img

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সুফল ও কুফল

প্রকাশিত :  ১১:১৪, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সুফল ও কুফল

রেজুয়ান আহম্মেদ

আজকের বিশ্ব, যেখানে প্রতিটি মুহূর্তে প্রযুক্তি নতুন মাত্রা যোগ করছে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) তার অন্যতম অগ্রগামী শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। এআই, যা এক সময় কল্পনা মাত্র ছিল, আজ মানব জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে। এটি আমাদের জীবনের অনেক ক্ষেত্রেই পরিবর্তন আনছে—কিছু ক্ষেত্রে উপকার, আবার কিছু ক্ষেত্রে বিপদের সম্ভাবনা সৃষ্টি করছে। তাই, যখন আমরা এআই-এর সুফল ও কুফল নিয়ে চিন্তা করি, তখন আমাদের সামনে দুটি বিরোধী জগতের বাস্তবতা দৃশ্যমান হয়—একটি আধুনিকতার গৌরবময় যুগ, আরেকটি এক অন্ধকার ভবিষ্যতের আশঙ্কা।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা আমাদের জীবনের প্রতিটি স্তরে নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছে। যে প্রযুক্তি এক সময় শুধুমাত্র বিজ্ঞান কল্পকাহিনির অংশ ছিল, তা এখন বাস্তব হয়ে দাঁড়িয়েছে। স্বাস্থ্যসেবা থেকে শুরু করে শিক্ষা, অর্থনীতি, পরিবহন—প্রায় প্রতিটি খাতে এআই-এর প্রয়োগ আমাদের কাজকে আরও সহজ, দ্রুত এবং সাশ্রয়ী করে তুলেছে। উদাহরণস্বরূপ, স্বাস্থ্যসেবায় এআই রোগ নির্ণয়ের ক্ষেত্রে অসম্ভব দ্রুততা ও সঠিকতা এনে দিয়েছে, যা চিকিৎসা ক্ষেত্রে বিপ্লব ঘটাচ্ছে। এর মাধ্যমে মানুষের জীবনমান উন্নত হচ্ছে এবং ভবিষ্যতে আরও উন্নতির সম্ভাবনা রয়েছে।

এছাড়া, কাজের ক্ষেত্রে এআই মানুষের সহকারী হিসেবে কাজ শুরু করেছে। বিভিন্ন শিল্পে অটোমেশন এবং মেশিন লার্নিং মানুষের কাজকে আরও দক্ষ ও সঠিকভাবে সম্পন্ন করছে। কিন্তু এই প্রযুক্তি আমাদের জীবনকে সহজ এবং দ্রুততর করলেও, এর অন্ধকার দিকও অস্বীকার করা যায় না।

এআই যেমন মানব জীবনে সুবিধা এনেছে, তেমনি এটি এক নতুন ধরনের সংকটের জন্ম দিচ্ছে। একদিকে যেমন এটি কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পারে, অন্যদিকে লক্ষ লক্ষ মানুষকে কর্মচ্যুতির দিকে ঠেলে দিতে পারে। আগামী দিনে প্রায় ৭০% মানুষ তাদের কর্মক্ষেত্র হারানোর ঝুঁকিতে রয়েছে। এমনকি, যেসব পেশা একসময় অটুট ছিল, সেগুলিও এখন ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। যখন একদিকে মানুষের কর্মসংস্থান সংকুচিত হচ্ছে, তখন অন্যদিকে অর্থনৈতিক বৈষম্যও বেড়ে যাচ্ছে। ধনী ও দরিদ্র দেশের মধ্যে বৈষম্য বৃদ্ধি পাবে এবং সমাজে এক গভীর বিভাজন সৃষ্টি হবে।

