img

সিলেটে তিন বৃহৎ হাওরের প্রাকৃতিক নয়নাভিরাম সৌন্দর্য

প্রকাশিত :  ১০:৩০, ২৯ জানুয়ারী ২০২৫
সর্বশেষ আপডেট: ১০:৩৫, ২৯ জানুয়ারী ২০২৫

সিলেটে তিন বৃহৎ হাওরের প্রাকৃতিক নয়নাভিরাম সৌন্দর্য

সংগ্রাম দত্ত: প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি সিলেট বিভাগ। কে বিভাগে রয়েছে দেশের শীর্ষ দুটি জলাভূমি। চায়ের রাজধানী অপর্যটন নগরী হিসেবে খ্যাত শ্রীমঙ্গলে রয়েছে হাইল হাওর ।

হাকালুকি হাওর: 

হাকালুকি হাওর এর ৭০%  মৌলভীবাজার ও ৩০% সিলেট জেলায় অবস্থিত। ভারতের আসাম সীমান্তবর্তী বাংলাদেশের পূর্ব অংশে অবস্থিত একটি জলাভূমি হল হাকালুকি হাওর । এটি বাংলাদেশের বৃহত্তম এবং এশিয়ার অন্যতম বৃহৎ জলাভূমি। পরিবেশগত গুরুত্বপূর্ণ এলাকা (ইসিএ) হিসেবে ঘোষিত এই হাওড়ের আশেপাশে প্রায় ১,৯০,০০০ মানুষ বসবাস করেন। জলাভুমির যথাযথ ব্যবহার এবং সংরক্ষণের ওপর গুরুত্বের কারনে এই জলাভূমিটির সুরক্ষার ওপর আন্তর্জাতিকভাবে মনোনিবেশ করা হয়েছে। 

পূর্বে পাথারিয়া পাহাড় এবং পশ্চিমে ভাটেরা পাহাড়ের মধ্যবর্তী স্থানে বিশাল নিম্নাঞ্চল জুড়ে হাকালুকি হাওড় অবস্থিত। এটি এশিয়ার অন্যতম বৃহত্তম মিঠাপানির জলাভূমি। এর আয়তন ১৮,১১৫ হেক্টর, তন্মধ্যে শুধুমাত্র বিলের আয়তন ৪,৪০০ হেক্টর। এটি মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা (৪০%), কুলাউড়া (৩০%), এবং সিলেট জেলার ফেঞ্চুগঞ্জে (১৫%), গোলাপগঞ্জ (১০%) এবং বিয়ানীবাজার (৫%) জুড়ে বিস্তৃত। ভূতাত্ত্বিকভাবে এর অবস্থান, উত্তরে ভারতের মেঘালয় পাহাড় এবং পূর্বে ত্রিপুরা পাহাড়ের পাদদেশ। ভূতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্যের কারণে উজানে প্রচুর পাহাড় থাকায় হাকালুকি হাওরে প্রায় প্রতি বছরই আকষ্মিক বন্যা হয়। এই হাওরে ৮০-৯০টি ছোট, বড় ও মাঝারি বিল রয়েছে। শীতকালে এসব বিলকে ঘিরে পরিযায়ী পাখিদের বিচরণে মুখর হয়ে উঠে গোটা এলাকা  এ বিশাল জলরাশির মূল প্রবাহ হলো দুটো প্রধান নদী জুড়ি ও ফানাই, বর্ষাকালে ভারি বৃষ্টিপাতের ফলে হাওড় সংলগ্ন সমগ্র এলাকা প্লাবিত হয়ে সাগরের রূপ ধারণ করে। হাওড়ের স্থায়ী জলাশয়গুলোর পানিতে নিমজ্জিত, ভাসমান, জলজ, তৃণ এবং দূর্বাঘাস এবং নল খাগড়া জাতীয় উদ্ভিদ দেখতে পাওয়া যায়। শীতকালে মৎস্য আহরণ এবং অতিথি পাখিদের আগমন পর্যটকদের নয়ন মন সার্থক করে তোলে। হাকালুকি হাওরে ৫২৬ প্রজাতির উদ্ভিদ, ৪১৭ প্রজাতির পাখি, এর মধ্যে ১১২ প্রজাতির অতিথি পাখি ও ৩০৫ প্রজাতির দেশীয় পাখি। এছাড়া ১৪১ প্রজাতির অনান্য বন্যপ্রাণী, ১০৭ প্রজাতির মাছ, তন্মধ্যে ৩২ প্রজাতি বিভিন্ন পর্যায়ে বিপন্নপ্রায়। এছাড়াও রয়েছে নানা ধরনের কীট-পতঙ্গ, জলজ ও স্থলজ ক্ষুদ্র অনুজীব। হাকালুকি হাওরকে প্রতিবেশ সংকটাপন্ন এলাকা বিবেচনা করা হয়। এই জলাভূমির সংরক্ষণে আন্তর্জাতিক গুরুত্ব এবং টেকসই ব্যবহারের জন্য রামসার এলাকা হিসেবে এটি সংরক্ষিত ।

