img

জুমার দিনের তাৎপর্য, আত্মার পুনর্জাগরণে এক মহিমান্বিত আহ্বান!

প্রকাশিত :  ১৮:০৩, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪

জুমার দিনের তাৎপর্য, আত্মার পুনর্জাগরণে এক মহিমান্বিত আহ্বান!

রেজুয়ান আহম্মেদ

শুক্রবার, যা ইসলামি পরিভাষায় “ইয়াওমুল জুমা” নামে পরিচিত, মুসলিম জীবনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দিন। এটি শুধু সপ্তাহের একটি দিন নয়; বরং এটি আত্মার পুনর্জীবন, বিশ্বাসের দৃঢ়তা, এবং সৃষ্টিকর্তার প্রতি আত্মসমর্পণের এক অনন্য দৃষ্টান্ত। ইসলাম ধর্মে এ দিনের গুরুত্ব কোরআন ও হাদিসের আলোচনায় বিশেষভাবে প্রতিফলিত হয়েছে, যা প্রতিটি মুসলমানের জীবনধারাকে গভীরভাবে প্রভাবিত করে।

আল-কোরআনের সুরা জুমায় (৬২:৯) বলা হয়েছে: \"হে মুমিনগণ! যখন জুমার দিনের সালাতের জন্য আহ্বান করা হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণের দিকে দ্রুত এগিয়ে যাও এবং ব্যবসা-বাণিজ্য ত্যাগ কর। এটি তোমাদের জন্য উত্তম, যদি তোমরা জানো।\" এই আয়াতের প্রতিটি শব্দ জুমার গুরুত্ব এবং তাৎপর্য বহন করে। এটি একটি পরিষ্কার আহ্বান, যেখানে আল্লাহ তায়ালা মুমিনদের স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন যে, এই দিনে ইবাদতের জন্য ব্যবসা-বাণিজ্যসহ সকল পার্থিব কাজ সাময়িকভাবে বিরত রাখতে হবে।

জুমার দিনকে সপ্তাহের সেরা দিন বলা হয়। হাদিসে এসেছে: \"সপ্তাহের সাত দিনের মধ্যে জুমার দিন সর্বোত্তম। এই দিনে আদম (আঃ)-কে সৃষ্টি করা হয়েছে, এই দিনেই তিনি জান্নাতে প্রবেশ করেছেন এবং এই দিনেই তিনি পৃথিবীতে প্রেরিত হয়েছেন।\" এই বর্ণনা জুমার মাহাত্ম্যকে নতুন এক মাত্রা দেয়। এই দিনটিকে সৃষ্টির শুরু থেকেই মানবজাতির জন্য বিশেষ দিন হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছে।

জুমার দিনের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো জুমার সালাত, যা অন্য যেকোনো নামাজের চেয়ে আলাদা এবং অনন্য। এটি মুসলিম উম্মাহর জন্য এক বিশেষ একত্রিত হওয়ার দিন। মসজিদের খুতবা শুনে শিক্ষা গ্রহণ এবং সম্মিলিত ইবাদতে অংশগ্রহণ জুমার দিনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ।

জুমার দিন এক ধরনের আধ্যাত্মিক পুনর্জাগরণের সুযোগ সৃষ্টি করে। এই দিনে ইবাদত, কোরআন তেলাওয়াত, এবং প্রার্থনা মানুষকে তার সৃষ্টিকর্তার কাছাকাছি নিয়ে যায়। এটি আত্মাকে শুদ্ধ করার এবং জীবনের লক্ষ্যকে নতুনভাবে অনুধাবন করার সময়।

জুমার দিন কেবল ব্যক্তিগত নয়, এটি সমাজজীবনের ক্ষেত্রেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জুমার সালাতে অংশগ্রহণ সমাজের মানুষের মধ্যে ঐক্যবোধ সৃষ্টি করে। পাশাপাশি এটি পরিবারে আনন্দ এবং শৃঙ্খলা আনয়নে বিশেষ ভূমিকা রাখে। মুসলিম সমাজে অনেকেই এ দিনটি পারিবারিক মেলবন্ধনের জন্য বেছে নেন।

জুমার খুতবা মুসলমানদের জীবনের বিভিন্ন দিক নিয়ে শিক্ষা দেয়। এটি শুধু ধর্মীয় বিষয় নয়, বরং নৈতিকতা, পারস্পরিক সহযোগিতা, এবং জীবনের বহুমুখী দিক নিয়ে আলোকপাত করে।

জুমার দিন মুসলিম জীবনে এক আধ্যাত্মিক মহিমায় ভরপুর দিন। এটি আত্মার পুনর্জীবন এবং সৃষ্টিকর্তার প্রতি নিরঙ্কুশ আত্মসমর্পণের প্রতীক। কোরআন ও হাদিসে এ দিনের গুরুত্ব অনন্যভাবে তুলে ধরা হয়েছে, যা প্রত্যেক মুসলমানের কাছে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। এই দিনটি শুধু একটি ধর্মীয় আচার নয়, বরং এটি প্রতিটি মুমিনের জীবনে নবজাগরণ এবং শান্তির বার্তা বহন করে। অতএব, জুমারের তাৎপর্য উপলব্ধি করে এটি যথাযথভাবে পালন করা প্রত্যেক মুমিনের জন্য অপরিহার্য।




রেজুয়ান আহম্মেদ: কলামিস্ট, বিশ্লেষক; সম্পাদক অর্থনীতি ডটকম
img

আগামীকাল পবিত্র শবে বরাত

প্রকাশিত :  ১৫:২৩, ১৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
সর্বশেষ আপডেট: ১৫:৩৭, ১৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

