img

রাতে দেরিতে খাওয়ার অভ্যাস? জানুন কী হয়

প্রকাশিত :  ০৮:২১, ২৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

রাতে দেরিতে খাওয়ার অভ্যাস? জানুন কী হয়

ব্যস্ততার কারণে কিংবা অভ্যাসবশত অনেকেই রাতে দেরিতে খাবার খেয়ে থাকেন। বিশেষ করে শহুরে জীবন, অফিসের ব্যস্ততা, কিংবা বিনোদনের কারণে অনেকেই নিয়মিত রাত ১১টা বা তারও পরে রাতের খাবার খেয়ে থাকে। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছে, এই অভ্যাস শরীরের উপর গুরুতর প্রভাব ফেলতে পারে।

ঘুমের ব্যাঘাত থেকে শুরু করে ওজন বৃদ্ধি এবং হৃদরোগের ঝুঁকি বৃদ্ধি পর্যন্ত দেখা দিতে পারে। তাই যাদের রাতে দেরিতে খাবার অভ্যাস, তাদের এখনি উচিত নতুন করে খাবারের সময় ঠিক করা। মাঝে মাঝে দেরিতে খাবার খেলে তেমন কোনও ক্ষতি নেই, তবে প্রতিদিন যদি রাত ৯ টার পর খাবার খাওয়া হয় , তবে তা স্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

ওজন বৃদ্ধির ঝুঁকি: যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পেরেলম্যান স্কুল অব মেডিসিন পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, যারা রাতে দেরিতে খায়, তাদের শরীরে বেশি ক্যালরি জমা হয় এবং ওজন বৃদ্ধির সম্ভাবনা বেড়ে যায়। কারণ, রাতে খাওয়া খাবার সহজে হজম হয় না, ফলে এটি চর্বি হিসেবে জমতে থাকে। আমাদের শরীর সূর্যের আলোর সঙ্গে যুক্ত। তাই আমরা যত দেরিতে খাই, খাবার তত বেশি আমদের অন্ত্রে থেকে যায়। যা হজমকে প্রভাবিত করে। যেহেতু সন্ধ্যার পর থেকেই বিপাক ক্রিয়া আস্তে আস্তে ধীর হয়ে যায়, তাই রাতের খাবার চর্বিতে রূপান্তরিত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থেকে। যার ফলে ধীরে ধীরে শরীরের অবাঞ্ছিত ওজন বৃদ্ধি পেতে পারে।

ঘুমের ব্যাঘাত: খাওয়ার পরপরই শুয়ে পড়লে শরীরের বিপাকক্রিয়া স্বাভাবিকভাবে কাজ করতে পারে না, ফলে অনিদ্রা বা ঘুমের ব্যাঘাত দেখা দিতে পারে। এছাড়াও দেরিতে খাবার খেলে অদ্ভুত স্বপ্নও দেখতে পারেন। 

২০১৫ সালে দুই কানাডিয়ান মনোবিজ্ঞানীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের ওপর একটি গবেষণা চালিয়েছে। যার ফলাফলে দেখা গেছে যে ছাত্রগুলো দেরিতে রাতের খাবার খায় তাদের অস্বাভিক স্বপ্ন দেখার সম্ভাবনা বেশি। বিশ্রামের সময় খাবার হজম করতে শরীরের সমস্যা হওয়ার কারণেও এটি হতে পারে। 

এছাড়াও পেনসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পেরেলম্যান স্কুল অফ মেডিসিনের গবেষণা সহযোগী অধ্যাপক নামনি গোয়েল বলেন, দেরিতে খাওয়ার ফলে হরমোন চিহ্নিতকারীর নেগেটিভ প্রোফাইল তৈরি হতে পারে, যেমন উচ্চ গ্লুকোজ এবং ইনসুলিন, যা ডায়াবেটিসের সঙ্গে জড়িত। কোলেস্টেরল এবং ট্রাইগ্লিসারাইড, যা হৃদরোগের সমস্যা এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যগত অবস্থার সঙ্গে যুক্ত।