টাঙ্গুয়ার হাওর: 

টাঙ্গুয়ার হাওর বাংলাদেশের বৃহত্তম গ্রুপ জলমহালগুলোর অন্যতম। বাংলাদেশের উত্তর-পূর্ব প্রান্তেসুনামগঞ্জ জেলার ধর্মপাশা এবং তাহিরপুর উপজেলাস্থিত জীববৈচিত্রে সমৃদ্ধ মিঠা পানির এ হাওর বাংলাদেশের ২য় রামসার এলাকা। ভারতের মেঘালয়ের খাসিয়া, জৈন্তা পাহাড়ের পাদদেশে সারি সারি হিজল-করচ শোভিত, পাখিদের কলকাকলি মুখরিত টাংগুয়ার হাওর মাছ, পাখি এবং অন্যান্য জলজ প্রাণীর এক বিশাল অভয়াশ্রম। বর্তমানে মোট জলমহাল সংখ্যা ৫১টি এবং মোট আয়তন ৬,৯১২.২০ একর। তবে নলখাগড়া বন, হিজল করচ বনসহ বর্ষাকালে সমগ্র হাওরটির আয়তন দাড়ায় প্রায় ২০.০০০ একর। টাংগুয়ার হাওর প্রকৃতির অকৃপণ দানে সমৃদ্ধ। এ হাওর শুধু একটি জলমহাল বা মাছ প্রতিপালন, সংরক্ষণ ও আহরণেরই স্থান নয়। এটি একটি মাদার ফিশারী। হিজল করচের দৃষ্টি নন্দন সারি এ হাওরকে করেছে মোহনীয়। এ ছাড়াও নলখাগড়া, দুধিলতা, নীল শাপলা, পানিফল, শোলা, হেলঞ্চা, শতমূলি, শীতলপাটি, স্বর্ণলতা, বনতুলসী ইত্যাদি সহ দু’শ প্রজাতিরও বেশী গাছগাছালী রয়েছে এ প্রতিবেশ অঞ্চলে। জেলা প্রশাসনের কার্যকর ও টেকসই ব্যবস্থা গ্রহণের ফলে বর্তমানে এ হাওরে রয়েছে ছোট বড় ১৪১ প্রজাতির ২০৮ প্রজাতির পাখি, ১ প্রজাতির উভচর প্রাণী, ৩৪ প্রজাতির সরীসৃপ, ৬ প্রজাতির কচ্ছপ, ৭ প্রজাতির গিরগিটি এবং ২১ প্রজাতির সাপ।নলখাগড়া বন বৃদ্ধি পেয়েছে কয়েকগুণ। শীত মৌসুমে অতীতের সকল রেকর্ড ভেঙ্গে ব্যাপক পাখির আগমন ও অবস্থানে মুখরিত হয় টাঙ্গুয়ার হাওর। বিলুপ্ত প্রায় প্যালাসেস ঈগল, বৃহদাকার গ্রে-কিংষ্টর্ক, শকুন এবং বিপুল সংখ্যক অতিথি পাখি ছিল টাঙ্গুয়ার হাওরের অবিস্মরণীয় দৃশ্য। স্থানীয় জাতের পাখি পানকৌড়ি, কালেম, বৈদর, ডাহুক নানা প্রকার বালিহাঁস, গাংচিল, বক, সারস প্রভৃতির সমাহারও  বিস্ময়কর। সাধারণ হিসাবে বিগত শীত মৌসুমের প্রতিটিতে ২০/২৫ লক্ষ পাখি টাঙ্গুয়ার হাওরে ছিল বলে অনুমান করা হয়। কোন কোন স্থানে  কিলোমিটারের বেশী এলাকা জুড়ে শুধু পাখিদের ভেসে থাকতে দেখা যায়। টাঙ্গুয়ার হাওর মাছ-পাখী এবং উদ্ভিদের পরস্পর নির্ভরশীল এক অনন্য ইকোসিস্টেম। মাছের অভয়াশ্রম হিসাবে এর গুরুত্ব সবচেয়ে বেশী।

