img

সৌদির সঙ্গে মিলিয়ে দেশের ৮৫ গ্রামে রোজা শুরু

প্রকাশিত :  ০৬:৫৬, ০১ মার্চ ২০২৫
সর্বশেষ আপডেট: ০৭:০৭, ০১ মার্চ ২০২৫

সৌদির সঙ্গে মিলিয়ে দেশের ৮৫ গ্রামে রোজা শুরু

সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে রোজা পালন ও রমজানের আনুষ্ঠানিকতা শুরু করেছেন চাঁদপুর, পিরোজপুর, ভোলা ও শরীয়তপুরের ৮৫টি গ্রামের বাসিন্দারা। 

শুক্রবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) দিবাগত রাতে তারাবির নামাজ আদায় ও সেহরি খাওয়ার মধ্যদিয়ে শনিবার (১ মার্চ) থেকে প্রথম রোজা রেখেছেন তারা। সুরেশ্বর দরবার শরীফ, সাতকানিয়া মির্জাখালী দরবার শরীফ ও সাদ্রা দরবার শরীফের অনুসারী তারা। 

এর মধ্যে চাঁদপুরের ৩৫টি গ্রাম, শরীয়তপুরের ৩০টি, পিরোজপুরের ১০টি ও ভোলার ১০টি গ্রামের মানুষ রোজা পালন করছে আজ। 

চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ, শাহরাস্তি, ফরিদগঞ্জ ও মতলব উত্তর উপজেলা; পিরোজপুর জেলার মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা ইউনিয়নের ভাইজোড়া, কচুবাড়িয়া, সাপলেজা, ঝাটিবুনিয়া, খেতাছিড়া ও চকরগাছিয়া- এই ৬ গ্রামের প্রায় ৭ শতাধিক, জেলার কাউখালী উপজেলার বেতকা, শিয়ালকাঠী ও পারসাতুরিয়া ইউনিয়নের প্রায় ৭৫ থেকে ৮০ পরিবার, জেলার নাজিরপুর উপজেলার শেখমাটিয়া ইউনিয়নের খেজুরতলা গ্রামের ৩৫ পরিবার, জেলার সদর উপজেলার কদমতলা ইউনিয়নের কদমতলা ও একপাই জুজখোলা গ্রামের প্রায় ৬০ পরিবার ও শরীয়তপুরের ৩০টি গ্রামে সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে রোজা রাখছেন।

এছাড়া, ভোলা জেলার সাত উপজেলার ১০টি গ্রামে সাতকানিয়া মির্জাখালী দরবার ও সুরেস্বর দরবার শরীফের অনুসারীরা সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে রোজা শুরু করেছে। ভোলা সদর উপজেলা, দৌলতখান, বোরহানউদ্দিন, তজুমুদ্দিন, লালমোহন, চরফ্যাশন ও মনপুরায় উপজেলাতে প্রায় ৫ হাজার সাতকানিয়া মির্জাখালী দরবার ও সুরেস্বর দরবার শরীফের অনুসারীরা রোজা পালন করছেন। তাদের মধ্যে প্রায় ৩ হাজার অনুসারী রয়েছেন ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলা টবগী ইউনিয়নের মুলাইপত্তন গ্রামে।

এই তিন দরবারের অনুসারীরা প্রায় শত বছর ধরে এই ধারা অব্যাহত রেখেছেন। মধ্যপ্রাচ্যের সাথে মিল রেখে তারা বাংলাদেশের অন্যান্য অঞ্চলের আগেই ঈদও পালন করেন।

এ বিষয়ে সুরেশ্বর দরবার শরিফের গদিনশীল পীর সৈয়দ তৌহিদুল হোসাইন শাহীন নূরী সুরেশ্বরী বলেন, আমরা শুধু ঈদ না সবরকম ধর্মীয় উৎসব সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে পালন করি। সোমবার শরীয়তপুরের বিভিন্ন উপজেলার প্রায় ৩০ গ্রামের ৩০ হাজার ধর্মপ্রাণ মুসলমান রোজা রেখেছেন। আমরা আগামীতেও সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে ধর্মীয় উৎসবগুলো পালন করবো।


img

বিশ্বে সবচেয়ে দ্রুত বাড়ছে ইসলাম ধর্মের অনুসারীর সংখ্যা

প্রকাশিত :  ১৮:৫৫, ১১ জুন ২০২৫

গত এক দশকে বিশ্বব্যাপী ইসলাম ধর্মের অনুসারীর সংখ্যা অন্যান্য ধর্মের তুলনায় সবচেয়ে দ্রুতগতিতে বৃদ্ধি পেয়েছে। এমনকি অন্যান্য সব প্রধান ধর্মের সম্মিলিত প্রবৃদ্ধিকেও ছাড়িয়ে গেছে ইসলামের সম্প্রসারণ। ‘পিউ রিসার্চ সেন্টার’-এর সাম্প্রতিক গবেষণা অনুযায়ী, ইসলাম এখন বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল ধর্ম।
গবেষণাটি ২০১০ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত সময়কাল ঘিরে পরিচালিত হয়েছে এবং এটি ‘গ্লোবাল রিলিজিয়াস ল্যান্ডস্কেপ’ শিরোনামে প্রকাশিত হয়েছে।

