img

ড. ইউনূস সরকারের সমালোচনা করা রিপোর্ট প্রত্যাহার ব্রিটিশ এমপিদের

প্রকাশিত :  ১৮:৪৫, ১৯ জানুয়ারী ২০২৫

ড. ইউনূস সরকারের সমালোচনা করা রিপোর্ট প্রত্যাহার ব্রিটিশ এমপিদের

কমনওয়েলথের অল পার্টি পার্লামেন্টারি গ্রুপ (এপিপিজি) গত নভেম্বরে বাংলাদেশ নিয়ে একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে। সেই রিপোর্টে ড. ইউনূস নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের সমালোচনা করা হয়। তবে রিপোর্টটি প্রকাশের পর অভিযোগ ওঠে, এটি ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনা সরকারের প্রতি পক্ষপাতদুষ্ট এবং এর তথ্যগুলো সঠিক নয়। এমন সমালোচনার পর ওই রিপোর্ট প্রত্যাহার করেছেন ব্রিটিশ এমপিরা।

ব্রিটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ান জানিয়েছে, লেবার দলের একজন এমপি হাউস অব কমন্সে এই রিপোর্টের বিষয়ে আপত্তি তুলে ধরেন। এরপর ব্রিটিশ এমপিরা প্রশ্নবিদ্ধ প্রতিবেদনটি প্রত্যাহারের পক্ষে মতামত দেন। রিপোর্টটি এখন পর্যালোচনাধীন একটি অভ্যন্তরীণ নথি হিসেবে রয়ে গেছে এবং এটি আর প্রচার করা হবে না বলে নিশ্চিত করেছেন কর্মকর্তারা।

‘দ্য অনগোয়িং সিচুয়েশন ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক রিপোর্টটি নভেম্বরে সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। এর তিন মাস আগে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হন শেখ হাসিনা। হাসিনার কর্তৃত্ববাদী শাসনের বিরুদ্ধে ছাত্র-নেতৃত্বাধীন বিক্ষোভকে দমনে সর্বোচ্চ নৃশংসতা দেখায় নিরাপত্তা বাহিনী। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারা ব্যর্থ হয় এবং হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান। তবে হাসিনা দেশ ছাড়ার আগে অন্তত ১,০০০ মানুষ নিহত হয়।

গার্ডিয়ান লিখেছে- এপিপিজির ওই প্রতিবেদনে হাসিনার উত্তরসূরি শান্তিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ধারাবাহিক সমালোচনা করা হয়। ওই রিপোর্টে ড. ইউনূস প্রশাসনের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে, আইনকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে ইউনূস প্রশাসন। একই সঙ্গে কট্টর ইসলামপন্থিদের ক্ষমতায়ন করছে।

ওই রিপোর্টে বলা হয়, হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর আওয়ামী লীগের সাবেক মন্ত্রী, নেতা, এমপি, সাবেক বিচারপতি, পণ্ডিতজন, আইনজীবী এবং সাংবাদিকদের হত্যার প্রমাণ পাওয়া গেছে এবং এসব হত্যায় জড়িত বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার। এক্ষেত্রে তারা নয়া দিল্লিভিত্তিক রাইটস অ্যান্ড রিস্ক এনালাইসিস গ্রুপের কাছ থেকে তথ্য পাওয়ার কথা বলে।

রিপোর্টে আরও দাবি করা হয়, শেখ হাসিনা দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়ার পর বেশিরভাগ হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। অর্থাৎ জুলাই আন্দোলনে হাজার হাজার মানুষ নিহত হওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে বেশিরভাগ মানুষ অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর নিহত হয়েছেন বলে দাবি করা হয়। কিন্তু আগস্টে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক কমিশনার যে রিপোর্ট প্রকাশ করে এই রিপোর্ট তার বিপরীত।

জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক কমিশনার তার রিপোর্টে বলেন, বেশির ভাগ মৃত্যু এবং আহতের ঘটনা ঘটেছে নিরাপত্তা রক্ষাকারী বাহিনী ও আওয়ামী লীগের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছাত্র সংগঠনের কারণে। এপিপিজির রিপোর্টে বলা হয়, ঢাকায় নতুন সরকার নিরপরাধ এক লাখ ৯৪ হাজার মানুষের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেছে। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলেন, সম্ভাব্য অপরাধে জড়িত বলে পুলিশ তার রিপোর্টে যে সংখ্যা উল্লেখ করেছে, এই সংখ্যা সেটার মতোই।

মিথ্যা তথ্য থাকা এবং ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনা সরকারের প্রতি পক্ষপাতদুষ্ট দাবি করে বিশেষজ্ঞরা এই রিপোর্টের সমালোচনা করেন। ব্রিটিশ লেবার দলের এমপি রূপা হক সম্প্রতি বাংলাদেশে সময় কাটিয়েছেন। তিনি এ সপ্তাহে হাউস অব কমন্সে এই রিপোর্টের সমালোচনা করেন।

লন্ডনে স্কুল অব অরিয়েন্টাল অ্যান্ড আফ্রিকান স্টাডিজের প্রফেসর নাওমি হোসেন বলেন, এপিপিজির ওই রিপোর্ট মৌলিকভাবে ত্রুটিপূর্ণ। জবাবদিহিতার হাতিয়ার হিসেবে এটা পুরোপুরি ব্যর্থ। এপিপিজির একজন মুখপাত্র বলেছেন, তারা কমনওয়েলথ অব নেশন্স-এর দিকে প্রতিষ্ঠান হিসেবে বেশি মনোনিবেশ করবে। তারা দেশভিত্তিক আর রিপোর্ট প্রকাশ করবে না।


যুক্তরাজ্য এর আরও খবর

ইংলিশ চ্যানেলে নৌকা ডুবে শিশুসহ নিহত ৫ | JANOMOT | জনমত

img

বাংলাদেশি নই বলা টিউলিপ বাংলাদেশের এনআইডি-পাসপোর্টধারী

প্রকাশিত :  ০৫:৫৩, ২২ এপ্রিল ২০২৫

জুলা্ই অভ্যুত্থানে পালিয়ে যাওয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাগ্নি টিউলিপ রিজওয়ানা সিদ্দিক যুক্তরাজ্যের ক্ষমতাসীন লেবার পার্টির একজন সংসদ সদস্য। ২০১৭ সালে এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছিলেন, ‘আমি বাংলাদেশি নই, আমি একজন ব্রিটিশ এমপি।’ তবে সরকারি নথি বলছে—টিউলিপ রিজওয়ানা সিদ্দিক একজন বাংলাদেশি নাগরিক। তার নামে রয়েছে জাতীয় পরিচয়পত্র, পাসপোর্ট ও কর শনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন)। এমনকি তিনি জমা দিয়েছেন আয়কর রিটার্নও। এসব প্রমাণপত্র বলছে, তিনি একজন বাংলাদেশি নাগরিক ও ভোটার। 

নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, শেখ হাসিনা ও টিউলিপ সিদ্দিকসহ শেখ পরিবারের ১০ সদস্যের এনআইডি ‘লক’ করা হয়েছে।

দুদক সূত্রে জানা যায়, টিউলিপ রিজওয়ানা সিদ্দিকের জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) নম্বর- ৫০৬৬.....৮।

এটি ২০১১ সালের ৩ জানুয়ারি ইস্যু করা হয়েছিল। এনআইডি অনুসারে তার নাম টিউলিপ রিজওয়ানা সিদ্দিক (TULIP RIZWANA SIDDIQ)। বাবার নাম শফিক আহমেদ সিদ্দিক এবং মাতার নাম রেহানা সিদ্দিক। জন্ম তারিখ ১৬ সেপ্টেম্বর ১৯৮২।

রক্তের গ্রুপ- বি (+) পজিটিভ। ঠিকানা লেখা রয়েছে বাসা/হোল্ডিং : ৫৪, গ্রাম/রাস্তা- ০৫, ধানমণ্ডি আ/এ, ডাকঘর : নিউ মার্কেট-১২০৫, ঢাকা সিটি করপোরেশন, ঢাকা। যা কিনা আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার বাসভবন সুধা সদনের হোল্ডিং নম্বর।

