা ব্যবসায়ী তাদের জীবনে প্রয়োগ করতে পারেন, বিশেষত যারা প্রযুক্তি ব্যবসায় জড়িত। প্রথমেই, \"ছোট শুরু করো, বড় স্বপ্ন দেখো\"—ফেসবুক ছিল একটি ক্ষুদ্র ধারণা, কিন্তু মার্ক জানতেন, তার একটি ছোট আইডিয়া একদিন পৃথিবীকে বদলে দেবে। আজ যদি আপনার উদ্যোগ ছোট হয়, তাতে কোন সমস্যা নেই। আপনি যদি আপনার স্বপ্ন এবং পরিশ্রমকে যথাযথভাবে কাজে লাগান, একদিন আপনার উদ্যোগও বিপ্লবী হতে পারে।

তারপর, ঝুঁকি নিন—মার্ক তার পড়াশোনার সময়ে পুরোপুরি ঝুঁকি নিয়ে ফেসবুকের কাজ শুরু করেছিলেন। জীবনে বড় কিছু করতে হলে ঝুঁকি নিতে হয়, এবং কোনো নতুন জিনিস অর্জন করতে গেলে তা অপরিহার্য। শুধু ঝুঁকি নয়, বরং ব্যর্থতাকে গ্রহণ করুন, কারণ সেই ব্যর্থতা থেকেই শিক্ষা আসে।

ফেসবুকের সফলতার একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ ছিল, এটি মানুষের মৌলিক প্রয়োজন—সংযোগের—সমাধান করেছিল। মার্ক জানতেন, মানুষের মধ্যে যোগাযোগের চাহিদা কখনোই শেষ হবে না, এবং ফেসবুক সেই দিকটি পূর্ণ করবে। আপনিও যদি ব্যবসা শুরু করেন, তবে আপনার গ্রাহকের চাহিদা বুঝে সঠিকভাবে সমাধান প্রদান করতে হবে।

মার্ক জুকারবার্গের জীবনে সবচেয়ে বড় শিক্ষা হলো, নিজের ওপর বিশ্বাস রাখুন। একসময় মার্কও ছিলেন সেই তরুণ, যে তার ছোট্ট রুমে বসে পৃথিবীকে একসূত্রে বাঁধার স্বপ্ন দেখেছিল। আজ সেই স্বপ্ন বাস্তব হয়ে উঠেছে, এবং তার প্ল্যাটফর্মটি সারা পৃথিবীতে সংযোগের দিক থেকে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে।

সাফল্য কেবলমাত্র অর্থ বা প্রতিপত্তি নয়, বরং এটি সেই সৃষ্টির আনন্দ যা মানুষের জীবনকে প্রভাবিত করে। তাই, যদি আপনি একজন উদ্যোক্তা হন, মার্কের গল্প থেকে অনুপ্রাণিত হন এবং জানুন যে, আপনার আইডিয়াও একদিন কোটি কোটি মানুষের জীবন বদলে দিতে পারে।

এক কথায়, মার্কের গল্পের মূল বার্তা হলো—স্বপ্ন দেখুন, ঝুঁকি নিন, এবং কঠোর পরিশ্রম করুন। হয়তো আপনার তৈরি প্ল্যাটফর্ম হবে পরবর্তী ফেসবুক, এবং তা একদিন পৃথিবীকে একসূত্রে বাঁধবে।