হাইল হাওর :

সাগরসদৃশ বিস্তৃত জলরাশির প্রান্তর হাইল হাওর বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য  বাংলাদেশের একটি প্রধান বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য । এটি সিলেট অববাহিকায় বসবাসকারী এবং পরিযায়ী জলপাখিদের জন্য অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ জলাভূমি। গ্রীষ্মকালে অন্যান্য সমস্ত উৎস শুকিয়ে গেলে আশেপাশে বসবাসকারী বাসিন্দাদের জন্য এটি গুরুত্বপূর্ণ জলের উৎস। অভয়ারণ্যটি দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের মৌলভীবাজার জেলার সদর উপজেলা ও শ্রীমঙ্গল উপজেলায় অবস্থিত।

প্রচুর লতা ও গুল্মজাতীয় উদ্ভিদ থাকার কারণে স্থানীয়দের কাছে এটি লতাপাতার হাওর নামেও পরিচিত।

হাওরের চিরায়ত প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, নীল আকাশ ও পানির মিতালী যেন শিল্পীর তুলিতে আঁকা ছবির বাস্তব রূপ। সেকারণে হাওড়ের বুকে প্রকৃতিকে উপভোগ করতে সারাদেশের ভ্রমণকারীরা এই ভূস্বর্গে ছুটে আসেন। হাইল হাওরের অপরূপ সৌন্দর্যের পাশাপাশি জীববৈচিত্রেরও কোন ঘাটতি নেই। এই হাওরে  প্রায় ১৬০ প্রজাতির পাখির বিচরণ লক্ষ করা যায়।

এই হাইল হাওর হলো এমন একটি জায়গা যেখানে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সাথে মিলিয়ে মধুর ভাসা পড়ে। হাইল হাওর বাংলাদেশের অন্যতম আকর্ষণীয় স্থানগুলির মধ্যে একটি।

হাইল হাওরের আকর্ষণীয়তা বিবেচনা করা যায় প্রথমেই এই জায়গার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। হাওরের পানিতে প্রতিবিম্ব হলো নীল আকাশ এবং পানির মিতালী, যেন শিল্পীর তুলিতে আঁকা ছবির বাস্তব রূপ। এই অপরূপ দৃশ্য দেখতে মন খুলে দিয়ে প্রকৃতির সৌন্দর্যে মজা নিতে প্রেরিত করে।

