img

সৃষ্টিকর্তার ধর্ম কি?

প্রকাশিত :  ১২:০৫, ০৩ জানুয়ারী ২০২৫
সর্বশেষ আপডেট: ১৩:০২, ০৩ জানুয়ারী ২০২৫

সৃষ্টিকর্তার ধর্ম কি?

রেজুয়ান আহম্মেদ

বিশ্বজুড়ে নানা ধর্ম ও সংস্কৃতির মাঝে এক দারুণ সত্যতা বিদ্যমান, যা আমাদের সবার কাছে উন্মুক্ত—সৃষ্টিকর্তার ভালোবাসা, তার আশীর্বাদ এবং তার উদ্দেশ্য কখনোই জাতি, ধর্ম, বা সম্প্রদায়ের সীমানায় সীমাবদ্ধ নয়। তিনি কখনোই কোনো নির্দিষ্ট ধর্মের মানুষকে বিশেষ পছন্দ করেন না। বরং, তার হৃদয়ে স্থান পায়, এমন প্রতিটি মানুষ, যারা তার সৃষ্টির প্রতি প্রেম, সহানুভূতি এবং মানবতার প্রতি নিবেদিত থাকে। তার ভালোবাসা অসীম, তা কখনো বিভাজনের শিকার হয় না। একে অপরের ধর্মীয় পরিচয় বা সামাজিক অবস্থান দ্বারা আলাদা হওয়ার কোনো কারণ নেই। সৃষ্টিকর্তা, এক আকাশের মতো, সকল মানুষকে সমানভাবে ভালোবাসেন। তার কাছে শুধুমাত্র হৃদয়ের পবিত্রতা এবং কর্মই গুরুত্বপূর্ণ।

প্রথমেই যে প্রশ্নটি আমাদের মনে আসে, তা হলো—সৃষ্টিকর্তার ধর্ম কী? আমরা কি কখনো ভেবে দেখি, তার কাছে ধর্মের প্রকৃত রূপ কী? অনেকেই মনে করেন, ধর্ম কেবল একটি বাহ্যিক পরিচয়, একটি ঐতিহ্য বা সংস্কৃতি যা মানুষকে তার সমাজ ও সংস্কৃতির মধ্যে একত্রিত করে। কিন্তু সৃষ্টিকর্তার চোখে ধর্ম একেবারে ভিন্ন—এটা মানুষের অন্তরের পরিচয়, তার ন্যায়পরায়ণতা এবং সৎ পথে চলার সংকল্প। প্রকৃত ধর্ম হলো সেই ধর্ম, যা মানুষের হৃদয়ে থাকে, যার মধ্যে থাকে অন্যদের প্রতি ভালোবাসা, সহানুভূতি এবং শান্তির বার্তা।

ভাগ্যক্রমে, বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থেও এই সত্যতা খুঁজে পাওয়া যায়। আল-কুরআনে আল্লাহ বলেছেন, “হে মানবজাতি! আমি তোমাদেরকে এক পুরুষ ও এক নারী থেকে সৃষ্টি করেছি এবং তোমাদেরকে বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে বিভক্ত করেছি, যেন তোমরা একে অপরকে চিনতে পারো। আল্লাহর কাছে সে-ই মর্যাদাশীল, যে সবচেয়ে বেশি তাকওয়াধারী।” (সূরা হুজুরাত, আয়াত ১৩)। এই আয়াতটি পরিষ্কারভাবে বলে দেয়, সৃষ্টিকর্তার কাছে মানুষের জাতি বা ধর্ম কোনো বিষয় নয়, বরং তার তাকওয়া, তার ভালোবাসা, তার ন্যায়পরায়ণতা ও অন্তরের পবিত্রতা হলো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। ধর্মের বিভাজন সেখানে অপ্রয়োজনীয়, কেননা আল্লাহর কাছে আসল বিষয় হলো মানুষের হৃদয়ের অবস্থা।

এছাড়া, ভগবদ্গীতায় ভগবান কৃষ্ণও বলেছেন, “যে আমাকে যেভাবে উপাসনা করে, আমি সেভাবেই তাকে পূর্ণ করি।” (গীতা, ৪:১১)। এটি স্পষ্টতই প্রমাণ করে যে, সৃষ্টিকর্তা উপাসনার পদ্ধতি নয়, বরং মানুষের অন্তরিকতা ও উদ্দেশ্যকে মূল্যায়ন করেন। প্রত্যেক ব্যক্তির উপাসনা এবং তার হৃদয়ের আসল অনুভূতি সৃষ্টিকর্তা গ্রহণ করেন।

বাইবেলে আরও বলা হয়েছে, “ঈশ্বর মানুষকে তার হৃদয় দেখেন, বাইরের পরিচয় নয়।” (1 শমূয়েল 16:7)। এখানেও সেই একই ধারণা প্রতিফলিত হয়—সৃষ্টিকর্তার কাছে মানুষের বাহ্যিক পরিচয় নয়, তার হৃদয়ের অভ্যন্তরের সততা এবং পবিত্রতা একমাত্র আসল।

