img

শ্রীমঙ্গলে বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী সেবা ফাউন্ডেশন কর্তৃক ১৩ বছরে ৬৫২ বন্য প্রাণী উদ্ধার

প্রকাশিত :  ১৩:২২, ০৮ মার্চ ২০২৫

শ্রীমঙ্গলে বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী সেবা ফাউন্ডেশন কর্তৃক ১৩ বছরে ৬৫২ বন্য প্রাণী উদ্ধার
সংগ্রাম দত্ত, শ্রীমঙ্গল প্রতিনিধি : মৌলভীবাজার জেলার বিভিন্ন এলাকায় বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী সেবা ফাউন্ডেশন কর্তৃক বিগত ১৩ বছরে ৬৫২ বন্যপ্রাণী উদ্ধার হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। 

জানা গেছে, জেলার কমলগঞ্জ লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানসহ বিভিন্ন এলাকার বন উজাড় হওয়ায় বন্য প্রাণীরা বন ছেড়ে লোকালয়ে এসে প্রতিনিয়ত মানুষের হাতে ধরা পড়েছে। এ ছাড়া গাড়িচাপা ও মানুষের হাতে মারা যাচ্ছে তারা।

বন বিভাগের লোকজনকে সঙ্গে নিয়ে অক্ষত অবস্থায় প্রাণী উদ্ধার করে বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগে হস্তান্তর করা হয়। বিগত ১৩ বছরে খাদ্য, পানি ও আবাসস্থল সংকটে বন ছেড়ে লোকালয়ে আসা ৬৫২টি বন্য প্রাণী উদ্ধার করেছে বাংলাদেশ বন্য প্রাণী সেবা ফাউন্ডেশন।

জানা গেছে, ১৯৬৫ সালে শ্রীমঙ্গল উপজেলার নোয়াগাঁও গ্রামের পশু প্রেমিক সিতেশ রঞ্জন দেব নিজ উদ্যোগে নিজ গ্রামে প্রতিষ্ঠা করেন বন্য প্রাণী আশ্রয়কেন্দ্র। একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় আশ্রয়কেন্দ্রটি ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। ১৯৭২ সালে শ্রীস চন্দ্র দেবের ছেলে সীতেশ রঞ্জন দেব তাঁর রামকৃষ্ণ মিশন রোডের বাসায় ক্ষুদ্র পরিসরে ফের চালু করেন আশ্রয়কেন্দ্রটি। পরে রূপসপুর গ্রামে নিজের সাড়ে পাঁচ বিঘা জমির খামারবাড়িতে এটি স্থানান্তর করেন সীতেশ রঞ্জন দেব।

সরকারের অনুমোদন সাপেক্ষে যার নামকরণ করা হয় বাংলাদেশ বন্য প্রাণী সেবা ফাউন্ডেশন। ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে বন ছেড়ে খাদ্য ও বাসস্থানের সন্ধানে লোকালয়ে আসা প্রাণীদের উদ্ধার করে নিবিড় পর্যবেক্ষণ, সেবা ও চিকিৎসা দিয়ে পুনরায় বনে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। যে প্রাণীগুলো বনের পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারে না বা সুস্থ নয়, এমন প্রাণীদের এখানে রেখেই পরিচর্যা করা হচ্ছে বলে জানান বাংলাদেশ বন্য প্রাণী সেবা ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান সীতেশ রঞ্জন দেব।

বর্তমানে বাংলাদেশ বন্য প্রাণী সেবা ফাউন্ডেশনের স্বপন দেব সজল বলেন প্রায় অর্ধশতাধিক বিপন্ন ও বিরল প্রজাতির প্রাণী রয়েছে ।

এখানে উল্লেখযোগ্য প্রাণীদের মধ্যে মেছো বিড়াল (যা মেছো বাঘ নামে পরিচিতি), ভল্লুক, উল্লুক, চশমা হনুমান, গাধা, লজ্জাবতী বানর, চিত্রা হরিণ, মায়া হরিণ, ইমু পাখি, গন্ধগোকুল, অজগর, শঙ্খিনীসহ বিভিন্ন প্রজাতির সাপ, সাধারণ প্রজাতির বানর, ধূসর বানর, সোনালি বিড়াল, বন বিড়াল, হিমালয়ান পাম সিভিট, হনুমান, বনরুই, গুইসাপ, বন্য শূকর, উড়ন্ত কাঁঠবিড়ালি, বোম্বেটিনকেট গ্লেইক, ধনেশ পাখি, কাছিম, পেঁচা, বাজপাখি, শকুন, ময়নাসহ বিভিন্ন প্রজাতির পাখি রয়েছে বলে ফাউন্ডেশনের পরিচালক জানান। 

বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) জামিল মোহাম্মদ খান বলেন, ‘বন্য প্রাণী সেবা ফাউন্ডেশন থেকে অক্ষত অবস্থায় যেসব বন্য প্রাণী আমাদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছিল সেসব জীবিত বন্য প্রাণীকে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে অবমুক্ত করেছি এবং মৃত প্রাণীকে মাটি চাপা দিয়েছি।’

বন্য প্রাণী সেবা ফাউন্ডেশন সূত্র জানায়, বিভিন্ন দিবসে বিভিন্ন দিনে বন বিভাগ ও প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে বন্য প্রাণীগুলোকে বনে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। 

২০১২-২০২৫ সালের ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত ৬৫২টি বন্য প্রাণী অবমুক্ত করা হয়েছে। অজগর সাপ ১৩১টি, লজ্জাবতী বানর ৪০টি, গন্ধগোকুল ৪৬টি, মেছো বিড়াল ৩৩টি, বানর ২৭টি, তক্ষক ১৭টি, সোনালি বিড়াল ৫টি, বনবিড়াল ৪৫টি, হিমালয়ান পাম সিভেট ১টি, কালনাগিন সাপ ৪টি, হনুমান ১টি, বনরুই ১টি, গুঁইসাপ ৪টি, বন্য শূকর ৩টি, উড়ন্ত কাঠবিড়ালী ৫টি, লেজহীন চিকা ১টি, বোম্বেটিনকেট স্নেক ১টি, ধনেশ পাখি ১টি, কাছিম ৩টি, পেঁচা ১৮টি, সবুজ বুড়াল সাপ ১৪টি, শঙ্খিনী সাপ ১২টি, ফনিমনসা সাপ ৮টি, বিভিন্ন প্রজাতির পাখি ১৩৯টি, শিয়াল ১টি ,পদ্মগোখরা সাপ ৩টি, হিমালয়ান ধূরা সাপ ৫১টি, দুধরাজ সাপ ২টি, দাঁড়াশ সাপ ৭টি, সবুজ বুড়াল সাপ (পিট ভাইপার সাপ) ৬টি, বাজপাখি ২টি, খইয়া গোখরা সাপ ২টি, সবুজ ফনিমনসা সাপ ৩টি, কোবরা (কালা খড়িশ) সাপ ১টি, বিরল লালডোর সাপ ১টি, আইডক্যাট স্নেক ৫টি, কালো বক ১টি, নিশি বক ১টি, রেসাস বানর ১টি, ঘর গিন্নি সাপ ৩টি, গ্রে কেট স্নেক ১টি, ক্যান্টরের (কুকরী সাপ) ১টি ও মেটে সাপ ১টি বনে অবমুক্ত করা হয়েছে।

বন্য প্রাণী সেবা ফাউন্ডেশনের পরিচালক সজল দেব বলেন, আহত বন্য প্রাণীকে সেবা দিয়ে সুস্থ করে বনাঞ্চলে অবমুক্ত করা হয়। এখানে জন্ম নেওয়া প্রাণীগুলো এককভাবে জীবনযাপনে সক্ষম হলেই বনে ছেড়ে দেওয়া হয়। তবে বনাঞ্চলে ছাড়ার পরও খাদ্য ও বাসস্থানের সংকটে অনেক প্রাণী আবার বনের বাইরে এসে ধরা পড়ে। বিশেষ করে শিক্ষার্থীদের মধ্যে এই সচেতনতা বেশি। 