অভয়ারণ্যটি মূলত দক্ষিণ, পশ্চিম ও পূর্ব দিকের পাহাড় এবং উত্তরে মনু ও কুশিয়ারা নদীর সমভূমির মধ্যে অবস্থিত। পাহাড় চা বাগান এবং প্রাকৃতিক বন ব্লক দ্বারা আবৃত। জলাভূমির জল বর্ষাকালে প্রায় ১৪০০০ হেক্টর  জুড়ে বিস্তৃত হয় এবং গ্রীষ্মকালে ৩০০০ হেক্টর  এ সঙ্কুচিত হয়। এটি ১৩১ টি বিল এবং সরু খালের মধ্যে সীমাবদ্ধ। জলাভূমির আশেপাশে ৬২টি গ্রামে প্রায় দুই লক্ষাদিক লোক বাস করে।  বর্ষার পর পানি কমে যাওয়ার ফলে স্থানীয় লোকজন ধানের ক্ষেতে রূপান্তরিত জমিকে উন্মুক্ত করে দেয়।  বাংলাদেশ সরকার এবং ইউনাইটেড স্টেটস এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট ১৯৯৮ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত 'কমিউনিটি হাজবেন্ডারির ​​মাধ্যমে জলজ বাস্তুতন্ত্রের ব্যবস্থাপনা' নামে একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করে । 

এটি শ্রীমঙ্গল থেকে ৩ কিলোমিটার  উত্তর-পশ্চিমে এবং মৌলভীবাজার থেকে ১৪ কিলোমিটার  দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত ।

অভয়ারণ্যে প্রচুর জাতের জলপাখি পাওয়া যায়, যেখানে শীতকালে ৪০০০০ থেকে ৫০০০০ জনসংখ্যা থাকে। এর মধ্যে রয়েছে কম হুইসলিং হাঁস , ফুলভাস হুইসলিং হাঁস , কটন পিগমি গুজ , গারগনি , নর্দার্ন পিনটেল , নর্দার্ন শোভেলার , কমন টিল , কমন পোচার্ড , টুফটেড ডাক , গ্যাডওয়াল , স্পটবিল হাঁস , বার -হেডেড গ্রুড্লাগোস , ডুমবিল হাঁস টিল , ম্যালার্ড , রেড-ক্রেস্টেড পোচার্ড , কমন পোচার্ড , বেয়ারের পোচার্ড , গ্রেব , লিটল কর্মোরান্ট , ইন্ডিয়ান পন্ড হেরন , ক্যাটেল এগ্রেট , লিটল এগ্রেট , ইন্টারমিডিয়েট এগ্রেট , গ্রেট এগ্রেট , ওয়াটার কক , মুরহেন , বেগুনি পচার্ড , কমন টেল জ্যাকানা , ব্রোঞ্জ-পাখাওয়ালা জাকানা , সাথে হেরন, কিংফিশার, এগ্রেটস এবং টার্নস। রাপ্টরদের মধ্যে রয়েছে অস্প্রে , ইউরেশিয়ান মার্শ হ্যারিয়ার এবং পাইড হ্যারিয়ার । 

বিপদগ্রস্ত পাখির মধ্যে রয়েছে বেয়ারের পোচার্ড, বৃহত্তর দাগযুক্ত ঈগল এবং প্যালাসের মাছের ঈগল । 

 বার্ডলাইফ ইন্টারন্যাশনাল দ্বারা অভয়ারণ্যটিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ পাখি এলাকা (IBA) মনোনীত করা হয়েছে ।

এই অঞ্চলে অন্যান্য বন্যপ্রাণীর মধ্যে রয়েছে প্রধানত উভচর, সরীসৃপ এবং কচ্ছপ। মাছের মধ্যে রয়েছে কাতলা কাতলা , লাবেও রোহিতা , এল ক্যালবাসু , এল গনিয়াস , সিররিনা মৃগালা , বারবাস এসপিপি , ওয়ালাগো আট্টু , মাইস্টাস টেংরা , মাইস্টাস আওর এবং ওমপোকপাবদা , গাদুসিয়া চাপরা , ক্লুপিয়া এসপিপি , হেস্টেরসচুসট্রুস্টোস নোটোপেসিস নোটোপেসি , ক্লুপিয়া এসপিপি। Channa spp., Anabas testudineus এবং Colis afasciota . ম্যাক্রোব্রাকিয়াম গোত্রের স্বাদু পানির চিংড়ি সাধারণ। 