এনআইডি ছাড়াও টিউলিপ সিদ্দিক নির্বাচন কমিশনের তালিকাভুক্ত ঢাকার ভোটার। ২০২৪ সালের ১৯ ডিসেম্বরের হালনাগাদ তথ্যানুসারে তার ভোটার নম্বর ২৬১৩.......৯।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, টিউলিপ সিদ্দিকের রয়েছে বাংলাদেশি পাসপোর্টও। তার বাংলাদেশি প্রথম পাসপোর্ট নম্বর- কিউ .....৯৯ (Q .....99)। ২০০১ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর ইস্যু হওয়া প্রথম পাসপোর্টে জন্মস্থান ও পাসপোর্ট প্রদানের স্থানে লন্ডন, ইউকে (যুক্তরাজ্য) উল্লেখ করা হয়েছে। অর্থাৎ লন্ডনে থাকা অবস্থায় পাসপোর্টটি করা হয়। যেখানে উচ্চতা পাঁচ ফুট, পেশা- শিক্ষার্থী, নাম রিজওয়ানা সিদ্দিক, বাবা ড. শফিক আহমেদ সিদ্দিক এবং মাতার নাম রেহানা সিদ্দিক উল্লেখ আছে। 

ওই পাসপোর্টের মেয়াদ ২০০৬ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর শেষ হয়েছে। মেয়াদ শেষ হলে ২০১১ সালে নবায়নের জন্য আবেদন করা হয়। সেই পাসপোর্টের নম্বর- এএ ......৪ (AA ......4)। এটি ইস্যু করা হয় ২০১১ সালের ৩ জানুয়ারি। মেয়াদ শেষ হয় ২০১৬ সালের ২ জানুয়ারি। পাসপোর্টের টাইপ অর্ডিনারি (ORDINARY) এবং পাসপোর্ট প্রদানের স্থান ছিল আগারগাঁও। অর্থাৎ বাংলাদেশে বসেই পাসপোর্টটি নেওয়া হয়েছে। সেখানে ইমার্জেন্সি কন্টাক্ট পারসন হিসেবে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর প্রতিরক্ষাবিষয়ক উপদেষ্টা তারেক আহমেদ সিদ্দিকের নাম ও ঠিকানা দেওয়া হয়েছে।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ক্ষমতাচ্যুত হন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর শেখ হাসিনার শাসন আমলের নানা ধরনের দুর্নীতির অভিযোগ বড় পরিসরে তদন্ত শুরু করে দুদক। তার অংশ হিসেবে টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে প্লট বরাদ্দে অনিয়মের অভিযোগ তদন্ত করছে সংস্থাটি।

যুক্তরাজ্যের রাজধানী লন্ডনের হ্যাম্পস্টিড অ্যান্ড হাইগেট আসনের এমপি টিউলিপ সিদ্দিক। বাংলাদেশে তার বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হওয়ার পর আলোচনা-সমালোচনার মধ্যে গত জানুয়ারিতে যুক্তরাজ্যের অর্থ মন্ত্রণালয়ের ‘সিটি মিনিস্টার’-এর পদ থেকে পদত্যাগ  করেন। প্লট বরাদ্দে অনিয়মের অভিযোগের মামলায় দুদকের অভিযোগপত্র আমলে নিয়ে সম্প্রতি টিউলিপ সিদ্দিক, শেখ হাসিনাসহ ৫৩ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন ঢাকার একটি আদালত।

বাংলাদেশে এই গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির বিষয়ে লন্ডনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখোমুখি হন টিউলিপ সিদ্দিক। জবাবে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষগুলোর কেউ আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেনি। আমার আইনজীবীরা উদ্যোগী হয়ে বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষকে চিঠি লিখেছিলেন। তবে তারা কখনো এর জবাব দেয়নি।’


যুক্তরাজ্য এর আরও খবর