গণতন্ত্রের মশাল জ্বালিয়ে নতুন সূর্যোদয়ের আহ্বান: তারেক রহমানের কণ্ঠে স্বৈরাচার ও ফ্যাসিবাদবিরোধী অগ্নিঝরা বার্তা
প্রকাশিত :
০৪:৪৬, ২৬ মার্চ ২০২৫ সর্বশেষ আপডেট: ০৫:২১, ২৬ মার্চ ২০২৫
জাবেদ হাসান স্বাধীন
"স্বাধীনতার ৫৩ বছর পেরিয়ে গেলেও গণতন্ত্রবিরোধী শক্তির ষড়যন্ত্র থামেনি। দেশি-বিদেশি চক্রান্তে আজও আমাদের স্বাধীনতা বিপন্ন। কিন্তু সময় এসেছে—ফ্যাসিবাদের কবল থেকে মুক্ত হয়ে গণতন্ত্রের পথে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার!" বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান মঙ্গলবার স্বাধীনতা দিবসের বাণীতে এই জোরালো আহ্বান জানান। তাঁর বক্তব্যে উঠে এসেছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা থেকে সরে যাওয়া বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতার করুণ চিত্র।
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, "মানুষ শোষণমুক্ত, সমতাভিত্তিক বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্নে লড়াই করেছিল। কিন্তু স্বাধীনতার পর থেকেই স্বৈরাচারীরা বারবার সেই স্বপ্নকে পদদলিত করেছে। আজও কোটি মানুষ স্বাধীনতার প্রকৃত সুফল পায়নি।" তিনি কঠোর ভাষায় প্রশ্ন তোলেন, "এই অধঃপতনের জন্য কে দায়ী? কেন ধ্বংস করা হলো গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো?"
বিএনপির ইতিহাসের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, "গণতন্ত্রের প্রতিষ্ঠাতা" ও "বাংলাদেশের আধুনিকায়নের স্থপতি" শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে হত্যার পর খালেদা জিয়া গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের যে সংগ্রাম শুরু করেছিলেন, তা ছিল ইতিহাসের মোড় ঘুরিয়ে দেওয়ার মতো ঘটনা। কিন্তু গণতন্ত্রের শত্রুরা কখনোই স্থায়ী শান্তি চায়নি। তারা একদলীয় শাসন জোরপূর্বক চাপিয়ে দিতে চেয়েছে।" বর্তমান সরকারকে "অবৈধ" আখ্যা দিয়ে তিনি অভিযোগ করেন, "ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে সংবিধান থেকে শুরু করে বিচারব্যবস্থা—সবই এখন সরকারের নিয়ন্ত্রণে।"
অর্থনৈতিক সংকট প্রসঙ্গে তারেক রহমান বলেন, "দেশি-বিদেশি চক্রান্তে বাংলাদেশের অর্থনীতি আজ ধুঁকছে। রেমিট্যান্স, রপ্তানি, ব্যাংকিং খাত—সবই সংকটের মুখে। কিন্তু এর চেয়েও বড় সংকট আমাদের সার্বভৌমত্বের ওপর আঘাত।" তাঁর মতে, "বিদেশি চাপে মাথা নত করা, বাংলাদেশকে ভূ-রাজনীতির ঘুঁটি বানানোর অপচেষ্টা—এসবই মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনার পরিপন্থী।"
