img

দলের চেয়ে দেশ বড়: ঐক্যের ডাকে সম্মিলিত বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকার

প্রকাশিত :  ১৮:৫২, ১১ মার্চ ২০২৫
সর্বশেষ আপডেট: ২০:৪৩, ১১ মার্চ ২০২৫

দলের চেয়ে দেশ বড়: ঐক্যের ডাকে সম্মিলিত বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকার

রেজুয়ান আহম্মেদ

রাজনৈতিক মতাদর্শ, দলীয় প্রতীক কিংবা নেতৃত্বের লড়াই—এসবের ঊর্ধ্বে উঠে বাংলাদেশ নামক ভূখণ্ডটিই আমাদের সকলের পরিচয়ের প্রধান স্তম্ভ। ৫৬ হাজার বর্গমাইলের এই মাটিতে বাঙালির হাজার বছরের সংস্কৃতি, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও সমৃদ্ধির স্বপ্ন একই সুতোয় গাঁথা। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে রাজনৈতিক বিভাজন, দলীয় কোন্দল ও পক্ষপাতদুষ্ট আলোচনা জাতীয় ঐক্যের ভিতকে নড়িয়ে দিচ্ছে। এমন প্রেক্ষাপটে "দলের চেয়ে দেশ বড়"—এই মন্ত্রে উদ্বুদ্ধ হয়ে সকল নাগরিকের কাছে আবেদন: দেশপ্রেম হোক সকল মতপার্থক্যের ঊর্ধ্বে।  

স্বাধীনতার পর থেকেই বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাস সংঘাত ও সমঝোতার দোলাচলে দুলেছে। কিন্তু গত এক দশকে দলীয় কোন্দল এমন মাত্রা পেয়েছে যে, শিক্ষা-স্বাস্থ্য থেকে অর্থনীতি—প্রতিটি খাতই রাজনীতিকরণের শিকার। উদাহরণস্বরূপ, জাতীয় বাজেট নিয়ে বিরোধী দলের যৌক্তিক সমালোচনার পরিবর্তে রাস্তায় অবরোধ বা সহিংসতা দেখা যায়। অথচ সংসদে আলোচনার মাধ্যমেই অর্থনৈতিক নীতির সমাধান খুঁজে বের করা যেত। এমন পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষের মনে প্রশ্ন: "দলীয় স্বার্থ নাকি দেশের স্বার্থ—কোনটি অগ্রাধিকার পাবে?"  

ইতিহাস সাক্ষী—বিপদে বাংলাদেশের মানুষ কখনো দল-মতের বিভাজন মানেনি। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে জাতি-ধর্ম-দল নির্বিশেষে সবাই একত্রিত হয়েছিল পাকিস্তানি শোষণের বিরুদ্ধে। ১৯৯০ সালের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন, ২০০৮ সালের সামরিক সরকারবিরোধী গণজাগরণ কিংবা ২০২১ সালের কোভিড মোকাবিলায়ও মানুষ তাদের রাজনৈতিক পরিচয় ভুলে একে অপরের পাশে দাঁড়িয়েছে। এসব উদাহরণ প্রমাণ করে, জাতীয় সংকটে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার ক্ষমতা আমাদের রক্তেই আছে।  

রাজনৈতিক দলগুলোর নিজস্ব আদর্শ ও লক্ষ্য থাকাটাই স্বাভাবিক। কিন্তু প্রশ্ন হলো, আদর্শের নামে যখন রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান, বিচারব্যবস্থা বা প্রশাসনিক কার্যক্রমে হস্তক্ষেপ করা হয়—সেটি কি দেশের জন্য কল্যাণকর? সম্প্রতি একটি গবেষণায় দেখা গেছে, ৬৭% তরুণ মনে করেন রাজনৈতিক দলগুলো "জাতীয় স্বার্থ"-এর চেয়ে "নেতৃত্বের ক্ষমতা" নিয়ে বেশি ব্যস্ত। অথচ সুইডেন বা নরওয়ের মতো দেশে রাজনৈতিক দলগুলো নীতিনির্ধারণে একে অপরের সঙ্গে আলোচনা করে, যার ফলস্বরূপ তাদের মানব উন্নয়ন সূচক বিশ্বসেরা।  

দেশপ্রেম শুধু জাতীয় পতাকা ওড়ানো বা জাতীয় দিবস পালনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। প্রকৃত দেশপ্রেম হলো—  

- দলীয় স্লোগানের আগে জাতীয় সংগীতকে সম্মান দেওয়া,  

- নেতার প্রতিকৃতির চেয়ে দেশের মানচিত্রকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া,  

- সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভ্রান্তিমূলক খবর শেয়ার না করা,  

- রাস্তাঘাট, নদী-পরিবেশ রক্ষায় স্বেচ্ছাশ্রম দেওয়া।  

ঢাকার একজন তরুণ সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার রাফিদের ভাষায়, "আমি ভোট দিই নির্দিষ্ট দলকে, কিন্তু রাস্তার ময়লা পরিষ্কার করি সব দলের লোকের সাথে। দেশসেবার ক্ষেত্রে দলীয় লোগো লাগানোর প্রয়োজন নেই।"  

জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার প্রথম ধাপ হলো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অসাম্প্রদায়িক চেতনার বিকাশ। পাঠ্যক্রমে যোগ করতে হবে—  

- মুক্তিযুদ্ধে সকল ধর্ম-বর্ণের মানুষের অবদানের ইতিহাস,  

- স্থানীয় পর্যায়ে দল-নিরপেক্ষ সমাজসেবামূলক প্রকল্প,  

- রাজনৈতিক মতবিরোধের সভ্য সংস্কৃতি চর্চা।  

এক্ষেত্রে কানাডার উদাহরণ অনুসরণ করা যেতে পারে, যেখানে স্কুলে "Citizenship Education"-এর মাধ্যমে শিশুদের শেখানো হয়: "তোমার পরিচয় প্রথমে কানাডিয়ান, তারপর অন্যান্য।"  

গণমাধ্যমকে রাজনৈতিক পক্ষপাতমুক্ত হয়ে জাতীয় সংহতির বার্তা ছড়াতে হবে। টক-শোতে শুধু দলীয় মুখপাত্রদের আমন্ত্রণ না করে অর্থনীতিবিদ, সমাজবিদ ও যুব প্রতিনিধিদের অন্তর্ভুক্তি বাড়ানো প্রয়োজন। পাশাপাশি "দেশের জন্য ভালো কাজ"—এমন প্রতিবেদন নিয়মিত প্রকাশ করে গণমাধ্যম জনগণকে উদ্বুদ্ধ করতে পারে। যেমন: সিলেটের এক দল তরুণ-তরুণী, যারা দলীয় পরিচয় গোপন রেখে বন্যার্তদের জন্য ত্রাণ সংগ্রহ করছেন—এমন সংবাদ গুরুত্ব পেলে তা অন্যদের অনুপ্রাণিত করবে।  

জাতীয় সংকটে রাজনৈতিক নেতাদের উচিত সমঝোতার মাধ্যমে সমাধান খোঁজা। উদাহরণ স্বরূপ:  

- সংসদে বাজেট অধিবেশনকালে বিরোধী দলকে পর্যাপ্ত সময় দেওয়া,  

- জাতীয় দিবসে সকল দলের নেতাদের এক মঞ্চে দেখা,  

- ক্রীড়া বা সাংস্কৃতিক আয়োজনে দলীয় প্রতিযোগিতা এড়িয়ে জাতীয় পতাকাকে প্রাধান্য দেওয়া।  

১৯৯৬ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা চালু হওয়ার সময় প্রধান দুই দল ঐকমত্যে পৌঁছেছিল। এটি প্রমাণ করে, জাতীয় স্বার্থে রাজনৈতিক শত্রুতাও ভুলে যাওয়া সম্ভব।  

তরুণদের একটি বড় অংশ রাজনীতিকে "সময়ের অপচয়" মনে করেন। তাদের জাগ্রত করতে হবে এই বার্তা দিয়ে যে, দলীয় রাজনীতির বাইরেও দেশ গঠনের অসংখ্য পথ আছে। যেমন:  

- দক্ষতা উন্নয়নের মাধ্যমে রপ্তানি আয় বৃদ্ধি,  

- সামাজিক ব্যবসার মাধ্যমে গ্রামীণ দারিদ্র্য দূরীকরণ,  

- ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে বাংলাদেশের ইতিবাচক ভাবমূর্তি তুলে ধরা।  

বিশ্বের ৩৫টি দেশে "বাংলাদেশি হ্যাকাথন" প্রতিযোগিতার আয়োজক সাদমান সাকিব বলেন, "আমি দলীয় রাজনীতিতে বিশ্বাস করি না, কিন্তু দেশের আইটি সেক্টরকে বিশ্বদরবারে নেতৃত্ব দেওয়ার স্বপ্ন দেখি।" 

