img

রোজা রেখেও সুস্থ থাকুন ডায়াবেটিসের রোগীরা

প্রকাশিত :  ০৮:৩১, ১২ মার্চ ২০২৫

রোজা রেখেও সুস্থ থাকুন ডায়াবেটিসের রোগীরা

রমজান মাসটি  মুসলিমদের কাছে ফজিলত পূর্ণ। ধর্মপ্রাণ প্রতিটা মুসলিম এই মাসটায় একটা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য পানাহার থেকে বিরত থাকেন।

কিন্তু, ডায়াবেটিস রোগীরা রোজায় কীভাবে সঠিকভাবে খাবার গ্রহণ করবেন, তা নিয়ে উদ্বেগ থাকে। তবে এই রমজান মাসে ডায়াবেটিকস রোগীরা স্বাস্থ্যকর খাবার খেয়ে সুস্থ থেকে যেভাবে রোজা পালন করতে পারবেন- এ বিষয় নিয়ে রয়েছে বেশ কয়েকটি পরামর্শ দিয়েছেন ডাক্তার দ্বিপেন রায় চৌধুরী। 

চলুন জেনে নেওয়া যাক-  

ইফতার শুরু করুন খেজুর দিয়ে: ডায়াবেটিকস রোগীরা একটা খেজুর খেয়ে ইফতার শুরু করতে পারেন। এতে রয়েছে প্রচুর মাত্রায় ফাইবার, খনিজ ও ভিটামিন।খেজুর খেলে ব্লাড সুগার বাড়ে না। বরং এটি স্বাস্থ্যের জন্য বেশ উপকারী।  

চিনিযুক্ত ফলের পরিবর্তে ফলের রস:  চিনির শরবত খেলে ডায়াবেটিকস বেড়ে যেতে পারে তাই চিনিযুক্ত শরবতের পরিবর্তে প্রাকৃতিক ফলের রস: বেল, তরমুজ, পাকা আম, পাকা পেঁপে বা মাল্টার রস চিনি ছাড়া খাওয়া যেতে পারে।

 এটি ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ রাখতে কার্যকরী। এর পাশাপাশি ডাবের পানি, লেবু-লবণের শরবত খেলে শরীরের পানি ও লবণশূন্যতা দূর হবে। খানিকটা লবণ দিয়ে টকদইয়ের লাচ্ছি বা ঘোল পান করতে পারেন। 

সেহরিতে আমিষের ও সবজির ভালো উৎস: সেহরিতে খাবারের তালিকায়  ডিম, ডাল, মাছ বা মুরগির মাংস রাখতে পারেন। তবে গরুর মাংস সপ্তাহে ১-২ বারের বেশি না খাওয়াই ভালো।

সেহেরিতে দুপুরের সমপরিমাণ খাবার গ্রহণ করুন। কখনই সেহরিতে না খেয়ে  বা এক গ্লাস পানি খেয়ে রোজা রাখবেন না। এতে ডায়াবেটিকস রোগীর হাইপোগ্লাইসেমিয়া হতে পারে।

 এছাড়াও  সেহরিতে সব ধরনের সবজি খেতে পারবেন ডায়াবেটিস রোগী, তবে রাতের বেলায় শাকজাতীয় খাবার এড়িয়ে চলা ভালো ; এতে হজমে সমস্যা হতে পারে।

 অতিরিক্ত খাবার এড়িয়ে চলুন: ইফতারে কখনই অতিরিক্ত খাবেন না এবং অতিরিক্ত তেলে তৈরি করা পিয়াজু, বেগুনি, ছোলা এসব খাবার এড়িয়ে চলবেন।  ইফতারে ভাজা-পোড়া কম খেয়ে স্বাস্থ্যকর প্রোটিন বেশি রাখুন। যেমন: আদা-পুদিনা দিয়ে কাঁচা ছোলা , সেদ্ধ ছোলা না ভেজে শসা ও টমেটো দিয়ে সালাদ করে খেতে পারেন।  টক-মিষ্টি ফলের সালাদও খেতে পারেন। ইফতারের পর সন্ধ্যারাতে ভাত না খেয়ে রুটি, ওটস, দুধ ও দই- চিড়া জাতীয় ইত্যাদি খাবার খেতে পারেন। 