আগামীকাল শুক্রবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) দিবাগত রাতে সারাদেশে যথাযোগ্য ধর্মীয় মর্যাদায় পবিত্র শবে-বরাত পালিত হবে। হিজরি সালের শাবান মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত রাতটি মুসলমানরা শবে-বরাত বা সৌভাগ্যের রজনী হিসেবে পালন করে থাকেন। এ রাতটি ‘লাইলাতুল বরাত’ হিসেবেও পরিচিত।

পবিত্র শবে-বরাত উপলক্ষে প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস বাণী দিয়েছেন। এ উপলক্ষে আগামী শনিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) সরকারি ছুুটি থাকবে।

বাণীতে প্রধান উপদেষ্টা পবিত্র শবে-বরাত উপলক্ষ্যে বাংলাদেশসহ বিশ্বের মুসলিম জনগোষ্ঠীকে আন্তরিক মোবারকবাদ জানান।  

তিনি বলেন, এই সৌভাগ্যময় রজনী মানব জাতির জন্য বয়ে আনে মহান আল্লাহ রাব্বুল আ’লামিনের অশেষ রহমত ও বরকত। এ রাতে আল্লাহপাক ক্ষমা প্রদান ও প্রার্থনা পূরণের অনুপম মহিমা প্রদর্শন করেন।

পবিত্র এই রাতে আল্লাহর অশেষ রহমত ও নিয়ামত বর্ষিত হয় উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘এই মহিমাময় রাতে ইবাদত-বন্দেগীর মাধ্যমে আমরা মহান আল্লাহর নৈকট্য লাভ করতে পারি। অর্জন করতে পারি তাঁর অসীম রহমত, বরকত, নাজাত ও মাগফিরাত।’

পবিত্র শবেবরাতের মাহাত্ম্যে উদ্বুদ্ধ হয়ে মানব কল্যাণ ও দেশ গড়ার কাজে আত্মনিয়োগ করতে তিনি সকলের প্রতি আহ্বান জানান।

তিনি বলেন, ‘আসুন, সকল প্রকার অন্যায়, অনাচার, হানাহানি ও কুসংস্কার পরিহার করে আমরা শান্তির ধর্ম ইসলামের চেতনাকে ব্যক্তি, সমাজ ও জাতীয় জীবনের সকল স্তরে প্রতিষ্ঠা করি।’

এ রাতে বাসাবাড়ি ছাড়াও মসজিদে মসজিদে নফল নামাজ, পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত ও ওয়াজ মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে। 

আজ বৃস্পতিবার ইসলামিক ফাউন্ডেশনের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে একথা জানানো হয়।

পবিত্র শবে-বরাত, ১৪৪৬ হিজরি উপলক্ষে আগামীকাল শুক্রবার ইসলামিক ফাউন্ডেশনের (ইফা) উদ্যোগে বায়তুল মুকাররম জাতীয় মসজিদে ওয়াজ, দোয়া মাহফিল, পবিত্র কুরআন তিলাওয়াত ও হামদ নাতসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করা হয়েছে। 

ইফা আয়োজিত অনুষ্ঠানমালার মধ্যে রয়েছে, শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা ৩৫ মিনিটে বায়তুল মুকাররম জাতীয় মসজিদ পবিত্র কুরআন ও হাদিসের আলোকে লাইলাতুল বারাআতের শিক্ষা ও করণীয় বিষয়ে ওয়াজ করবেন ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন। 

রাত ৭টা ১০ মিনিটে লাইলাতুল বারাআতের ফজিলত ও তাৎপর্য বিষয়ে ওয়াজ করবেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক আ. ছালাম খান। 

রাত ৮টা ৫০ মিনিটে লাইলাতুল বারাআতের ফজিলত ও তাৎপর্য তুলে ধরে ওয়াজ করবেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের বোর্ড অব গভর্নরসের গভর্নর ও  তামিরুল মিল্লাত কামিল মাদরাসার অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) ড. খলিলুর রহমান মাদানি। 

রাত সাড়ে ৯টায় পবিত্র কুরআন ও হাদিসের আলোকে লাইলাতুল বারাআতের শিক্ষা ও করণীয় সম্পর্কে ওয়াজ করবেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের বোর্ড অব গভর্নরসের গভর্নর ও চরমোনাই আহসানাবাদ রশিদিয়া কামিল মাদরাসার অধ্যক্ষ সৈয়দ মোহাম্মদ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানি।

রাত সোয়া ২টায় (দিবাগত রাত) নফল ইবাদতের গুরুত্ব ও ফজিলত নিয়ে ওয়াজ করবেন বায়তুল মুকাররম জাতীয় মসজিদের সিনিয়র পেশ ইমাম হাফেজ মাওলানা মুফতি মিজানুর রহমান এবং ভোর ৫টা ৫০ মিনিটে আখেরি মোনাজাত। মোনাজাত পরিচালনা করবেন বায়তুল মুকাররম জাতীয় মসজিদের পেশ ইমাম হাফেজ মাওলানা মুফতি মুহিবুল্লাহিল বাকী। 

বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতারসহ বেসরকারি টিভি চ্যানেল ও রেডিও এ উপলক্ষে ধর্মীয় বিভিন্ন অনুষ্ঠান সম্প্রচার করবে।

এ রাতে ধর্মপ্রাণ মুসলমানগণ মহান আল্লাহর রহমত ও নৈকট্য লাভের আশায় নফল নামাজ, কোরআন তেলাওয়াত, জিকির, ওয়াজ ও মিলাদ মাহফিলসহ এবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে কাটাবেন।

মুসলিম উম্মাহর সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করে মুসলমানরা বিশেষ মোনাজাত করবেন।