এই হাইল হাওরের আয়তন ১৪ হাজার হেক্টর। এর মধ্যে শ্রীমঙ্গল উপজেলায় পড়েছে ১০ হাজার হেক্টর। এর ভেতরে বিল রয়েছে ৫৯টি। যার মধ্যে ২০ একরের নিচে ৩৯টি এবং ২০টি ২০ একরের ওপরে। অবশিষ্ট ৪ হাজার হেক্টর জলাভূমি মৌলভীবাজার সদর উপজেলায়। যার মধ্যে বিল রয়েছে ৫৫টি। এরই মধ্যে ১০ থেকে ১২ টির কোনও অস্তিত্ব নেই।

এই হাইল হাওর এতদাঞ্চলের মাছের চাহিদা পূরণ হয়ে থাকে। হাইল হাওরের অধিকাংশ সরকারি বিলই এখন ব্যক্তিগত মৎস্য খামারে পরিণত হয়েছে।

বিলগুলো হাওরের চারদিকে ছড়িয়ে রয়েছে। অনেকের ব্যক্তিগত জমির সঙ্গে খাস জমিও পড়েছে।  একশ্রেণীর ধনাঢ্য প্রভাব প্রতিপত্তিশালী গোষ্ঠী  হাইল হাওরের ভূমি দখল করে ফিসারী তৈরি করার কারণে এরই মধ্যে বেশ কয়েকটি বিল সম্পূর্ণভাবে বিলীন হয়ে গেছে।

হাওরের বিলে প্রায় শত প্রজাতির দেশীয় মাছ পূর্বে পাওয়া যেত। বর্তমানে প্রায় ৩০ প্রজাতির মাছ বিলুপ্ত হয়ে গেছে। এই হাওরে এসে মিশেছে অর্ধশতাধিক ছড়া যা গোফলা নদীতে এসে পড়েছে। অনেকে সেই ছড়াগুলোও দখল করে নিয়েছে, নিচ্ছে। এতে পানিপ্রবাহ পরিবর্তন হচ্ছে। ক্ষতির মুখে পড়ছেন হাওরের বুরো চাষিরাও।

সিলেটের খবর এর আরও খবর

img

সিলেটের নিখোঁজ ছয় শ্রমিকের লোকেশন টেকনাফ: পুলিশ

প্রকাশিত :  ১০:১৪, ২২ এপ্রিল ২০২৫

কক্সবাজার জেলায় কাজের সন্ধানে এসে সিলেটের জকিগঞ্জ উপজেলার এক গ্রামের ছয়জন শ্রমিক নিখোঁজ হয়েছেন। তারা পেশায় সবাই রাজমিস্ত্রী। সাত দিন ধরে নিখোঁজ থাকা শ্রমিকরা সবাই গত ১৫ এপ্রিল কাজের উদ্দেশ্যে জকিগঞ্জ উপজেলার খলাছড়া ইউনিয়নের পশ্চিম লোহারমহল গ্রাম থেকে কক্সবাজারের উদ্দেশ্য বের হয়েছিলেন।  

পুলিশ বলছে, তাদের সবার ফোন বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। সর্বশেষ নিখোঁজদের মধ্যে দুজনের মোবাইল ফোন ট্র্যাকিং করে তাদের অবস্থান টেকনাফের রাজারছড়া এলাকা পাওয়া যাচ্ছে। এদিকে টেকনাফের রাজারছড়া মানবপাচার ও অপহরণকারীদের মূল আস্তানা। তাই সন্দেহ করা হচ্ছে নিখোঁজদের মানবপাচার ও অপহরণকারী চক্রের ফাঁদে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।  

