img

বিশ্বনেতাদের সামনে মোদিকে অগ্রাহ্য করলেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট

প্রকাশিত :  ০৫:০৪, ১২ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

বিশ্বনেতাদের সামনে মোদিকে অগ্রাহ্য করলেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে ফ্রান্সে গেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সেখানে বিশ্বনেতাদের সঙ্গে করমর্দনের সময় মোদিকে অগ্রাহ্য করেছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখোঁ। 

গতকাল মঙ্গলবার (১১ ফেব্রুয়ারি) এক প্রতিবেদনে টার্কিশ সংবাদ সংস্থা আনাদুলু এজেন্সি এ তথ্য জানায়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, প্যারিসের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) শীর্ষ সম্মেলনে এই বিব্রতকর দৃশ্য দেখা গেছে। সম্মেলনে অংশ নেয়া বিশ্বনেতাদের স্বাগত জানাতে সম্মেলনস্থলে হাজির হন ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল। এ সময় মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্সসহ বিশ্বনেতাদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন তিনি।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে দেখা যায়, জেডি ভ্যান্সের পাশে বসা নরেন্দ্র মোদি হাত বাড়িয়ে দিলে তাকে পুরোপুরি এড়িয়ে যান ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট। তবে মোদিকে উপেক্ষা করলেও আশপাশে থাকা ইউরোপীয় কমিশনের সভাপতি উরসুলা ভন ডার লেইনসহ অনেক অতিথির সঙ্গে হাত মেলাতে দেখা যায় ফরাসি প্রেসিডেন্টকে।

এ ঘটনাটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। কেউ কেউ এ ঘটনাকে কূটনৈতিক অবজ্ঞা হিসেবে উল্লেখ করেছেন। আবার কেউ কেউ বলছেন অনিচ্ছাকৃতভাবে এটি হতে পারে। যদিও এআই শীর্ষ সম্মেলনের আগে নৈশভোজে যোগ দেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী। সেখানে মোদীকে আলিঙ্গন করে স্বাগত জানান ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল। 

এ ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মোদী লেখেন, ‘‘প্যারিসে বন্ধু তথা প্রেসিডেন্ট ম্যাখোঁর সঙ্গে দেখা করে খুশি হয়েছি।’’

আন্তর্জাতিক এর আরও খবর

img

‘র’-এর ওপর নিষেধাজ্ঞার সুপারিশ মার্কিন সংস্থার, ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ভারতের

প্রকাশিত :  ০৬:৩২, ২৭ মার্চ ২০২৫

যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি সংস্থা ইউনাইটেড স্টেটস কমিশন অন ইন্টারন্যাশনাল রিলিজিয়াস ফ্রিডম বা ইউএসসিআইআরএফ ধর্মীয় স্বাধীনতা গুরুতরভাবে লঙ্ঘনের অভিযোগে ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালাইসিস উইং- \'র\' এর ওপর নিষেধাজ্ঞার সুপারিশ করেছে । এ বিষয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে শুধু ওই প্রতিবেদনের সমালোচনাই নয়, বরং সংস্থাটির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছে ভারত।

বুধবার সন্ধ্যায় ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়ালের দেওয়া ওই বিবৃতিতে শুধু মার্কিন কমিশনের ওই প্রতিবেদনকে খারিজই করা হয়নি, ইউএসসিআইআরএফ-কে আন্তর্জাতিকভাবে একটি \'উদ্বেগের সংস্থা\' (এনটিটি অফ কনসার্ন) হিসেবে চিহ্নিত করারও দাবি তুলেছে ভারত।

এর আগে মঙ্গলবার ইউনাইটেড স্টেটস কমিশন অন ইন্টারন্যাশনাল রিলিজিয়াস ফ্রিডম (ইউএসসিআইআরএফ)র বার্ষিক প্রতিবেদন ২০২৫ প্রকাশিত হয় যেখানে \'র\' এর মতো প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ধর্মীয় স্বাধীনতা গুরুতরভাবে লঙ্ঘনের অভিযোগে নিষেধাজ্ঞা আরোপের সুপারিশ করা হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের প্রতি।

দিল্লিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওই বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ওই সংস্থা যেভাবে পরিস্থিতির \'পক্ষপাতপূর্ণ ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপূর্ণ মূল্যায়ন\'কে তাদের প্যাটার্ন করে তুলেছে এবং \'তথ্যকে বিকৃত করে পেশ করছে\' তাতে ওই বর্ণনাই তাদের প্রাপ্য।

সরাসরি না বললেও ভারত ওই রিপোর্টটিকে কার্যত \'ফেইক\' বলেই দাবি করেছে।

কী বলা হয়েছে ইউএসসিআইআরএফ’র প্রতিবেদনে?