তরুণ প্রজন্মের উদ্দেশে তিনি বলেন, "যারা মুক্তিযুদ্ধ দেখেনি, তাদের জন্য এটি কেবল ইতিহাস নয়, বরং একটি দায়বদ্ধতা। স্বাধীনতা মানে শুধু পতাকা নয়; বাকস্বাধীনতা ও ভোটাধিকারও। তোমাদেরই এগিয়ে আসতে হবে স্বৈরাচারের মূলোৎপাটনে।" সতর্কবার্তা দিয়ে তিনি আরও বলেন, "গণতন্ত্রের শত্রুরা কখনো প্রকাশ্যে আসে না। তারা আইনের মুখোশ পরে জনগণের আশা-ভালোবাসাকে পুঁজি করে ক্ষমতা কুক্ষিগত করে।"
রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. তানভীর হাসান মন্তব্য করেন, "তারেক রহমানের বক্তব্যে গণতন্ত্র ও অর্থনৈতিক সংকটের যে দিকগুলো উঠে এসেছে, তা জাতীয় আলোচনায় গুরুত্ব পাচ্ছে।" তবে সরকারপক্ষের প্রতিক্রিয়া ভিন্ন। আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী বলেন, "যারা নিজেরাই গণতন্ত্রকে বারবার পদদলিত করেছে, তাদের মুখে গণতন্ত্রের কথা বেমানান। বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের অনন্য উদাহরণ।"
প্রাসঙ্গিক তথ্য হিসেবে বিশ্বব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদনে দেখা যায়, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পাশাপাশি আয়বৈষম্যও বেড়েছে। গ্লোবাল ডেমোক্রেসি ইনডেক্স-২০২৩ অনুযায়ী, বাংলাদেশ ৮৮তম অবস্থানে রয়েছে, যা "হাইব্রিড শাসনব্যবস্থা" হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ হয়েছে।
স্বাধীনতা দিবসে তারেক রহমানের এই বাণী রাজনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ করবে কিনা, তা সময়ই বলে দেবে। তবে এটি স্পষ্ট যে, তাঁর বক্তব্যে স্বাধীনতার চেতনা পুনরুদ্ধারের যে আহ্বান এসেছে, তা জাতীয় বিতর্কে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। তাঁর কথায়, "স্বাধীনতা রক্ষার দায়িত্ব সবার। এটি শুধু আদর্শ নয়, বরং লড়াই করে অর্জনের বিষয়।"
৫ আগস্টের পর পালানো কর্মকর্তারাও পাচ্ছেন পদক, পুলিশে ক্ষোভ
প্রকাশিত :
০৮:৪৮, ২৯ এপ্রিল ২০২৫
আজ থেকে তিন দিনব্যাপী পুলিশ সপ্তাহ শুরু হচ্ছে । পুলিশ সপ্তাহে নিয়মমাফিক পুলিশের বিগত বছরের কর্মকাণ্ডের ভালো-মন্দ দিক পর্যালোচনার বিষয়টি প্রাধান্য পাওয়ার কথা থাকলেও পদকের ভারে সেটি গৌণ হয়ে যায়।
এবার ৬২ জনকে বাংলাদেশ পুলিশ মেডেল (বিপিএম) ও প্রেসিডেন্ট পুলিশ মেডেল (পিপিএম) পদক দেওয়া হবে। তবে পদক প্রদানের আগেই এ নিয়ে সমালোচনা শুরু হয়েছে। পদকের জন্য তালিকা তৈরিতে আওয়ামী ফ্যাসিবাদী ধারাবাহিকতা বজায় রাখার অভিযোগ শোনা যাচ্ছে। এতে পুলিশের ভেতরে কারও কারও মাঝে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। তাদের মতে, ছাত্র-জনতার অন্দোলনের সময় যেসব পুলিশ সদস্য তাদের সহকর্মীদের জীবন এবং পুলিশের স্থাপনা ও সম্পদ রক্ষা করতে গিয়ে হতাহত হয়েছেন, তাদের কেউই পদকের জন্য বিবেচিত হননি।