প্রাচীন ধর্মগ্রন্থগুলোতে সৃষ্টিকর্তার দৃষ্টিভঙ্গি এক ও অভিন্ন, তিনি কখনোই ধর্মের গণ্ডিতে সীমাবদ্ধ থাকেননি। বরং, সৃষ্টিকর্তার কাছে মানুষের প্রকৃত স্থান হলো তার হৃদয়ে, যেখানে তার ভালোবাসা, সহানুভূতি এবং সহমর্মিতা থাকে। বাহ্যিক আনুষ্ঠানিকতা বা ধর্মীয় পরিচয় কখনোই তাকে সন্তুষ্ট করতে পারে না। তার কাছে যা গুরুত্বপূর্ণ তা হলো—মানুষ সৎভাবে মানবতার সেবা করছে কি না, এবং তার অন্তরে প্রকৃত প্রেম ও ভালোবাসা রয়েছে কিনা।

আজকাল আমরা অনেক সময় দেখি, ধর্মকে বিভাজনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। যেখানে মানুষ নিজেদের স্বার্থ হাসিলের জন্য, ধর্মীয় পরিচয়কে একে অপরের বিরুদ্ধে অবস্থান নেবার উদ্দেশ্যে ব্যবহার করছে। এই বিভাজন সৃষ্টিকর্তার প্রকৃত উদ্দেশ্যের বিরুদ্ধে, কারণ তিনি কখনোই চান না, তার নামের জোরে মানুষ একে অপরকে ঘৃণা করুক। বরং তিনি চান, মানুষ তার সৃষ্টিকে ভালোবাসুক, প্রকৃতির প্রতি দায়িত্বশীল হোক, এবং একে অপরের প্রতি সহানুভূতি দেখাক।

মানুষের জন্য প্রকৃত ধর্ম তখনই সম্ভব, যখন তা অন্তর থেকে নির্গত হয়—যতটা না তার আচার-আচরণে, তার চিন্তাভাবনায়, তার হৃদয়ের শান্তিতে। সৃষ্টিকর্তার কাছে পৌঁছানোর একমাত্র পথ হলো মানবতার প্রতি নিবেদন এবং মানুষের প্রতি সহানুভূতি।

এমনকি তার ভালোবাসার কোনো সীমানা নেই। তিনি জাতি, ধর্ম, বা সম্প্রদায়ের ভিত্তিতে কাউকে বিশেষ কোনো মর্যাদা দেন না। তার কাছে শুধু তারা প্রিয়, যারা সৎ, ন্যায়পরায়ণ এবং মানবতার সেবায় নিবেদিত।

তাহলে, আমাদের উচিত নিজেদের ধর্মীয় পরিচয়ের ঊর্ধ্বে উঠে মানবতার চর্চা করা, যেখানে সত্য, ন্যায় এবং ভালোবাসার মতো মৌলিক দিকগুলি মুখ্য। সৃষ্টিকর্তার শিক্ষা আমাদের জানায়, ধর্ম কেবল বাহ্যিক আচার নয়, এটি অন্তরের এক নিরব বার্তা, যা একে অপরের প্রতি ভালোবাসা ও সহানুভূতি প্রদর্শন করে। প্রকৃত ধর্ম পালন তখনই সম্ভব, যখন আমরা একে অপরকে সম্মান করি এবং সৃষ্টিকর্তার আদর্শ অনুসরণ করে মানবতার সেবা করি।

“আসুন, আমরা সৃষ্টিকর্তার এই শাশ্বত বার্তা হৃদয়ে ধারণ করি এবং ভালোবাসার শক্তিতে একত্রিত হয়ে একটি সুন্দর পৃথিবী গড়ি।”

এভাবেই সৃষ্টিকর্তার উদ্দেশ্য ও ধর্মের প্রকৃত রূপ বোঝা যায়। সৃষ্টিকর্তা সব মানুষের প্রতি সমানভাবে ভালোবাসা দেন, তাই আমাদের উচিত সকলের প্রতি ভালোবাসা এবং সহানুভূতির মাধ্যমে সত্যিকারের ধর্ম পালন করা।


রেজুয়ান আহম্মেদ: কলামিস্ট, বিশ্লেষক; সম্পাদক অর্থনীতি ডটকম
img

ইহুদি ধর্মশাস্ত্র অনুযায়ী ইসরায়েলের আয়ু আর দুবছর

প্রকাশিত :  ১১:৪৯, ১৩ এপ্রিল ২০২৫

ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর নির্বিচার গণহত্যার প্রতিবাদে রাস্তায় নেমেছেন সারা বিশ্বের লাখ লাখ মানুষ। ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা এবং গাজায় হামলা বন্ধের দাবিতে প্রতিদিন বিক্ষোভ করছেন তারা। এমনকি এসব বিক্ষোভ থেকে অনেকে ইসরায়েলের ধ্বংস চাইছেন। এরই মাঝে ইহুদিদের ধর্মীয় ন্যায়শাস্ত্রের একটি ভবিষ্যদ্বাণী নিয়ে ইসরায়েলিদের মধ্যে তৈরি হয়েছে আতঙ্ক।

