আজ পবিত্র লাইলাতুল কদর

প্রকাশিত :  ০৯:০৭, ০১ জুন ২০১৯

আজ পবিত্র লাইলাতুল কদর

জনমত ডেস্ক: আজকের রাত বা রমজানের ২৭তম রাত সাধারণভাবে লাইলাতুল কদর বা কদরের রাত হিসেবে পরিচিত। লাইলাতুল কদর অর্থ সম্মানের রাত। সূরা কদরে ঘোষণা করা হয়েছে- লাইলাতুল কদরের মর্যাদা হাজার মাসের চেয়ে বেশি। আল্লাহতায়ালা এ রাতেই মহাগ্রন্থ আল কোরআন নাজিল করেছেন বলে জানিয়ে দিয়েছেন। তেমনি এ রাতটির মর্যাদা হাজার মাসের চেয়ে বেশি বলেও ঘোষণা করেছেন।

কিন্তু রাত কোনটি তা বলে দেননি। হাদিস শরিফেও নির্দিষ্ট করে বলা হয়নি কোনটি কদরের রাত। নিঃসন্দেহে এতে অনেক রহস্য ও তাৎপর্য রয়েছে। হয়তো আল্লাহতায়ালা ও তার রাসূল (সা.) চাননি মুসলমানরা একটি রাতের ভরসায় বসে থেকে সারা বছর বা সারা মাস অবহেলায় কাটিয়ে দিক। এজন্য এটিকে রহস্যময় করে রাখা হয়েছে। তা ছাড়া পরিশ্রম ও সাধনার মাধ্যমেই মূল্যবান কিছু অর্জন করতে হয়।

যে রাতের মূল্য হাজার মাসের চেয়ে বেশি, তা যদি সহজে পাওয়া যেত, তা হলে মানুষ হয়তো এটিকে বেশি গুরুত্ব দিত না। তাই তা অনির্দিষ্ট করে রেখে মানুষকে অনুসন্ধান করতে বলা হয়েছে।

নবীজী (সা.) রমজানের শেষ দশকের বিজোড় রাতে শবেকদর তালাশ করতে বলেছেন। কেউ কেউ রমজানের যে কোনো অংশে এ রাত হতে পারে বলে মন্তব্য করেন।

কিন্তু বেশিরভাগ মনীষীর মতে রমজানের শেষ দশকেই তা লুকানো রয়েছে। আবার কারও কারও মতে, এ রাতের তারিখ পরিবর্তনশীল। কোনো বছর ২১, কোনো বছর ২৩, কোনো বছর ২৫, কোনো বছর ২৭ আবার কোনো বছর ২৯ তারিখের রাত লাইলাতুল কদর হয়। কিন্তু সাহাবায়ে কেরাম থেকে শুরু করে পরবর্তী সময়ে অনেক মনীষী রমজানের ২৭ তারিখের রাতকে লাইলাতুল কদর হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।

তবে মনে রাখতে হবে, কদরের রাতের যে মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্য, তার মূল আকর্ষণ হল কোরআনুল কারিম। বিশ্বমানবতার মুক্তি ও কল্যাণের জন্য জীবন ব্যবস্থার চূড়ান্ত নির্দেশনা হিসেবে কোরআন শরিফ নাজিলের সঙ্গে রাতটি সম্পর্কিত হওয়ায় এত মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্যপূর্ণ হয়েছে। অতএব, এ রাতের সুফল পুরোপুরিভাবে পেতে কোরআন শরিফের সঙ্গে সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ করাই আসল কাজ।

বুঝে বুঝে কোরআন পাঠ, কোরআনের মর্ম অনুধাবন, নিয়মিত অধ্যয়ন এবং কোরআনের বিধান ও নির্দেশনা অনুসরণে জীবনযাপনই মুমিনের জীবনের সাফলতার চূড়ান্ত স্তর। লাইলাতুল কদরে নামাজ, তেলাওয়াত ও জিকির-তাসবিহের সঙ্গে যেমন অতীত জীবনের পাপ মোচনের জন্য প্রভুর কাছে আকুল আবেদন জানাতে হবে, তেমনি তার কাছে সাহায্য চাইতে হবে আল কোরআনের আলোকে আগামীর দিনগুলো আমরা যেন অতিবাহিত করতে পারি। হে আরশের মালিক মওলা! আপনি আমাদের সেই তাওফিক দিন। আমিন!

প্রধানমন্ত্রীর বাণী:

পবিত্র শবেকদর উপলক্ষে বাণী দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এতে তিনি আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ ও মুসলিম জাহানের উত্তরোত্তর উন্নতি, শান্তি ও কল্যাণ কামনা করেন।