ওষুধের ক্ষেত্রে সতর্কতা: ওষুধের মাত্রা বা ইনসুলিন  কখনই নিজে নির্ধারণ করবেন না। ডোজ কমানোর আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।  

সেহরির সময়সীমা: নির্ধারিত সময়ে সঙ্গে সঙ্গে খাবার গ্রহণের চেষ্টা করুন। ইফতার করতে দেরি করবেন না। ইনসুলিন নেওয়ার সময়: রোজা রেখেও ইনসুলিন নেওয়া যায়। তাই, ইফতারের নির্ধারিত সময়ের ১০-১৫ মিনিট আগে ইনসুলিন নিন।

অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিসে সতর্কতা: নিজের কাছে সবসময় গ্লুকোজ মিশ্রিত পানি রাখুন। রক্তে সুগারের মাত্রা খুব কমে গেলে রোজা ভেঙে ফেলুন এবং শরীর দুর্বল লাগলে তাৎক্ষণিক চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। 

এই নির্দেশনাগুলো অনুসরণ করলে ডায়াবেটিস রোগীরা রমজান মাসে সুস্থভাবে রোজা রাখতে পারবেন।


img

হার্ট অ্যাটাক কেন হয়, লক্ষণ ও তাৎক্ষণিক করণীয়

প্রকাশিত :  ০৯:৫৩, ২৪ মার্চ ২০২৫

হার্ট অ্যাটাক একটি প্রাণঘাতী মেডিকেল ইমার্জেন্সি। দ্রুত এর চিকিৎসা না করালে মৃত্যুঝুঁকি বাড়তে পারে। তাই হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ সম্পর্কে সচেতন থাকা অত্যন্ত জরুরি। বিশেষ করে কিছু পূর্ব লক্ষণ আগেভাগে বুঝতে পারলে বড় বিপদ এড়ানো সম্ভব।  

হার্ট অ্যাটাকের ৬টি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ 

১. বুকব্যথা  

গবেষণায় দেখা গেছে, হার্ট অ্যাটাকের শিকার রোগীদের মধ্যে ৪০ শতাংশের অনেক আগেই বুকব্যথার অভিজ্ঞতা হয়েছিল। অনেকে সামান্য ব্যথাকে গুরুত্ব দেন না, কিন্তু এটি হার্ট অ্যাটাকের একটি গুরুত্বপূর্ণ পূর্ব লক্ষণ হতে পারে।  

২. বুকে ভারবোধ  

৪৪ শতাংশ রোগী হার্ট অ্যাটাকের আগে বুকে ভারী অনুভূতি বা চাপ অনুভব করেছিলেন। বিশেষ করে শারীরিক পরিশ্রম, সিঁড়ি ওঠা বা দ্রুত হাঁটার পর যদি বুকে চাপ অনুভূত হয়, তবে এটি সতর্ক সংকেত হতে পারে।  

৩. বুক ধড়ফড় করা  

৪২ শতাংশ রোগী বুক ধড়ফড় বা হার্টবিট অনিয়মিত হওয়ার মতো অনুভূতির কথা জানিয়েছেন। কেউ কেউ হার্টবিট মিস হওয়ার কথাও বলেন। এটি হার্টের সমস্যার লক্ষণ হতে পারে।  

৪. শ্বাসকষ্ট বা হাঁপিয়ে যাওয়া  

শারীরিক পরিশ্রম ছাড়াই যদি শ্বাসকষ্ট অনুভূত হয় বা হাঁপিয়ে যাওয়ার প্রবণতা বাড়ে, তবে এটি হার্টের কার্যক্রম দুর্বল হওয়ার ইঙ্গিত দিতে পারে। বিশ্রামের সময়ও এমন লক্ষণ দেখা দিলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।  

৫. বুক জ্বালাপোড়া  

অনেকে বুক জ্বালাপোড়া অনুভব করলে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা মনে করেন এবং গ্যাসের ওষুধ খাওয়া শুরু করেন। তবে যদি গ্যাসের ওষুধেও উপশম না হয়, তাহলে এটি হার্টের সমস্যার ইঙ্গিত হতে পারে।  