সিলেটের খবর এর আরও খবর

img

একাত্তরের মার্চে কেমন ছিল শ্রীমঙ্গল

প্রকাশিত :  ১০:২৬, ২৬ মার্চ ২০২৫

সংগ্রাম দত্ত:  ১৯৭১ সালের ১ মার্চ দুপুর একটায় পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতি ইয়া আইয়া খানের  ভাষণ রেডিওতে প্রচারিত হওয়ার সাথে সাথে শ্রীমঙ্গল পৌরসভা কার্যালয় থেকে ন্যাপ নেতা রাসেন্দ্র দত্ত চৌধুরী, মোঃ শাহজাহান মিয়া ও সৈয়দ মূয়ীজুর রহমান স্লোগান দিয়ে মিছিল শুরু করলে মুহূর্তেই শ্রীমঙ্গল শহরের চারদিক থেকে ৬ দফা ও ১১ দফা আন্দোলনে উদ্বৃত্ত আওয়ামী লীগ, ন্যাপ ও তাদের ছাত্র সংগঠনের নেতাদের নেতৃত্বে সারা শ্রীমঙ্গল মুখরিত হয়ে ওঠে।  এই মিছিলে নেতৃত্ব দেন উপরোক্ত তিনজনসহ ন্যাপ নেতা ক্ষীরদ দেব চৌধুরী, রাজেন্দ্র দাস, গোপাল সেন, ধীরেন্দ্র দত্ত পানু, সুভাষ দত্ত, ডাক্তার ফজলুল হক, মোঃ আব্দুর রহিম, সাইয়িদ মুজিবুর রহমান, দিলীপ কুমার রায়, মোঃ আব্দুল লতিফ, মোঃ আব্দুল হক, হীরালাল হাজরা, মোহাম্মদ ফতে আলী, মোহিত ভট্টাচার্য, রাধাকান্ত তাঁতি, বীরেশ দেব, বাবলা দেব চৌধুরী, আব্দুল কাইয়ুম তরফদার, সত্য ভৌমিক, মামুন চৌধুরী, আওয়ামী লীগ নেতা মোঃ ইলিয়াস, মোহাম্মদ আলতাফুর রহমান চৌধুরী, ডাক্তার মোঃ আব্দুল আলী, ডাক্তার রমা রঞ্জন দেব, মোহাম্মদ আরজু মিয়া, মনির মিয়া, আতাউর রহমান, এম এ রহিম, এসে এ মুজিব, মোহাম্মদ ইসমাইল হোসেন, মোহাম্মদ আব্দুল মান্নানসহ হাজার হাজার ছাত্র জনতার বিরাট মিছিল বের হয়। মিছিলে স্লোগান ছিল \"জয় বাংলা -জয় সমাজতন্ত্র, বিশ্বে একটা নতুন দেশ, বাংলাদেশ বাংলাদেশ, তোমার আমার ঠিকানা পদ্মা- মেঘনা -যমুনা, সামরিক জান্তা নিপাত যাক, ৬ দফা ও ১১ দফা জিন্দাবাদ, বাঁশের লাঠি তৈরি করো বাংলাদেশ স্বাধীন কর।\" মিছিল শেষে পৌরসভার মাঠে হাজার হাজার জনতার স্বতঃস্ফূর্ত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন ন্যাপ ও আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ। তখন হতেই প্রতিদিন শহরের বিভিন্ন গ্রুপে বিভক্ত হয়ে লাঠিসুটাসহ জঙ্গি মিছিল চলতে থাকে। বিভিন্ন হাটবাজারে, বাগানে বাগানে, গ্রামে-গঞ্জে ছাত্র-জনতার বিক্ষুব্ধ মিছিল অগ্নিরূপ ধারণ করে।

৩রা মার্চ সিলেটে পাক বাহিনীর গুলিবর্ষণে একজন মারা গেলে মুক্তিপাগল ছাত্র-জনতার ঢল সর্বত্র বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠে। 

সেই মুহূর্তে ৭ই মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বজ্রকন্ঠের গগন বিদারী আবেগময় ভাষণে অসহযোগ আন্দোলনের সৃষ্টি হয় ও তীব্ররূপ পরিগ্রহ করে। 

২৩ মার্চ শ্রীমঙ্গলের ছাত্রলীগ ও ছাত্র ইউনিয়নের নেতৃত্বে পাকিস্তানি পতাকা নামিয়ে স্বাধীন বাংলার রক্তরাঙা সূর্যস্নাত পতাকা উত্তোলিত হয়। এতে নেতৃত্ব দেন এম এ রহিম, একরাম হোসেন চৌধুরী, বিরাজ সেন তরুণ, মঈন উদ্দিন, সৈয়দ মূয়ীজুর রহমান প্রমুখ।

