ক্রান্তিকালে বাংলাদেশ

img

ওয়াকার-উজ-জামানের গোপন বৈঠক, নাকি সেনাবাহিনীর বার্ষিক সম্মেলন? সত্য-মিথ্যার ধোঁয়াশা!

প্রকাশিত :  ১১:৪১, ২৪ মার্চ ২০২৫

ওয়াকার-উজ-জামানের গোপন বৈঠক, নাকি সেনাবাহিনীর বার্ষিক সম্মেলন? সত্য-মিথ্যার ধোঁয়াশা!

বাংলাদেশের বর্তমান সংকটময় পরিস্থিতি নিয়ে গুঞ্জনের শেষ নেই। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে শুরু করে চায়ের দোকানের আড্ডা—সর্বত্রই একটি প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে: সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান কি সত্যিই দেশের অস্থিরতা সামাল দিতে সব রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে গোপন বৈঠকে বসেছেন? নাকি এটি শুধুই একটি চতুর প্রোপাগান্ডার অংশ?

এই গুঞ্জনের মাঝে আমেরিকা প্রবাসী বিশিষ্ট সাংবাদিক ড. কনক সারোয়ারের নামও উঠে এসেছে। দাবি করা হচ্ছে, তিনি নাকি এই ঘটনার সত্য উদ্ঘাটন করতে বাংলাদেশে এসেছেন।

আজ সকাল থেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি খবর ভাইরাল হয়েছে। বলা হচ্ছে, সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান চলমান রাজনৈতিক ও সামাজিক অস্থিরতা মোকাবিলায় একটি জরুরি বৈঠক ডেকেছেন। এতে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জামায়াতে ইসলামীসহ সব বড় রাজনৈতিক দলের নেতারা উপস্থিত থাকবেন বলে গুঞ্জন রটেছে। গুজব আরও জোরদার হয় যখন বলা হয়, আমেরিকা থেকে প্রখ্যাত সাংবাদিক ও গবেষক ড. কনক সারোয়ার এই বৈঠকের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে উপস্থিত থাকবেন এবং বাংলাদেশের ক্রান্তিকালীন পরিস্থিতিতে সেনাবাহিনীর ভূমিকা নিয়ে একটি বড় প্রতিবেদন তৈরি করতে এসেছেন।

কিন্তু এই তথ্য কতটা সত্য? সত্যিই কি এমন কোনো বৈঠক হচ্ছে, নাকি এটি শুধুই সুপরিকল্পিত গুজব, যা জনগণের মনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতে ছড়ানো হয়েছে?

সত্য অনুসন্ধান:

আমাদের অনুসন্ধানে যা জানা গেছে, তা গুঞ্জনের সঙ্গে মেলে না। আজ, ২৪ মার্চ ২০২৫, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই সম্মেলনে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান উপস্থিত ছিলেন। তবে এটি ছিল সেনাবাহিনীর অভ্যন্তরীণ একটি আয়োজন। সূত্র জানিয়েছে, এই সম্মেলনে গত বছরের কার্যক্রম পর্যালোচনা, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা এবং সেনা সদস্যদের প্রশিক্ষণ ও কল্যাণ সংক্রান্ত আলোচনা হয়েছে।

কিন্তু রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাদের সঙ্গে কোনো বৈঠকের প্রমাণ বা আনুষ্ঠানিক ঘোষণা পাওয়া যায়নি। তাহলে প্রশ্ন জাগে—এই গুজব কে বা কারা ছড়াচ্ছে? এবং কেন?

গুজবের রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রভাব:

বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি অত্যন্ত স্পর্শকাতর। গত কয়েক মাস ধরে রাজনৈতিক অস্থিরতা, জনঅসন্তোষ এবং সামাজিক উত্তেজনা বেড়েই চলেছে। এমন পরিস্থিতিতে সেনাবাহিনীকে নিয়ে ছড়ানো যেকোনো গুজব সহজেই জনগণের মধ্যে আতঙ্ক বা আশা তৈরি করতে পারে।

বিশ্লেষকদের মতে, এই ধরনের প্রোপাগান্ডার পেছনে কোনো রাজনৈতিক গোষ্ঠী বা বহির্শক্তির হাত থাকতে পারে, যারা জনমত প্রভাবিত করতে চায়। একজন বিশ্লেষক বলেন,

\"সেনাবাহিনী বাংলাদেশের একটি শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান। এটিকে ঘিরে গুজব ছড়িয়ে জনমনে বিভ্রান্তি তৈরি করা সহজ। এর মাধ্যমে কেউ হয়তো নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিল করতে চাইছে।\"

গুজবে আমেরিকা প্রবাসী সাংবাদিক ড. কনক সারোয়ারের নামও উঠে এসেছে। তিনি একজন প্রখ্যাত সাংবাদিক ও গবেষক, যিনি বাংলাদেশের রাজনীতি ও সামাজিক ইতিহাস নিয়ে কাজ করেছেন।

কিন্তু আমাদের অনুসন্ধানে জানা গেছে, তিনি বর্তমানে বাংলাদেশে নেই। তার সাম্প্রতিক কার্যক্রম বিশ্লেষণে দেখা গেছে, তিনি আমেরিকায় একটি একাডেমিক প্রোগ্রামে ব্যস্ত রয়েছেন।

জনমানসে প্রভাব: আতঙ্ক না আশা?