ঐতিহাসিক বদর দিবস আজ

প্রকাশিত :  ০৬:৪৮, ২৮ মার্চ ২০২৪
সর্বশেষ আপডেট: ০৬:৫১, ২৮ মার্চ ২০২৪

আজ ১৭ রমজান। আজ থেকে প্রায় দেড় হাজার বছর পূর্বে ১৭ রমজান মদিনার মুসলিম ও কুরাইশদের একটি যুদ্ধ সংঘটিত হয়। ২য় হিজরির এই দিনে মহানবী (সা.)’র নেতৃত্বে সাহাবায়ে কেরামের ৩১৩ জনের একটি মুজাহিদ বাহিনী বদর প্রান্তরে উপস্থিত হন। ইসলামের ইতিহাসে যাকে জঙ্গে বদর বা বদর যুদ্ধ নামে অভিহিত করা হয়েছে।  মুসলমানদের সমৃদ্ধি ও শক্তিবৃদ্ধিতে ঈর্ষা ও শত্রুতা থেকেই পৌত্তলিক মক্কাবাসী রাসুলুল্লাহ (স.) ও তাঁর অনুসারীদের সাথে সংঘর্ষের সূত্রপাত ঘটায়, ইসলামের ইতিহাসে তা ’গাজওয়ায়ে বদর’ বা বদর যুদ্ধ নামে পরিচিত। এই যুদ্ধে আবু জেহেলের এক হাজার সুসজ্জিত বাহিনীর বিপরীতে মুসলমানদের সেনা সংখ্যা ছিল মাত্র ৩১৩। 

যেসব পরোক্ষ কারণে বদরযুদ্ধের সূচনা হয়, তা হলো- হিজরতের পর মদিনায় ইসলামের দৃঢ় প্রতিষ্ঠা ও প্রসারে কুরাইশদের হিংসা, আবদুল্লাহ বিন ওবাই ও ইহুদিদের যড়যন্ত্র, ইসলামের ক্রমবর্ধমান শক্তির ধ্বংস এবং নবীজি (স.)-কে চিরতরে নিশ্চিহ্ন করার হীন চক্রান্ত, কাফেরদের সন্ধি-শর্ত ভঙ্গ, বাণিজ্য বন্ধ হওয়ার আশঙ্কা, কাফেরদের দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার শঙ্কা। প্রত্যক্ষ কারণ ছিল- নাখালার ঘটনা, কাফেরদের রণপ্রস্তুতি, আবু সুফিয়ানদের অপপ্রচার, যুদ্ধ প্রস্তুতির জন্য ওহি লাভ ও মক্কাবাসীদের ক্ষোভ।

ঐতিহাসিক বদর যুদ্ধে রাসুলুল্লাহ (স.)-এর নগণ্যসংখ্যক সাহাবায়ে কেরাম আল্লাহ তাআলার গায়েবি সাহায্যে আবু জেহেলের বিশাল বাহিনীকে পর্যুদস্ত করেছিলেন। এই যুদ্ধকে কোরআন কারিমে ‘সত্য-মিথ্যার মধ্যে পার্থক্যকারী যুদ্ধ’ বলে অভিহিত করা হয়েছে।

মদিনার দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে ৮০ মাইল দূরে এই সশস্ত্র যুদ্ধ সংঘটিত হয়। ‘আশহুরে হুরুম’ বা নিষিদ্ধ চার মাসের অন্যতম হচ্ছে পবিত্র রমজান। এই রমজানেই মদিনা আক্রমণ করে বসে কাফেররা। তার বিপরীতে আত্মরক্ষামূলক যুদ্ধের কৌশল গ্রহণ করেছিলেন মুসলিমরা।

আল্লাহর ওপর পূর্ণ বিশ্বাসী মুসলমানদের অস্ত্র ছিল মাত্র তিনটি ঘোড়া, ৭০টি উট, ছয়টি বর্ম ও আটটি তলোয়ার। রসদ কম মনে হলেও বিজয় লাভে তাদের প্রধান উপকরণ ছিল ঈমানি শক্তি। মুসলমানদের বিশ্ব জয়ের সূচনা এবং সর্বোত্তম ইতিহাস রচনার ভিত্তি এই বদর যুদ্ধ। এই যুদ্ধে ৭০ জন মুশরিক নিহত ও ৭০ জন বন্দি হয়। অন্যদিকে মাত্র ১৪ জন মুসলিম বীর সেনানী শাহাদতের অমীয় সুধা পান করেন।

বদরের এ ঘটনা থেকে মুসলিম জাতীর সবচেয়ে বড় শিক্ষণীয় বিষয় হলো—মুসলিম উম্মাহ এমন একটি জাতি, যে নীরবে নিভৃতে অত্যাচার-অনাচার-জুলুম সহ্য করবে না। প্রয়োজনে জীবন দিয়ে হলেও সমাজে শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখাকে কর্তব্য হিসেবে গ্রহণ করবে। 

ইসলামকে সমুন্নত রাখার জন্য কাফের-মুশরিকদের বিরুদ্ধে জিহাদ করবে। ঈমান ও কুফরের মধ্যে পার্থক্য সূচিত করবে। বদর যুদ্ধ মুসলমানকে সর্বাবস্থায় আল্লাহর সাহায্য কামনা করতে শেখায়। আল্লাহর ওপর দৃঢ় ঈমান ও নির্ভর হওয়া শেখায়। যুদ্ধে অবিচল থাকা ও সবর করা শেখায়।

বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে মুসলিমরা ইসলামবিদ্বেষীদের জুলুমের শিকার হচ্ছেন এবং ইসলামের শত্রুরা ইসলামের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে। আর মুসলমানরা বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে নীরবে বসে আছেন। তা মোটেও ইসলামের শিক্ষা নয়। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে বদরের যুদ্ধ থেকে শিক্ষা নেওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।