img

সোশ্যাল মিডিয়ার অদৃশ্য ফাঁদ: আমাদের গোপনীয়তা কি আর আমাদের থাকছে?

প্রকাশিত :  ২০:২৭, ৩১ মার্চ ২০২৫
সর্বশেষ আপডেট: ০৬:৫৭, ০১ এপ্রিল ২০২৫

সোশ্যাল মিডিয়ার অদৃশ্য ফাঁদ: আমাদের গোপনীয়তা কি আর আমাদের থাকছে?

আজকের এই ডিজিটাল যুগে ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, মেসেঞ্জার ও ইনস্টাগ্রামের মতো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম আমাদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে। ব্যক্তিগত যোগাযোগ, ব্যবসা, বিনোদন কিংবা মতপ্রকাশ—সবকিছুতেই এগুলোর ভূমিকা অসাধারণ। তবে এই সুবিধার আড়ালে যে বড় ধরনের ঝুঁকি লুকিয়ে আছে, তা আমরা অনেকেই বুঝতে পারছি না। তথ্য ফাঁসের ঘটনা যেভাবে বেড়েই চলেছে, তাতে প্রশ্ন উঠছে—আমাদের ব্যক্তিগত তথ্য আসলেই কি ব্যক্তিগত থাকছে?

গোপনীয়তার সংকট ও তথ্য ফাঁসের বাস্তবতা

একসময় সোশ্যাল মিডিয়াকে মানুষ শুধু যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে দেখত। কিন্তু এখন এই প্ল্যাটফর্মগুলো আমাদের প্রতিটি কর্মকাণ্ড নজরদারির আওতায় নিয়ে ফেলেছে। আমরা কী লিখছি, কার সঙ্গে কথা বলছি, কোথায় যাচ্ছি—এসব তথ্য রেকর্ড করা হচ্ছে, বিশ্লেষণ করা হচ্ছে, এবং কখনো কখনো বিক্রি করাও হচ্ছে।

. নজরদারি আর তথ্য বিশ্লেষণের ফাঁদ

আপনি হয়তো জানেন না, কিন্তু আপনি যখনই ফেসবুকে কিছু সার্চ করেন বা কারও পোস্টে প্রতিক্রিয়া দেন, তখনই সেই তথ্য সংগ্রহ করা হয়। আপনার অবস্থান, শপিং পছন্দ, রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি—সবকিছুই বিশ্লেষণের আওতায় চলে আসে। বড় বড় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান যেমন মেটা (ফেসবুকের মালিকানাধীন সংস্থা) এসব তথ্য বিজ্ঞাপনদাতাদের কাছে বিক্রি করে, আবার কখনো কখনো রাষ্ট্রীয় সংস্থাগুলোর হাতেও চলে যায়।

২. হ্যাকিং ও সাইবার আক্রমণের শিকার হওয়ার আশঙ্কা

প্রায়ই আমরা দেখি, কোনো না কোনো পরিচিত ব্যক্তির ফেসবুক বা হোয়াটসঅ্যাপ অ্যাকাউন্ট হ্যাক হয়ে গেছে। শুধু সাধারণ মানুষের নয়, বড় বড় রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী কিংবা সাংবাদিকরাও এ ধরনের সাইবার আক্রমণের শিকার হচ্ছেন। অনেক সময় ফিশিং লিংকের মাধ্যমে আমাদের ডিভাইসে ম্যালওয়্যার প্রবেশ করিয়ে তথ্য হাতিয়ে নেওয়া হয়। একবার এই ফাঁদে পড়লে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে শুরু করে ব্যক্তিগত মেসেজ—সবই চলে যেতে পারে অপরাধীদের হাতে।

৩. ফিশিং ও স্পাইওয়্যার: অজান্তেই তথ্য চুরি

আমরা অনেক সময় না বুঝেই অচেনা লিংকে ক্লিক করি বা সন্দেহজনক অ্যাপে লগইন করি। অথচ এ ধরনের প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে আমাদের তথ্য অন্যদের হাতে চলে যায়। সরকার ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোও অনেক সময় বিশেষ স্পাইওয়্যার ব্যবহার করে নির্দিষ্ট ব্যক্তিদের ওপর নজরদারি চালায়, যা আমাদের ব্যক্তিগত নিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরূপ।

কিছু বাস্তব তথ্য ফাঁসের উদাহরণ

গত কয়েক বছরে তথ্য ফাঁসের যে ঘটনাগুলো ঘটেছে, তা আমাদের চোখ খুলে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট।C

ambridge Analytica কেলেঙ্কারি (২০১৮): ফেসবুকের ৮৭ মিলিয়নের বেশি ব্যবহারকারীর তথ্য রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয়েছিল।

WhatsApp তথ্য ফাঁস (২০২১): হোয়াটসঅ্যাপের বার্তা এনক্রিপ্ট থাকলেও ব্যবহারকারীদের যোগাযোগ সংক্রান্ত তথ্য ফাঁস হয়ে যায়।

পেগাসাস স্পাইওয়্যার: বিভিন্ন সরকার ও গোয়েন্দা সংস্থা সাংবাদিক ও রাজনৈতিক ব্যক্তিদের ফোনে আড়িপাতার জন্য পেগাসাস সফটওয়্যার ব্যবহার করেছে।

কীভাবে নিরাপদ থাকা যায়?

তথ্য ফাঁস ও নজরদারির হাত থেকে রক্ষা পেতে আমাদের কিছু সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।

✅ অপরিচিত লিংকে ক্লিক না করা: সন্দেহজনক বা অপরিচিত লিংক এড়িয়ে চলুন।

✅ দ্বিস্তর নিরাপত্তা (Two-Factor Authentication) চালু করা: এটি আপনার অ্যাকাউন্টের নিরাপত্তা বাড়াতে সাহায্য করবে।

✅ প্রাইভেসি সেটিংস নিয়মিত আপডেট করা: সোশ্যাল মিডিয়ার প্রাইভেসি সেটিংস পরিবর্তন করে রাখুন যাতে অপ্রয়োজনীয় তথ্য অন্যরা না পায়।

✅ সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যক্তিগত তথ্য কম শেয়ার করা: নিজের পার্সোনাল তথ্য কম শেয়ার করলে তথ্য চুরির ঝুঁকিও কমবে।

সোশ্যাল মিডিয়ার সুবিধা যেমন অসীম, তেমনি এর ঝুঁকিও কম নয়। আমরা যদি অযথা আমাদের ব্যক্তিগত তথ্য ছড়িয়ে দেই, তবে তা আমাদের বিপদে ফেলতে পারে। তাই সোশ্যাল মিডিয়ার প্রতি অন্ধবিশ্বাস না রেখে, সচেতনতার সঙ্গেই এটি ব্যবহার করা উচিত।

সতর্ক থাকুন, নিরাপদ থাকুন!

img

দেশে স্টারলিংকের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু

প্রকাশিত :  ০৫:২২, ২০ মে ২০২৫

স্টারলিংক আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশে যাত্রা শুরু করেছে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত) ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব।

আজ মঙ্গলবার (২০ মে) সকালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে তিনি এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

ফয়েজ আহমদ বলেন, ‘স্টারলিংক অফিশিয়ালি বাংলাদেশে যাত্রা শুরু করেছে। সোমবার বিকেলে তারা ফোন কলে আমাকে বিষয়টি জানিয়েছে এবং আজ সকালে তাদের এক্স হ্যান্ডেলে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।’

প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী আরও বলেন, শুরুতে স্টারলিংক দুটি প্যাকেজ দিয়ে শুরু করছে– স্টারলিংক রেসিডেন্স এবং রেসিডেন্স লাইট। মাসিক খরচ একটি ৬০০০ টাকা, অপরটি ৪২০০। তবে সেটআপ যন্ত্রপাতির জন্য ৪২ হাজার টাকা এককালীন খরচ হবে। এখানে কোনো স্পিড ও ডাটা লিমিট নেই। ব্যক্তি ৩০০ এমবিপিএস পর্যন্ত গতির আনলিমিটেড ডেটা ব্যবহার করতে পারবেন।

বাংলাদেশের গ্রাহকরা আজ থেকেই অর্ডার করতে পারবেন জানিয়ে তিনি বলেন, এর মাধ্যমে ৯০ দিনের মধ্যে যাত্রা শুরুতে প্রধান উপদেষ্টার প্রত্যাশাটি বাস্তবায়িত হলো। প্রধান উপদেষ্টা সংশ্লিষ্ট সবাইকে অভিনন্দন জানিয়েছেন।

ফয়েজ আহমদ বলেন, খরুচে হলেও এর মাধ্যমে প্রিমিয়াম গ্রাহকদের জন্য উচ্চমান এবং উচ্চগতির ইন্টারনেট সেবা প্রাপ্তির টেকসই বিকল্প তৈরি হয়েছে। পাশাপাশি যেসব এলাকায় এখনো ফাইবার কিংবা দ্রুতগতির ইন্টারনেট সেবা পৌঁছেনি, সেখানে কোম্পানিগুলো ব্যবসা সম্প্রসারণের সুযোগ পাবেন, এনজিও ফ্রিল্যান্সার এবং উদ্যোক্তারা বছরব্যাপী নিরবচ্ছিন্ন উচ্চগতির ইন্টারনেটের নিশ্চয়তা পাবেন।

বিষয়টি নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা সংশ্লিষ্ট সবাইকে অভিনন্দন জানিয়েছেন বলেও মন্তব্য করেন তিনি।