২৪ মার্চ মৌলভীবাজারের তৎকালীন পাঞ্জাবি এসডিপিও শ্রীমঙ্গলে এসে পুনরায় পাকিস্তানি পতাকা উত্তোলন করেন।

২৫ মার্চ সংগ্রামে লিপ্ত বিদ্রোহী জনতা থানা ঘেরাও করে রেখে থানার ভিতরে ন্যাপ নেতা রাসেন্দ্র দত্ত, সৈয়দ মূয়ীজুর রহমান,  ছাত্রলীগ নেতা  একরাম হোসেন চৌধুরী থানা কর্তৃপক্ষের সামনে পাকিস্তানী পতাকা নামিয়ে দিয়ে স্বাধীন বাংলার পতাকা পুনঃ উত্তোলন করেন । এসময় থানায় উপস্থিত জনতার রুদ্ররোষের মুখে নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে এ দৃশ্য অবলোকন করে।

২৭ মাঠ রাতে শ্রীমঙ্গল থানার ওসি সিরাজুল ইসলাম থানার জমাপড়া বন্দুকগুলো প্রতিরোধ সৈনিকদের  হাতে তুলে দেন। প্রকাশ্য দিবালোকে স্বতঃস্ফূর্ত জনতা মহাসড়কে বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে থাকে। পাকবাহিনী যাতে শ্রীমঙ্গলে না আসতে পারে সেজন্য রাস্তায় রাস্তায় গাছ ফেলা হয়। সাইয়িদ মুজিবুর রহমান,  রাসেন্দ্র দত্ত, মোহাম্মদ শাহজাহান মিয়া ও ছাত্র ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দ সুসংগঠিত শ্রমিক কৃষকের সম্মিলিত শক্তিতে বলিয়ান হয়ে প্রতিরোধ আন্দোলন শুরু করেন। এদিকে গণপরিষদ সদস্য মোহাম্মদ ইলিয়াস ও আলতাফুর রহমান চৌধুরী বালিশিরা ভেলী বাগান এলাকায় আত্মগোপন করে স্বাধীনতা যুদ্ধ পরিচালনার ব্যাপারে গোপন সভায় মিলিত হন। স্থানীয় কৃষক শ্রমিক, ছাত্র-জনতার তীব্র আন্দোলনের এক পর্যায়ে রাস্তার দু\'ধারে বাড়িঘর, দোকানপাট ও সম্ভবস্হলে ইট -পাথর ভাঙ্গা কাঁচ খন্ড ইত্যাদি জড়ো হতে থাকে। শত্রুর সেনাদের অতর্কিত আক্রমণকে প্রতিহত করার লক্ষ্যে রাত ১০টার দিকে শ্রীমঙ্গল থানার ওসি সংবাদ দেন যে, কিছু বাঙালি সৈনিক শমশেরনগর  হতে তাদের প্রিয়জনদের উদ্ধার করার মানসে কুমিল্লা সেনানিবাসে যাবার জন্য রাস্তা করে দিতে ছাত্র-জনতা ও তরুণদের সাহায্য সহযোগিতা চান। সেজন্য তাদের সহযোগিতায় সোনালী ব্যাংক ম্যানেজার বাদশা মিয়া, শহিদুল আলম,  সৈয়দ মূয়ীজুর রহমান,  মরহুম রিস্কা চালক আনিস ও প্রাক্তন সৈনিক মুকিত লস্কর এগিয়ে আসেন। তাদের আহবানে সাতগাঁয়ের চা শ্রমিকরা ও সহযোগিতা করেন ও রাস্তার উপর রাখা বড় বড় গাছগুলো কিছুক্ষণের জন্য অপসারিত হয়। সৈনিকরা কুমিল্লার পথে প্রিয়জনদের সাথে মিলিত হতে সংগ্রামী চেতনা নিয়ে এগিয়ে যান। তাদের কজন গিয়ে তখন প্রিয়জনদের সাথে মিলিত হতে পেরেছিলেন তা জানা নেই।