জাতীয় পতাকার লাল-সবুজে মিশে আছে এই মাটির সকল মানুষের স্বপ্ন। দলীয় জয়-পরাজয়ের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বাংলাদেশের জয়। তাই আসুন, আমরা প্রতিজ্ঞা করি—  

- "আমার দল" নয়, "আমার দেশ"—এই মন্ত্রে বাঁচবো,  

- রাজনৈতিক বৈরিতার জয়গান নয়, জাতীয় অর্জনের গল্প বলবো,  

- ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি সুস্থ, সমৃদ্ধ ও অহিংস বাংলাদেশ গড়বো।  

দেশপ্রেমের সর্বোচ্চ প্রকাশ হোক সকল বিভাজনের অবসান।


রেজুয়ান আহম্মেদ:  লেখক, বিশ্লেষক; সম্পাদক অর্থনীতি ডটকম
img

\'সবার আগে বাংলাদেশ\'—নতুন স্বপ্নের পথে এক পদক্ষেপ

প্রকাশিত :  ১৭:৫৭, ২৭ মার্চ ২০২৫

ঢাকা, ২৭ মার্চ ২০২৫: দেশের অগ্রগতি, গণতন্ত্র ও জাতীয় স্বার্থকে সবার ওপরে রাখার প্রত্যয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করল ‘সবার আগে বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন’। রাজধানীর গুলশানে অবস্থিত উদয় টাওয়ারে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সংগঠনটির কার্যনির্বাহী কমিটি ঘোষণা করা হয়।

সংগঠনটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন শহীদউদ্দীন চৌধুরী এ্যানি, সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন রকিবুল ইসলাম বকুল, এবং কোষাধ্যক্ষের দায়িত্বে রয়েছেন সুলতান সালাউদ্দিন টুকু। এছাড়া, সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন আবদুল মোনায়েম মুন্না, এসএম জিলানী, নুরুল ইসলাম নয়ন, আতিকুর রহমান রুমন, গিয়াসউদ্দিন রিমন, রাজিব আহসান, রাকিবুল ইসলাম রাকিব, নাছির উদ্দীন নাছির, জাহিদুল ইসলাম রনি ও এহসান মাহমুদ।

প্রতিষ্ঠানের নেতৃবৃন্দ জানিয়েছেন, ‘সবার আগে বাংলাদেশ’ শুধু একটি সংগঠন নয়; এটি একটি আদর্শ, একটি স্বপ্ন, যেখানে দেশ ও জনগণের কল্যাণই সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার পাবে। সংগঠনটি দেশের সার্বভৌমত্ব, গণতন্ত্র ও মানুষের অধিকার রক্ষায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে বলে আশা করা হচ্ছে।

সভাপতি শহীদউদ্দীন চৌধুরী এ্যানি বলেন, \"আমাদের লক্ষ্য—বাংলাদেশকে এমন এক দেশে পরিণত করা, যেখানে জনগণের কণ্ঠস্বরই হবে প্রকৃত শক্তি। গণতন্ত্র, মানবাধিকার, অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি এবং জাতীয় স্বার্থ সংরক্ষণে আমরা সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালাব।\"

সাধারণ সম্পাদক রকিবুল ইসলাম বকুল বলেন, \"এই সংগঠন দেশের উন্নয়ন ও জনগণের অধিকার রক্ষায় নিরলস কাজ করবে। আমরা বিশ্বাস করি, দল-মতের ঊর্ধ্বে উঠে সবার আগে দেশের স্বার্থকে অগ্রাধিকার দেওয়াই সত্যিকারের দেশপ্রেম।\"

এই ফাউন্ডেশনের অন্যতম উদ্দেশ্য হলো—দেশের অর্থনীতি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও প্রযুক্তি খাতে ইতিবাচক পরিবর্তন আনা। তরুণ প্রজন্মকে নেতৃত্বে আনার পাশাপাশি দেশের জনগণের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করাও সংগঠনটির অন্যতম লক্ষ্য।

নতুন এই সংগঠনের যাত্রায় দেশের নানা স্তরের মানুষ ইতোমধ্যেই আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। বিশ্লেষকদের মতে, এই সংগঠন ভবিষ্যতে বাংলাদেশকে নতুন দিগন্তের দিকে নিয়ে যেতে পারে।

দেশের সার্বিক অগ্রগতির জন্য জনগণকেই সবচেয়ে বড় শক্তি মনে করে ‘সবার আগে বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন’। এই যাত্রা কতটা সফল হবে, সেটাই এখন দেখার বিষয়।

জাতীয় এর আরও খবর