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জকিগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জহিরুল ইসলাম মুন্না বলেন, কক্সবাজারের কাজের উদ্দেশ্যে বের হওয়া আমার এলাকার ছয় যুবক নিখোঁজ রয়েছেন। তারা এর আগেও চট্রগ্রাম-কক্সবাজারের কাজ করতে গিয়েছিলেন। আমরা পরিবারকে সহায়তা করছি। তাদের লোকেশন টেকনাফের রাজারছড়া গ্রামে পাওয়া যাচ্ছে। তাই সেখানকার থানা পুলিশকে অবহিত করা হয়েছে।

টেকনাফ মডেল ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন বলেন, ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছি। আমরাও তাদের লোকেশন রাজারছড়া এলাকা পাচ্ছি। বিষয়টি খুব গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে। কেননা এসব এলাকায় অপহরণ ও মানবপাচার চক্রের আনাগোনা বেশি। 

নিখোঁজ ৬ জন হলেন, জকিগঞ্জ উপজেলার খলাছড়া ইউনিয়নের পশ্চিম লোহারমহল গ্রামের ফারুক আহমদের ছেলে মারুফ আহমদ (১৮), আজির উদ্দিনের ছেলে শাহিন আহমদ (২১), মৃত লুকুছ মিয়ার ছেলে রশিদ আহমদ (২০), সফর উদ্দিনের ছেলে খালেদ হাসান (১৯) ও মৃত সরবদির ছেলে আব্দুল জলিল (৫৫) ও মৃত দুরাই মিয়ার ছেলে এমাদ উদ্দিন (২২)।  

নিখোঁজ পরিবারের ভাষ্যমতে, গত ১৫ এপ্রিল বিকেলে সিলেটের জকিগঞ্জ উপজেলার খলাছড়া ইউনিয়নের পশ্চিম লোহারমহল গ্রামের ৫ তরুণসহ ছয় জন কাজের উদ্দেশ্যে কক্সবাজারের উদ্দেশে রওয়ানা দেন। ১৬ এপ্রিল কক্সবাজার পৌঁছার পর পরিবারের লোকজনের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। কিন্তু এরপর থেকে তাদের মোবাইল বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। এঘটনায় নিখোঁজদের পরিবারে চরম দুশ্চিন্তা দেখা দিয়েছে। নিখোঁজ সবাই রাজমিস্ত্রীর কাজ করেন।

নিখোঁজ রশিদের ভাই আব্দুল বাছিত বলেন, রশিদ কয়েক বছর থেকে চট্টগ্রাম এবং কক্সবাজারের এক ঠিকাদারের অধীনে কাজ করতো। বিভিন্ন সময়ে বাড়িতে আসা যাওয়া ছিল। এবার কক্সবাজার যাওয়ার পর থেকে রশিদসহ সঙ্গে থাকা সবার মোবাইল ফোন বন্ধ দেখাচ্ছে। তাদের লোকেশন টেকনাফের রাজারছড়া পাওয়া যাচ্ছে। আমরা খুব চিন্তিত কারণ টেকনাফ অপহরণ এবং মানবপাচারপ্রবণ এলাকা।

জকিগঞ্জ উপজেলার চৌকিদার ফয়সাল আহমেদ বলেন, আমার এলাকার ছয় শ্রমিক প্রায় সময় কক্সবাজারের কাজ করতে যায় বাবুল নামে এক ঠিকাদারের অধীনে। বাবুল ঠিকাদারের কাজ না থাকায় টেকনাফের এক পরিচিত ছেলে সাথে টেকনাফে কাজ করতে বের হন। তখন থেকে তাদের ফোন বন্ধ রয়েছে।

টেকনাফ সদর ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান বলেন, বিষয়টি আমি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জেনেছি। আমিও চেষ্টা করছি তাদের খোঁজ খবর নেওয়ার জন্য। তাদের লোকেশন যে এলাকায় পাওয়া যাচ্ছে সেটি ভয়ংকর এলাকা। কেননা এর আগেও থ্রি মার্ডার  সেখানে (রাজারছড়া) হয়েছিল।


সিলেটের খবর এর আরও খবর