রেজুয়ান আহম্মেদ: কলামিস্ট, বিশ্লেষক; সম্পাদক অর্থনীতি ডটকম

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি এর আরও খবর

img

এআইয়ের কারণে ৯ হাজার কর্মী ছাঁটাই করছে মাইক্রোসফট

প্রকাশিত :  ১৩:২৯, ১২ জুলাই ২০২৫
সর্বশেষ আপডেট: ১৩:৩৬, ১২ জুলাই ২০২৫

মার্কিন টেক জায়ান্ট মাইক্রোসফট বিশ্বজুড়ে প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর পুনর্গঠনের ধারায় এবার নতুন করে ৯ হাজার কর্মী ছাঁটাইয়ের ঘোষণা দিয়েছে । প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তিকে ব্যবসায় আরও কার্যকরভাবে একীভূত করতে এবং সংগঠনকে আরও দক্ষ ও খরচ-সাশ্রয়ী করার লক্ষ্যে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ছাঁটাইটি মাইক্রোসফটের বৈশ্বিক কর্মীবলের প্রায় ৪ শতাংশকে প্রভাবিত করবে। খবর রয়টার্সের।

মাইক্রোসফটের একজন মুখপাত্র এক বিবৃতিতে বলেন, 'বাজার ও প্রযুক্তিগত পরিবেশের দ্রুত পরিবর্তনের সঙ্গে তাল মেলাতে আমাদের কোম্পানি ও বিভিন্ন টিমে প্রয়োজনীয় সাংগঠনিক পরিবর্তন আনা হচ্ছে, যাতে আমরা আগামী দিনের জন্য আরও ভালোভাবে প্রস্তুত থাকতে পারি।'

২০২৪ সালের হিসাব অনুযায়ী, মাইক্রোসফটের বৈশ্বিক কর্মীসংখ্যা ছিল প্রায় ২ লাখ ২৮ হাজার। সেখান থেকেই এই বড় পরিসরের ছাঁটাই কার্যকর হচ্ছে। এর আগে ২০২৫ সালের মে মাসেও প্রতিষ্ঠানটি প্রায় ৬ হাজার কর্মী ছাঁটাই করেছিল।

এই ছাঁটাইয়ের পেছনে অন্যতম কারণ হিসেবে প্রতিষ্ঠানটি উল্লেখ করেছে ব্যবস্থাপনার স্তর হ্রাস এবং এআই প্রযুক্তিকে বিভিন্ন পণ্যে আরও বেশি অন্তর্ভুক্ত করার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন। মাইক্রোসফট বলছে, তারা এমন একটি কর্মপরিবেশ গড়ে তুলতে চায় যেখানে কর্মীরা এআই-এর সহায়তায় আরও সৃজনশীল ও ফলপ্রসূ কাজ করতে পারবেন।

প্রযুক্তি খাতের বিশ্লেষকরা বলছেন, ওপেনএআই-এর সঙ্গে অংশীদারিত্ব এবং চ্যাটজিপিটির মতো জেনারেটিভ এআই প্রযুক্তির অগ্রগতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে মাইক্রোসফট ব্যাপকভাবে এআই খাতে বিনিয়োগ বাড়িয়েছে। এতে অবকাঠামোগত খরচও বেড়েছে। এই ব্যয় সামলাতে এবং ভবিষ্যতের জন্য সংগঠনকে প্রস্তুত রাখতে কর্মীসংখ্যা কমানোর পথ নিয়েছে তারা।

মাইক্রোসফট আশ্বাস দিয়েছে, ছাঁটাই হওয়া কর্মীদের জন্য সেভারেন্স প্যাকেজ, স্বাস্থ্যবীমা এবং পুনরায় কর্মসংস্থানের জন্য প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও সহায়তা দেওয়া হবে।

বিশ্লেষকদের মতে, এটি শুধু মাইক্রোসফটের একক সিদ্ধান্ত নয়, বরং বিশ্বজুড়ে প্রযুক্তি খাতের বড় পরিবর্তনের অংশ। এআই, অটোমেশন এবং খরচ নিয়ন্ত্রণকে সামনে রেখেই গুগল, মেটা এবং অ্যামাজনের মতো অন্যান্য প্রযুক্তি জায়ান্টও ইতিমধ্যে একই ধরনের ছাঁটাই ও পুনর্গঠনের পথে এগিয়েছে। এই ধারা ভবিষ্যতে আরও তীব্র হতে পারে বলেও আশঙ্কা করছেন অনেকে।