অপরদিকে ৬-৭ আগস্ট যেসব কর্মকর্তা ভয়ে রাজারবাগে যাননি, তাদেরও পদক দেওয়া হয়েছে। রাজারবাগ থেকে যিনি পালিয়ে এসেছেন, তাকেও পদকের জন্য বিবেচনা করা হয়েছে। বন্যার সময় কুমিল্লায় ত্রাণ বিতরণকালে মঞ্চে উঠতে না দেওয়া, রংপুরের সুধী সমাবেশে যে কর্মকর্তাকে গাালাগাল করা হয়েছে এবং ব্যর্থতার দায়ে যাদের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে, তারাও পাচ্ছেন পদক।
ব্রিটিশ আমলে (১৯৩২ সাল) চালু হয় পুলিশের বিপিএম ও পিপিএম পদক। ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের পদক দেওয়ার রীতির শুরু হয় ২০১০ সাল থেকে। সাব-অর্ডিনেট অফিসারদের কাজকে নিজের কৃতিত্ব হিসাবে দেখিয়ে অনেক কর্মকর্তা এই পদক বাগিয়ে নেন আওয়ামী লীগ আমলে। এবারও পদকের তালিকা তৈরিতে সেরকমই হচ্ছে বলে জানা গেছে। পদকের জন্য যে ৬২ জনকে বিবেচনা করা হয়েছে, তাদের মধ্যে ২১ জনই সুপিরিয়র কর্মকর্তা। ফ্যাসিবাদের দোসর হিসাবে অতীতে যারা শেখ হাসিনার কাছ থেকে পদক নিয়েছেন, তারা এবার প্রধান উপদেষ্টার কাছ থেকেও পদক নিতে যাচ্ছেন। বিরোধী দলকে দমন করে শেখ হাসিনার আমলে অনেকে বিপিএম-পিপিএম পদক পান। বিএনপি নেতা জয়নুল আবদিন ফারুকের ওপর হামলার পুরস্কার হিসাবে সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ পদক পেয়েছিলেন।
জানা যায়, ১৯৫২ থেকে শুরু করে ২০০৯ সাল পর্যন্ত অনেকেই আইজিপি পদে দায়িত্ব পালন করেন। এদের মধ্যে কেবল আশরাফুল হুদা ও আনোয়ারুল ইকবাল ছাড়া কোনো আইজিপি বিপিএম বা পিপিএম পদক নেননি। পাকিস্তান আমলেও সুপিরিয়র অফিসাররা এসব পদক নিতেন না। আওয়ামী লীগ সরকারের সুবিধাভোগী হিসাবে তৎকালীন আইজিপি হাসান মাহমুদ খন্দকার, একেএম শহিদুল হক, বেনজীর আহমেদসহ অনেক ঊর্ধ্বতন অফিসার এসব পদক নিয়েছেন। এই ধারাবাহিকতায় এবারও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের পদক দেওয়া হচ্ছে। জানা যায়, এবার পদক দেওয়া হচ্ছে সাবেক আইজিপি ময়নুল হক, র্যাব মহাপরিচালক একেএম শহিদুর রহমান এবং সাবেক ডিএমপি কমিশনার মাইনুল হাসানসহ একাধিক অতিরিক্ত আইজিপিকেও।
পদক প্রদান সংক্রান্ত কমিটির সভাপতিও পদক পেয়েছেন। বাংলাদেশে বিপিএম বা পিপিএম পদকের জন্য লিখিত আবেদন করতে হয়। যদিও পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এ ধরনের পদকের জন্য আবেদন করতে হয় না। যথাযথ কর্তৃপক্ষ নিজ উদ্যোগেই পদকপ্রাপ্তদের তালিকা তৈরি করে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ১৫ বছরে প্রায় দুই হাজার পুলিশ সদস্যকে বিপিএম ও পিপিএম পদক দেওয়া হয়। এর মধ্যে ২০২৪ সালে সর্বোচ্চ সংখ্যক পদক দেওয়া হয়। ওই বছরের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভূমিকা রাখার পুরস্কারস্বরূপ ৪০০ পুলিশ সদস্যকে এ পদক দেওয়া হয়। এছাড়া ২০২৩ সালে ১১৫, ২০২১ সালে ১১৫, ২০২০ সালে ১১৮, ২০১৮ সালে ১৮২, ২০১৭ সালে ১৩২, ২০১৬ সালে ১০২, ২০১৫ সালে ৭৬, ২০১৪ সালে ১০৪ এবং ২০১৩ সালে ৬৭ জন পুলিশ সদস্যকে বিপিএম ও পিপিএম পদক দেওয়া হয়। জানতে চাইলে পুলিশের আইজিপি বাহারুল আলম বলেন, ‘আমরা সাধারণত আবেদনের ভিত্তিতেই পদক তালিকা তৈরি করি। তবে দুটি ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম আছে। পুলিশের গুলশান বিভাগের একজন সদস্য ছুরিকাঘাতে আহত হয়েও ছিনতাইকারীকে গ্রেফতার করেছেন। সাহসিকতাপূর্ণ কাজের জন্য তাকে এবার পদক দেওয়া হচ্ছে।’
পদক পেলেন যারা : গত বছরের ১১ জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ৬২ পুলিশ সদস্য বাংলাদেশ পুলিশ পদক পেয়েছেন। সাহসিকতা ও বীরত্বপূর্ণ কাজ, উদ্ভাবনীমূলক পদক্ষেপ, চাঞ্চল্যকর সূত্রবিহীন মামলার রহস্য উদঘাটন, দক্ষতা, প্রশংসনীয় অবদান ও শৃঙ্খলামূলক আচরণের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ পুলিশ পদক (বিপিএম), বাংলাদেশ পুলিশ পদক (বিপিএম)-সেবা, রাষ্ট্রতির পুলিশ পদক (পিপিএম), রাষ্ট্রপতির পুলিশ পদক (পিপিএম)-সেবা দেওয়া হয়েছে।
সোমবার রাতে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে পাঠানো এক বার্তায় এসব তথ্য জানানো হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের উপসচিব আবু সাঈদ স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞানে পদকপ্রাপ্তদের চূড়ান্ত নাম প্রকাশ করা হয়েছে। তবে ইনস্পেকটর মনিরুল হক ডাবলুর (ওসি দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ) নাম পদকের জন্য পুলিশ সদর দপ্তর চূড়ান্ত করার পর গণমাধ্যমে তাকে নিয়ে নেতিবাচক সংবাদ প্রচার হয়। এ প্রেক্ষিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রকাশিত তালিকা থেকে তার নাম বাদ দেওয়া হয়েছে।
বিপিএম পেয়েছেন প্রাক্তন আইজিপি মো. ময়নুল ইসলাম, র্যাব মহাপরিচালক একে এম শহিদুর রহমান, অ্যাডিশনাল আইজিপি (চলতি দায়িত্বে) (হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট) আবু নাছের মোহাম্মদ খালেদ, সিএমপি পুলিশ কমিশনার হাসিব আজিজ, ডিএমপির যুগ্ম পুলিশ কমিশনার (ডিবি-দক্ষিণ) মোহাম্মদ নাসিরুল ইসলাম, সিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মো. আসফিকুজ্জামান আকতার, খাগড়াছড়ির পুলিশ সুপার মো. আরেফিন জুয়েল, চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার মো. সাইফুল ইসলাম সানতু, ডিএমপির উপ-পুলিশ কমিশনার (ওয়েলফেয়ার অ্যান্ড ফোর্স) রওনক আলম, গাজীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আমিনুল ইসলাম, পুলিশ পরিদর্শক আবদুর রাজ্জাক আকন্দ (আরআই, পুলিশ সদর দপ্তর), সোনাডাঙ্গা মডেল থানার পুলিশ পরিদর্শক মো. শফিকুল ইসলাম, হাবিলদার মো. সাইফুল ইসলাম (র্যাব-১৫), ডিএমপির এএসআই মো. মেসবাহ উদ্দিন, কনস্টেবল মো. রুহল আমিন ভূঞা (সচিবালয় নিরাপত্তা বিভাগ, ডিএমপি)