এই গুজব জনমানসে স্পষ্ট প্রভাব ফেলেছে। অনেকে মনে করছেন, সেনাপ্রধান যদি সত্যিই রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন, তবে এটি দেশের জন্য একটি নতুন দিগন্তের সূচনা হতে পারে। আবার কেউ কেউ আশঙ্কা করছেন, এটি হয়তো সেনা হস্তক্ষেপের প্রাথমিক সংকেত।

ঢাকার একজন সাধারণ নাগরিক রহিম মিয়া বলেন,

\"আমরা শান্তি চাই। সেনাবাহিনী যদি সত্যিই কিছু করে, তবে ভালো। কিন্তু এসব যদি গুজব হয়, তাহলে মানুষের মনে শুধু ভয় বাড়বে।\"

বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এখনো এই গুজব নিয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেয়নি। তবে সেনা সূত্র জানিয়েছে, আজকের বার্ষিক সম্মেলন ছিল একটি নিয়মিত কর্মসূচি, যেখানে রাজনৈতিক কোনো বিষয়ে আলোচনা হয়নি। সেনাবাহিনী সবসময়ই বলছে, তারা সংবিধানের প্রতি শ্রদ্ধাশীল এবং রাজনীতিতে হস্তক্ষেপের কোনো ইচ্ছা তাদের নেই।

গুজবের নেপথ্যে কারা?

তাহলে কি এই গুজবের পেছনে কোনো সত্য নেই?

এখন পর্যন্ত যা জানা গেছে, তাতে মনে হচ্ছে এটি শুধুই একটি প্রোপাগান্ডা, যার উদ্দেশ্য জনগণের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করা।

সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান আজ সেনাবাহিনীর বার্ষিক সম্মেলনে ব্যস্ত ছিলেন।

রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে তার বৈঠকের কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

ড. কনক সারোয়ার বাংলাদেশে নেই—তিনি আমেরিকায় একাডেমিক কাজে ব্যস্ত।

এই ঘটনা আমাদের একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা দেয়—সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া প্রতিটি খবরই সত্য নয়। আমাদের সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে এবং সত্য জানতে নির্ভরযোগ্য সূত্রের ওপর ভরসা করতে হবে।

আপনার মতামত কী? এই গুজবের পেছনে কার হাত থাকতে পারে? নিচে মন্তব্য করে জানান!

img

মানবিক করিডোর নিয়ে কারও সঙ্গে আলোচনা করেনি সরকার: প্রেস সচিব

প্রকাশিত :  ১২:৪৪, ২৯ এপ্রিল ২০২৫

সরকার জাতিসংঘ বা অন্য কোনো সংস্থার সঙ্গে তথাকথিত ‘মানবিক করিডোর’ নিয়ে কোনো আলোচনা করেনি বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।

তিনি বলেন, এখনো রাখাইনে মানবিক সহায়তা পাঠানোর বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। আমরা সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি। যথাসময়ে এ বিষয়ে দেশের প্রাসঙ্গিক স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে আলোচনা করা হবে।

আজ মঙ্গলবার নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুকে রাখাইনে করিডোর দেওয়া নিয়ে ওঠা প্রশ্নের জবাবে শফিকুল আলম এসব কথা বলেন।

প্রেস সচিব বলেন, আমরা স্পষ্টভাবে বলতে চাই, সরকার জাতিসংঘ বা অন্য কোনো সংস্থার সঙ্গে তথাকথিত ‘মানবিক করিডোর’ নিয়ে কোনো আলোচনা করেনি। আমাদের অবস্থান হলো- যদি জাতিসংঘের নেতৃত্বে রাখাইনে মানবিক সহায়তা দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়, তবে বাংলাদেশ তাৎপর্যপূর্ণভাবে লজিস্টিক সহায়তা দিতে প্রস্তুত।

তিনি বলেন, জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) অনুযায়ী, রাখাইন রাজ্যে বর্তমানে চরম মানবিক সংকট বিরাজ করছে। বাংলাদেশ সবসময়ই সংকটকালে অন্যান্য দেশকে সহায়তা করেছে, যেমন সম্প্রতি মিয়ানমারে ভূমিকম্পের পর আমরা যে মানবিক সাহায্য পাঠিয়েছি। আমরা এ বিষয়েও উদ্বিগ্ন যে, রাখাইনে মানবিক দুর্দশা অব্যাহত থাকলে তা বাংলাদেশে নতুন করে বাস্তুচ্যুত মানুষের ঢল নামার কারণ হতে পারে, যা আমরা আর বহন করতে পারব না।

প্রেস সচিব বলেন, আমরা বিশ্বাস করি, জাতিসংঘের সহায়তায় মানবিক ত্রাণসহায়তা রাখাইনকে স্থিতিশীল করতে সাহায্য করবে এবং শরণার্থীদের নিজ দেশে ফিরে যাওয়ার অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করবে। বর্তমান পরিস্থিতিতে রাখাইনে সহায়তা পৌঁছানোর একমাত্র কার্যকর রুট হচ্ছে বাংলাদেশের মাধ্যমে। এ পথে ত্রাণ পৌঁছে দিতে বাংলাদেশ নীতিগতভাবে লজিস্টিক সহায়তা দিতে সম্মত।

তবে এখনো রাখাইনে মানবিক সহায়তা পাঠানোর বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। আমরা সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি। যথাসময়ে এ বিষয়ে দেশের প্রাসঙ্গিক স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে আলোচনা করা হবে— বলেন শফিকুল আলম।

তিনি বলেন, যেখানে একটি বড় শক্তির সংশ্লিষ্টতার কথা বলা হচ্ছে, তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন এবং কল্পিত অপপ্রচার। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যে ধারাবাহিক মিথ্যা ও ষড়যন্ত্রমূলক প্রচার চালানো হয়েছে, এটি তারই অংশ। এ ধরনের অপপ্রচার আমরা আগেও দেখেছি, এখনো চলছে।


জাতীয় এর আরও খবর