দুর্বল হজম: রাতে দেরিতে খেলে খাবার যথাযথভাবে হজম হতে পারে না। ঘুমাতে যাবার কিছুক্ষণ সময় আগে খাবার খেলে পাকস্থলী স্বাভাবিকভাবে হজমের কাজ সম্পন্ন করতে পারে না, ফলে অম্লতা, গ্যাস, বুক জ্বালা ও বদহজমের সমস্যা হতে পারে। এছাড়াও এতে দীর্ঘমেয়াদী পাকস্থলীর সমস্যাও দেখা দিতে পারে। 

হৃদরোগ এবং উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি বেশি: এছাড়াও রাতে দেরিতে খাওয়ার ফলে উচ্চ রক্তচাপসহ বিভিন্ন রোগ ভুগতে হয়। এমনকি এটি হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে। বিশেষ করে যারা থাইরয়েড রোগ, পিসিও-ডি এবং উচ্চ রক্তচাপের সমস্যায় ভুগছেন, তাদের জন্য এটি আরও ক্ষতিকর হতে পারে। 

আমরা আমাদের রাতের খাবারে সোডিয়াম সমৃদ্ধ খাবার খেতে অভ্যস্ত। শাক-সবজি শুরু করে মাছ-মাংস পর্যন্ত, আমাদের খাবারে প্রায়শই উচ্চমাত্রার লবণের মাত্রা থাকে। রাতের বেলা এই লবণাক্ত খাবার খাওয়ার ফলে এটি উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি বাড়ায়।

ডায়াবেটিসের ঝুঁকি: 

আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশন প্রকাশিত এক গবেষণায় বলা হয়েছে, রাতের খাবার দেরিতে খাওয়ার ফলে ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স বাড়তে পারে, যা টাইপ-২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বৃদ্ধি করে। বিশেষ করে মিষ্টি বা কার্বোহাইড্রেট যুক্ত খাবার দেরিতে খেলে রক্তে শর্করার মাত্রা দ্রুত বৃদ্ধি পায়।

 রোগ প্রতিরোগ ক্ষমতা হ্রাস: রাতে দেরি করে খেলে দেহে ফ্রি রেডিক্যাল বেড়ে গিয়ে কোষের স্বাভাবিক কার্যক্ষমতা নষ্ট হয়। এ ছাড়া এতে রোগ প্রতিরোগ ক্ষমতা কমে যায়, ক্যানসারের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়।

লাবণ্য নষ্ট হয়ে যাওয়া: রাতে দেরি করে খেলে বৃদ্ধিজনিত হরমোনের উৎপাদন ব্যাহত হয়। এতে বিপাকের বিঘ্ন ঘটে শরীরের লাবণ্য নষ্ট হয়।

আদর্শ রাতের খাবারের সময়

 স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দেন যে রাতের খাবারের জন্য সর্বোত্তম সময় হল সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ৮টার মধ্যে, যা শরীরকে ঘুমানোর আগে খাবার হজম করার জন্য পর্যাপ্ত সময় দেয়। 

খাবারের তালিকায়, হালকা ও সহজপাচ্য খাবার বেছে নিন। পর্যাপ্ত পানি পান করুন  এবং খাওয়ার পরপরই না শুয়ে কিছুক্ষণ হাঁটুন। সুস্থ থাকতে হলে সঠিক সময়ে সুষম খাবার খাওয়া এবং পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেওয়া জরুরি। তাই সময়মত খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন এবং সুস্থ জীবনযাপন করুন!


img

চশমা ছাড়াই বাচ্চাদের দৃষ্টি সমস্যা সমাধানে আসছে এল আই ড্রপ

প্রকাশিত :  ১৩:২২, ২৬ এপ্রিল ২০২৫
সর্বশেষ আপডেট: ১৩:২৫, ২৬ এপ্রিল ২০২৫

দূরের জিনিস দেখতে সমস্যা হচ্ছে মানেই চিকিৎকের কাছে যাও। তারপর পাওয়ার দেখে চশমা দেওয়া হবে। এই ঝামেলা থেকে রেহাই দিতেই নতুন আই ড্রপ আসছে দেশের বাজারে। 

