
হৃদয়ের প্রথম সেঞ্চুরিতে বাংলাদেশের সংগ্রহ ২২৮

ব্যাটিং ব্যর্থতা আর বাংলারদেশ ক্রিকেট দল যেনো একে অপরের পরিপূরক। প্রত্যেক ম্যাচেই একই গল্প। চলমান চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। ভারতের বিপক্ষে খেলতে নেমে ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ে বাংলাদেশ। সেখান থেকে বাংলাদেশকে টেনে তুলেন জাকের আলী অনিক ও তাওহীদ হৃদয়। দুজনের রেকর্ড জুটিতেই আজ দুঃসময়কে পেছনে ফেলেছে বাংলাদেশ। হৃদয় তো আজ ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরিও তুলে নিয়েছেন।
দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে আজ বৃহস্পতিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) ভারতের বিপক্ষে টস জিতে ব্যাটিংয়ে নামে বাংলাদেশ তবে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুটা ভালো হয়নি টাইগারদের। ব্যাটারদের আসা যাওয়ার মিছিলে মাত্র ৩৫ রানেই ৫ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে টাইগাররা। এরপরেই জুটি গড়ে দলকে টেনে তোলার চেষ্টা করছেন জাকের আলী অনিক ও তাওহীদ হৃদয়। জাকের আলী অনিক ৬৮ রানে ফিরে গেলেও নিজের ওয়ানডে ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি তুলে নিয়েছেন তাওহীদ হৃদয়।
তার সেঞ্চুরিতে ভর করে ৪৯ ওভার ৪ বলে ২২৮ রান তুলে অলআউট হয়েছে বাংলাদেশ। দলের হয়ে সর্বোচ্চ ১০০ রান করেন তিনি। ভারতের হয়ে ৫৩ রানে ৫ উইকেট শিকার করেছেন মোহাম্মদ শামি।
বাংলাদেশের হয়ে আজ ওপেনিংয়ে নামেন তানজিদ হাসান তামিম ও সৌম্য সরকার। তবে নিজেদের জুটিকে বেশিদূর নিয়ে যেতে ব্যর্থ হন তারা। রানের খাতা খোলার আগেই আজ সাজঘরে ফিরে যান সৌম্য সরকার। ৫ বল খেলে কোনো রান না করেই মোহাম্মদ শামির শিকার হয়ে সাজঘরে ফিরে যান তিনি। তার বিদায়ে ১ রানেই প্রথম উইকেট হারায় বাংলাদেশ।
সৌম্য সরকারের মতো আজ ব্যর্থ ছিলেন টাইগার অধিনায়খ নাজমুল হোসেন শান্তও। সৌম্যর মতো তিনিও শূন্য রান করেই ফিরে যান সাজঘরে। তার বিদায়ে ২ রানেই ২ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে টাইগাররা।
২ রানেই ২ উইকেট হারানোর জুটি গড়েন তানজিদ হাসান তামিম ও মেহেদী হাসান মিরাজ। এই জুটিতে ভর করে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে বাংলাদেশ। তবে বেশিদূরে এগোনোর আগেই এই জুটিকে থামান মোহাম্মদ শামি।
মোহাম্মদ শামির বলে প্রথম স্লিপে শুভমান গিলের হাতে ক্যাচ তুলে দিয়ে সাজঘরে ফিরে যান মেহেদী হাসান মিরাজ। আউট হওয়ার আগে করেন ১০ বলে ৫ রান। তার বিদায়ে ২৬ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে বাংলাদেশ।
মিরাজের বিদায়ের পর একপ্রান্ত আগলে রাখা তানজিদ হাসান তামিমও ফিরে যান সাজঘরে। ২৫ বলে ২৫ রান করে অক্ষর প্যাটেলের বলে লোকেশ রাহুলের হাতে ক্যাচ তুলে দিয়ে ফিরে যান সাজঘরে।