এআই যখন মানুষের কাজে প্রবেশ করবে, তখন এক নতুন যুগের সূচনা হতে পারে—একটি কর্মহীনতা, হতাশা, এবং শূন্যতার যুগ। সমাজে কাজের অভাবে যে মানসিক চাপ সৃষ্টি হবে, তা শুধু অর্থনৈতিক সমস্যা নয়, বরং সামাজিক ও মানসিক বিপর্যয়ের দিকে এগিয়ে যাবে। যখন মানুষের কাজ চলে যাবে, তখন তার আত্মবিশ্বাস সংকুচিত হবে এবং শূন্যতার মধ্যে সে ক্রমশ ডুবে যাবে। মাদক, অ্যালকোহল, কিংবা অন্যান্য ক্ষতিকর অভ্যাসের প্রতি আকর্ষণ বাড়বে, যা সমাজে মানসিক রোগের প্রাদুর্ভাব সৃষ্টি করবে।

এআই-র এই অগ্রগতির ফলে মানবিক সম্পর্কগুলোও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। প্রযুক্তির মাধ্যমে সম্পর্কগুলো স্বাভাবিক ও আন্তরিক না হয়ে যান্ত্রিক ও অমানবিক হয়ে উঠছে। যে সম্পর্কগুলো এক সময় মানবিক স্পর্শে গড়ে উঠতো, তা আজ প্রযুক্তির মাধ্যমে অচেনা, যান্ত্রিক হয়ে উঠছে। প্রযুক্তির আধিপত্য যদি মানবিক অনুভূতির জায়গা দখল করে নেয়, তবে এক অদৃশ্য শূন্যতা সৃষ্টি হবে, যা কখনও পূর্ণ হতে পারবে না।

এআই শুধু ব্যক্তিগত জীবনে নয়, সমাজের শ্রেণী বিভাজনেও এক নতুন মাত্রা যোগ করবে। ধনী দেশগুলি এআই-এর সুবিধা দ্রুত গ্রহণ করবে, কিন্তু দরিদ্র দেশগুলির জন্য এটি একটি বিরাট চ্যালেঞ্জ হতে পারে। এর ফলে বৈষম্য আরও গভীর হবে, এবং প্রযুক্তিগত আধিপত্য সৃষ্টি করবে এক বিভক্ত পৃথিবী, যেখানে সমাজের উচ্চস্তরের মানুষ প্রযুক্তির মাধ্যমে শাসন করবে, আর নিম্নস্তরের মানুষ একধরনের অবহেলিত অবস্থানে থাকবে।

তবে, সবকিছুর মধ্যে এক আশা জাগানিয়া দিকও রয়েছে। যদি আমরা এআই-কে মানবিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করি, তবে এটি আমাদের সহায়ক হতে পারে, শত্রু নয়। সৃজনশীলতা, মানবিকতা, এবং সংহতি—এই গুণগুলো যদি আমরা হারিয়ে না ফেলি, তবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা আমাদের সহায়ক হতে পারে। তবে, আমাদের এই পৃথিবীকে সঠিক পথে পরিচালিত করার দায়িত্ব আমাদের কাঁধে রয়েছে। প্রযুক্তির আধিপত্যে আমরা যদি মানবিক সম্পর্কগুলো হারিয়ে ফেলি, তবে একদিন এমন একটি পৃথিবী তৈরি হবে, যেখানে মানুষই থাকবে না—থাকবে কেবল শূন্যতা, নেশা, এবং বিভক্তি।

তাহলে, আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে—আমরা কোন পৃথিবী চাই? একটি প্রযুক্তির আধিপত্যে ঠাঁসা পৃথিবী, না একটি মানবিক পৃথিবী, যেখানে এআই মানুষের সেবায় থাকবে, তার পেছনে নয়।