২৮ মার্চ বিকেলে সংগ্রাম পরিচালনা  জন্য ফরিদ আহমদ চৌধুরীকে আহ্বায়ক করে ও সদস্যপদে ডাক্তার আব্দুল আলী,  মুহিবুর রহমান, কমলেশ ভট্টাচার্য, সাইয়িদ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে ৫ সদস্য বিশিষ্ট একটি সংগ্রাম কমিটি গঠিত হয়।

আনসার বাহিনীর ক্যাপ্টেন এমএ মুসাব্বির, ক্যাপ্টেন মতলব, এম এ রহিম, শহিদুল আলম, মোঃ শাহজাহান মিয়া, রাসেন্দ্র দত্ত, আব্দুর রহিম, দীপক সেন, সৈয়দ মূয়ীজুর রহমান গ্রামে গঞ্জে ঘুরে আনসার, মুজাহিদ, প্রাক্তন সৈনিক জোগাড় করে গ্রামগঞ্জ ও চা বাগানের ম্যানেজারদের আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে সংগ্রাম কমিটির হাতে অর্পণ করেন ও কমিটির উদ্যোগে মুক্তিযোদ্ধা স্কোয়াড গঠন করে প্রশিক্ষণপ্রাপ্তদের হাতে আগ্নেয়াস্ত্র তুলে দেওয়া হয়।

২৯ মার্চ আন্দোলনী জনতার মিছিলের উপর ভৈরব বাজার নামক স্থানে পাক সেনারা আত্মগোপন করে সহসা গুলি ছুঁড়ে। এতে হরমুজ মিয়া নামক এক ব্যক্তি নিহত হয়।

৩০ মার্চ মৌলভীবাজারে অবস্থানরত পাক সেনারা শ্রীমঙ্গলে আগুন লেগেছে এই অজুহাতে ফায়ার ব্রিগেডের দুটি গাড়ি প্রেরণ করে। শ্রীমঙ্গলের সংগ্রামী দামাল ছেলেরা দমকলবাহিনীর গাড়িতে এসে সেনাবাহিনীর লোক আছে সন্দেহে গাড়িটি আটক করে একটি গাড়ির ফায়ারম্যানদের তুমুল জেরা শুরু করেন।

এক পর্যায়ে পিছনে আসা গাড়িটি সুযোগ বুঝে কুড়িয়ে দ্রুত পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। ওই রাতে পাক সেনারা মৌলভীবাজার ছেড়ে যাবার পথে মৌলভীবাজারের তৎকালীন এসডিও অবাঙালি নাসিম ওয়ার্কারকে তাদের সাথে সিলেটের পথে নিয়ে যায়। স্বতঃস্ফূর্তভাবে শ্রীমঙ্গলের ছাত্র ও তরুণকর্মীরা শ্রীমঙ্গল ভিক্টোরিয়া হাইস্কুল মাঠে কুচকাওয়াজ ও প্যারেডে মিলিত হয়। এ সময়ে পাক সেনাদের মনে শ্রীমঙ্গলে হাজার হাজার ভারতীয় সেনার উপস্থিতি কল্পিত ভীতির সঞ্চার হয়।

৩১ মার্চ গণপরিষদ সদস্য মানিক চৌধুরী শ্রীমঙ্গলে এসে স্বাধীন বাংলা সরকারের পক্ষে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার্থে নির্দেশ জারি করেন। এসময় কর্নেল (অব:) আব্দুর রব,  ডাক্তার আব্দুল আলী, মোহাম্মদ ইসমাইল হোসেনসহ স্থানীয় নেতৃবৃন্দ বিভিন্ন ইপিআর জওয়ানদের মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতির জন্য সমবেত করেন।

স্বাধীন বাংলা বেতারসহ বিশ্বের বিভিন্ন বেতার কেন্দ্র থেকে পাক সেনাদের নির্বিচারে অত্যাচার চালিয়ে যাওয়া, গণহত্যা ও বাঙ্গালীদের সশস্ত্র প্রতিরোধের সংবাদ বেতারে প্রতিনিয়ত ভেসে আসতে থাকে। এ

সময় আনসার বাহিনী কমান্ডার মানিক চৌধুরী ও মুকিত লস্কর শ্রীমঙ্গল ভিক্টোরিয়া হাই স্কুল মাঠে উৎসাহিত তরুণদের প্রশিক্ষণ দিতে শুরু করেন।


সিলেটের খবর এর আরও খবর