তানজিদ হাসান তামিমের বিদায়ের পরের বলেই সাজঘরে ফিরে যান অভিজ্ঞ মুশফিকুর রহিমও। ক্রিজে নেমে প্রথম বলেই সাজঘরে ফিরে গেলেন তিনি। তার বিদায়ে ৩৫ রানেই ৫ উইকেট হারিয়ে খাদের কিনারে চলে যায় বাংলাদেশ।
এরপরেই জুটি গড়ে দলকে টেনে তোলার চেষ্টা করছেন জাকের আলী অনিক ও তাওহীদ হৃদয়। এই জুটিতে ভর করে ২৮ ওভার ১ বলে দলীয় শতক পূর্ণ করে বাংলাদেশ। এরপরেই জোড়া অর্ধশতক তুলে নেন এই দুই ব্যাটার।
জাকের আলী অনিক ৮৭ বলে ও তাওহীদ হৃদয় ৮৫ বলে তুলে নেন অর্ধশতক। জাকিরের এটি দ্বিতীয় ও তাওহীদ হৃদয়ের এটি সপ্তম ওয়ানডে অর্ধশতক। তাদের জোড়া অর্ধশতকে ভর করে সংগ্রহ বাড়াতে থাকে বাংলাদেশ।
তবে এরপরেই জাকের আলীকে ফিরিয়ে এই জুটি ভাঙেন মোহাম্মদ শামি। মোহাম্মদ শামির বলে লং অনে বিরাট কোহলির হাতে ক্যাচ তুলে দিয়ে সাজঘরে ফিরে যান ১১৪ বলে ৬৮ রান করা জাকের আলী অনিক। তার বিদায়ে ভাঙে ১৫৪ রানের জুটি।
১৫৪ রানের জুটিতে তারা দুটি রেকর্ড গড়েছেন। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে ষষ্ঠ উইকেটে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড হয়েছিল ১৯ বছর আগে। যা আজ নিজেদের দখলে নিয়েছেন হৃদয়-জাকের। এ ছাড়া ভারতের বিপক্ষেও ওয়ানডের ষষ্ঠ উইকেটে সর্বোচ্চ রানের জুটি এটি।
জাকের আলী অনিকের বিদায়ের পর ক্রিজে আসেন রিশাদ হোসেন। তাওহীদ হৃদয়ের সঙ্গে জুটি গড়ে ভারতের বোলারদের ওপর চড়াও হয়ে খেলতে থাকেন তিনি। তবে বেশিদূর এগোনোর আগেই তাকে থামান হার্শিত রানা।
হার্শিত রানার বলে থার্ড ম্যানে হার্দিক পান্ডিয়ার হাতে ক্যাচ তুলে দিয়ে সাজঘরে ফিরে যান রিশাদ হোসেন। আউট হওয়ার আগে করেন ১২ বলে ১৮ রান। তার বিদায়ে ২১৪ রানে ৭ উইকেট হারায় বাংলাদেশ।
রিশাদ হোসেনের বিদায়ের পর সাজঘরে ফিরে যান তানজিম হাসান সাকিবও। রানের খাতা খোলার আগেই সাজঘরে ফিরে যান তিনি।
এই দুই ব্যাটারের বিদায়ের পর তাসকিন আহমেদকে নিয়ে লড়াই চালিয়ে যেতে থাকেন তাওহীদ হৃদয়। এদিন পায়ে আঘাত পান হৃদয়। শেষ দিকে মনে হচ্ছিল, মাঠ ছেড়ে উঠে যেতে হতে পারে হৃদয়ের। দৌড়ানো দূরে থাক, সিঙ্গেলস নিতে হাঁটতেই যেন কষ্ট হচ্ছিল। খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়েই শেষ পর্যন্ত ম্যাজিক ফিগারে পৌঁছান।
একপ্রান্ত আগলে রেখে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি তুলে নেন তিনি। ভারতের বিপক্ষে আজ তিনি ১১৪ বলে তুলে নেন সেঞ্চুরি। যার মধ্যে রয়েছে ছয়টি চার ও দুইটি ছয়ের মার।
সেঞ্চুরি তুলে নেওয়ার পর আর রান করতে পারেননি তিনি। ১১৮ বলে ১০০ রান করে সাজঘরে ফিরে যান তিনি। তার বিদায়ে ৪৯ ওভার ৪ বলে ২২৮ রান তুলে অলআউট হয়েছে বাংলাদেশ। দলের হয়ে সর্বোচ্চ ১০০ রান করেছেন হৃদয়। তাছাড়া ফিফটি পেয়েছেন জাকের। ভারতের হয়ে ৫৩ রানে ৫ উইকেট শিকার করেছেন মোহাম্মদ শামি।