রেজুয়ান আহম্মেদ: কলামিস্ট, বিশ্লেষক; সম্পাদক অর্থনীতি ডটকম

img

ফ্রিডম হাউসের প্রতিবেদন: দেশে বেড়েছে ইন্টারনেট ব্যবহারের স্বাধীনতা

প্রকাশিত :  ১২:০৬, ১৪ নভেম্বর ২০২৫

মার্কিন সংস্থা ফ্রিডম হাউস জানিয়েছে, বিশ্বে অনলাইনের স্বাধীনতা কমে গেলেও বাংলাদেশে এর উন্নতি হয়েছে । আজ প্রকাশিত ‘ফ্রিডম অন দ্য নেট ২০২৫’ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ বছর মূল্যায়নে থাকা ৭২টি দেশের মধ্যে ইন্টারনেট স্বাধীনতায় সবচেয়ে বেশি অগ্রগতি হয়েছে বাংলাদেশে।

এ গবেষণায় ২০২৪ সালের জুন থেকে ২০২৫ সালের মে পর্যন্ত পরিস্থিতি পর্যালোচনা করা হয়েছে।

ফ্রিডম হাউস বলছে, ২০২৪ সালের আগস্টে শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে হওয়া অভ্যুত্থানে একটি কর্তৃত্ববাদী সরকার ক্ষমতা হারায়। এরপর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ডিজিটাল ক্ষেত্রে কিছু ইতিবাচক সংস্কার আনে। এর ফলেই বাংলাদেশের ইন্টারনেট স্বাধীনতা সূচক ৫ পয়েন্ট বেড়ে ১০০-এর মধ্যে ৪৫ হয়েছে। গত বছর এই স্কোর ছিল ৪০। এটি গত সাত বছরের সেরা অবস্থান।

তবে এত উন্নতির পরও বাংলাদেশ এখনো ‘আংশিক মুক্ত’ দেশ হিসেবে তালিকায় রয়ে গেছে—যে অবস্থানে ২০১৩ সাল থেকে রয়েছে।

ফ্রিডম হাউস তিনটি বড় বিষয় দেখে স্কোর নির্ধারণ করে—

(১) ইন্টারনেটে প্রবেশের বাধা,

(২) অনলাইনে প্রকাশিত বিষয়বস্তুর ওপর নিয়ন্ত্রণ,

(৩) ব্যবহারকারীর অধিকার লঙ্ঘন।

এই তিনটি বিভাগে মোট ২১টি সূচক ব্যবহার করে প্রতিটি দেশের অনলাইন স্বাধীনতার মাত্রা নির্ধারণ করা হয়।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা কিছু বড় পরিবর্তন হলো—২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার মুহাম্মদ এমদাদ-উল-বারীকে বিটিআরসির চেয়ারম্যান নিয়োগ দেয়। তিনি ইন্টারনেট বন্ধ না করার নীতি গ্রহণ করেন এবং ইন্টারনেট প্রবেশাধিকারকে মানবাধিকার হিসেবে দেখার কথা বলেন।

২০২৫ সালের মে মাসে সরকার বিতর্কিত সাইবার নিরাপত্তা আইন (সিএসএ) বাতিল করে। এর বদলে সাইবার নিরাপত্তা অধ্যাদেশ (সিএসও) জারি হয়।

এতে কিছু ভালো দিক যেমন অনলাইন হয়রানি ও যৌন নির্যাতনবিরোধী সুরক্ষা রয়েছে, তবে আগের মতোই কিছু উদ্বেগজনক বিষয়—যেমন অনলাইনে বক্তব্যের জন্য শাস্তি ও নজরদারি রয়ে গেছে।

এদিকে দক্ষিণ এশিয়ায় পাকিস্তানের চেয়ে বাংলাদেশ এগিয়ে। তবে ভারত ও শ্রীলঙ্কার চেয়ে পেছনে রয়েছে। পাকিস্তান ২৭ পয়েন্ট পেয়ে ‘মুক্ত নয়’ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। শ্রীলঙ্কা ৫৩ ও ভারত ৫১ পয়েন্ট পেয়ে দুটোই ‘আংশিক মুক্ত’ শ্রেণিতে রয়েছে।


বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি এর আরও খবর