মূলত মায়োপিয়ার চিকিৎসায় এই আই ড্রপের ব্যবহার হবে। মায়োপিয়া মানেই হল দূরের দৃষ্টি ঝাপসা হতে থাকা। দেশে মায়োপিয়া আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা বাড়ছে। ক্রমাগত মোবাইল বা ট্যাবে চোখ, ঘণ্টার পর ঘণ্টা টিভি দেখা, কম আলোয় মোবাইল স্ক্রল করার কারণেই দৃষ্টিজনিত সমস্যায় ভুগছে শিশু ও কমবয়সিরা।

নতুন ফর্মুলায় আই ড্রপটি তৈরি হয়েছে বলে জানিয়েছে নির্মাতা সংস্থা এনটড ফার্মাসিউটিক্যালস। তাদের দাবি, এই ড্রপটি চোখে দিলে মায়োপিয়ার ঝুঁকি কমবে। যে শিশুর দূরের দৃশ্য দেখতে সমস্যা হচ্ছে, স্কুলের ব্ল্যাকবোর্ডে লেখা পড়তে পারছে না অথবা চোখে যন্ত্রণা, চোখ দিয়ে পানি পড়ার সমস্যা হচ্ছে, তারা এই আই ড্রপটি ব্যবহার করতে পারে। 

তবে মায়োপিয়া যদি ধরা পড়ে, তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শেই আই ড্রপটি নিতে হবে। কেন্দ্রীয় ড্রাগ নিয়ামক সংস্থা আই ড্রপটির ব্যবহারে ছাড়পত্র দিয়েছে। খুব তাড়াতাড়ি সেটি দেশের বাজারে চলে আসবে বলে জানা গেছে।

আই ড্রপটি ছোটদের জন্যই তৈরি করা হয়েছে। ৬ থেকে ১২ বছরের শিশুদের দেওয়া যাবে। এনটড ফার্মাসিউটিক্যালস জানিয়েছে, ওষুধটি তিন পর্যায়ের ট্রায়ালের পরে তার কার্যকারিতা সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া গেছে। এখনো অবধি কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে দেখা যায়নি।

কিছুদিন আগেই ‘দ্য ল্যানসেট’ মেডিক্যাল জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণাপত্রে বলা হয়, ২০৫০ সালের মধ্যে বিশ্বের অর্ধেক সংখ্যক মানুষ মায়োপিয়ায় আক্রান্ত হবেন। বিশেষ করে শিশুরা এই অসুখে বেশি ভুগবে। মায়োপিয়ায় আক্রান্ত রোগী কাছের জিনিস দেখতে পারলেও দূরের জিনিস দেখতে তাদের সমস্যা হয়। মায়োপিয়ার অন্যতম বড় কারণ হল সূর্যের আলোয় কম সময় কাটানো। 

গবেষকেরা জানাচ্ছেন, প্রাকৃতিক আলোর চেয়ে কৃত্রিম আলোতেই বেশি অভ্যস্ত এখনকার প্রজন্ম। শিশুদের ক্ষেত্রে সূর্যের আলোয় বেশিক্ষণ থাকলে রেটিনায় ডোপামিন নামক যৌগের ক্ষরণ বেড়ে যায়। এই যৌগ দৃষ্টিশক্তির উন্নতিতে এবং মায়োপিয়া প্রতিরোধে সাহায্য করে। কিন্তু অন্ধকারে যদি মোবাইল বা ট্যাব দেখার অভ্যাস থাকে, তাহলে বিদ্যুতিন ডিভাইস থেকে বেরোনো নীল আলো রেটিনার দফারফা করে দেয়। তখন কেবল দৃষ্টিজনিত সমস্যা নয়, চোখে যন্ত্রণা, চোখ লাল হয়ে ওঠা, পানি পড়া, মাথাযন্ত্রণা, এমনকি মাইগ্রেনও ভোগাতে পারে।

নতুন আই ড্রপটি চোখ খারাপ হওয়া থেকে বাঁচাবে। তবে পাশাপাশি শিশুদের চোখের যত্ন নিতে ও ‘স্ক্রিন টাইম’ বেঁধে দেওয়ারও পরামর্শ দিচ্ছেন গবেষকেরা।