
গাছে ফুল নয়, ফুটছে লাশ: গণিত ভবনের মেধাবী ছাত্রের আত্মহননের শোকগাথা!

রেজুয়ান আহম্মেদ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণকেন্দ্র গণিত ভবন, যেখানে একসময় জ্যামিতি আর ক্যালকুলাসের জটিল সমীকরণে মেধাবীরা ভবিষ্যতের স্বপ্ন বুনত, আজ সেই ভবন নিস্তব্ধ। গাছের শাখায় ঝুলে থাকা একটি তরুণ জীবনের নিথর দেহ কেবল একটি প্রশ্নই বারবার সামনে নিয়ে আসে—\"কেন আমরা ব্যর্থ হলাম?\"
এই মৃত্যুর কালো ছায়া শুধু এক পরিবারের নয়, গোটা ক্যাম্পাসের বুকে গভীর ক্ষত তৈরি করেছে। যে ক্যাম্পাস একসময় তরুণদের কোলাহল, স্বপ্ন আর উৎসবের রঙে ভরপুর ছিল, তা আজ শোক আর হাহাকারে মোড়ানো। গণিত ভবনের প্রতিটি দেয়াল আজ যেন সাক্ষী—কীভাবে অমানবিক প্রতিযোগিতা আর সহানুভূতির অভাব এক মেধাবী জীবনকে শেষ করে দিল।
একটি স্বপ্নের শেষ অধ্যায়:
পরীক্ষার ফলাফল কি একটি জীবনের সমাপ্তি ঘটাতে পারে? পরিবার, বন্ধু, শিক্ষক সবাই মিলে যে তরুণের জীবনে স্বপ্নের বীজ বুনেছিল, সেই জীবন এভাবে নিভে যেতে পারে? প্রতিযোগিতা আর সামাজিক চাপ যেন ধীরে ধীরে আমাদের তরুণদের শিকড়টিই দুর্বল করে দিচ্ছে।
সেই ছাত্রটি যিনি একদিন গণিত ভবনের ক্লাসরুমে মনোযোগ দিয়ে লেকচার নিতেন, তার নোটগুলো আজ অনাথ হয়ে পড়ে আছে টেবিলে। গণিতের সমীকরণ আজ তার কাছেও যেন জটিল থেকে জটিলতর। অথচ প্রশ্নটি খুব সহজ—\"কেন?\"
কেন এই ব্যর্থতা?
বিশ্ববিদ্যালয় কি সত্যিই শুধু জ্ঞানচর্চার স্থান? নাকি এটি একটি নির্মম প্রতিযোগিতার অঙ্গন, যেখানে জীবনের মূল্য শূন্যে নেমে আসে? এই নির্মম বাস্তবতা আমাদের সমাজের গভীর সমস্যা তুলে ধরে। প্রতিযোগিতা যদি মানবিকতার চেয়ে বেশি গুরুত্ব পায়, তাহলে সেই সমাজ তরুণদের স্বপ্ন নয়, কেবল হতাশার বীজ বুনতে পারে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের দেয়াল, ক্লাসরুমের বেঞ্চ, করিডোরের প্রতিটি কোণ জানে সেই মেধাবী ছাত্রের গল্প। কিন্তু তার কষ্ট, তার নিঃসঙ্গতা কেউই বুঝতে চায়নি।
শোক নয়, সমাধান চাই:
আজ ক্যাম্পাসের প্রতিটি গাছ যেন আরেকটি প্রশ্ন করে—\"কবে আমরা শুনবো এই কান্নার ভাষা?\" এই তরুণ জীবনের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে আমাদের শিক্ষা নিতে হবে। সমাজের প্রতিটি স্তরে, পরিবার থেকে শুরু করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, এমনকি রাষ্ট্রের পর্যায়ে, আমাদের আরও মানবিক হতে হবে। প্রতিটি জীবনই অমূল্য, প্রতিটি স্বপ্নই পবিত্র।
শেষ কথা:
গাছে লাশ নয়, ফুটুক ফুল। প্রতিটি তরুণের জীবনকে সযত্নে লালন করতে হবে। এমন এক দিনের প্রত্যাশা করি, যখন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি ছাত্র-ছাত্রী জীবনকে ভালোবাসবে, হতাশায় হারিয়ে যাবে না।
এই মৃত্যুর শোকগাথা যেন আমাদের সমাজের বিবেককে জাগিয়ে তোলে। আমাদের এখনই বদলাতে হবে নিজেদের। লাশের বদলে ফুল ফুটানোর অঙ্গীকার করতে হবে।