ইহুদিদের ধর্মীয় ন্যায়শাস্ত্র তালমুদ-এ এই ভবিষ্যদ্বাণীটি ‘লা’নাতুল আকদিস সামিন’ বা ‘অষ্টম দশকের অভিশাপ’ হিসেবে পরিচিত। ওই ভবিষ্যদ্বাণীতে বলা হয়েছে, কোনো ইহুদি রাষ্ট্র আট দশকের বেশি টিকবে না। ভেঙে যাবে। আর সে ভাঙন হবে নিজেদের মধ্যকার জাতি-উপজাতির কোন্দলে। ভবিষ্যদ্বাণী অনুযায়ী ইসরায়েলের আয়ু আর দুবছর অবশিষ্ট আছে।

গাজায় ইসরায়েলের চলমান নৃশংসতার মধ্যে সম্প্রতি ইহুদিদের ধর্মীয় ন্যায়শাস্ত্রের ভবিষ্যদ্বাণীটি ব্যাপকভাবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। ভবিষ্যদ্বাণীটি নিয়ে ইসরায়েলের ইহুদিদের মধ্যেও তৈরি হয়েছে আতঙ্ক। অনেকে বলছেন, আগামী দুই-তিন বছরের মধ্যে ইসরায়েল রাষ্ট্রের অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যেতে পারে এই আতঙ্ক ভর করেছে নেতানিয়াহুকেও। এজন্য তিনি ইসরায়েলের জন্য হুমকি হতে পারে এমন সব কিছু ধ্বংস করে টিকে থাকতে মরিয়া।

গেল দুই হাজার বছরে বিভিন্ন স্থানে ছোট-বড় সার্বভৌম অনেক ইহুদি রাজ্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এর মধ্যে কিং ডেভিডের অর্থাৎ ইসলাম ধর্মের দাউদ নবীর রাজত্ব এবং হাসমোনিয়ান রাজত্ব ছাড়া আজ পর্যন্ত কোনো ‘ইহুদি রাজ্য’ ৮০ বছরের বেশি টেকেনি। তবে কিং ডেভিডের রাজত্ব ও হাসমোনিয়ান রাজত্ব ৮০ বছরের বেশি টিকে থাকলেও এই দুই রাজত্বের ভাঙন ধরেছিল ৮০ বছরের মাথায়। এরপর দুটো রাজত্বই টুকরো টুকরো হয়ে গিয়েছিল।

আজকের আধুনিক ইসরায়েলের জন্ম হয়েছিল ১৯৪৮ সালের ১৪ মে। ২০২৮ সালে ৮০ বছর পূরণ হবে তাদের। অর্থাৎ হাতে সময় আছে মাত্র ২ বছর। তালমুদের ভবিষ্যদ্বাণী সত্য হলে আর দুই-তিন বছরের মধ্যেই ইসরায়েল রাষ্ট্রটি ভেঙে পড়বে।

যেহেতু ইসরায়েলের ইহুদি সম্প্রদায়ের লোকজন তাদের ধর্মগ্রন্থ তাওরাতে বিশ্বাসী ও তালমুদের আদেশ-নিষেধ সংক্রান্ত প্রত্যাদেশের অনুসারী, সেহেতু ইসরায়েলের বাসিন্দাদের একটি বিরাট অংশ ‘অষ্টম দশকের অভিশাপ’ নিয়ে নিজেদের মধ্যে সিরিয়াস আলাপ-আলোচনা করে থাকেন। অনেক ইহুদি ইসরায়েলের ওপর কোনো দুর্যোগ নেমে এলে কীভাবে সেখান থেকে সরে যাবেন, তা নিয়ে আলাপ-আলোচনা করছেন।

তারা এই ন্যাচারাল ফেনোমেনন বা প্রাকৃতিক প্রপঞ্চ অমোঘ নিয়মে নেমে আসতে পারে বলে বিশ্বাস করেন। এজন্য ইসরায়েল তাদের জন্য হুমকি এমন সব কিছু ধ্বংস করে টিকে থাকতে মরিয়া। বিশ্লেষকদের ধারণা- ইসরায়েল গাজা, লেবানন, সিরিয়া, জর্ডান, ইয়েমেনসহ সব জায়গায় অনেকটা আতঙ্কিত হয়ে হামলা চালাচ্ছে, যেন তারা ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচতে পারে। তবে তারা ন্যাচারাল ফেনোমেনন বা আল্লাহর পক্ষ থেকে নেমে আসা কোনো বিপদ থেকে নিজেদের রক্ষা করতে পারবে কি না তা নিয়ে শঙ্কিত।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ‘লা’নাতুল আকদিস সামিন’ অর্থাৎ ইহুদি রাষ্ট্র ভেঙে যাওয়ার সেই ভবিষ্যদ্বাণীটি অনেক বেশি আলোচিত হচ্ছে। এমনকি বছর দুই আগে ইসরায়েলের সাবেক প্রধানমন্ত্রী এহুদ বারাকও ইসরায়েল রাষ্ট্রের অস্তিত্ব বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন।