img

ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’ নিষিদ্ধের সুপারিশ মার্কিন ফেডারেল কমিশনের

প্রকাশিত :  ১০:৩৯, ২৬ মার্চ ২০২৫
সর্বশেষ আপডেট: ১৯:২৪, ২৬ মার্চ ২০২৫

ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’ নিষিদ্ধের সুপারিশ মার্কিন ফেডারেল কমিশনের

যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক ধর্মীয় স্বাধীনতা বিষয়ক কমিশন (ইউএসসিআইআরএফ) মঙ্গলবার এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ভারতে সংখ্যালঘুদের প্রতি আচরণ আরো খারাপ হচ্ছে। একই সঙ্গে সংস্থাটি ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালিসিস উইংয়ের (র) বিরুদ্ধে শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদীদের হত্যা পরিকল্পনায় জড়িত থাকার অভিযোগে লক্ষ্যভিত্তিক নিষেধাজ্ঞা আরোপের সুপারিশ করেছে।  

এ ছাড়া কমিউনিস্টশাসিত ভিয়েতনাম ধর্মীয় কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণের প্রচেষ্টা বাড়িয়েছে বলেও কমিশনের বার্ষিক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রাখা সত্ত্বেও দেশটিকে ‘বিশেষ উদ্বেগের দেশ’ হিসেবে তালিকাভুক্ত করার সুপারিশ করা হয়েছে।

এই কমিশন একটি দ্বিদলীয় মার্কিন সরকারি উপদেষ্টা সংস্থা, যা বিদেশে ধর্মীয় স্বাধীনতা পর্যবেক্ষণ করে এবং নীতিগত সুপারিশ প্রদান করে।

বিশ্লেষকদের মতে, যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘদিন ধরে ভারতকে এশিয়ায় চীনের প্রভাব মোকাবেলার কৌশলগত অংশীদার হিসেবে বিবেচনা করেছে এবং সে কারণে ভারতের মানবাধিকার ইস্যুগুলো এড়িয়ে গেছে। কমিশনের সুপারিশ বাধ্যতামূলক নয়, তাই যুক্তরাষ্ট্র ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’-এর ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করবে—এমন সম্ভাবনা কম।

২০২৩ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদীদের লক্ষ্যবস্তু করার অভিযোগ ভারতের বিরুদ্ধে উঠেছে, যা দুই দেশের সম্পর্কে টানাপড়েন সৃষ্টি করেছে।

যুক্তরাষ্ট্রে এক ব্যর্থ হত্যাচেষ্টার ঘটনায় দেশটির আদালত সাবেক ভারতীয় গোয়েন্দা কর্মকর্তা বিকাশ যাদবের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেছে। তবে ভারত সরকার শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদীদের নিরাপত্তার হুমকি হিসেবে বিবেচনা করে এবং হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

ধর্মীয় স্বাধীনতার পরিস্থিতির অবনতি

মার্কিন কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালে ভারতে ধর্মীয় স্বাধীনতার পরিস্থিতি আরো খারাপ হয়েছে এবং সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে হামলা ও বৈষম্য বৃদ্ধি পেয়েছে।  

প্রতিবেদনে আরো দাবি করা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও তার দল ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) নির্বাচনী প্রচারে মুসলিম ও অন্য সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে ঘৃণাসূচক বক্তব্য ও বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচার করেছে।

২০২৩ সালের এপ্রিলে মোদি মুসলিমদের ‘অনুপ্রবেশকারী’ বলে অভিহিত করেন এবং দাবি করেন, তারা বেশি সন্তান জন্ম দেয়। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মানবাধিকার ও ধর্মীয় স্বাধীনতা সম্পর্কিত প্রতিবেদনগুলোতে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভারতে সংখ্যালঘু নির্যাতনের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। তবে ভারত এসব প্রতিবেদনকে ‘অত্যন্ত পক্ষপাতদুষ্ট’ বলে নাকচ করেছে।  

২০১৪ সাল থেকে ক্ষমতায় থাকা মোদি তার সরকারের বিরুদ্ধে বৈষম্যের অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন। পাশাপাশি তিনি দাবি করেছেন, বিদ্যুতায়ন ও ভর্তুকি প্রকল্পের মতো নীতিগুলো সব সম্প্রদায়ের জন্যই উপকারী।

 নিষেধাজ্ঞার সুপারিশ

কমিশন মার্কিন সরকারের কাছে সুপারিশ করেছে, ভারতকে ‘বিশেষ উদ্বেগের দেশ’ হিসেবে ঘোষণা করা হোক এবং বিকাশ যাদব ও ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’-এর ওপর লক্ষ্যভিত্তিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হোক।

এ বিষয়ে ওয়াশিংটনে ভারতীয় দূতাবাসের পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিক কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।  

মানবাধিকারকর্মীরা ভারতের সংখ্যালঘুদের দুর্দশার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, সেখানে ঘৃণাত্মক বক্তব্যের পরিমাণ বাড়ছে। জাতিসংঘ যে নাগরিকত্ব আইনের বিষয়ে মন্তব্য করে বলেছে এটি ‘মূলত বৈষম্যমূলক’, সেটিও উদ্বেগের একটি কারণ। এ ছাড়া সমালোচকদের মতে বিশ্বাসের স্বাধীনতাকে বাধাগ্রস্ত করা ধর্মান্তরবিরোধী আইন, মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিল ও মুসলমানদের মালিকানাধীন সম্পত্তি ধ্বংসের ঘটনাও সংখ্যালঘুদের জন্য গুরুতর সংকট তৈরি করেছে।

এ ছাড়া প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সম্প্রতি ভিয়েতনামে একটি নতুন ডিক্রি জারি করা হয়েছে, যার মাধ্যমে কর্তৃপক্ষ ধর্মীয় সংগঠনগুলোর আর্থিক লেনদেনের হিসাব জানতে পারবে এবং অস্পষ্ট ‘গুরুতর অপরাধের’ অজুহাতে ধর্মীয় কর্মকাণ্ড স্থগিত করতে পারবে।  

২০২৪ সালের ডিসেম্বরে ৮০ জনেরও বেশি বন্দির নাম যুক্তরাষ্ট্রের ‘ধর্মীয় স্বাধীনতার জন্য কারাবন্দি’ তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়, যাদের ভিয়েতনাম সরকার ধর্মীয় কার্যক্রম বা ধর্মীয় স্বাধীনতার পক্ষে কথা বলার জন্য শাস্তি দিয়েছে। এ বিষয়ে ওয়াশিংটনে নিযুক্ত ভিয়েতনামের দূতাবাসের পক্ষ থেকে কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

আন্তর্জাতিক এর আরও খবর

img

কাশ্মীর সীমান্তে ভারতীয় ড্রোন গুলি করে ভূপাতিত করল পাকিস্তান

প্রকাশিত :  ১০:২৩, ২৯ এপ্রিল ২০২৫

কাশ্মীর সীমান্তে ভারত ও পাকিস্তানের সেনাদের মধ্যে পঞ্চমবারের মতো গোলাগুলি হয়েছে। এ নিয়ে তীব্র উত্তেজনার মধ্যে ভারতীয় ড্রোন ভূপাতিত করল পাকিস্তান সেনাবাহিনী। রাষ্ট্র পরিচালিত রেডিও পাকিস্তান এবং পিটিভি নিউজ নিরাপত্তা সূত্রের বরাত দিয়ে এ তথ্য জানিয়েছে।

পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম ডনের প্রতিবেদনে বলা হয়, পাকিস্তান সেনাবাহিনী মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) আজাদ কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণ রেখার (এলওসি) কাছে একটি ভারতীয় কোয়াডকপ্টার ড্রোন গুলি করে ভূপাতিত করে। পেহেলগাম হামলার পরিপ্রেক্ষিতে দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজের মধ্যে এ ঘটনা ঘটল।

স্থানটি নির্দিষ্ট করে নিরাপত্তা সূত্র জানিয়েছে, পাকিস্তান তার আকাশসীমা লঙ্ঘনের প্রচেষ্টা ব্যর্থ করে নিয়ন্ত্রণ রেখায় একটি ভারতীয় কোয়াডকপ্টার সফলভাবে গুলি করে ভূপাতিত করেছে। শত্রু আজাদ কাশ্মীরের ভিম্বের জেলার মানাওয়ার সেক্টরে একটি কোয়াডকপ্টার ব্যবহার করে নজরদারির চেষ্টা করেছিল। পাকিস্তান সেনাবাহিনী সময়মতো পদক্ষেপের মাধ্যমে শত্রুর এই নিকৃষ্ট প্রচেষ্টাকে ব্যর্থ করে দেয়।

নিরাপত্তা সূত্র এই ঘটনাকে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সতর্কতা, পেশাদার দক্ষতা এবং প্রতিরক্ষামূলক প্রস্তুতির স্পষ্ট প্রমাণ হিসেবে অভিহিত করে। এক সামরিক সূত্র বলেছে, পাকিস্তান সেনাবাহিনী সর্বদা শত্রুর যেকোনো আগ্রাসনের তাৎক্ষণিক ও কার্যকর জবাব দিতে প্রস্তুত। সমগ্র জাতি প্রতিটি ফ্রন্টে শত্রুকে যথাযথ জবাব দিতে সশস্ত্র বাহিনীর সঙ্গে ঐক্যবদ্ধভাবে দাঁড়িয়েছে।

এর আগে সোমবার (২৮ এপ্রিল) রাতে দুই দেশের সেনাদের মধ্যে গোলাগুলি হয়। ভারতীয় সেনাবাহিনী জানিয়েছে, তারা ‘পরিমিত ও কার্যকরভাবে’ জবাব দিয়েছে। এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ২৮-২৯ এপ্রিল রাতে পাকিস্তানি সেনারা কুপওয়ারা ও বারামুলা জেলার সীমান্তবর্তী এলাকা এবং আখনুর সেক্টরে অপ্ররোচিতভাবে ছোট অস্ত্রের গুলিবর্ষণ করে। ভারতীয় সেনাবাহিনী এই উত্তেজনার পরিমিত ও কার্যকর জবাব দিয়েছে।

গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে পাকিস্তানি সেনাদের সঙ্গে ভারতীয় সেনাদের গোলাগুলির ঘটনা ঘটছে। তবে এতে এখনও পর্যন্ত কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।