২০২৩ সালে নিউইয়র্কে একজন আমেরিকান শিখ নাগরিক হত্যাচেষ্টায় ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালাইসিস উইং- \'র\' এর একজন কর্মকর্তা ও দেশটির ছয়জন কূটনীতিকের জড়িত থাকার অভিযোগ আবারও সামনে এনেছে ইউএসসিআইআরএফ।

আন্তর্জাতিক বিভিন্ন প্রতিবেদন ও কানাডা সরকারের গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে এ অভিযোগ এসেছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে সংস্থাটি ২০২৫ সালের বার্ষিক প্রতিবেদনে।

মঙ্গলবার (২৫ মার্চ) তাদের এই প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।

সেখানে বিকাশ ইয়াদভ নামে ভারত সরকারের একজন কর্মচারীর নাম উল্লেখ করে বলা হয়েছে, হত্যাচেষ্টায় তার সম্পৃক্ততার ব্যাপারে অভিযোগপত্র দিয়েছে মার্কিন বিচার বিভাগ।

কমিশনটির প্রতিবেদনে ভারতের বিকাশ ইয়াদভের মত ব্যক্তি ও \'র\' এর মতো প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ধর্মীয় স্বাধীনতা গুরুতরভাবে লঙ্ঘনের অভিযোগে নিষেধাজ্ঞা আরোপে সুপারিশ করা হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের প্রতি। ভারতকে \'কান্ট্রি অফ পার্টিকুলার কনসার্ন\' বা সিপিসি-এর তালিকাভুক্ত করতেও সুপারিশ করা হয়েছে ওই প্রতিবেদনে।

আর, সিপিসি\'র সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, যেসব দেশে সরকার \'বিশেষ করে গুরুতর\' ধর্মীয় স্বাধীনতা লঙ্ঘনে সম্পৃক্ত হয় বা লঙ্ঘনের ব্যাপারে সহনশীল হয় সেসব দেশ কান্ট্রি অফ পার্টিকুলার কনসার্ন হিসেবে বিবেচিত হয়।

প্রতিবেদনে ভারতে সংখ্যালঘুদের অধিকার লঙ্ঘন এবং তাদের জীবন ও সম্পদের ওপর আক্রমণের বেশ কিছু ঘটনার কথাও উল্লেখ করা হয়েছে।

ইউনাইটেড স্টেটস কমিশন অন ইন্টারন্যাশনাল রিলিজিয়াস ফ্রিডমের ওয়েবসাইটে বলা আছে, এটি যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় সরকারের অধীন একটি সংস্থা যারা স্বাধীনভাবে কাজ করে এবং ১৯৯৮ সালের আন্তর্জাতিক ধর্মীয় স্বাধীনতা আইন বা আইআরএফএ আওতায় এটি গঠিত হয়েছে।

এই সংস্থাটি সারা বিশ্বে ধর্ম বা ধর্মীয় বিশ্বাসের স্বাধীনতার সার্বজনীন অধিকার (এফওআরবি) পর্যবেক্ষণ করে এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং কংগ্রেসের কাছে নীতিগত সুপারিশ করে। এসব সুপারিশ বাস্তবায়ন করা হলো কিনা তাও পর্যবেক্ষণ করে।

ভারতের ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া

ইউএসসিআইআরএফ’র প্রতিবেদন প্রকাশের এক দিন পর ভারত সরকার এ বিষয়ে তাদের প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়, মার্কিন ওই কমিশনের ২০২৫ সালের বার্ষিক রিপোর্ট তাদের নজরে এসেছে, কিন্তু আরও একবার সেখানে তাদের পক্ষপাতপূর্ণ ও রাজনৈতিক দুরভিসন্ধিমূলক প্যাটার্নই পরিলক্ষিত হচ্ছে।