৬. দুর্বলতা ও ক্লান্তিবোধ  

দীর্ঘদিন ধরে অস্বাভাবিক দুর্বলতা বা ক্লান্তি থাকলে সেটি অবহেলা করা উচিত নয়। অনেক ক্ষেত্রে এটি হার্টের সমস্যার প্রাথমিক লক্ষণ হিসেবে দেখা দিতে পারে।  

অন্যান্য লক্ষণ  

বুক ব্যথা ছাড়াও হার্ট অ্যাটাকের সময় মাথা ঝিমঝিম করা, বমিভাব, অনিদ্রা, অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা, পা ফোলা বা ভারী লাগার মতো উপসর্গ দেখা দিতে পারে। নারীদের ক্ষেত্রে এসব লক্ষণের উপস্থিতি পুরুষদের তুলনায় বেশি দেখা যায়। তবে অনেকের ক্ষেত্রে কোনো পূর্ব লক্ষণ ছাড়াই হঠাৎ হার্ট অ্যাটাক হতে পারে।  

হার্ট অ্যাটাক হলে সঙ্গে সঙ্গে যা করবেন  

১. আতঙ্কিত হবেন না  

হার্ট অ্যাটাক হলে বা উপসর্গ দেখা দিলে প্রথমেই ঠান্ডা মাথায় সিদ্ধান্ত নিন। আতঙ্কিত হয়ে গেলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে।  

২. দ্রুত চিকিৎসা নিন  

অবিলম্বে নিকটস্থ হাসপাতালে যাওয়ার ব্যবস্থা করুন। যত দ্রুত চিকিৎসা শুরু হবে, তত বেশি বিপদ এড়ানো সম্ভব।  

৩. অক্সিজেন সরবরাহ বাড়ান  

লম্বা শ্বাস নিন এবং ধীরে ধীরে ছাড়ুন। এতে শরীরে অক্সিজেনের সরবরাহ বাড়বে এবং হৃৎপিণ্ড কিছুটা স্বাভাবিকভাবে কাজ করতে পারবে।  

৪. কাশির মাধ্যমে সাপোর্ট দিন  

হঠাৎ হার্ট অ্যাটাক হলে রোগীকে ঘন ঘন কাশি দিতে বলা হয়। প্রতিবার কাশি দেওয়ার আগে গভীর শ্বাস নিতে হবে। এতে হৃৎপিণ্ড স্বাভাবিকভাবে রক্ত সঞ্চালনের জন্য প্রস্তুত হতে পারে।  

৫. অ্যাসপিরিন বা নাইট্রোগ্লিসারিন নিন  

যদি রোগীর আগে থেকে হার্টের সমস্যা থাকে এবং চিকিৎসকের পরামর্শে অ্যাসপিরিন বা নাইট্রোগ্লিসারিন ব্যবহার করার নির্দেশনা থাকে, তবে তা দ্রুত গ্রহণ করুন। তবে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া নিজে ওষুধ নেওয়া ঠিক নয়।  

৬. রোগীকে শুইয়ে দিন  

রোগীকে সমতল স্থানে শুইয়ে দিন এবং যদি সম্ভব হয়, পা কিছুটা উঁচুতে রাখুন। এতে রক্তপ্রবাহ স্বাভাবিক রাখতে সহায়তা করবে।  

৭. আশেপাশের কাউকে জানিয়ে দ্রুত সাহায্য নিন  

হার্ট অ্যাটাক হলে নিজে গাড়ি চালিয়ে হাসপাতালে যাওয়ার চেষ্টা না করে আশপাশের কাউকে জানিয়ে দ্রুত সাহায্য নিন।  

হার্ট অ্যাটাক একটি ভয়াবহ সমস্যা, তবে আগেভাগে লক্ষণ চিনতে পারলে এবং দ্রুত ব্যবস্থা নিলে প্রাণ রক্ষা করা সম্ভব। নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা, সুষম খাবার গ্রহণ, মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ এবং নিয়মিত ব্যায়ামের মাধ্যমে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি অনেকাংশে কমানো যায়।