পিউ রিসার্চ জানিয়েছে, ইসলাম ধর্মে এই বৃদ্ধির প্রধান চালিকা শক্তি হলো প্রাকৃতিক জনসংখ্যা বৃদ্ধি। ধর্মান্তরণের ভূমিকা এখানে খুবই সীমিত। মুসলিম পরিবারে গড় সন্তানসংখ্যা অন্য ধর্মের তুলনায় বেশি। বর্তমানে সারাবিশ্বে প্রায় ২০০ কোটি মানুষ এই ধর্মের অনুসারী।
২০১৫ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত প্রতি মুসলিম নারী গড়ে ২.৯ সন্তান জন্ম দিয়েছেন, যেখানে অমুসলিম নারীর ক্ষেত্রে এই হার ২.২। তাছাড়া মুসলিম জনগোষ্ঠীর গড় বয়স তুলনামূলকভাবে কম, যা জনসংখ্যা বৃদ্ধির একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।
গবেষণা অনুযায়ী, খ্রিষ্টধর্ম এখনো বিশ্বের সবচেয়ে বড় ধর্ম, যার অনুসারীর সংখ্যা প্রায় ২৩০ কোটি। তবে ইসলাম দ্রুত বাড়তে থাকায় দুই ধর্মের মধ্যকার সংখ্যাগত ব্যবধান দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে।
২০১০ সাল থেকে খ্রিষ্টধর্মের অনুসারীর সংখ্যা বিশ্বে গড়ে ১.৮ শতাংশ হারে কমেছে। এ সময়ে ইসলাম ধর্মের অনুসারী বেড়েছে প্রায় ৩৫ কোটি, যা খ্রিষ্টধর্মের চেয়ে প্রায় তিন গুণ বেশি।
অঞ্চলভিত্তিক পরিবর্তন
বিশ্বজুড়ে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলোতেই ইসলাম ধর্মের প্রবৃদ্ধি সবচেয়ে বেশি হয়েছে। কাজাখস্তান, বেনিন ও লেবাননে ইসলাম ধর্মে উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধি লক্ষ্য করা গেছে। তবে ওমান ও তানজানিয়ায় মুসলমানদের অনুপাত কিছুটা কমেছে।
ধর্মহীন মানুষের সংখ্যাও বেড়েছে। চীনে সবচেয়ে বেশি ধর্মহীন মানুষ বাস করেন, যাদের সংখ্যা প্রায় ১৩০ কোটি। যুক্তরাষ্ট্রে ধর্মহীন মানুষের সংখ্যা ২০১০ সালের তুলনায় বেড়েছে ৯৭ শতাংশ।
ধর্মত্যাগ ও ধর্মান্তর প্রবণতা
গবেষণায় দেখা গেছে, খ্রিষ্টধর্ম, হিন্দুধর্ম ও বৌদ্ধধর্মে ধর্মত্যাগের হার ধর্মান্তরের চেয়ে বেশি।
বিশেষ করে খ্রিষ্টধর্মে, প্রতি একজন প্রাপ্তবয়স্ক নতুন অনুসারীর বিপরীতে তিনজন ধর্ম ত্যাগ করেছেন। অন্যদিকে, ধর্মহীনতায় প্রবেশের হারও বেশি—প্রতি একজন ধর্মহীনতা ছেড়েছেন, আর তিনজন নতুন করে ধর্মহীন হয়েছেন।

তবে ইসলাম একমাত্র প্রধান ধর্ম, যেখানে ধর্মান্তরিত হয়ে আসা মানুষের সংখ্যা ধর্মত্যাগীদের চেয়ে বেশি।

বিশ্ব ধর্মের বর্তমান চিত্র
ইসলাম : এখন বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্ম। প্রায় ২০০ কোটি মানুষ এই ধর্মের অনুসারী, যা পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার প্রায় এক-চতুর্থাংশ।
খ্রিষ্টধর্ম : বৃহত্তম ধর্ম, যার অনুসারী সংখ্যা ২৩০ কোটি।
ধর্মহীন : সংখ্যা বেড়ে ২০০ কোটিতে, ২০১০ সালের তুলনায় বেড়েছে ২৭ কোটি।
হিন্দুধর্ম : তৃতীয় বৃহত্তম ধর্ম, এর ১২০ কোটি অনুসারী রয়েছে; গত এক দশকে বেড়েছে ১২.৬ কোটি, তবে বৈশ্বিক হারে অপরিবর্তিত।

বৌদ্ধধর্ম : একমাত্র ধর্ম যার অনুসারীর সংখ্যা কমেছে — ১.৮৬ কোটি হ্রাস পেয়ে হার ৫% থেকে ৪%-এ নেমেছে।
ইহুদি ধর্ম : গত এক দশকে এর মাত্র ১০ লাখ জনসংখ্যা বেড়েছে। অন্যান্য ধর্ম (শিখ, বাহাই ইত্যাদি) সম্মিলিতভাবে প্রায় ২০ কোটি অনুসারী, যা বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ২.২ শতাংশ।
এই গবেষণাটি পরিষ্কারভাবে দেখায় যে, ইসলাম শুধু প্রাকৃতিকভাবে নয়, বৈশ্বিক ধর্মীয় পরিবর্তনের ধারাতেও উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছে। পাশাপাশি, ধর্মহীনতা ও ধর্মত্যাগের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা আগামী দশকে বিশ্ব ধর্মীয় মানচিত্রে বড় পরিবর্তন আনতে পারে।