যে সংস্থা এরকম \'এজেন্ডা-ভিত্তিক\' দাবি করে থাকে, তাদের অথেন্টিসিটি বা বৈধতা কতটা, সে প্রশ্নও তোলা হয়েছে।

\"ইউএসসিআইআরএফ যেভাবে কয়েকটি বিচ্ছিন্ন ঘটনাকে বারবার ভুলভাবে তুলে ধরতে চাইছে এবং ভারতের প্রাণবন্ত ও বহুত্ববাদী সমাজকে নিয়ে প্রশ্ন তুলতে চাইছে, তাতে বোঝা যায় ধর্মীয় স্বাধীনতা নিয়ে তাদের সত্যিকারের উদ্বেগ নেই – বরং এর পেছনে একটা ইচ্ছাকৃত ডিজাইন আছে\", মন্তব্য করা হয়েছে ওই বিবৃতিতে।

ভারত আরও দাবি করেছে, ওই প্যানেল যে ভারতের আসল চিত্রটা তুলে ধরবে তারা সেটা আশাও করে না।

\"১৪০ কোটি মানুষ এই দেশে থাকেন এবং পৃথিবীতে যতগুলো ধর্মের অস্তিত্ব আছে, তার সবগুলোর প্রতিনিধিত্ব এখানে আছে। কিন্তু ভারতের এই বহুত্ববাদী কাঠামো এবং বিভিন্ন সম্প্রদায়ের সম্প্রীতিতে ভরা সহাবস্থানকে ইউএসসিআইআরএফ স্বীকৃতি দেবে, এটা আমরা কখনও আশাও করি না,\" বলা হয়েছে ওই বিবৃতিতে।

রিপোর্টের যেটা মূল বক্তব্য– তার সবগুলোকেই ভারত সরাসরি অস্বীকার করেছে।

উল্লেখ্য, ২০২৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রে ভারতীয় বংশোদ্ভুত মার্কিন নাগরিক গুরপতওয়ান্ত সিং পান্নু, যিনি শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা বলেও অভিযোগ রয়েছে, তাকে হত্যার ষড়যন্ত্র নিয়ে উত্তেজনা তৈরি হয়। এই হত্যাচেষ্টায় জড়িত থাকার অভিযোগে একজন ভারতীয়কে গ্রেপ্তার করা হয়।

যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাটর্নি জেনারেলের দপ্তর এ নিয়ে যে অভিযোগপত্র প্রকাশ করেছে, নিখিল গুপ্তা নামের গ্রেপ্তার ওই ব্যক্তি গুরপতওয়ান্ত সিং পান্নুকে হত্যার জন্য একজন ভাড়াটে খুনি নিয়োগের চেষ্টা করেছিলেন। তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই ষড়যন্ত্র ব্যর্থ করে দেয়।

এই ঘটনা প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে এতটাই বিচলিত করেছিল যে সিআইএ-র ডিরেক্টর উইলিয়াম বার্নস আর ডিরেক্টর অফ ন্যাশনাল ইন্টেলিজেন্স অ্যাভ্রিল হেইনসকে তিনি সশরীরে ভারতে পাঠিয়েছিলেন।ভারত ওই সময় এই ঘটনায় উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠনের কথা জানায়।

ওই ঘটনায় কয়েক মাস আগে কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো অভিযোগ তুলেছিলেন যে তার দেশের এক শিখ নাগরিক, যিনিও একজন খালিস্তানি নেতা ছিলেন, তাকে হত্যা করেছে ভারত সরকারের এজেন্টরা।

ওই ব্যাপারে কানাডার কাছে নির্ভরযোগ্য তথ্য আছে বলেও দাবি করেছিলেন মি. ট্রুডো। ওই অভিযোগ তোলার পরে ভারতের সঙ্গে কানাডার এক অভূতপূর্ব কূটনৈতিক দ্বন্দ্ব শুরু হয় যা এখনও পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়নি। (সূত্র: বিবিসি বাংলা)